Wednesday, November 28, 2012

মুণ্ডমহারণ্য  কোলে  নর্মদার  তটে
দেখিলাম  সে  কী  দৃশ্য  ভয়াল  ভীষণ!
পথহারা  অসহায়, সে  কী  কষ্ট,  সে কী  ভয়,
ভাবিলাম  ঘটে  বুঝি  এখনই  মরণ!
দু'দিকে  পাহাড়-চূড়া
মধ্যে  গিরিখাদ,
তলদেশে  লোকে  বলে----
কপিল- আশ্রম  আছে
পাহাড়ের  ছাদ।
হিমাঙ্কের  নীচে  শীত
রক্ত  জমে  হিমের  প্রবাহে,
হ'তেছে  তুষারপাত
পিচ্ছিল  খাদের  পথে
পড়িনু গড়ায়ে।
আকাশের  পানে  চাই---
দেবতার  চিহ্ন  নাই,
কুণ্ডলিছে  অন্ধকার---গাঢ়  নিরাশ্বাস;
পদে  পদে  উঠি  পড়ি
দেখি  পিতঃ,  করে  ধরি
দিতেছ  হৃদয়  ভরি  মমতা  আশ্বাস।
দেবতা  না  দেখিলাম---
তুমি  এলে  বাঁচিলাম,
বাঁচিলাম  সে  সঙ্কটে  তোমারই  অভয়  বরে;
শুনাইলে, 'ভয়  নাই  আর
ভয়  নাই,  ভয়  নাই---
আমি  আছি,  আমি  আছি,  আমি  আছি  ওরে'!



Friday, October 19, 2012


আকাশ  আমায়  শিক্ষা  দিল  উদার  হতে  ভাইরে,
কর্মী  হবার  মন্ত্র  আমি  বায়ুর  কাছে  পাইরে।
পাহাড়  শিখায়  তাহার  সমান  হই  যেন  ভাই  মৌন  মহান,
খোলা  মাঠের  উপদেশে  দিলখোলা  হই  তাইরে।
সূর্য  আমায়  মন্ত্রণা  দেয়  আপন  তেজে  জ্বলতে,
চাঁদ  শিখালো  হাসতে  মিঠে, মধুর  কথা  বলতে।
ইঙ্গিতে  তার  শিখায়  সাগর, অন্তর  হোক  রত্ন  আকর,
নদীর  কাছে  শিক্ষা  পেলাম  আপন  বেগে  চলতে।
মাটির  কাছে  সহিষ্ণুতা  পেলাম  আমি  শিক্ষা,
আপন  কাজে  কঠোর  হতে  পাষাণ  দিল  দীক্ষা।
ঝরণা  তাহার  সহজ  গানে  গান  জাগালো  আমার  প্রাণে,
শ্যামবনানী  সরসতা  আমায়  দিল  ভিক্ষা।
বিশ্বজোড়া  পাঠশালা  মোর, সবার  আমি  ছাত্র,
নানান  ভারে  নতুন  জিনিষ  শিখছি  দিবারাত্র।
এই  পৃথিবীর  বিরাট  খাতায়  পাওনাটা  যে  সব  পাতায়  পাতায়,
শিখছি  সে  সব  কৌতুহলে  সন্দেহ  নাই  মাত্র।



Wednesday, August 15, 2012

যোগসিদ্ধি--গুরুরা পারেন না !!!


সিদ্ধ  গুরুদের  ঋদ্ধি  ও  সিদ্ধি  করতলগত  হলেও  তাঁরা  বলেন------

1. আমি ভাগ্য  গণনা  করতে  পারি  না।

2. টাকা  পয়সা  দিতে  পারি   না।

3. মমলা-মোকদ্দমায়  জয়  দিতে  পারি  না।

4. ছেলের  চাকরী  ও  মেয়ের  বিয়ে  কবে  হবে  বলতে  পারি  না।

5. আলুর দোকানে  পটল, পটলের দোকানে  জিলিপি, জিলিপির  দোকানে  রেভিনিউ  কি  পাওয়া  যায়? ঠিক  সেইরকম  পরমার্থের  দরবারে  অর্থ  চাইলে  পাবে  না  হে, পাবে  না।

6. এই স্বার্থপর  জগতে  প্রকৃত  প্রেম  বলে  কিছু  নেই। এ  জগতে  কেউ  কাউকে  ভালবাসে  মানে  তার  পিছনে  স্বার্থ  আছে। প্রেমময়  পুরুষকে লাভ  করতে  হলে  চাই  প্রাণের  আকুতি, গভীর  প্রেম  এবং  গুরুর  কৃপা  আর  চাই  শ্রদ্ধা, কঠোর  সংযম  ও সাধনা।

7.  আমাকে  তোমার  Charitable  dispensary  বা  Employment  exchange  এ  পরিণত  কোর  না।

8.  আমি নর্মদা  মায়ীর  একটা  পাণ্ডা  ছাড়া  আর  কিছুই  নই।  যে  সে  পথে  চলতে  চাইবে, আমি  তার  সহায়। আমি  কেবলমাত্র  পথ  দেখিয়ে  মন্দির  দুয়ার  পর্যন্ত্য  পৌঁছে  দিতে  পারি।  আর  কিছু  পারি  না।

9. ভক্তি  ভালো, তবে ভক্তির  ভাঁড়ামো  ভালো  নয়। ধর্মে  উচ্ছ্বাস আবেগের  স্থান  নেই।  ভক্ত  হতে  হলে  গুপ্ত  হতে  হবে।


প্রকৃত  প্রেম  যেমনি  মোহন।
তেমনি  কঠোর  তেমনি  গোপন।।


10. আমার  লোক  তৃষ্ণাও  যত,  লোক  ভয়ও  তত। যারা ভজন-ভুখা, আমি  তাদের  জন্য  তৃষিত  চাতকের  মত  আকুল  প্রতীক্ষায় আছি  আর  যারা  ভোজনের  ভুখা  তাদেরকে  আমার  বড্ড  ভয় করে।

11. মনে  রেখ  ঋষিরা  এক  হিসাবে  বড়  বিপজ্জনক  ব্যক্তি। তিনি  তোমার  কর্ম  adjust করতে  জানেন। কিন্তু  তুমি  তাঁর  কাছে  যত  স্বার্থের  বক্‌বকম্‌  করবে  ততই  তিনি  তোমার  কর্মের  বিন্দু  থেকে  সরে  আসবেন। তুমি  ফাঁসবে, তুমি  ডুববে। পরপর  কর্মের  ঢেউ-এ  তুমি  হাঁসপাঁশ  করবে। আর  যদি  নীরব  থাক----শুধু  চুপিসারে  যাও  আস, তাহলে  তিনি  প্রতি  দৃষ্টিপাতে  কর্মবিন্দুটি  তরল  করে  দেবেন। তখন  দুঃখটাকে  সেইমত  ভোগ  করিয়ে  নিয়ে  তোমার  কুঁড়েঘরে  সুখের  জ্যোৎস্না  এনে  দেবেন।

12. শালগ্রাম  শিলা  দিয়ে  বাটনা  বাটতে  বা  মশারির  পেরেক  পুঁততে  চেও  না। সাধুরা  রয়েছেন  তোমাকে  অমৃতের  দেশে  অভয়  আনন্দলোকে  নিয়ে  যেতে। তাঁকে  সংসারের  তুচ্ছ  কামনা- বাসনা  পূরণে  লাগিও  না।

13. প্রেমময়  "প্রীতম" কে  ভালবাসতে  হলে  প্রথমে  চিত্তশুদ্ধির  প্রয়োজন। অন্তর  যদি  সর্বত্র  কলুষিত  ও  কর্দমাক্ত  থাকে  তবে  তিনি  বসবেন  কোথায়।  প্রথমে  তাঁকে  বসার  মত  একটু  "ঠাঁই"  না  দিলে অর্থাৎ  তাঁর  প্রতি  একটু  টান  না  থাকলে  তিনি  বসতে  পারেন  না।  তিনি  প্রেমের  কাঙাল  অথচ  স্বার্থপর  জগতে   কারও  এতটুকু  প্রেম  তাঁর  প্রতি  আছে?  তিনি  চান  আমাদের  কাছে  প্রেম  আর  ভক্তি। আমার  যত  কাদাই   মাখিনা  কেন  তাঁকে  যদি  একটু  আসন  পেতে  বসবার  স্থান  করে  দিতে  পারি, তিনি  সমস্ত  কর্দম  ও  কলুষ  পরিষ্কার  করে  তাঁর  জিনিষ  তাঁর  কাছে  টেনে  নেন।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191




Monday, August 6, 2012

নাই  আভরণ  এমন  কথা  কেউ  এনো  না  মুখে  আর।
রেবা  মা-ই  করতে  পারেন  অলংকারের  অহংকার।
এ  জগৎ  বটে  মা  তোমার  অলংকারের  সাজানো  থাল,
প্রাতর্মধ্যসায়ংকাল  সাজায়ে  দেন  মহাকাল;
আবার  নিশাকালে  বদলে  পরায়
তাতে  আলো  আঁধার  দুই-ই  দেখা  যায়,
বল্‌  মা  তবে  কার  মা  ভাব  আছে  এত  অলংকার!
কে  বলে  মোর  রেবা  মায়ের  অলংকারের  অপ্রতুল,
পরেন  তিনি  স্থির  তড়িতের  সুতায়  গাঁথা  তারার  ফুল,
পরে  থাকেন  মা  নর্মদা  ইন্দ্রধনুর  একাবলী,
স্বয়ং *বৈজয়ন্তী  হয়ে  পরবেন  কেন  বৈজয়ন্তী-নোলী?
জীবের  জীবন  নাসার  নোলক  তা ত  জানে  সর্বজন,
পদ্মপাত্রে  জলের  মত  দোলে  যে  তা  সর্বক্ষণ।
ঞ্জান  সমুদ্রের  মহারতন, শ্রুতি  যে  তাঁর  কর্ণভূষণ
মুকুট  যে  তাঁর  সদানন্দ  নাশেন  ভবের  যতেক  কালি।
বারভয়  মার  হাতের  বলয়  তা  ত  সবার  জানা  কথা,
মা  যে  করুণার  কঙ্কণ  পরেন,  মুক্তিফলের  মালা  গাঁথা;
মায়া- মন্ত্রে  কায়া  ঢাকি, সদা  সংগোপনে  থাকি
নিতম্বে  সতত  পরি  সপ্তসিন্ধুর  চন্দ্রহার।
অষ্টসিদ্ধির  নুপূর  পরেন, তাইতে  মায়ের  অনুরাগ,
পুণ্যগন্ধস্বরূপিনী  স্বয়ং  শ্রী  মা'র  অঙ্গরাগ।
ব্রহ্মাত্মায়ের  অলক্তের  জল, কেশব  তাঁহার  চোখের  কাজল
কালানল  তাম্বুল  তিনি  চর্বণ  করেন  বারংবার।।
গোবিন্দ  দেখেছে  মাগো  সুধাইলে  বলবে  সেও,
বাছা  বাছা  কাঁচা  মেঘের  আমলা  বেটে  মাথায়  দাও।
পোহাইলে  বিভাবরী  শিশু-সূর্যের  সিঁন্দুর   পরি
চাঁদ  বেটে  চন্দনের  ফোঁটা  দিয়ে  থাক  অনিবার।।
কে  বলে  তুমি  কেবল  নীরাকারা, নাইকো  তোমার  অলংকার!







Saturday, July 21, 2012


......... তোমাকে দীক্ষা  যে  দিব, তার দক্ষিণা  কি  দিবে? তাঁর  কথা  শুনে  আমি  হকচকিয়ে  যাই; নীরবে  তাঁর  দিকে  তাকাতেই  তিনি  তাঁর  কাঁধের ঝুলিটি  দেখিয়ে  বললেল--- আমার  এই  ঝুলিতে  ঋদ্ধি  সিদ্ধি দুই আছে। মা  নর্মদার  দয়ায়  আমার  সবই  পূর্ণ।

লৌকিক  প্রথানুসারে  শিষ্য  যে  গুরুকে  স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, অন্নপানাদি এবং পত্রপুষ্পাঞ্জলি  দান  করে  থাকে, তার নাম ঋদ্ধি।এগুলি  যথার্থ  গুরুদক্ষিণা  নয়।

কারণ এই  জাগতিক  উপঢৌকন  সম্পূর্ণ  অনিত্য  বস্তু, এই  জগতেই এগুলি থেকে যায়। ঐ সব অনিত্য বস্তুর গুরুদক্ষিণা প্রদানে পরকালে স্বর্গসুখ প্রাপ্তি বা পরজন্মে  শ্রীমানের  কুলে  জন্মলাভ  ঘটে  বটে কিন্তু তার  ফলে  অনিত্য  সংসারে  পুনরায়  এসে  সুখ-দুঃখ  ভোগ  করতে হয়।

কিন্তু  সিদ্ধি  কোন  মতেই  অনিত্য  বস্তু  নয়। সিদ্ধমন্ত্র থেকে সিদ্ধফল উৎপন্ন  হয়। তোমাকে  এই  রুদ্রাক্ষের  মালা  মন্ত্রপূত  করে দিচ্ছি। আমার প্রদত্ত  মন্ত্র  এই  মালায়  জপ  করবে  এবং জপান্তে মন্ত্রেরফল জপের  অভীষ্ট  স্বরূপ  গুরুদেবের  উদ্দেশ্যে  সমর্পণ  করবে। তোমার নিত্য  জপের  ফল  আমার  কাছে  গচ্ছিত  থাকবে। যথালগ্নে যথাসময়ে  তোমার  সেই  গচ্ছিত  বস্তু  শতগুণ  বর্ধিত  করে তোমাকেই  সমর্পণ  করব। সেই  সিদ্ধফলই  যথার্থ  মুক্তির  সোপান নির্মাণ  করে  থাকে।

তাঁর  সেই  কথা  মন্ত্র  মুগ্ধ  হয়ে  শোনার  পর  তাঁর  চরণে  আমি প্রণত  হতেই  তিনি  বললেন---" হ্যাঁ, এই  হল  সর্বশ্রেষ্ঠ  গুরুদক্ষিণা। তোমার  যে  মাথা  গুরুপদে  ঠেকিয়েছ, সেই  মাথাই  দেহের  মধ্যে শ্রেষ্ঠ  অঙ্গ, সেইখানে  সহস্রদল  কমলের  মধ্যে  গুরুস্বত্তা  সতত বিরাজিত  আছেন; সেই  সহস্রদল  কমলের  মধ্যে  গুরুস্বরূপের  ধ্যান করবে  এবং  আজ  হতে  তোমার  তন্‌  মন  ধন  সকলই  গুরুদেবের হল, তুমি  যখন  যা  করবে, গুরুদেব  সতত  তোমার  সঙ্গে  আছেন। এই দৃঢ়  ভাবনা  অবিচলিত  নিষ্ঠা  রাখতে  পারলেই  তোমার  নিত্য বস্তু  লাভ  হবে।" তাঁর  এই  উপদেশই  আমার  কাছে  ধ্যানঞ্জান।


দেবি  নর্মদে! কৃপা  করো  অপরাধ  বিসারো।
ভব  সাগরমেঁ  ডুবি-রহে!  আই  উবারো।।
পুত্র  কুপুত্র  কহায়  কুমাতা  হোয়  ন  কবহুঁ।
করে  ন  হম  শুভ  করম  লগায়ে  আশা  তবহুঁ।।
মাঁ  তুম্‌  অশরণ  শরণ  হো, গোদীমেঁ  বৈঠাই  লৈঁ।
ভলে  বুরে  জৈসে  তনয়, কিরপা  করি  আপনাই লৈঁ।।


Thursday, May 31, 2012

উত্তরা সুষুম্নাই উত্তরাপথ; উত্তরায়ণের পথ; সাক্ষাৎ ব্রহ্মমার্গ:-

Cont..... (Last)


------এই  ত্রিকোণাকার  যোনিমণ্ডল  পরা  প্রকৃতির  চরম পরম 
অবস্থা, এখানেই  প্রণবের অর্ধচন্দ্রাকৃতি  মহানাদ  নিত্যপ্রকট। এই  নাদমুখে  ত্রিভুবনের  মুক্তিদায়ক  সদানন্দময়  সদাশিব  অর্ধনারীশ্বর  রূপে  নিত্যবিরাজিত,


লোকানাং  যুক্তিজনকো  লোকানাং  মুক্তিদায়কঃ।
সদানন্দকরো  দেবশ্চার্ধ নারীশ্বরো বিভুঃ।।

----- এই  অর্ধনারীশ্বরের  জ্যোতিতেই  দিব্য  পিতৃলোক উদ্ভাসিত  আছে। ভগবান অর্ধনারীশ্বরের চিদ্‌বীর্য  প্রাণচৈতন্য  মায়াশক্তির আশ্রয়ে  স্থূলরূপে  যখন  বিকাশোন্মুখ হয়  তখন তা সর্বপ্রথম  বিশুদ্ধ  ব্যোমমণ্ডলে  অনুপ্রবিষ্ট  হয়।

রহস্যময়  সৃষ্টিধারার  ক্রম  বজায়  রাখার  জন্য  প্রকৃতির  বিধানে মাতাপিতা যখন উভয়ে মিলিত হন, তখন তাঁরই চিদ্‌রশ্মি  পঞ্চীকরণের  নিয়মানুসারে  রজোবীর্যের স ংযোগে মাতৃগর্ভে পাঞ্চভৌতিক শরীর গঠনে সাহায্য করে। তারই  পরিণাম  আপন  আপন  মাতাপিতার পুত্রকন্যারূপে  জন্মলাভ।

সচ্চিদানন্দ  অর্ধনারীশ্বরের  ক্ষেত্র  হতে  ঐ  ধারা  নেমে  আসে  বলে  মা-বাবার  আপন  সন্তানের  প্রতি  নিঃস্বার্থ  ভালবাসা  থাকে, তাঁরা  সন্তানের  জন্য  সদাকল্যাণ  তৎপর  হয়ে  থাকেন। পুত্র-কন্যার  পক্ষে  তাই  মাতাপিতার  ঋণ  অপরিশোধ্য।

পুত্রকন্যা  যদি  মাতা-পিতাকে  ঐ  অর্ধ নারীশ্বর  ঞ্জানে  এই  পথে  অর্থাৎ  অর্ধনারীশ্বর ক্ষেত্র  হতে পূর্বোক্ত চিদ্‌রশ্মিপথে
 ( যা  তার  আপন  আঞ্জাচক্রে  রয়ে  গেছে ) ধ্যান  করেন, তবে  ঐ অর্ধনারীশ্বর ক্ষেত্র  সহজেই  উদ্দীপিত  হয়, ঐ  চিদ্‌রশ্মির  টানে  উত্তরণের  পথ  সহজ  হয়। তার  ফলে  অন্তে  সান্দ্র  ব্রহ্মানন্দ  লাভ  হয়। নিজ  জীবনে  কৃতকৃত্য  ও  চরিতার্থ  হওয়ার  এটি  গুহ্যতম  সিদ্ধপথ।

মহাযোগেশ্বরদের  মতে,

ইহস্থাং  ঞ্জাত্বা  নিয়তনিজচিত্তোনরবরো
ন  ভূয়াৎ  সংসারে  ক্বচিদপি  চ  বদ্ধস্ত্রিভুবনে।।

এই  রহস্য  ঞ্জাত  হয়ে  যিনি  নিজ  চিত্ত  এইরূপ  ধ্যানের  পথে  লীন করতে  পারেন,  তিনি  স্বর্গমর্ত্ত্যপাতালের  কোন  স্থানে  আর  আবদ্ধ  হন  না, তাঁকে  আর  স ংসারে  জন্মগ্রহণও  করতে  হয়  না।

আমি  কেবল  প্রার্থনা  করব,

ভগভক্তস্য  তে  বয়ং উদশেমতবাবসা
মূর্ধ্বাং  রায়ঃ  আরভে।। (ঋগ্বেদ)

হে  প্রভু,  হে  বরণীয়  ভর্গদেবতা, এই  পথ  অনুসরণ  করে  জীব  যেন  প্রাণস্রোতের  মূর্ধ্বাতে  উজান  বেয়ে  চলে  যেতে  পারে।।

ওঁ  শিবমস্তু।

Tuesday, May 29, 2012

উত্তরা সুষুম্নাই উত্তরাপথ; উত্তরায়ণের পথ; সাক্ষাৎ ব্রহ্মমার্গ:-

Cont....... (5)


সুষুম্না ও  ব্রহ্মরন্ধ্রঃ---- মস্তিষ্কের পশ্চাৎ ভাগস্থ সুষুম্নাপথে ব্রহ্মরন্ধ্র হতে নিবৃত্তিমূলক শক্তি এবং সম্মুস্থ  সুষুম্নাপথে প্রবৃত্তিমূলক শক্তি আঞ্জাচক্রে আসে বা জাগে। এই নিবৃত্তি ও প্রবৃত্তি শক্তির দুটি ধারাকেই আঞ্জাচক্রের দ্বিদল বলা হয়; ইতর যোগীদের ধারণামত ধ্যানাবস্থায় সত্য সত্য দুই পাঁপড়ি বিশিষ্ট কোন পদ্ম ফুল ফোটে না!

শৈবাগমের ঋষি ঐ আঞ্জাচক্রের মাহাত্ম্য প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন-

যঃ করোতি সদা ধ্যানম্‌ আঞ্জাপদ্মস্য গোপিতম্‌।
পূর্বজন্মকৃং কর্ম বিনশ্যত্যবিরোধতঃ।।

---যিনি সর্বদাই প্রকৃত আঞ্জাচক্র বা দ্বিদলের ধ্যান করেন, তাঁর পূর্বজন্মকৃত সমূহ কর্ম অবাধে বিধ্বস্ত হয়।

স্বয়ং সদাশিব বলেছেন--- দ্বিদল পদ্মে ধ্যানের মহিমা আমিও সম্যক বলতে পারি না। যে করবে সেই জানবে যে এই ধ্যানের ফলে বিচিত্র বিচিত্র ফল দিব্যানুভূতি ও দিব্যাশক্তি আশাতীত ভাবে লাভ করা যায়।

দ্বিদলধ্যানমাহাত্ম্যং কথিতুম্‌ নৈব শক্যতে।
যঃ করোতি স জানাতি বিচিত্র ফলসম্ভবম্‌।।

ঐ আঞ্জাচক্রের ঊর্ধ্বে মস্তক মধ্যস্থ ব্রহ্মতালু বা ব্রহ্মরন্ধ্রে সহস্রদল পদ্মের বিকাশ স্থল। সহস্র শব্দের অর্থ এখানে অনন্ত। অনন্ত শক্তির আধার বলে এই কেন্দ্রকে সহস্রদল কমল বলা হয়। বিভিন্ন  চক্র, দল, অক্ষর ও দেবতাদিতে যত রকমের শক্তি ও জ্যোতির প্রকাশ আছে, তাদের সমষ্টি-কেন্দ্র এটি।

শূন্যের  মধ্যে  বা  গ্রামোফোন  রেকর্ডের  মধ্যে যেমন শব্দ বা সুরশক্তি অন্তর্নিহিত থাকে, সেইরকম এই  সহস্রদল  কমলের মধ্যে  ব্রহ্মাণ্ড  প্রকাশের  মূলীভূত  দিব্যতেজ নিহিত রয়েছে। এই  কেন্দ্র  উজ্জীবিত  হলে  উদয়কালীন  সূর্যের  মত  শ্বেতবর্ণের  জ্যোতিতে  দীপ্তিমন্ত হয়ে ওঠে। চিত্র মধ্যস্থ  ব্রহ্মতালুতে  সেই  উদয়কালীন  সূর্যবৎ  জ্যোতির  ছটা  দেখানো  হয়েছে।  সহস্রদল কমলের  জাগরণী  পর্ব।

বৈঞ্জানিকরা  বলেন  ঊর্ধ্বাকাশ  হতে  আলোগতি  যখন  ছুটে  আসে  তখন  তার  আকার  ইংরাজী  "ভি" অক্ষরের (V) মত। পূর্ব কথিত  আদ্যাশক্তির তেজও যখন ভূমণ্ডলে প্রকট হয় তখনও তার আকৃতি  দাঁড়ায়  ঐ " ভি" এর মত।


কিন্তু বিদৃতিদ্বার দিয়ে ব্রহ্মরন্ধ্র পথে জীবদেহে ক্রিয়ামান হওয়ার সময় তার গতি হয় উল্টা "ভি" অর্থাৎ 'A'। ঐ তেজ যখন ঊর্ধ্বায়িত হয় অর্থাৎ সাধনার দ্বারা জীবাত্মা ঊর্ধ্ব পথে অগ্রসর হলে সেই জীবাত্মা-জ্যোতির রূপ হয় 'V' এর মত। এটি যোগীর উত্তরায়ণের পথে উত্তরণ পর্ব। চিত্র  মধ্যস্থ  যোগীর ব্রহ্মরন্ধ্রে যে জ্যোতি মণ্ডিত 'V' এবং চারদিকে ছটার মণ্ডল দেখানো হয়েছে, তা উপর্যুক্ত তত্ত্বেরই সূচক।


এখানে স্থূলদেহের মস্তিষ্ক প্রদেশের চিত্র দেখিয়ে তত্ত্বটি পরিস্ফুট করার চেষ্টা করছি বটে কিন্তু সহস্রারাদি দিব্যকেন্দ্র প্রকৃতপক্ষে বিশুদ্ধব্যোম মণ্ডলে বিরাজিত। শিবস ংহিতার ভাষায়,


অতঊর্ধ্বং দিব্যরূপং সহস্রারং সরোরুং
ব্রহ্মাণ্ডাখ্যস্য দেহস্য বাহ্যে তিষ্ঠতি মুক্তিদম্‌।।

--- আঞ্জাপদ্মের ঊর্ধ্বদেশে ঐ দিব্যসহস্রদল কমল, ব্রহ্মাণ্ডাখ্য এই দেহের বহির্দেশে বিদ্যমান। অর্থাৎ এই  কেন্দ্রের বিস্তারের মধ্যেই স্থূলদেহ। এই কেন্দ্র পরম নির্বাণের স্থান।

তস্য  মধ্যান্তরালে  শিবপদমমলং
শাশ্বতং  যোগিগমনং,
নিত্যানন্দাভিধানং পরমবোধিপদং
শুদ্ধবোধপ্রকাশং।
কেচিদ্‌  ব্রহ্মাভিধানং  পদমতি  সুধিয়ো
বৈষ্ণবং তল্লপন্তি,
কেচিৎ হংসাখ্যমেতং  কিমপি সুকৃতিনো
মোক্ষবর্ত্মপ্রকাশং।।

---সারমর্ম হল, যাঁরা শৈব তাঁদের কাছে ঐ স্থানই পরমশিবপদ কৈলাসক্ষেত্র, যোগীদের কাছে চিরায়ত আনন্দের শান্তিবন তূরীয় ব্রহ্মপদ, সুধী বৈষ্ণবদের নিকট বিষ্ণুর পরম অব্যয়পদ, রামভক্তদের কাছে সাকেতভূমি অযোধ্যা, শাক্তদের কাছে মহাশক্তিপীঠ, নাথ ও সিদ্ধদের নিকট ঐটিই হ ংসপদ, আবার কোন কোন সুকৃতিমান্‌ ব্যক্তি একে মোক্ষপদের দ্বার বলে কীর্তন করেন।

আঞ্জাচক্রের কিঞ্চিৎ ঊর্ধ্বে অথচ সহস্রদল কমলের কিঞ্চিৎ অধোভাগে নিষ্কলঙ্ক সুধাস্রাবী চন্দ্রমণ্ডল আছে। এই চন্দ্রমণ্ডলের অন্ত হতে মধ্যভাগ পর্যন্ত এক আনন্দময় দিব্যস্থানে বিদ্যুদাকার এক ত্রিকোণ যন্ত্র আছে---

ত্রিকোণং  তস্যান্তঃ  স্ফুরতি  চ  সততং  বিদ্যুদাকাররূপং।


To  be  Continued...........

Friday, May 25, 2012

উত্তরা সুষুম্নাই উত্তরাপথ; উত্তরায়ণের পথ; সাক্ষাৎ ব্রহ্মমার্গ:-

Cont...... (4)


ঋষিদের মত আজকাল বৈঞ্জানিকরাও স্বীকার করছেন যে সৃষ্টির মূলে স্পন্দন--Vibration, Sound বা শব্দ। স্পন্দনের মাত্রা (Wave-length) এবং ঘনত্বের (Pitch) তারতম্যানুসারে জগতের বিভিন্ন পদার্থের সৃষ্টি। সৃষ্টির মূল কারণীভূত স্পন্দনের মাত্রা ও ঘনত্বের অন্তর্নিহিত জীবনী বা তেজশক্তিই এক একজন দেবতা।


বেদঞ্জানবিরহিত তথাকথিত সাধু যোগী তান্ত্রিক ও পুরাণের বর্ণনানুসারে দেবতারা বর্তমানে ভক্তদের কাছে মানবাকৃতি হয়ে পড়লেও উপরের গূঢ় রহস্য মনে রেখে ঋগ্বেদে দেবতার অন্য নাম দেওয়া হয়েছে---স্পন্দ্রা। স্পন্দ্রা মানে স্পন্দনের অন্তর্নিহিত অগ্নি তেজ বা প্রাণশক্তির "র" অর্থাৎ প্রকাশ বা বিস্তৃতি।


জীবনীশক্তির (Energy) ক্রিয়ায় সর্বদাই দুটি রূপ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকে--- পুরুষ (Static) ও প্রকৃতি (Dynamic), সুতরাং দেবতারা বেদের ভাষায়---'সযোষা', যোষিৎ বা স্ত্রী সহ; সেই জন্যই শক্তি সহ শিব, মাতাসহ পিতা, অঙ্গাঙ্গীভাবে অর্ধনারীশ্বর। মাতাপিতাকে অর্ধনারীশ্বর, একত্রে শিব শিবানী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মাতাপিতার প্রত্যক্ষ সেবা পরিচর্যা দ্বারা দেহমল, মনমল, চিত্তমল শোধন হয়, সেই সঙ্গে তাঁদেরকে জীবন্ত ঈশ্বর-ঈশ্বরী ঞ্জানে প্রকৃত আঞ্জাচক্রে ধ্যান জপ করলে চিতিশক্তির জাগরণ অবশ্যম্ভাবী।


বিশ্ব সৃষ্টির আদি কারণ ঐ বিদ্যুৎরূপা শক্তির লহর বা ঢলের উত্তরণ ও অবরোহন কিভাবে প্রতি বস্তুতে ছন্দায়িত হয়ে উঠছে, তার কতকটা সাদৃশ্য সমুদ্রের ঊর্মিমুখর ঢেউ দেখলে অনুমান করা যায়। সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন অজস্র ঢেউ অনবরত উঠানামা করছে, তটভূমিতে এসে আছড়ে পড়ছে।ঐ বিদ্যুৎরূপা মহাশক্তির সৃষ্টিবিক্রিয়ারও বিরাম নাই।


সমুদ্রের তরঙ্গ প্রথমতঃ হাতের কনুই ভাঙার মত ঊর্ধ্বে উত্থিত হয়ে নিম্নে পতিত হয় অর্থাৎ তার গতি ভঙ্গিমাটি ভুজের মত গমন করে অর্থাৎ ভুজগ; তর্‌তর্‌ করে গড়িয়ে স ংস্কৃত ভাষায় সুপ্‌ করে অগ্রসর হয়, তাই এর এক নাম সর্প (সুপ ধাতু হ'তে নিষ্পন্ন, বিদ্যুৎরূপা ঐ মহাতেজের লহর  সুপ্‌ধর্মী)।


সমুদ্রের ঢেউ গর্জে উঠে অগ্রসর হওয়ার সময় কুণ্ডলী পাকায়, ঐ দিব্যশক্তির খেলাও তদ্রূপ, সেইজন্য তার নাম দেওয়া হয়েছে কুণ্ডলিনী বা হ্বার। সমুদ্রের  জলে যেমন কুণ্ডলী পাকিয়ে স্প্রিং এর মত সহসা তড়াক্‌ করে লাফিয়ে উঠে সেইরকম ঐ আদ্যাশক্তির চিদ্‌ধারাও কুণ্ডলী পাকিয়ে স্প্রিং এর ঊর্ধ্বে নর্তনশীলা হয়ে স্থুল সুক্ষ্ম কারণ জগতের সমূহ বস্তু সৃষ্টিও নিয়মন করে চলেছে। সেইজন্য এর অপর নাম----পৃদাকু।


দূর প্রান্তের পরিধি পর্যন্ত সমুদ্রের ঢেউ এগিয়ে যায় সত্য কিন্তু জল যেখানে ছিল সেইখানেই থাকে, জল এ গিয়ে যায় না।আদ্যাশক্তির ধারাও সৃষ্টির স্তরে স্তরে উছল হয়ে উঠলেও তা কোন মতেই সৃষ্টির যে ঋতম্‌, বা ছন্দ তা লঙ্ঘন করে না, অতিক্রম করে না, এগিয়ে যায় না--ন+আগ=নাগ।


বাস্তব জগতে সর্প নামক জীবের  চলন-গমনে এই সমস্ত ধর্ম দেখা যায়, তাই ঐ মহাচৈতন্যের ধারাকে ভুজগা, নাগ, কুণ্ডলিনী প্রভৃতি আখ্যা দেওয়া হয়েছে; অননুভবী ও মূর্খদের কল্পিত ধারানুযায়ী সত্য সত্যই মানুষের Spinal Cord এর মধ্যে লিঙ্গমূলে ঐ রকম কোন সর্পাকৃতি বস্তু সুপ্তাবস্থায় পড়ে নাই।


যাঁরা বৈদিক মহাযোগে সিদ্ধকাম কিংবা যাঁরা বেদাধ্যায়ী তাঁরাই সবাই জানেন, আদ্যাশক্তি বা ত্রিজগৎব্যাপ্ত ঐ মহাচিতিশক্তির  খেলা অন্তদৃষ্টিতে লক্ষ্য করেই ঋগ্বেদের ঋষি সূর্য রশ্মির অন্তর্নিহিত তড়িৎশক্তিকে 'সসর্পরী বাক্‌' বলে বন্দনা করেছেন। অর্থববেদেও অগ্নি, ওষধি, জল ও বিদ্যুৎজাত সৃপধর্মী তেজ বা তড়িৎকণার মহিমা প্রকাশ করতে গিয়ে বলা হয়েছে,


সসর্পরী  বহুধা  মহান্তি
মর্ত্ত্য  অমর্ত্ত্যেন  স  যোনিঃ।।

----ঐ সৃপধর্মী দিব্যতড়িৎ কণাই মর্ত্ত্য ও অমর্ত্ত্যলোকের মূল সৃজনীধারা, তার দ্বারাই সৃষ্টি ঐশ্বর্য বহুধা বিকশিত হয়।

ঋষিরা তাঁদের দিব্য অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যে সব রহস্যময় পারিভাষিক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার নিগূঢ় অর্থবোধও হওয়া চাই।আঞ্জাচক্র হতে সহস্রারের মধ্যেই এই মহাপিতৃযাগ বা পিতৃসাধনার সুরু এবং শেষ।


মহাত্মা গোরক্ষনাথ প্রণীত অমনস্কযোগ, গোরক্ষসিদ্ধপদ্ধতি, শিবযোগ, যোগি-যাঞ্জবল্ক্যম্‌ ধ্যান বিন্দু ও নাদবিন্দু উপনিষদ্‌ এবং আরও বহুতর বেদ মন্ত্রে যে সব তত্ত্বের ইঙ্গিত আছে তা স্বাধ্যায় করলে জানা যায়, মেরুদণ্ডের মজ্জার সঙ্গে যে স্থানে মস্তিষ্কের মজ্জার স ংযোগ আছে সেই স্থানের নামই প্রকৃত আঞ্জাচক্র (ছবিতে চিহ্নিত)।


মস্তিষ্ক মধ্যস্থ ব্রহ্মরন্ধ্র হ'তে নিঃসৃত প্রাণাত্মার চিদাত্মক ঞ্জানশক্তি এই কেন্দ্র হতে নিয়মিত (Controlled & regulated) হয়ে স্থূল শরীরে আসে বলেই ঐ কেন্দ্রের নাম আঞ্জাচক্র। সুষুম্না এই স্থান হতে দুভাগ হয়ে ব্রহ্মরন্ধ্রে গিয়েছে।


আঞ্জাচক্র হতে সম্মুখস্থ ললাট প্রদেশের অভ্যন্তর পথে অর্ধবৃত্তকারে বেঁকে ব্রহ্মরন্ধ্রের কাছে তার একটি মুখ, অপর মুখটিও অর্ধবৃত্তাকারে বেঁকে ব্রহ্মরন্ধ্রের অপর পাশে গিয়ে ঠেকেছে বটে তবে সেটি গিয়েছে আঞ্জাচক্রের পেছন দিক দিয়ে।এই উভয় পথই শূণ্য-নালী অর্থাৎ আকাশময়।


ব্রহ্মতালুদেশে সুষুম্নার ঐ দুইমুখের মধ্যস্থলে ব্রহ্মরন্ধ্র। ব্রহ্মরন্ধ্রের অর্থ, যে রন্ধ্র বা ছিদ্র দিয়ে ব্রহ্মমার্গে জীবাত্মার উৎক্রমণ ঘটে, কিংবা যে রন্ধ্র দিয়ে পরমাত্মা শরীরস্থ সীমায়িত স্থানে এসে জীবাত্মারূপে প্রকট হন।


ঐতরেয় উপনিষদে এই তত্ত্ব বিশদীকৃত করতে গিয়ে বলা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তা মাতৃগর্ভস্থ  শিশুর তালু ভঞ্জ্‌ বা বিদীর্ণ করে তন্মধ্যে প্রবিষ্ট হ'য়ে জীব রূপে প্রতিভাত হন। ব্রহ্মরন্ধ্রের সূক্ষ্মস্থানে এই বিদারণ ক্রিয়া হয়, তাই তার নাম বিদৃতিদ্বার। ভঞ্জ করে আসেন বলে তাঁর নাম---ভগ। ঋগ্বেদে তাই প্রাচীন আদি দেবতার নাম ভগ, এখন বলা হয় ভগবান।


To  be  Continued.........

Wednesday, May 23, 2012

উত্তরা সুষুম্নাই উত্তরাপথ; উত্তরায়ণের পথ; সাক্ষাৎ ব্রহ্মমার্গ:-

Cont...... (3)


স্বামী বিবেকানন্দ প্রণীত রাজযোগ, কলিকাতা হাইকোর্টের ভূতপূর্ব প্রধান বিচারপতি স্যার জন উড্‌রফ প্রণীত The Serpent Power প্রভৃতি পুস্তক ছাড়াও আর ও বহুবিধ তান্ত্রিক, হঠযোগী, স্বয়ংসিদ্ধযোগী হবুযোগীদের রচিত পুস্তক এমন সব ছবি প্রচারিত হয়েছে যে, যোগাভ্যাসী মাত্রেই ধারণা সার্দ্ধ ত্রিবলয়াকারা কুণ্ডলিনী লিঙ্গমূলে সর্পাকৃতি হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। যোগের দ্বারা তা জাগবে এবং শির্‌ শির্‌ করে চক্র হতে চক্রান্তরে উঠে ব্রহ্মরন্ধ্রে গিয়ে ঢুকবে।সে সব ছবির কী বাহার! কুণ্ডলী-পাকানো একটি সাপ শিরদাঁড়ার ভিতরে ফোঁস ফোঁস করে উঠছে! আর পদ্মগুলি ফুটে উঠছে, কোনটিতে চারটি পাঁপড়ি, কোনটিতে ছয়টি, কোনটিতে দশটি, কোনটিতে দুটি!


ঐ ঐ শব্দের বৈদিক অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন! বেদে সসর্পরী বাক্‌, সর্প প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু বেদঞ্জান বিরহিত অননুভবী তথাকথিত যোগীদের ধ্যান ধারণা সে পথ ধরে চলে নি।যোগচিন্তাপথে যে সব চক্র বা আধ্যাত্মিক কেন্দ্র উদ্ভাসিত হয়, সেগুলির অবস্থান বিশুদ্ধব্যোম মণ্ডলে।


আপনার ঘরের দেওয়ালে ভারতের একটি মানচিত্র দেখিয়ে যদি ছেলেকে বলেন, এই দেখ পশ্চিমবঙ্গ, এই হাওড়া পূর্বদিকে দেখ আসাম, ঐ দেখ উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, তা বললে যেমন আপনার ঘরের দেওয়ালে সত্যি সত্যি ঐ সব স্থান থাকে না, তেমনি অনুভবসিদ্ধ যোগীরা সাধরণভাবে আধ্যাত্মিক তত্ত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেছেন----


If this be the lowest plexus Muladhar, then this is the highest i.e. Sahasrar. সত্যি সত্যি দেহের মধ্যে ঐ সব চক্র বা সর্প নাই।


জীবের মধ্যে যে চৈতন্য ধারা নখাগ্র থেকে কেশাগ্র পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে তার কেন্দ্রস্থল, সেই ধারার accumulating centre আঞ্জাচক্র নামে অভিব্যক্ত।ধ্যানবিন্দু উপনিষদের মতে ঐটাই যদি জীবাত্মা, রুহ্‌ বা সুরতের স্থান হয় অ র্থাৎ আপনার 'আপনি' যদি ঐখানে থাকে তাহলে তার ঊর্ধ্বের পথে অভিসার ঐখান থেকেই হবে! মনে করুন, একটি সাততলা অট্টালিকার উচ্চতম তলায় আপনার বাবা আছেন, আপনি আছেন ছয় তলায়, বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য আপনি কি নীচতলায় নেমে এসে পুনরায় প্রত্যেক তলায় সিঁড়ি ভেঙে সাত তলায় যাবেন?


আঞ্জাচক্রে ধ্যান বলতে প্রায় প্রত্যেকেই ভ্রূদ্বয়ান্তর্বতী স্থানকে বোঝেন, তাই সকলেই চোখ বন্ধ করে ঐ স্থানে ধ্যান জপ করেন।কিন্তু ঐ স্থান আঞ্জাচক্র নয়, চিত্রে প্রদর্শিত বৃত্ত মধ্যস্থ ক্রশ চিহ্নে চিহ্নিত স্থানটিই আঞ্জাচক্র, যোগী বা যোগাভ্যাসীর প্রকৃত হৃদয়।


এই চিত্রে চিহ্নিত স্থানেই ধ্যান করে পিতৃসাধনা সুরু হয়, কিছুদিন অভ্যাস করলেই দিব্য জ্যোতির প্রকাশ ঘটে। এই জ্যোতি হঠযোগী ক্রিয়াযোগী তান্ত্রিক প্রভৃতি আবিষ্কৃত চোখ-কান টেপা, ন্যাস প্রাণায়াম কুম্ভকের কুহেলিকা নয়, মায়া কী প্রাঙ্গন মেঁ মজ়ে কা খেল্‌ নয়, কোন বাহ্যিক ক্রিয়া প্রক্রিয়ার প্রহেলিকা নয়, এই জ্যোতিই প্রকৃত চৈতন্য রাজ্যে প্রবেশের ছাড়পত্র।


বেদানুসারী যোগসন্ধ্যাধৃত বচনটি  হল---


অকল্পিতোদ্ভবং জ্যোতিঃ স্বয়ং জ্যোতিঃ প্রকাশিতম্‌
অকস্মাৎ দৃশ্যতে জ্যোতিস্তৎ জ্যোতিঃ পরমাত্মনি।

যে জ্যোতি বিনা কল্পনায় বিনা প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়, যে জ্যোতি স্বয়ং প্রকাশিত হয় এবং যে জ্যোতি হঠাৎ দেখা যায়, সেই জ্যোতি পরমাত্মার জ্যোতি। এই পরমাত্ম-জ্যোতিতেই পিতৃলোক উদ্ভাসিত।

বিঞ্জানাচার্যদের আচার্য ঋষি আইনষ্টাইন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকারিণী প্রকৃতি শক্তির লীলাবিলাস বর্ণনা করতে গিয়ে সঙ্কেতে বলেছেন, 

E=(MC)squre; E= শক্তি (Energy), M= পদার্থ (Mass), C= আলোর গতি (Velocity of light)।

তাঁর সাঙ্কেতিক ফরমূলার সরল অর্থ, আদ্যাশক্তি আলোগতি রূপে বিভিন্ন অনুপাতে প্রত্যেক পদার্থে সন্নিবিষ্ট আছেন।প্রত্যেক পদার্থই আদ্যাশক্তির বিভিন্ন রূপ।

গীতায় এই কথা বলতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন---


 "মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ"। 


অংশ বলতে সবাই বোঝেন ভাগ। কিন্তু পূর্ণের কোন ভাগ বা খণ্ড হয় না। অংশ অর্থে অংশু বা কিরণ, বৈদিক পরিভাষায় স্ফুরজ্যোতিঃ। সকল জীবই সেই একই ব্রহ্মশক্তির স্ফুরিত জ্যোতির ধারা মাত্র।

বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি দীর্ঘতমা আরও সুন্দরভাবে ঐ তত্ত্ব পরিস্ফুট করতে গিয়ে বলেছেন, ঐ আদ্যাশক্তি--- "সা চিত্তিভিনি হি চকার মর্ত্তং বিদ্যুদ্ভবন্তী প্রতি ব্রবিম্‌ ঔহৎ"। 

অর্থাৎ তাঁর চঞ্চল গতি সমূহের চরণপাতে অর্থাৎ স ংঘাতে সৃষ্ট প্রত্যেক মর্ত্যজাত পদার্থের মধ্যে বিদ্যুৎরূপা হয়ে নিজের স্বরূপ উদ্‌ঘাটিত করে দেন।


আইনস্টাইন যাঁকে বলেছেন আলোগতি, বৈদিক-বৈঞ্জানিক দীর্ঘতমা তাঁকেই বলেছেন---বিদ্যুৎগতি। সঙ্কেতে এই শক্তির সৃষ্টি-প্রক্রিয়া বর্ণনা করার সময় বৈদিক ঋষি তথা বৈঞ্জানিকরা বিভিন্ন স্তরের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য নানা বর্ণাত্মক অক্ষর ব্যবহার করতেন,সেইগুলিকে বর্তমানে বীজমন্ত্র বলা হয়। যার অন্তনির্হিত তাৎপর্য না বুঝেই লক্ষ লক্ষ ভক্ত নিরন্তর জপ করে চলেন।


যেমন একটি বীজ মন্ত্র, ধরুণ---হ্রীঁ। একে রূপকভাবে মায়াবীজ, ভুবনেশ্বরী বীজ ইত্যাদি বলা হয়। আসলে এর তাৎপর্য হল----আকাশ তত্ত্ব (হ) এর সঙ্গে প্রাণাগ্নিশক্তি (র) যুক্ত হয়ে সম্বিদ্‌ক্ষেত্র বিন্দুতে (ঁ) অর্থাৎ উর্ধ্বের পথে তার কেন্দ্রমুখীন্‌ যে অগ্রগতি বা অভিসার, ঐ বীজ তারই সূচক। চিত্রপদর্শিত প্রকৃত আঞ্জাচক্রে জপ ধ্যান করলে তবে মহাচেতন সমুত্থানের পথে অগ্রগতি সম্ভব হবে।


উপরে এই যে বিদ্যুৎরূপা শক্তি, বা চৈতন্যধারার কথা বলা হয়, ঐ শক্তি বৃত্তধর্মযুক্তা, বৃত্তধর্মসৃষ্টিকারিণী অর্থাৎ বৃত্তকারে ঐ তেজের ঢল নেমে আসে, বৃত্তকারেই কেন্দ্রীভূত হয়। একথা সবাই জানেন, একটি বিন্দু কেন্দ্রকে আশ্রয় করে প্রসারতা লাভ করলে একটি বৃত্ত হয়।


বৃত্তের সাধারণতঃ পরিধি পর্যন্ত সর্বাঙ্গের প্রত্যেকটি বিন্দু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে আবার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত থাকে।বৃত্তের সাধারণ ধর্ম বহির্মুখী (Centrifugal) হলেও এর প্রত্যেকটি অঙ্গ-বিন্দুযুগপৎ কেন্দ্রোন্মুখীও (Centripetal) হয়, যুগপৎ চর ও অচর।


শব্দ বা বাক্‌ অর্থাৎ স্পন্দন (Vibration) বৃত্তকারে চরাচর বিশ্বভুবনময় বিস্তারিত হওয়ার ফলেই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছু পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি-বিঞ্জানের রহস্যই এই। প্রত্যেক পদার্থ ঐ তেজ বিদ্যুৎ বা শক্তির তরঙ্গ ভিন্ন আর কিছু নয়।প্রত্যেক তরঙ্গের মধ্যে পূর্বোক্ত আদিশক্তি বিদ্যুৎরূপে অবস্থিত। সুতরাং একথা স্পষ্ট হল যে ঐ শক্তি বিদ্যুৎরূপা হয়ে বৃত্তধর্মী তরঙ্গ রূপে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃজন ও পরিচালনা করছেন। চিত্র প্রদর্শিত মস্তিষ্কগ্রন্থিতে বৃত্তচিহ্ন দ্বারা সেই তত্ত্বটিকে সূচিত করা হয়েছে।


To  be  Continued..........

Monday, May 21, 2012

উত্তরা সুষুম্নাই উত্তরাপথ; উত্তরায়ণের পথ; সাক্ষাৎ ব্রহ্মমার্গ:-

Cont..... (2)


এবার সাধনার কথা আসা যাক। মাথাটা চিৎ করে দিলে যেখানটায় ভাঁজ  বা  টোল খায় সেই স্থানটিকে মস্তকগ্রন্থি বলে। এইখানে আঞ্জাচক্রের কেন্দ্র।বৃত্তমধ্যস্থ ক্রশ চিহ্নের দ্বারা চিত্রে এই স্থানটিকে সূচিত করা হয়েছে।ধ্যানবিন্দু উপনিষদের ঋষির উপলব্ধি, এই স্থানটিই আত্মার অধিষ্ঠান ক্ষেত্র--- হৃদিস্থানে আঞ্জাচক্রং বর্ততে। তন্মধ্যে রেখাবলয়ং কৃত্বা জীবাত্মরূপ ং জ্যোতিরূপমণুমাত্রং বর্ততে। 


ইতর যোগীরা হৃদয় বলতে বক্ষস্থলের মধ্যস্থলকে বোঝেন এবং তদনুযায়ী ধ্যানের নির্দেশ দেন। ভ্রান্ত নির্দেশ। শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে- ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশে অর্জুন তিষ্ঠতি বাক্যে এই আঞ্জাচক্রকে যে প্রকৃত হৃদয় বলেছেন, শ ংকরাচার্য তৎকৃত গীতার ভাষ্যে তা স্পষ্টীভূত করেছেন। আঞ্জাচক্রই প্রকৃত হৃদয় এবং এইটিই আত্মার অধিষ্ঠান ক্ষেত্র। প্রকৃত অধ্যাত্মসাধনা অর্থাৎ আত্মার অধিরোহনপর্ব এখান থেকেই শুরু হয়।


সারা ভারতবর্ষ জুড়ে নানা মঠ মিশন প্রকাশিত ও প্রচারিত নানাবিধ যোগশাস্ত্রের কৃপায় ধর্ম পিপাসু নরনারীর মন কান ঞ্জান ইড়া পিঙ্গলা সুষুম্না, মূলাধার স্বাধিষ্ঠান মণিপুর অনাহত বিশুদ্ধ আঞ্জা ও সহস্রার প্রভৃতি শব্দগুলির সম্বন্ধে বিচিত্র বিচিত্র ধারণা ও সিদ্ধান্ত করে বসে আছে। মহাগুরু মাতাপিতাকে ধরে উচ্চতম আধ্যাত্মিক মণ্ডলে যাবার যে বৈদিক মহাযোগের কথা বৈদিক ঋষিরা ঐ সম্বন্ধে যা বলতেন সেগুলি হল---


To  be  Continued.......

Tuesday, May 15, 2012

উত্তরা সুষুম্নাই উত্তরাপথ; উত্তরায়ণের পথ; সাক্ষাৎ ব্রহ্মমার্গ:-



বেদের নির্দেশ পিতাকে ঈশ্বরঞ্জান।পিতৃমেধ, পিতৃযঞ্জ, মহাপিতৃযঞ্জ, পিণ্ডপিতৃযঞ্জ, পিতৃঅর্চনা প্রভৃতি বৈদিকযঞ্জ পিতৃপূজারই নামান্তর।বৃহদারণ্যক উপনিষদে মনুষ্যলোক, ধ্যান ধারণা ও তপস্যাদি দ্বারা পিতৃলোক এবং বিদ্যাদ্বারা দেব-লোককে জয় করা যায়---


সোহয়ং মনুষ্যলোকঃ পুত্রেণৈব জয্যো নান্যেন কর্মণা, কর্মণা পিতৃলোকঃ, বিদ্যয়া দেবলোকঃ।


এখানে জয়ের অর্থ তৎ তৎ লোকের কর্তব্যকর্ম সাধনার দ্বারা পরিপূর্ণ ও সার্থক করে তোলা।উক্ত শ্রুতিমন্ত্রের ভাষ্য করতে গিয়ে ঞ্জান-ভাস্কর শংকরাচার্য বলেছেন---


তেষাং সোহয়ং মনুষ্যলোকঃ পুত্রেণৈব সাধনেন জয্যঃ জেতব্যঃ সাধ্যঃ।


এই ঋষিবাক্যের উদ্দেশ্যে ও আশয় হল ঘটনাক্রমে যদি পিতার কোন কর্তব্য কর্ম যথা দান, তপস্যা, অধ্যয়ন, সমাজঋণ, দেবঋণ, ঋষিঋণ প্রভৃতি বাকী থাকে, তাহলে তা পূরণ করে পিতাকে ঋণ মুক্ত করা পুত্রের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সেই সঙ্গে নিজেও পিতৃচিন্তায় বিভোর হয়ে কৃতকৃত্য হতে পারলে তবেই সন্তান 'পুত্র' নামের যোগ্য।


তস্মাৎ---পূরণেন ত্রায়তে স পিতরম্‌ যস্মাৎ তস্মাৎ পুত্র নাম।


পুত্র কেবল সারা জীবন ধরে একতরফাভাবে মাতাপিতার প্রাণঢালা ভালবাসা আদরযত্ন এবং তাঁদের পরিত্যক্ত বিষয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার ভোগ করবে, যথেচ্ছভাবে তাঁদের নিঃস্বার্থ ভালবাসার সুযোগ নেবে এমন কোন সার্বভৌম জন্মসত্ত্ব নিয়ে পুত্রকন্যা পৃথিবীতে আসে নি। মাতাপিতার প্রতিও পুত্রকন্যার তীব্র সাধন-সাপেক্ষ কিছু কর্তব্য আছে। পিতার যে সব ছিদ্র অর্থাৎ অপূর্ণতা থাকে তা পরিপূরণ করতে পারলে তবেই পুত্রের পুত্রত্ব----


ইদং তৎ পুত্রস্য পুত্রত্বম্‌, যৎ পিতুশ্ছিদ্রং পূরয়িত্বা ত্রায়তে।


সত্যদ্রষ্টা ঋষিরা বলেছেন মৃত্যুর পর পিতাতে হিরণ্যগর্ভের সমুদয় অমরপ্রাণ প্রবেশ করে অর্থাৎ তখন তাঁর মর্ত্ত্যভাব চলে যায়; তাঁর প্রাণরশ্মি মৃত্যুর পরে হিরণ্য-গর্ভলোকে বিরাজমান থাকে।তাই বৈদিক পিণ্ডপিতৃযঞ্জে পিতার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভোজ্য বস্তুকে পৃথিবীরূপে এবং পিতাকে তার অধিষ্ঠাতৃদেবতা অগ্নিরূপে ধ্যান করার বিধান আছে।পিতার প্রতি পুত্রের কেবল ঐহিক কর্তব্য নয়, নিজের পূর্ণতার জন্যই পিতাকে কেন্দ্র করে কিভাবে সিদ্ধ সাধনায় ব্রতী হওয়া যায়, বেদ উপনিষদ ঘোষিত সেই পিতৃলোক কোথায়, কিভাবেই বা পিতাকে ধরেই জীব মুক্তি-সরণীতে পদক্ষেপ করতে পারে।


বর্তমানে হিন্দুসমাজে স্মৃতিশাস্ত্র ও পুরাণের (বায়ুপুরাণ, গরুড়-পুরাণ প্রভৃতি) বিধান অনুসারে মাতৃপিতৃশ্রাদ্ধ কালে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে কুশের উপর পিণ্ডদানাদির যেমন ঘটা দেখা যায়, বৈদিক ধারণায় এই সব আচার অনুষ্ঠানের বিধি বিধান ছিল না।


পালি সাহিত্যে স ংস্কৃত শ্রাদ্ধ কথাটির অনুরূপ শব্দ পাই 'সদ্ধ'।


এই সদ্ধ শব্দটির অর্থ বৌদ্ধ ধারণায় মৃত আত্মীয়ের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণ গণকে খাদ্য ও অন্যান্য বস্তুদান রূপ প্রেতকৃত্য।


বর্তমান হিন্দুসমাজে প্রচলিত শ্রাদ্ধ-ব্যবস্থায় তার ছায়া পড়েছে।মৃত মাতাপিতার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি উপায় হিসাবে দেখলে এতে কোন আপত্তি করার কারণ দেখি না।


কিন্তু নিজের তথাকথিত Status বজায় রাখা এবং নিজ অহ ং-এর স্ফুর্ত্তি ও পূর্ত্তি সাধারণতঃ ঐ সব অনুষ্ঠানের প্রধান অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল।


মাতা-পিতার জীবদ্দশায় যে নারকীপুত্র শ্রদ্ধা ও প্রেমবশতঃ তাঁদের সেবাপূজা করল না,তাঁদের দেহান্তের পরেই দেখি তারা শ্রাদ্ধের ঘটা করতে কুণ্ঠিত হয় না। একে প্রহসন ছাড়া আর কি বলা যায়?
বেদে সরাসরি শ্রাদ্ধ শব্দটি না থাকলেও বৈদিকযুগে এমন কি বৌদ্ধযুগের অব্যবহিত পূর্ব পর্যন্ত মাতাপিতার সেবাপূজাকেই পবিত্রতম যঞ্জ এবং পুত্রের অবশ্য প্রতিপাল্য কর্তব্য এবং সাধনার শ্রেষ্ঠ অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করা হত।


অনেক পণ্ডিতের মতে মহর্ষি পাণিনির আবির্ভাব বৌদ্ধ-পূর্ব-যুগে।
তিনি তাঁর বিখ্যাত অষ্টাধ্যায়ী সূত্রে শ্রাদ্ধ শব্দ ব্যবহার করেছেন। সূত্রটি হল-----


'শ্রাদ্ধম্‌ অনেন ভুক্তম্‌ ইণি ঠনৌ'।

এর অর্থ 'অনেন ভূক্তম্‌' এই অর্থে শ্রাদ্ধ শব্দের উত্তরে ইণি ও ঠন্‌ প্রত্যয় হয়। অনেন ভূক্তম্‌ মানে পিতার দ্বারা ভূক্তম্‌ অর্থাৎ মাতাপিতার ভোজন ক্রিয়া; সযত্নে জীবিত মাতাপিতাকে ভোজন করাতে হবে, নিজ হাতে সেবা পরিচর্যা করতে হবে।

পাণিনিরও পূর্ববর্তী মহাকবি ভাসের প্রতিমা নাটকের পঞ্চম অঙ্কে শ্রাদ্ধ শব্দটির প্রয়োগ আছে--- শ্রদ্ধয়া দত্তম্‌ শ্রাদ্ধম্‌। প্রচেতা রচিত শ্রাদ্ধকল্প নামক গ্রন্থের নামও এই নাটকে দেখতে পাওয়া যায় অর্থাৎ মহর্ষি প্রচেতার যুগেও মাতাপিতাকে ভক্তি ভরে সেবা পূজা, তাঁদের সর্ববিধ ইচ্ছার পূরণ, সর্বতোভাবে তাঁদেরকে সুখী ও তৃপ্ত করাকেই শ্রাদ্ধ হিসাবে গণ্য করা হত।

"জ্যান্তে দিল না ভাত কাপড়, মরলে করবে দান-সাগর"----

এ ধরণের জঘন্য রীতিকে শ্রাদ্ধ হিসাবে বৈদিক যুগে গণ্য করা হত না।
জীবিত মাতাপিতার সেবাপূজার পরিবর্তে তাঁরা মারা গেলে যে তথাকথিত শ্রাদ্ধপর্ব তার কোন মূল্য নেই।

কোন ব্যক্তি জীবিত না থাকলে তাঁর সেবা পূজা সম্ভব হয় না। সেব্য ও সেবক মিলিত হলেও তবেই সেবকের পক্ষে সেবা করা সম্ভব হয়। স্বামী দয়ানন্দ তাঁর ঋগ্বেদের ভাষ্য ভূমিকাতে বলেছেন---

"সেব্যসেবকসন্নিকর্ষাৎ সর্বমেতৎ কর্ত্তুং শক্যতে ইতি"।।

সারকথা জীবিত মাতাপিতার প্রত্যক্ষ সেবাপূজা করাই মুখ্য সাধনা।
জীবিত মাতাপিতার সেবা পরিচর্যা ছাড়া তাঁদের জীব্দদশাই এবং তাঁরা গত হলেও এমন একটি সিদ্ধ উপাসনা পদ্ধতি আছে, এমন এক সিদ্ধ মাতৃপিতৃবীজমন্ত্র আছে, যা সাধনা করলে ইষ্ট সাক্ষাৎকার হয়ে থাকে।

মাতাপিতার জীবিত থাকাকালে তাঁদেরকে উপেক্ষা করে তাঁদের মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধের ঘটা করা যেমন ভাবের ব্যাভিচার, তেমনি প্রত্যক্ষ সেবা পরিচর্যার পরিবর্তে অত্র প্রদর্শিত পন্থায় কেবল ধ্যানাসনে বসে ধ্যান জপ করলে তা বন্ধ্যা প্রহসনে পর্যবসিত হতে বাধ্য।

To  be  Continued........

Friday, April 13, 2012


তুমি  নির্মল  কর, মঙ্গল  করে  মলিন  মর্ম  মুছায়ে;
তব  পূণ্য  কিরণ  দিয়ে  যাক  মোর  মোহ  কালিমা  ঘুচায়ে।।
লক্ষ্য-শূণ্য  লক্ষ  বাসনা  ছুটিছে  গভীর  আঁধারে,
জানি  না  কখন  ডুবে  যাবে  কোন্‌  অকূল  গরল-পাথারে।
প্রভু, বিশ্ব-বিপদ-হন্তা,  তুমি  দাঁড়াও রুধিয়া পন্থা,
(তব) শ্রীচরণ-তলে  নিয়ে  এস  মোর  মত্ত  বাসনা  গুছায়ে।
আছ  অনল-অনিলে, চির  নভোনীলে,  ভূধর-সলিলে-গগনে,
আছ  বিটপী-লতায়, জলদের গায়, শশী-তারকায়  তপনে।
আমি  নয়নে  বসন  বাঁধিয়া  বসে  আঁধারে  মরিব  কাঁদিয়া,
আমি  দেখি  নাই  কিছু,  বুঝি  নাই  কিছু,  দাও  হে  দেখায়ে  বুঝায়ে।

  




Tuesday, March 13, 2012


হোম আরতি ঘি এর বাতি তপতপস্যার আড়ম্বর,
জপবো না নাম ন্যাস প্রাণায়াম করব নাকো অতঃপর।
কাজ কি মিছা জঞ্জালে,
কী হবে মোর চক্ষু মুদে
আসন পেতে বাঘছালে?
তুমিই আমার স্বর্গ পিতঃ!
তুমিই আমার দেবতাগো
দাও চরণের পুণ্যধূলি
আশিস্‌ তোমার মহার্ঘ!



Monday, March 12, 2012


যেদিন পিতার বিমল সত্তা
বুঝে নেবে প্রাণে প্রাণে
সেইদিন হ'তে জীবন তোমার
ভরে যাবে গানে গানে।




***********


যা পাবে মায়ের কাছে, তত স্নেহ কোথা আছে?
আর কারও প্রেমে তুমি ভুলিও না ভাই,
সে-সব প্রেমের সরা, সতর্কে ওজন করা
মা'র প্রেমে দরদাম কষাকষি নাই।




**************


যেদিন আমার জনম হ'ল সেদিনই ত দীক্ষা পেয়েছি,
এক অক্ষরের মন্ত্র 'মা'-এর ভিক্ষা পেয়েছি।
দীক্ষা বিনা চলে না যে একটি প্রাণের শ্বাস
সেই কথাতে গভীর আমার রয়েছে বিশ্বাস।
আমি নীর পেয়েছি
ক্ষীর খেয়েছি
পরাণ পেয়েছি
তারই সাথে 'ওঁয়া ওঁয়া ও-মা বলে ডাকতে শিখেছি
যেদিন আমার জনম হ'ল সেদিনই ত দীক্ষা পেয়েছি।।



Tuesday, March 6, 2012


দোলযাত্রার পুণ্যক্ষণে "মা নর্মদার" কৃপাধন্য "তপোভূমি নর্মদা"র লেখক স্বর্গীয় শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রীজীর জন্মদিনে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম।


চলে গেছ তুমি, শুধু প্রান্তর ধূ ধূ করে অনিবার,
চারিদিকে ক্ষীণ কাশের শীর্ষ, দীনতা বাড়ায় তার।
আছে ঝটিকার প্রবল স্বনন, রোদের তীব্র জ্বালা,
নাই আর নাই ধূসর বেলায় তোমার ধর্মশালা।
যাও তরু তুমি, তোমার লাগিয়া ঝড়ে পড়ে আঁখিনীর ---

যাও মঙ্গল চামরছত্র কানন রাজশ্রীর।
যাও তাপিতের দয়ালবন্ধু সবল সরণ প্রাণ,
যাও অতীতের স্তম্ভ অরুণ, প্রকৃতির মহাদান।
তরুর মধ্যে অশ্বত্থ যিনি, বড় যাঁর কেহ নাই,
তাঁরি সাথে তুমি মিশে যাও পুনঃ, তাঁরি বুকে হোক ঠাঁই।।







Most Blessed,
Ananda Mohan Ghosal (only Son)
Debhuti Ghosal (only Grand daughter)


www.twitter.com/tapobhumi30

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com (Hindi)






Wednesday, February 15, 2012

খাড়েশ্বরী মহারাজঃ---


Cont (Last) .............. 

গুলজারী ঘাটের মন্দির দর্শনের পর বিন্ধ্যেশ্বরীজী বললেন---- 
গুরুজীকো ছোড়কে জ্যায়দা সময় বাহার মেঁ রহ্‌না ঠিক নেহি। গুলজারী ঘাটের শিবমন্দিরের দরজা খুলেছে। প্রণাম করে গুলজা গ্রামে ঠাড়েশ্বরী মহারাজের আশ্রমে ফিরে এলাম। 

তখনও অনেক বেলা আছে। এসে দেখলাম ঠাড়েশ্বরীজী সেই একইভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। বিন্ধ্যেশ্বরীজী তাঁর গুরুদবকে প্রণাম করে কুটিরে গিয়ে ঢুকলেন, আমি নর্মদার ঘাটে গিয়ে বসলাম। মনের মধ্যে অনেক চিন্তা ভিড় করে এল। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাধুদেরকে ইষ্টসিদ্ধির জন্য অনেক রকম শারীরিক নির্যাতন ভোগ করতে দেখেছি। প্রয়াগে কুম্ভমেলায়, কল্পবাস ব্রত পালনের সময় মাঘমেলায় আমি ঊর্ধবাহু, আকাশমুখী, পঞ্চধুনী, জলশয্যী প্রভৃতি নানা শ্রেণীর সাধু দেখেছি। গুদড়ী সম্প্রদায়ের সাধু সবসময় চলতে থাকেন, হয় পথে নতুবা একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পদচালনা করতে করতে তাঁদের দুটো পা ফুলে গেছে তবুও হাঁটার ছন্দে তাঁদের পদচালনায় বিরাম নাই।

কেউ কেউ এক বা উভয় বাহুকে সতত উর্ধেই তুলে রাখেন। কেউ বা উপরের দিকে কোন গাছের ডালে পা দুটো বেঁধে রেখে অধোমস্তকে ঝুলতে থাকেন এবং মাথার নিচে অগ্নিকুণ্ড স্থাপন করেন। এঁদের নাম ঊর্ধমুখ তপস্বী।মেদিনীপুর জেলার ধলহারা গ্রামে 'পাগলী মা' বা গৌরীমা নামে একজন মহাসাধিকা ছিলেন। আমার জীবনে তিনিই প্রথম সাধু। তখন আমার বয়স মাত্র বার।আমাদের গ্রামবাসী পুঁটিরাম পাত্র নামে পাগলীমায়ের এক শিষ্যের সঙ্গে তাঁকে দর্শন করার জন্য বাবা আমাকে পাঠিয়েছিলেন।

গিয়ে দেখেছিলাম, বৈশাখ মাসের খর রৌদ্রে পাঁচ পাশে পাঁচটা অগ্নিকুণ্ড জ্বেলে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেই যোগেশ্বরী মা পঞ্চতপা করছিলেন। তাঁর গুরু ভূষণানন্দজী ছিলেন ত্রাটক সিদ্ধ মহাযোগী।তিনি প্রতিদিনই সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সূর্যের দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।কুম্ভমেলাতে কাউকে দেখেছি কাঁটার উপর শুয়ে আছেন, কেউ বা প্রচণ্ড শীতে গলা পর্যন্ত জলে ডুবিয়ে সাধনা করে চলেছেন। এঁদের নাম জলশয্যী।অযোধ্যার সরযূতীরে এক মহাত্মার জল-তপস্যা দেখেছিলাম, একটি মাচার নিচে একটি খাদ, খাদটি জলপূর্ণ, তার মধ্যে তিনি গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে বসে আছেন, মাচার উপর একটি ছিদ্রযুক্ত কলস, দুজন সেবক অহরহ সেই কলসে জল ঢালছেন,সেই জল সাধুর মাথার উপর গিয়ে পড়ছে। তিনি তন্ময় হয়ে ইষ্টনাম জপ করে চলেছেন।

পঞ্চধূনী বা পঞ্চতপার চেয়েও এই জল-তপস্যাকে কঠিনতর বলে মনে হয়েছিল।এখানে এই গুলজা গ্রামের ঠাড়েশ্বরী মহারাজকে দেখছি দিবারাত্র দণ্ডায়মান অবস্থায় নিজের সাধনায় মগ্ন আছেন। 
এইসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের মনে ধিক্কার জন্মাল।আমার পক্ষে ত কোন উগ্র তপস্যাই সম্ভব নয়। তাহলে আমার কি হবে? নর্মদেশ্বর শিবের উদ্দেশ্যে বললাম- প্রভু! তোমার কৃপালাভ করতে হলে এত যদি উৎকট উগ্র তপস্যার প্রয়োজন হয়, তাহলে তোমার নাম আশুতোষ কেন?

সূর্যাস্ত হচ্ছে, ধীরে ধীরে অন্ধকারের ঢল নামছে বিন্ধ্যপর্বতের সর্বত্র। আশ্রমে ফিরে এলাম, পাঁচ-ছয়জন মহিলা এসে আমলকীর ডালে প্রদীপ জ্বালিয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন।

বিন্ধ্যেশ্বরীজী ধূপ, দীপ এবং কর্পূর জ্বালিয়ে তাঁর গুরু ঠারেশ্বরী মহারাজের আরতি করতে করতে বলছেন----


আনন্দমানন্দকরং প্রসন্নং ঞ্জানস্বরূপং নিজবোধযুক্তম্‌।
যোগীন্দ্রমীড্যং ভবরোগবৈদ্যং শ্রীমদ্‌গুরুং নিত্যমহং ভজামি।।

ঠাড়েশ্বরীজীর দেহে মনে কোন চাঞ্চল্য নাই, বিকার নাই, কোন দিকে দৃকপাত করছেন না, তাঁর অপলক দৃষ্টি একইভাবে নর্মদার দিকে নিবদ্ধ রয়েছে।

আরতি শেষ হতেই মায়েরা চলে গেলেন। বিন্ধ্যেশ্বরীজী ঠাড়েশ্বরীজীকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলেন। আমিও প্রণাম করলাম। প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই দেখলাম, তাঁর ডানহাতের তর্জনীটি আহ্বানের ভঙ্গীতে নড়ে উঠল,দৃষ্টি সেই একইভাবে নর্মদার দিকে, আমি তাঁর তর্জনীর ইঙ্গিত বুঝতে পারিনি, বিন্ধ্যেশ্বরীজী আমার গায়ে টোকা দিয়ে মহাত্মার কাছে এগিয়ে যেতে সংকেত করলেন। আমি তাঁর কুণ্ডলের কাছে এগিয়ে যেতেই তিনি মৃদুকণ্ঠে বলে উঠলেন---য়হু খালা কা ঘর নাঁহি। 

এই খণ্ডিত বাকাংশের মর্ম কিছু বুঝলাম না। বক্তার দৃষ্টিতে যদি কোন vibration or expression না থাকে তাহলে এমনিতেই বক্তব্য বিষয়ের রস বা ভাব উপলব্ধি করা যে কোন শ্রোতার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষতঃ এখানে তাঁর উচ্চারিত শব্দগুলি আংশিকভাবে উচ্চারিত হয়েছে, যার আক্ষরিক শব্দার্থ হল---এটা মাসীর বাড়ী নয়! হঠাৎ কোন কথা নাই বার্তা নাই, বিনা প্রসঙ্গে আচমকা তিনি এমন কথা কেন বললেন বুঝতে পারলাম না। আমি নীরবে দাঁড়িয়েই রইলাম।

এক মিনিট পরেই তিনি আবার মৃদুকণ্ঠে বলতে লাগলেন--- 


কবীর য়হু ঘর প্রেম কা,খালা কা ঘর নাঁহি।
সীস উতারৈ হাথি করি, সে পৈসে ঘর মাহিঁ।।
কবীর নিজ ঘর প্রেম কা মারগ অগম অগাধ।
সীস উতারি পগ তলি ধরৈ তব নিকটি প্রেম কা স্বাদ।।

অর্থাৎ নিজের হাতে মাথা কেটে হাতে নিয়ে প্রবেশ করতে হবে প্রভুর প্রেম-মন্দিরে।দুর্গম সেই পথ, অসীম তার বিস্তার।এ মাসীর বাড়ী নয় যে আবদার করলে আর চোখের জল ফেললেই যা চাওয়া যায় তাই পাওয়া যাবে!

মহাত্মা আর কিছু বললেন না---আগের মতই নীরব নিথর নিস্পন্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। আমরা কুটিরে ফিরে এলাম।বিন্ধ্যেশ্বরীজী আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব আনন্দ প্রকাশ করতে লাগলেন।কারণ, তাঁর গুরুদেব ক্কচিৎ কদাচিৎ কারও কারও সঙ্গে দু'একটি কথা বলেন বটে কিন্তু গত বিশ বৎসরের মধ্যে আমাকে নিয়ে মোট তিনজনের সঙ্গে কথা বলতে তিনি দেখলেন।কাজেই আমার মহাসৌভাগ্য। 

বিছানায় বসে নানা কথা ভাবতে লাগলাম।বিকেলে নর্মদার ঘাটে বসে পঞ্চতপা, জলতপা, উর্ধ্বপদ, হেঁটমুণ্ডে থাকা এবং দিন রাত্রি দাঁড়িয়ে থাকা প্রভৃতি তপস্যাকে আমি উৎকট এবং উগ্র ভেবে মনে মনে ভগবানের কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছিলাম যে এত কঠোর তপস্যা ছাড়া তোমাকে পাওয়া যাবে না, এই যদি তোমার বিধান হয় তাহলে তোমার আশুতোষ নাম কি মিথ্যা? বুঝতে পারলাম---ঠাড়েশ্বরী মহারাজ আজ সন্ধ্যায় তারই জবাব দিয়েছেন।বিন্ধ্যেশ্বরীজী আমাকে আগেই কথায় কথায় জানিয়েছেন যে আমি যেদিন সন্ধ্যায় এখানে এসে পৌঁছলাম সেদিনই মধ্যাহ্নে নাকি তাঁর গুরুদেব আমার আসার কথা পূর্বাহ্নেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।মহাত্মা কি সত্যই অন্তর্যামী? 

হোন তিনি অন্তর্যামী, তবুও তাঁর ঐরমক তপস্যার উগ্রতাকে ভগবৎ প্রাপ্তির উপায় বলে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করতে পারছিলাম না। আমার মনে হল, আপাতঃদৃষ্টিতে ঠারেশ্বরী মহারাজের ঐরকম বিচিত্র তপশ্চরণকে যতই কঠোর মনে হোক, এর মূলেও আছে ভগবানের প্রতি বিশুদ্ধ প্রেম।

প্রীতম প্রিয়তমের প্রতি আকুল-করা পাগল-করা সেই সব ভুলানো প্রেম ভাব না জন্মালে কি কোন মানুষের পক্ষে নরদেহ ধারণ করে এত কষ্ট সহ্য করা সম্ভব হয়? কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ভক্তিস্নিগ্ধ ভাষায় এই রকম অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, যার হৃদয়ে ভগবৎ প্রেমের আলো এসে পড়েছে---'তার বক্ষে বেদনা অপার, তার নিত্যজাগরণ'। 

যে ভগবানের প্রেমে বিভোর হয়, সেই ত জীবনে এবং আচরণে দেখাতে পারে, বলতে পারে---ওরে মন, ওরে আমার প্রিয়বন্ধু, বিবেচনা করে দেখ, প্রণয়ী হলে কি তার শোয়া চলে? সমুঝ দেখ মন মিত পিয়ারা আসিক হো কর্‌ শোনা ক্যা রে? 

ঠারেশ্বরী মহারাজের আমার শুকানো যোগীমাত্র বলে মনে হচ্ছে না, তিনিও আসিক।প্রেমিক বলেই তাঁর শোয়া বসা নাই। অপলক দৃষ্টিতে অহোরাত্র তাঁর প্রেমাস্পদের দিকেই তাকিয়ে আছেন। 

কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। যখন ঘুম ভাঙলো, তখন ভোর হয়ে আসছে। কম্বল মুড়ি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। ফাল্গুন মাস পড়ে গেলেও তখনও খুব শীত। কুশায়ার অন্ধকারে সব ঢেকে আছে।কৌতুহল বশে পা টিপে টিপে মহাত্মা যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে এলাম। তাঁর জটা এবং পরিধেয় গৈরিক বস্ত্রখণ্ড শিশির পড়ে ভিজে গেছে। তাঁর ডান দিকের এক কোণে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, যাতে তিনি আমাকে দেখতে না পান। সহসা দক্ষিণ হস্তের তর্জনী কিঞ্চিৎ নড়ে উঠল। সন্ধ্যাবেলার মত এটাকে তর্জনী সংকেত মনে করে সাহসে ভর করে সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রায় দু'মিনিট পরে পূর্বের মতই মৃদুকণ্ঠে বলে উঠলেন---- 


প্রীতম্‌ হসনাঁ দূরি করি, করি রোবন সৌঁ চিত্ত।
বিন্‌ রোয়াঁ বস্তুঁ পাই এ প্রেম পিয়ারা মিত্ত।।
হঁসি হঁসি কান্ত ন পাইএ,জিন্‌ পায়া তিন্‌ রোই।
জো হাঁসে হী হরিমিলৈ তব্‌ নহীঁ দুহাগিন্‌ কোঈ।।

অর্থাৎ প্রিয়তম এমনিতর দুঃখের পথ দিয়েই আসেন। হাসতে হাসতে তাঁকে পাওয়া যায় না। যে তাঁকে পেয়েছে কাঁদতে কাঁদতেই পেয়েছে; দিন রাত তার চোখের জল ঝরছে, তবে প্রিয়তমের সঙ্গে তার মিলন ঘটেছে। হাসতে হাসতে যে হরিকে পেল তার মত দুর্ভাগা আর কেউ নাই।

আবার সব চুপচাপ। আমি ধীরে ধীরে তাঁর কাছ হতে সরে এলাম।

https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191




Thursday, January 19, 2012

খাড়েশ্বরী মহারাজঃ---


......বেলা অনেকখানি বেড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে, কেননা প্রায় পাঁচটা বাজতে চলল, এখনও সূর্য সম্পূর্ণতঃ অন্ত যায় নি। এখনও পথঘাট, পাহাড়, পাহাড়ের গাছপালা সব স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। অবশেষে গুলজা গ্রামে এসে পৌঁছে গেলাম।

ছোট ছোট ছেলেরা একটা খেলার মাঠে খেলা করছিল ছোট একটা বল নিয়ে।একজন লোক তাদেরকে খেলা ছেড়ে ঘরে ফিরতে তাড়া দিচ্ছে---'অব বস্‌ করো জী। খেল্‌ ছোড়কে ঘর মে চলো।' খেলা ছেড়ে ঘরে ফেরাই ত আসল কথা, লাখ কথার এক কথা। একবার একটি ধোপা মেয়ে তার বাবাকে বলছিল---'বেলা গেল, বাস্‌নায় আগুন দাও'--- সেই কথা শুনেই লালাবাবুর মনে তীব্র বৈরাগ্যের উদয় হল, তিনি সঙ্গে সঙ্গে অগাধ ঐশ্বর্য ত্যাগ করে বৃন্দাবনে গিয়ে ভজনে ডুবে গেলেন। আমি ত আর লালাবাবু নহ, কাজেই ছেলেদের প্রতি লোকটির উক্তি যতই গভীর অর্থবহ হোক না কেন, আমার মনে ভাবান্তর ঘটল না। আমার এখন রাত্রির জন্য আশ্রয় প্রয়োজন, বিশ্রাম প্রয়োজন।

লোকটির কাছে তারই সন্ধান চাইলাম। তিনি বললেন--- আধা ঘণ্টা চলনেসে আপ্‌ গোদারিয়া সংগম গুলজারীঘাটমেঁ পঁহুজ যায়েগা।উধর মন্দির ভি হ্যায়,পরিক্রমাবাসীয়োঁ কে লিয়ে আচ্ছা ইন্তেজান ভি হ্যায়।

---'ইধর কোঈ মন্দির নেহি হ্যায়? হম্‌ বহোৎ থক্‌ গিয়া।'

---হমারা ছোটিসি মহল্লামেঁ মন্দির নেহি হ্যায়, কেঁওকি গুলজারীঘাট বহোৎ নজদিগ্‌ হ্যায়, উধর শিউজীকা আচ্ছা মন্দির হ্যায়, হম্‌লোগ্‌ উধরই পূজা করতা হুঁ। তব্‌ চলিয়ে ঠাড়েশ্বরী মহারাজকা পাশ, উনকা কোঠিমেঁ জাগাহ্‌ মিলেগা।মিনিট তিনেক হেঁটে নর্মদার ধারে ঠাড়েশ্বরী মহারাজের কাছে পৌঁছে গেলাম।

দেখলাম, একটি আমলকী গাছের কাছে এক ছয় ফুট দীর্ঘদেহী সন্ন্যাসী দাঁড়িয়ে আছেন।ছোট ছোট চারাগাছকে গরু ছাগলের গ্রাস হতে রক্ষা করার জন্য কাঠ বা বাঁশের যেমন কুণ্ডল দিয়ে ঘিরে রাখা হয় সেইরকম এক কাঠের কুণ্ডলের মাঝখানে ঠারেশ্বরী মহারাজ দাঁড়িয়ে আছেন।

নগ্ন গাত্র, কোমরে জড়ানো আছে এক টুকরো গৈরিক বস্ত্র।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নর্মদার দিকে।মৃদু কণ্ঠে জপ করে চলছেন সেই একই নাম, মহানাম-রেবা, রেবা, রেবা। আমলকী গাছের ডালে আকাশ প্রদীপের মত আট দশটা প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ ঝুলছে।সেই আলোতে দেখলাম-পাশাপাশি দুটি কুটির আছে।

আমার সঙ্গী লোকটি 'গোড় লাগি মহারাজ' বলে সশব্দে যুক্তকরে প্রণাম করতেই সেই শব্দ শুনে কুটির থেকে একজন গেরুয়াধারী বেরিয়ে এলেন। তিনি লোকটির কাছে আমি আশ্রয়প্রার্থী জেনে আমাকে দ্বিতীয় কুটিরটিতে থাকবার ব্যবস্থা করে দিলেন।কথায় কথায় জেনে নিলাম এই সাধুর নাম বিন্ধ্যেশ্বরী, তিনি ঠারেশ্বরী মহারাজের শিষ্য এবং সেবক।

ঠাড়েশ্বরী মহারাজকে কেউ কেউ খাড়েশ্বরী মহারাজ বলেও সম্বোধন করে থাকেন।

এই গুলজা গ্রামে নর্মদাতীরে তিনি এইরকম দাঁড়ানো অবস্থাতেই কুড়ি বছর ধরে তপস্যা করছেন।কেউ কখনও তাঁকে এইরকম দণ্ডায়মান অবস্থা ছাড়া বসা বা শোয়া অবস্থায় দেখে নি, দিবারাত্র সঙ্গে থেকে তিনিও দেখেন নি।ঐ রকম অবস্থাতেই তিনি শৌচাদি এবং ভোজন কর্মাদি সেবকের সাহায্যে করে থাকেন।

বিন্ধ্যেশ্বরীজীর সঙ্গে নিতান্ত প্রয়োজনে দু'একটা কথা ছাড়া আর কারও সঙ্গে কোন কথাবার্তা বলেন না।শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, সর্ব ঋতুতে তিনি নগ্নগাত্রে দাঁড়িয়ে থেকে নিরন্তর রেবা মন্ত্র জপ করে চলেছেন।
বিন্ধ্যেশ্বরীজী অত্যন্ত শ্রদ্ধাপ্লুত কণ্ঠে সাগ্রহে আমাকে জানালেন---মেরে গুরুজীকে পাশ সবকিছু ঋদ্ধি-সিদ্ধি হ্যায়। দেহাত সে বহোৎ আদমী ইধর আতা হৈ মাথা টেকতা হৈ ঔর চলা যাতা হৈ।ব্যাস্‌, ইসীসে উনলোগোঁকা দিল্‌কা বাসনাকি পূর্তি হো জাতা হৈ। অপ্‌ ইধর আজ আয়েঙ্গে, এবাত্‌ পহেলেসে উনোনে বাতা দিয়া হৈ। ইসি ওয়াস্তে এ কামরা ভি আপ্‌কো লিয়ে খালি করকে রাখ্যা হৈ।

এই কথা শুনে আমি খুবই অবাক হলাম। বিন্ধ্যেশ্বরীজীকে জিঞ্জাসা করে আরও জেনে নিলাম যে এই দুটি কুটির গুণ মুগ্ধ গ্রামবাসীরাই তৈরী করে দিয়েছেন। একটিতে তিনি থাকেন, কুটিরের বারান্দাতে রান্নার কাজ হয়, অপর কুটিরটিতে ক্কচিৎ দু'চারজন আগন্তুক অতিথি এলে তাঁরা থাকেন।

বিন্ধ্যেশ্বরীজী এক হাঁড়ী গরম জল দিলেন। ভাল করে মুখ-হাত ধুয়ে বিছানা পেতে শুয়ে পড়লাম।ক্ষুধায় পেট চুঁই চুঁই করছে, ক্ষুধার চোটে বিছানায় উঠে বসলাম, পেট ভরে জল খেয়ে আবার শুলাম।সারাদিন পথ চলার পরিশ্রমে ঘুম আসতে দেরী হল না। কিন্তু শেষ রাত্রে ঘুম ভঙে গেল।কুটিরের দরজা খুলে পা টিপে টিপে বাইরে এসে আমলকী তলায় গিয়ে ঠারেশ্বরী মহারাজ কি করছেন,তা দেখবার আগ্রহ বা দুষ্ট বুদ্ধি মাথায় এল।গিয়ে দেখি তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, গাছের ডালে প্রদীপগুলো নিভে গেছে।কম্বল মুড়ি দিয়েও কনকনে ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছি, আর মহাত্মা নগ্নগাত্রেই তাঁর তপস্যা করে চলেছেন। একেই বলে উগ্র তপস্যা।নর্মদামাতার কৃপা এঁরা পাবেন না, ত কারা পাবেন? চিন্তা করতে করতে কুটীরে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম যখন ভাঙল, তখন অনেক বেলা হয়ে গেছে।দেখলাম, ঠারেশ্বরী মহারাজ সেই একইভাবে দণ্ডায়মান।বিন্ধ্যেশ্বরীজীর কাছে জিঞ্জাসা করে জানতে পারলাম যে আজ ২রা ফাল্গুন অর্থাৎ গতকাল ১লা ফাল্গুন হোসেঙ্গেবাদ জেলায় এসে পৌঁছেছি।পরিক্রমা শুরু করা থেকে চারমাস কেটে গেছে।শৌচাদি সেরে স্নান করতে গেলাম।স্নান তর্পণাদি সেরে আসার সময় দেখি প্রায় দশজন ভক্ত ভেট নিয়ে ঠারেশ্বরীজীকে প্রণাম করে নিজেদের আপন আপন সমস্যার কথা নিবেদন করছেন। মহাত্মা কোন উত্তর দিচ্ছেন না, নির্নিমেষনেত্রে নর্মদার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু নিজেদের কথা নিবেদন করেই ভক্তদেরকে সন্তুষ্ট দেখছি, দরবারে যখন পেশ করা হয়েছে তখন তাঁদের অভীষ্ট সিদ্ধি হবেই এই অবিচলিত নিষ্ঠা ও বিশ্বাস তাঁদের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। 

বিন্ধ্যেশ্বরীজী ভক্তদের আনা ফলমূল, বাজরা, জোয়ার, দুধ ইত্যাদি তিন জনের উপযোগী রেখে দিয়ে বাকী সব প্রসাদ হিসাবে বিলিয়ে দিলেন।নর্মদাশ্রয়ী সাধুর কোন বস্তু সঞ্চয় করে রাখতে নাহ, সেই বিধি কঠোরভাবে এখানে মানা হচ্ছে। আমি গোদারিয়া নদীর সংগম গুলজারী ঘাট দেখতে যাবো, বিন্ধ্যেশ্বরীজী আমার সঙ্গে যেতে পারবেন কিনা জিঞ্জাসা করায় তিনি বললেন,----দুপহরমেঁ ভোজনকে বাদ আপ্‌কা সাথ চলুঙ্গা।

মধ্যাহ্নের পূর্বেই ভোগ প্রস্তুত হয়ে গেল। বিন্ধ্যেশ্বরীজী অত্যন্ত যত্নসহকারে তাঁর গুরুদেবকে রুটি, ফল, দুধ একটু করে মুখে তুলে দিলেন, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তিনি তা ভোজন করলেন, কুটিরের দ্বারে বসেই আমি সব লক্ষ্য করলাম। ভোজন পর্বের সময়েও দেখলাম, দৃষ্টি তাঁর নর্মদার দিকেই ন্যস্ত।একইভাবে ক্রমাগত দাঁড়িয়ে থাকলে যে কোন লোকেরই দু'পা আসাড় হয়ে যাবার কথা, ফুলে যাবার কথা, কিন্তু সত্তর বৎসর বয়স্ক ঠাড়েশ্বরী মহারাজের শরীর বয়সের তুলনায় অনেক সতেজ, অনেক সুস্থ এবং অনেক বলিষ্ঠ বলে মনে হল।খাওয়াদাওয়ার পর দুজনেই বেরিয়ে পড়লাম গুলজারীঘাটের উদ্দেশ্যে। 

To be Continued..........