Thursday, December 15, 2011



নর্মদা যেমন বয়ে চলে
সব পাষাণের ভাঁজে ভাঁজে,
সংঞ্জা যেমন প্রবাহিত
রক্ত মাংসের,শরীর মাঝে---
তেমনিতর মাতা পিতার
স্থূল দেহটাই তাঁর আবাস,
তাঁরাই আসল রসো বৈ সঃ
রসব্রহ্মের চিদ্‌বিলাস।




Tuesday, November 22, 2011



ঈশ্বর! ঈশ্বর! সারা বিশ্ব খুঁজিছে কাতরে,
লক্ষ লক্ষ পণ্ডিতের ভাষা নিরুত্তর;
ক্ষুদ্র প্রাণ দিশাহীন না পায় সন্ধান,
অসীমে ধরিতে গিয়া ব্যাকুল কাতর।
অনন্ত-জীবন-পথে চাহিনু বিস্ময়ে,
যোগ-যাগ করিবার লাগি ছুটে গেনু হিমালয় পানে,
কিন্তু তার অন্ত কোথা? না পাই সন্ধান কোনখানে,
জটিলতা বেড়ে যায় হৃদি মাঝখানে,
দর্শন কাঁদিয়া ফিরে সীমার লাগিয়া
বিঞ্জান সন্ধান করে তত্ত্ব নিশিদিন,
রূপ অরূপের পিছে ফিরিছে কাঁদিয়া---
সীমারে ঘিরিয়া বাজে অসীমের বীণ্‌!
দৈববাণী ভেসে এল-'জানিবারে চাও মোর সীমা?
মাতাপিতা মাঝে মূর্ত্ত হের, আমার মহিমা'।



Sunday, October 23, 2011



আমি নাই, তুমি নাই
আমি তুমি মিশে গেছি
অসীমে হারিয়ে গেছি
ভাষা নাই ভাব নাই
আমি নাই, তুমি নাই।
মিশে গেছি আলো ছায়া---
মিশে গেছে কায়া মায়া।
একাকার হয়ে গেছে,
সব আছে, কিছু নাই।
চাওয়া পাওয়া কারে বলে
সে ত কিছু জানি না।
জপ তপ কারে বলে
সেও ত হায় বুঝি না।
নিত্যানিত্য যারা বোঝে
আসল নকল তারা খোঁজে,
বোঝাবুঝি খোঁজাখুঁজির
আমার কোন নাই বালাই
আমি নাই, তুমি নাই।





আহাম্মকঃ---


আহাম্মক এক, যৌবনে নেয় ভেক !
আহাম্মক দুই, গুরুজনকে বলে তুই !
আহাম্মক তিন, আপন কড়ি পরকে দিয়ে নিজে করে ঋণ !
আহাম্মক চার, মাকে ধরে মার !
আহাম্মক পাঁচ, পরের পুকুরে ছাড়ে মাছ !
আহাম্মক ছয়, এর কথা ওকে কয় !
আহাম্মক সাত, নিচের ঘরে খায় 
ভাত!

আহাম্মক আট, বৌ-ঝিকে পাঠায় হাট !
আহাম্মক নয়, পিছনে কথা কয় !
আহাম্মক দশ, বৌ-এর কথায় বশ !



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

"মাণ্ডবগড় কেল্লা" ------


".......... ঠিক, ঠিক এইসময় মাণ্ডবগড় কেল্লার পাশ থেকে আমরা সবাই কারও কণ্ঠস্বর শুনে উৎকর্ণ হয়ে উঠলাম। কেউ যেন গান গাইতে গাইতে আসছেন। তাঁর গলার স্বর গানের সুরে ভেসে আসছে---

গগনে জাগিল মহাকাল।
ঘন ডম্বরু বাজে ভীম রুদ্র সাজে
জাগে ভৈরব জাগে মৃত্যু করাল।
গগনে জাগিল মহাকাল।।
মাভৈঃ! মাভৈঃ!
তাথৈ! তাথৈ! তা তা থৈ, তা তা থৈ!
জাগে ভৈরব জাগে মৃত্যু করাল।
মরণ-আঁধার কোলে, জীবন আলোকে জ্বলে
শংকর শিব সাজে সাজিয়ে দয়াল।
মাভৈঃ! মাভৈঃ! মাভৈঃ! মাভৈ!


কণ্ঠস্বর যতই এগিয়ে আসছে, ততই আমার মহাত্মা সোমানন্দেরই কণ্ঠস্বর বলেই মনে হচ্ছে ! কিন্তু তা কি করে সম্ভব। তিনি ত এখন চব্বিশ অবতারে কিংবা সেই সীতামায়ীর বনে বসে আছেন। এখানে বসে তাঁর গলা শুনব কি করে? যাঁর কণ্ঠস্বর শুনলাম তাঁকে এখনও চোখে দেখতে পাচ্ছি না। আবার কণ্ঠস্বর ভেসে এল, এবারে আরও স্পষ্ট ---


গরজ়ে গম্ভীর গগনে কম্ভু! নাচিছে সুন্দর নাচে স্বয়ম্ভূ।
সে নাচ হিল্লোলে জটা আবর্তনে সাগর ছুটে আসে গগন-প্রাঙ্গনে!
আকাশে শূলহানি, শোনাও কৃপাবাণী, তরাসে কাঁপে প্রাণী, প্রসীদ শম্ভু।।

পাহাড় বেয়ে দুটো ঝাঁকড়া আবলুষ গাছের পাশ দিয়ে আমাদের সামনে উঠে আসতেই মোহান্তজী এবং লক্ষ্মণভারতীজী আনন্দে ফিস্‌ ফিস্‌ করে বলে উঠলেন ---- সীতা বনকী মহাপুরুষ ইধর ক্যায় সে পধারেঁ ? আমি ত তাঁকে দেখে আনন্দে আত্মহারা! 'বন্দে মহাপুরুষ্য চরণারবিন্দম্‌, ,বন্দে মহাপুরুস্য চরণারবিন্দম্, নমো নারায়ণায়' বলে সবাই কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁকে আমরা প্রণাম করলাম দূর থেকে। তাঁর আমাদের দিকে নজর পড়ল বলে মনে হল না। তাঁর পূর্বের মতই শতচ্ছিন্ন পোষাক, ঝাঁপড় ঝাঁপড় চুল এবং ছোট ছোট জটা দুলাতে দুলাতে তিনি টলতে টলতে গান গাইতে গাইতে এগিয়ে আসছেন-----


ললাট-শশী টলি জটায় পড়ে ঢলি,
সে শশী-চমকে গো বিজুলি ওঠে ঝলি,
ঝাঁপে নীলাঞ্চলে মুখ দিগঙ্গনা,
মূরছে ভয়ভীতা নিশি নিরঞ্জনা
আঁধারে পথ-হারা ভকত কেঁদে সারা,
যাচিছে কৃপাধারা প্রসীদ শম্ভু!


নাচতে নাচতে পাথরের উপর পায়ের তাল ঠুকতে বলতে থাকলেন---


তাথৈ, তাথৈ, তা-তা-থৈ, তা-তা-থৈ,
মাভৈঃ! মাভৈঃ! প্রসীদ শম্ভু ! প্রসীদ শম্ভু ! 

আমার আর তর সইলো না। তাঁর সেই অবস্থাতেই আমি নিভন্ত দুটো ধুনির মাঝখান দিয়ে কোনমতে পেরিয়ে তাঁর কাছাকাছি গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে ত্র্যস্ত ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলাম, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন চোদ্দটা কালো চিতা আমাদেরকে আক্রামণ করার জন্য বসে আছে, আমাদেরকে বাচাঁন!' আমার কথায় চমকে উঠেই সেইখানেই একটা পাথরের উপর বসে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে অট্টহাসি। সে কি হাসি! হাসির দমকে দমকে তিনি দুলতে দুলতেই বলতে থাকলেন ---

'চোখ মেললে সকলই পাই, চোখ মুদলে কিছুই নাই। দিনে সৃষ্টি, রেতে লয়, নিরন্তর ত এই-ই হয়।'

'যম বেটা হায় দুমুখো থলি, তাই বেটার আঁৎ খালি। বেটা কেবল খাচ্ছে, খাচ্ছে, খাচ্ছে, ওর পেটে কি কিছু থাকছে! হাঁ, হাঁ কিছু থাকছে!'
'বলি ও বামুন ছানা! তুই এখানে এলি কি করে? রাঁধুনী নাই ত রাঁধালে কে, রান্না নেই ত সবাই খাচ্ছেন কি? আরে বুঝিস না কেন, যে রাঁধলে সেই ত খেলে এই ত দুনিয়ার ভেল্কি।'

এইভাবে কথা বলতে বলতেই তিনি মোহান্তজীর দিকে তাকিয়ে আমাকে বলতে লাগলেন --- 'ওহো তুই ঐ রাত ভিখারীটার দলে ভিড়ে এখানে পৌঁছে গেছিস! ভাল, ভাল



* রাত ভিখারির ধামাধরা থাকে একজন
হরিনাম বলে না মুখে, চাল কড়ি কুড়াতে তার মন! 

এই বলেই তিনি আবার হেসে লুটোপুটি! 'ওহে রাত ভিখারি বাবু! 


রাত ভোর ত গুরুর কাছে মাথা ঠুকলি আর ভিখ চাইলি, সকাল হতেই "হর নর্মদে"! আরে গুরুশক্তি আবার পারে না কি? আরে বেটা! যেই হর, সেই গুরু, সেই নর্মদা। সঙ্কটকালে তোর মন তিনদিকে ছুটবে কেন? গুরুকে ধরে সকলেই জয়, নয়ত সব লয়! ঐ যে কথায় আছে না? 


দেবতা থাকুক শত শত গুরু করব সার, 
গুরুর মধ্যেই কৃপার প্রকাশ দেবী আর দেবার। 

'তাই বলি মাঝি! গুরুর শরণ লও, কেন তুফান পানে চাও, হাল ধরে আছেন গুরু নিরঞ্জন! ফড়্যা যারা, মজবে তারা, বাটখারা যাদের কম, ধরে তসিল করবে যম আর গদিয়ান জহুরী যারা, দেখ গে তারা বসে বসে ব্যাপার করছে গুরুর প্রেম রতন।' 

'আমি বাপু স্বরূপের বাজারে থাকি। শোনরে খেপা, বেড়াস একা, চিন্তে নারলে ধরবি কি? কালার সঙ্গে বোবার কথা হয়, কালা গিয়ে শরণ মাগে কে পাবে নির্ণয়! আর অন্ধ যেয়ে রূপ নেহারে তার মর্মকথা বলব কি! মড়ার সঙ্গে মড়া ভেসে যায়,জীয়ান্ত ধরতে গেলে হাবুডুবু খায়। ওরে, সে মড়া নয়কো রসের গোড়া, তার রূপেতে দিয়ে আঁখি, আমি এখন রূপ দেখি!' 


এই বলে পাগলা সাধু চুপ করে বসে চোখ বন্ধ করে দুলতে থাকলেন। তাঁর দুলুনি আর থামতে চায় না। আমরা পড়লাম মহা ফাঁপরে। রাতভর আমরা ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছি, আগুনের তাপে জর্জরিত হয়েছি। এখন দেখতে পাচ্ছি কালো চিতা গুলো মুখ ব্যাদন করে সবাই খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে এবারে আক্রমণের উদ্যোগ করছে, এবারে নির্ঘাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে। অমিত শক্তিধর এই মহাপুরুষকে দেখে আমাদের বুকে আশা ভরসা জেগেছিল কিন্তু ইনি ত প্রথম থেকেই ভাবের রাজ্যে বিচরণ করছেন। এখন ত একেবারে মস্ত। 


সবচেয়ে বিপদের কথা, এর ভাবের খেলা এতক্ষণ তন্ময় হয়ে আমরা দেখছিলাম, মশাল গুলোর দিকে লক্ষ্য করি নি সেগুলো সব নিভতে বসেছে। আমি মরিয়া হয়ে তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে চেচিয়ে বললাম মা রেবার দোহাই, সীতামায়ীর দোহাই আপনি আমাদের দিকে একটু নজর দিন, কালো চিতার দল আমাদের উপর  ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে। আমার চিৎকারে তিনি চমকে উঠেই কালো চিতাগুলোর দিকে ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন। 


তাকিয়ে তাকিয়ে বলতে লাগলেন --- ওকারের বুড়ো যে অগস্ত্যি গুহায় তোকে যে বেদ মন্ত্রটা শিখালো সেটা একবার আউড়িয়ে দেখ না। এখনই বেটাদের নড়ন চড়ন থাকবে না।


---- আমি তা আওড়াবার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কিছুতেই বেদ মন্ত্র স্মরণে আনতে পারি নি।
---- তা হলে ত তোর বেটা রাবণের দশা! রাবণ বেটাও মরণকালে সব অস্ত্র ভুলে গেছিল। অতবড় মহাবীর কর্ণ সে বেটারও মৃত্যুকালে রথচক্র মেদিনী গ্রাস করল। পরশুরামের দেওয়া ব্রহ্মাস্ত্রও ভুলে গেল। বুঝলি রে, এসবই সেই নিয়তি হারামজাদীর খেল! 

আমার আর ধৈর্য রইল না, যে কাজ কখনও করিনি, তাঁর এতসব আদিখ্যেতায় অধীর হয়ে সেই কাজই করে বসলাম। তাঁর দুই কাঁধ স্পর্শ করে ঝাঁকিয়ে দিতে দিতে বললাম ,'তবে এই নিয়তির মুখে আপনাকেই ছুঁড়ে ফেলে দেব।' 


এত বড় উচ্চকোটি মহাপুরুষের সঙ্গে আমাকে এইরকম বেয়াদপি করতে দেখে সকলেই হকচকিয়ে গেছেন। মোহান্তজী চুপি চুপি কণ্ঠে আমাকে ধমকে উঠলেন --- 'ক্যা পাগলপন কর রহে হো।' 


কিন্তু সেদিকে কান দেওয়ার সময় নেই। মহাপুরুষ সবেগে উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতের বদ্ধমুষ্ঠি আস্ফালন করতে করতে কালো চিতাদের দিকে এগোতে এগোতে বললেন ---"কী তোদের কে আমি বলে দিয়েছি না,বামুনের মাংস তিতা হয়। সাধুদের মাংস বিষ !বিষ! চাবল মারবি কি সঙ্গে সঙ্গে অক্কা! দেখছিস না, তোদেরই এক বড় কুটুম ইমলি গাছের তলায় কেমন চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। পালা পালা নয়ত সকলেই চিৎপটাং হবি!" 


জানোয়ারগুলো কি বুঝল জানি না, আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, মহাপুরুষ যতই এগোচ্ছেন, তারা ততই পিছিয়ে যাচ্ছে। তারপর তারা দুড়দাড় শব্দে বন বাদাড় ভেদ করে দৌড়ে পালাল। মহাপুরুষ কিন্তু থামলেন না, তিনি এগিয়ে চললেন। আমরা সকলেই তাঁর পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম।"


Thursday, October 13, 2011

তীর্থ পরিক্রমা হল হিন্দুর প্রাণশিখাঃ-----


গত ১৯৫১ সালে দ্বিতীয়বার অমরনাথ (কাশ্মীর) হতে ফিরবার পথে ভায়া পাঠানকোট হয়ে আমি জ্বালামুখী গিয়েছিলাম। সে এক নতুন অভিঞ্জতা। ট্রেনে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর দেখলাম, ট্রেনের পাঞ্জাবী এবং পুশ্‌তভাষী পাগড়ীধারী দীর্ঘকায় নরপুঙ্গবের দল সহসা ঝটপট করে কামরার জানলা কপাট বন্ধ করে দিতে লাগলেন। কারণটা অনুধাবন করতে পারছি না অথচ "মাথায় বড় বহরে চোট" নিরীহ বাঙালী সন্তান হিসাবে তাঁদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিবাদ করার ও সাহস পাচ্ছিলাম না। নির্বাক বিস্ময় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রহস্যটা আমার কাছে ধরা পড়ল। যতই ট্রেন এগিয়ে যেতে লাগল ততই বন্ধ জানালা কপাট ভেদ করে অজস্র ধূলা এসে সমস্ত কামরাটিকে ভরিয়ে দিল। আমরা যখন জ্বালামুখী রোডে গিয়ে নামলাম, তখন প্রত্যেকেরই ধূলিধুসরিত কিম্ভূতকিমাকার চেহারা। তখন বুঝতে পারলাম যে যদি জানালা খোলা থাকত, তাহলে কী দশাই না হত? যাইহোক, ঐরকম ধূলি-মলিন অবস্থাতেই জ্বালামুখী রোড হতে বাসে "খাস" নামক স্থানটি অতিক্রম করে জ্বালামুখী মন্দিরের নিকট নেমে নিষ্কৃতি পেলাম ধূলার হাত থেকে।


এই জ্বালামুখীতে জয়শ্রী পাণ্ডার বাড়ীতে ছিলাম। জয়শ্রী পাণ্ডার আতিথেয়তা এবং মিষ্টি ব্যবহার সম্বন্ধে বোঝানো যাবে না। শুধু জয়শ্রী পাণ্ডা কেন, এখান কার সমস্ত পাণ্ডার ব্যবহার খুব ভাল। পুরী ও গয়া প্রভৃতি তীর্থক্ষেত্রের ভয়ঙ্কর লোভী এবং দুবৃর্ত্ত পাণ্ডাদের তুলনায় জ্বালামুখীর পাণ্ডাদেরকে দেবতা বলা যায়। জয়শ্রী পাণ্ডার কাছে একটি নতুন তথ্য জানলাম। কলিকাতার মহানির্বাণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী নিত্যগোলাপ অবধূত দীর্ঘকাল এই জ্বালামুখীতে সাধনা করেছিলেন। জয়শ্রী পাণ্ডার পিতা ছিলেন তাঁর শিষ্য। এইজন্য বাঙালী যাত্রী মাত্রকেই এই পাণ্ডামশাই ভালবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন।


জ্বালামুখী পাহাড়ের উপরে শ্রী নিত্যগোপালের সাধনপীঠ ছাড়াও মহাত্মা গোরক্ষনাথজীর প্রাচীন সাধনপীঠও পাণ্ডাজী আমাকে দেখিয়েছেন। তাঁর কাছে গল্প শুনেছি যে, দেবী দুর্গা একবার গোরক্ষনাথজীকে দর্শন দিয়ে কিছু আহার করতে চান। রিক্ত সন্ন্যাসীর ঝুলিতে তখন কিছু ছিল না। গোরক্ষনাথজী দেবীর এই পরীক্ষা এবং ছলনা বুঝতে পেরে, ভিক্ষা সংগ্রহ করে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত প্রতীক্ষা করার জন্য সোজা চলে যান হিমালয়ে। দেবী আর কি করেন, স্বয়ং সশরীরে তো আর তাঁর নিত্যস্থিতি সম্ভব নয়, কাজেই তিনি নাকি সেই থেকে সেখানে জ্যোতিরূপে বর্তমান আছেন ।


ভারতের প্রত্যেক তীর্থস্থানের উৎপত্তির মূলে যেমন কোন একটি রোচক উপাখ্যান থাকে তেমনি জ্বালামুখী তীর্থকে কেন্দ্র করেও এই উপাখ্যানের সৃষ্টি। উপাখ্যানটি বিশ্বাস করি বা না করি, মন্দিরের অভ্যন্তরে চিরপ্রজ্বলিত অগ্নিশিখা সত্যই বিস্ময়কর। বিশেষতঃ একটি পাত্রে দুধ নিয়ে তা যখন দেবীরূপে বর্ণিত জ্বালামুখী পাহাড়ের গাত্রে নৈবেদ্য রূপে ধরা হয়। তার উপর যখন নতর্নশীল অগ্নিশিখাটি লাফিয়ে এসে জ্বলতে থাকে। তখন সে দৃশ্য সত্যই সুন্দর। বর্তমানে বৈঞ্জানিকগণ এই অগ্নিশিখার মূলে হিলিয়াম গ্যাসের বিদ্যমান তা ইত্যাদি যা কিছুই অনুমান করুন না কেন, এই তীর্থকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ হিন্দুজনতার মনে যে শ্রদ্ধার বীজটি বর্তমান তাকে উপেক্ষা করার সাহস কারোর নেই।


এই শ্রদ্ধাই হিন্দুদের প্রাণশিখা। শ্রদ্ধায়াগ্নিঃ সমিধ্যতে শ্রদ্ধয়া হূয়তে হবি ------ শ্রদ্ধাই যুগ যুগ ধরে হিন্দুজনতাকে দীপ্ত এবং তৃপ্ত করে আসছে।ভারতের তীর্থক্ষেত্রগুলিতে এই শ্রদ্ধারই জীবন্ত প্রকাশ দেখা যায়।


তীর্থগুলির নানা অভাবাত্মক দিক আংশিকভাবে সত্য হলেও তীর্থের কতকগুলি কল্যাণকর দিকও আছে, সেগুলিকে কোন মতেই অগ্রাহ্য করা যায় না। অতীতের ভাব লোকে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমই হল তীর্থ। তীর্থে গেলেই অতীত নিকটস্থ হয়, সুদূর অতীত যুগ হতে বর্তমান যুগ পর্যন্ত যে দুস্তর ব্যবধান তা সাময়িকভাবে মুছে যায়, অতীতের নানা সংস্কার বিশ্বাস এবং কিংবদন্তী এমনভাবে আমাদের মনের মধ্যে গুঞ্জন তুলতে শুরু করে, মনে হয় যেন নিজের হৃৎস্পন্দনের তালে তালে অতীত যুগের হৃৎস্পন্দন, পুলক, অশ্রু এবং আবেগ নূতন করে অনুভব করছি। যে যুগ গত হয়ে গেছে অন্তরপথে কখন যে সেখানে পাদচারণা আরম্ভ হয়ে যায় তা বুঝা যায় না --- এক অবর্ণনীয় সুখাবেশে মনটি আপ্লুত হয়ে পড়ে। এইভাবে শুধু বাইরের দৃশ্য পরিবর্তনই নয়, মানসিক স্থিতিরও যে একটা অভিনব বিন্যাস ঘটে ---- এমনটি তীর্থ ছাড়া আর কোথায় সম্ভব?


বুদ্ধিদোষে ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কেউ যদি কোন বস্তুকে অপব্যবহার করে তাহলে তাতে মূল বস্তুটির দোষ ঘটে কি? একথা সত্য যে তীর্থ মাহাত্ম্য বর্ণনা প্রসঙ্গে যে সব মনোহর পুষ্পিত বাক্যের প্রয়োগ দেখা যায়, অনেক লোকই তীর্থের ভাবাদর্শ গ্রহণের পরিবর্তে সেগুলিতেই অযথা গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন কিন্তু সেজন্য তীর্থকে কোন মতেই দায়ী করা চলে না, তীর্থের মহিমাও তাতে ক্ষুন্ন হয় না।


এক একটি মহত্তম আধ্যাত্মিক ভাবাদর্শকেই আমাদের দেশে শাস্ত্রকারগণ তীর্থ ও তীর্থদেবতা রূপে চিত্রিত করেছন এবং তীর্থের মহিমাঞ্জাপনচ্ছলে এমন সুকৌশলে শ্রদ্ধার বীজটি উপ্ত করে দিয়েছেন যে--"বনত বনত বনি যাই"-----------এই নিয়মানুসারে মানুষ তীর্থে যেতে যেতেই এক সময় শ্রেয়ের প্রতি টান অনুভব করতে থাকে। আর এইভাবে শ্রেয়ের প্রতি টান অর্থাৎ শ্রদ্ধা একবার হৃদয়ে সঞ্চারিত হলে মানুষের আর অলভ্য কিছু থাকে না। কারণ, শ্রদ্ধা দ্বারা পরম পুরুষার্থ পর্যন্ত লাভ হয়। এটিকে আমি তীর্থযাত্রার একটি বড় অবদান বলে মনে করি।


কাজেই কোথায় কোন্‌ অভিসন্ধিপরায়ণ ব্যক্তি পাপ-স্খালনের আকাঙ্খায় তীর্থকে অপব্যবহার করল সেটাই বড় কথা নয়। লক্ষ লক্ষ হিন্দু জনতা শ্রদ্ধাসহকারে যে তীর্থ পরিক্রমা করে সেই শ্রদ্ধাই তীর্থ যাত্রার প্রাণ। তাই শ্রদ্ধাকে প্রচোদিত করবার জন্য শাস্ত্রে শ্রদ্ধার বহুতর প্রশংসা আছে দেখতে পাই। ঋষিরা বলেছেন---"যথাদেবা অসুরেষু শ্রদ্ধামুগ্রেষু চক্রিরে"। দেবতারা অসুরদের মধ্যেও শ্রদ্ধার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কোটিপতি কালোবাজারী পাষণ্ড পামরও তীর্থে গিয়ে শ্রদ্ধাপ্লুত হয়, এইখানেই তীর্থের মাহাত্ম্য।



প্রিয়ং শ্রদ্ধে দদতঃ প্রিয়ং শ্রদ্ধে দিদাসতঃ।

-----হে শ্রদ্ধা, যে দান করে তাকে তুমি শ্রদ্ধা দাও। যে দিতে চায় তাকে প্রিয় কর। শ্রদ্ধাপীঠ তীর্থগুলি যে পাপাত্মা পুণ্যাত্মা নির্বিশেষে সকলের চিত্তকে সাময়িকভাবে হলেও সেই প্রিয় পরমের রসে নিষিক্ত করে, এটাই পরম লাভ।


যারা কেবলই কৌতূহল বশে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নূতন স্থান দেখার আগ্রহে কিংবা প্রাচীন শিল্পকলা ভাস্কর্য এবং স্থাপত্য দেখবার জন্যে তীর্থে যায় তাকে প্রকৃতপক্ষে তীর্থযাত্রা বলে না। পাতঞ্জল যোগদর্শনে আছে --- যে জানা, চেনা এবং দেখার মধ্যে চিত্তের সম্প্রসাদ থাকে তাকেই বলে শ্রদ্ধা। অন্তরে শ্রদ্ধার ভাবটি থাকলে শ্রদ্ধেয় বস্তুর গুণদর্শন এবং তার প্রতি আসক্তি উত্তরোত্তর বেড়েই যায়। তীর্থে গিয়ে তীর্থদেবতার তত্ত্ব বহু সাধু পুরুষই মনন করে থাকেন। শৈব শৈব তীর্থে, বৈষ্ণব বৈষ্ণব তীর্থে, শাক্ত শাক্ত তীর্থে গিয়ে তাঁদের অন্তরস্থ শ্রদ্ধাকে প্রদীপ্ত করে নেন।


তীর্থ ভ্রমণ করতে যে কষ্ট সহ্য করতে হয়, তা কেবল সস্তায় পাপ হতে মুক্ত হওয়ার জন্যই লোকে করে একথা ভাবতেও আমার কষ্ট হয়।আমার মতে মানুষের মধ্যে নিহিত যে সহজাত শ্রদ্ধা এবং ধর্মবোধ, তাই তাকে সমস্ত কষ্ট সহ্য করার প্রেরণা দেয়। পাতঞ্জল যোগদর্শনের সমাধিপাদের ২০নম্বর সূত্রের ব্যাস ভাষ্যে বলা হয়েছে :



শ্রদ্ধা চেতসঃ সম্প্রসাদঃ।সা হি জননীর কল্যাণী যোগীনং পাতি।

---অর্থাৎ শ্রদ্ধা হল চিত্তের সম্প্রসাদ। তা তীর্থযাত্রীকে বিশেষতঃ যোগীকে কল্যাণী জননীর ন্যায় প্রতিপালন করেন।

তীর্থেই যোগী এবং সাধুদের দর্শন মিলে আর যোগী এবং মহাত্মারাই হলেন ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতির জীবন্ত বিগ্রহ। তাঁরা নিজেরাও যেমন তীর্থের অনুকূল পরিবেশে চিত্তের সম্প্রসাদ লাভ করেন, তেমনি তীর্থে গিয়ে সাধারণ লোক ও তাদের দুর্লভ সঙ্গলাভ করে কৃতকৃত্য হয়ে থাকেন। এটি তীর্থ যাত্রার একটি বড় সুফল। তীর্থই সাধারণকে অসাধারণের পুণ্য সঙ্গলাভের সুযোগ করে দেয়।


আমি দেখেছি, মানুষের শ্রদ্ধা তীর্থকে কেন্দ্র করেই সহসা বিকশিত হয়ে উঠে। গ্রাম বা শহরের গৃহগত পরিবেশে যে বিষয়াসক্ত ব্যক্তির মধ্যে বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়েই আগ্রহ দেখা যায় না, সেই লোকই যখন তিরুপতি, জ্বালামুখী বা বিশ্বনাথের মন্দিরে গিয়ে দেবতার সম্মুখে দরবিগলিত অশ্রু হয়ে সাষ্টাঙ্গ দেয় তখন বুঝা যায় তীর্থ নির্বিষয় রসেরও উদ্বোধক।


পরিক্রমায় বের হয়ে আমার বারংবার মনে হয়েছে যে তীর্থগুলি ভারতের সম্পদস্বরূপ। পথের অসাধারণ কষ্ট এবং সাধ্যাতীত অর্থ ব্যয়ের বিনিময়ে কেবল ধর্মের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের লোকেরা যেমন তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ করেন এমনটি কোন দেশে আছে বলে মনে হয় না।মধ্যযুগের ইউরোপে খ্রীষ্টধর্মের জোয়ার যখন এসেছিল, তখন বহুস্থানে বহু মন্দির মঠ ও গীর্জাদি স্থাপিত হয়েছিল সত্য এবং সেগুলি আজ ও ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করে বটে কিন্তু তার মূলে ধর্ম লাভের জন্য চিত্তের আকুলতা কদাচিৎ দৃষ্ট হয়।


ভ্রমণকারীরা ঐ সব গীর্জাদির অপরূপ শিল্পকলা এবং সৌন্দর্য উপভোগ করবার জন্যই ভীড় করে থাকেন। মুসলমানদের মধ্যে অবশ্য ধর্ম সাধনার অঙ্গরূপে তীর্থভ্রমণ এখনও প্রচলিত আছে। বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতি বৎসরই মক্কা মদিনা প্রভৃতি দর্শনকে জীবনের চরিতার্থতা বলে মনে করেন।


কিন্তু মনে রাখতে হবে, আরব দেশের এই তীর্থগুলিতে যে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধসংস্কার এবং বিশ্বাস বর্তমান তা তাঁদের জীবন ধারাতেও প্রচলিত বলে ঐ সমস্ত পবিত্র তীর্থ দর্শন তাঁদের জীবনগত বিশ্বাস এবং আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু ভারতবর্ষে প্রগতিশীল মনোবৃত্তির দ্রুত পরিবর্তন এবং নানা বিজাতীয় ভাবধারার প্রচণ্ড আলোড়ন সত্ত্বেও যেভাবে এখানে প্রাচীন ধর্ম-বিশ্বাস এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে, তা কিভাবে সম্ভব হল তা গভীরভাবে চিন্তা করলে ভারতীয় হিন্দুর অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ঠ্যটি ধরা পড়বে।


ভারতবর্ষের যেখানে যেখানে মন্দির আছে তার চারপাশে আধুনিক শহর গড়ে উঠেছে। কিন্তু মন্দিরাভ্যন্তরে তীর্থ দেবতাকে কেন্দ্র করে যেভাবে পূজার্চনা এবং আচার অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন হয় তা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে সেই আবেষ্টনীর মধ্যে মধ্যযুগীয় বিশ্বাস এবং পবিত্র ভাবাদর্শ এখনও অক্ষুণ্ণ। পাশাপাশি আধুনিক যুগ এবং মধ্যযুগ----পরস্পর বিরোধী এই দুইটি যুগের প্রবল অবস্থিতি বিস্ময়ের বিষয় সন্দেহ নেই। অন্ধকারের মধ্যেও একটি স্তিমিত স্নিগ্ধ আলোক রেখা বলে মনে হয়।


অবশ্য তীর্থগুলির অভাবাত্মক দিকও যে নেই এমন নয়। তীর্থভ্রমণের মূলে মানুষের পাপস্খলনের প্রবৃত্তিটাই বড় বেশী বলে মনে হয়। তীর্থে গিয়ে সাধারণ লোকে মনে করে যে সে কলুষ মুক্ত হল। তীর্থের ভাবাদর্শকে বরণ করে গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর প্রাত্যহিক জীবনেও তা প্রতিফলিত করি এমন সংকল্প তার মনে কদাচিৎ উদিত হয়।


বরঞ্চ অনেক স্থানে দেখা যায় লোকে তীর্থভ্রমণকে পাপের প্রায়শ্চিত্তের সহজ পন্থা বলে মনে করে। হজমী ঔষধ হাতের কাছে থাকলে একজন লোভী ব্যক্তি যেমন এই ভরসায় অতিভোজন করে যে, একমাত্রা হজমী ঔষধ খেলেই সব হজম হয়ে যাবে। তেমনি তীর্থ করে আসলেই পাপমোচন হয়ে যাবে এই ধরণের মনোবৃত্তিই মানুষকে অনেক সময় নূতন পাপ অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত করে। এটা কতকটা শিশু খাদ্যে ভেজালকারী অসাধু কোটিপতি ব্যবসায়ীর রাম নাম করতে নিত্য গঙ্গাস্নান করবার মত। এরফল এই হয় যে, গঙ্গাস্নান কালে ঐ ধনী ব্যক্তিটির মনে সাময়িকভাবে যে ভাবপ্রবণতাটি দেখা যায়, তা গদীতে বসা মাত্রই মন হতে কর্পূরের মত উবে যায়। রাম নাম করলে বা কোন তীর্থে গিয়ে মন্দির বা ধর্মশালাদি করে নিলেই অর্জিত পাপ লঘু হবে, এই ধারণা তাকে পাপ কর্মের অনুষ্ঠানে অধিকতর প্ররোচিত করে।


জ্বালামুখীতেই দেখেছিলাম, একজন সাধক উদয়াস্ত প্রবল নিষ্ঠার সঙ্গে একাসনে বসে ধ্যান জপ করছেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, জ্বালামুখীর মত মহাপীঠস্থানে দশ লক্ষ নাম জপ করলে মন্ত্রসিদ্ধি অনিবার্য। তিনি দশ লক্ষ মন্ত্র জপ করে প্রফুল্ল মনে সেখানে থেকে চলে যান। কয়েক বৎসর পরে তাঁকে তারাপীঠে অন্য এক অবস্থায় দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম।


জ্বালামুখীতে তাঁর মধ্যে যে তপস্যার নিষ্ঠা এবং পবিত্রতা দেখেছিলাম, তাঁর তারাপীঠের জীবন যাত্রার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সঙ্গতি ছিল না।দুই-তিন টি ভৈরবী সহ নানাবিধ পাপাচরণ এবং শিষ্য বঞ্চনাতে তিনি মত্ত ছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেছিলেন, "পুনরায় জ্বালামুখীতে গিয়া দশ লক্ষ মন্ত্র জপ করলেই আমি আমার শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারব।"


তীর্থ এইভাবে মানুষকে পাপাচরণে প্ররোচিত করে। এছাড়া তীর্থবাসী পাণ্ডা এবং পুরোহিতদের মনে যে তীর্থ একটা মায়াময় অন্ধ প্রভাব সৃষ্টি করে তাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন। তাঁদের মধ্যে অনেকই উত্তরধিকার সূত্রে কতকটা অন্ধসংস্কার এবং কতকটা ব্যবসায়িক বুদ্ধির প্রেরণা তীর্থ দেবতাকে জীবনে ধ্যানঞ্জান করে বসেন।


তাঁদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনেও এর ফলটা হয় মারাত্মক।কুসংস্কার এমনভাবে তাঁদেরকে আচ্ছন্ন করে যে প্রাণসংশয়কারী কঠিন পীড়াতে বৈঞ্জানিক চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তে শান্তি স্বস্ত্যয়ন এবং দেবতার চরণামৃত পান কেই তাঁরা অধিকতর মূল্য দিয়ে বসেন।কাশীতে দেখেছি, একজন পাণ্ড্য কঠিন নিমুনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন না। তাঁর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বিদ্ধান্‌ পুত্রগণ ও অগাধ বিশ্বাসে গৃহে শান্তি স্বস্ত্যয়নের অনুষ্ঠান এবং রোগীকে পরণামৃত পান করাতে লাগলেন। এর ফল হল এই যে পাণ্ডা মহাশয়ের মৃত্যু হল।


তীর্থকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে যে অন্ধসংস্কার এবং বিশ্বাস দানা বেঁধে উঠে, তাকেই আমি (লেখক) এখানে তীর্থের অভাবাত্মক দিক বলছি।



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191



Saturday, July 16, 2011

লোমহর্ষক ও অলৌকিকঃ---


"............ এমন সময় পেণ্ড্রা হতে উৎরাই-এর পথে এই কোটেশ্বরের মন্দিরে নেমে এসেছিলাম, সেই দিক দিয়ে একদল লোককে নেমে আসতে দেখা গেল। আমরা মন্দিরের বারান্দায় বসেছিলাম নর্মদার দিকে মুখ করে, কাজেই আমাদের চোখে পড়ে নি। মন্দিরের পিছনে গাছ তলায় যে তিন চারজন নাগা বসেছিলেন, তাঁরাই প্রথম দেখতে পায় তাদেরকে নেমে আসতে। তাঁরাই ছুটে এসে মোহান্তজীকে খবর দেয় যে একদল সশস্ত্র ভীলকে এদিকে আসতে দেখা যাচ্ছে। সংবাদ শুনেই মোহান্তজীর মুখ গেল শুকিয়ে।


বারান্দায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্মণভারতীজী  উঁকি মেরে দেখেই মৃদু কণ্ঠে বললেন --- 'ভীল লোগ আ গয়ে। জয় কোটেশ্বর! 'হর নর্মদে, হর নর্মদে।' মন্দিরের পেছনে পৌঁছেই তারা হুঙ্কার তুলল মূক্‌ মূক্‌ মূক্‌। সমস্ত নাগাই তখন বারান্দায় এবং সিঁড়িতে জড় হয়েছেন। ভীলরা এসেই লাফ দিয়ে বারান্দায় উঠেই এলোপাতাড়ি লাঠি চালাতে লাগল। কয়েকজন নাগা ত্রিশূলের খোঁচা মেরে বাধা দিবার চেষ্টা করেছিলেন।


মোহান্তজী হাত জোড় করে তাদেরকে বলতে লাগলেন ---- হমারা যো কুছ হ্যায় লে যাও, হম দে দেতে হেঁ। লেকিন মার ডালো মৎ। লক্ষ্মণভারতীজী যেটুকু ভীল ভাষা জানেন তারই সাহায্যে চেঁচিয়ে বললেন মোহান্তজীর বক্তব্য। কিন্তু কে শুনে কার কথা।

লক্ষ্মণভারতীকে ধরে তাঁর কাঁধের ঝোলা ছিনিয়ে নিয়ে তা উল্‌টিয়ে দেখতে লাগল। ঝোলার মধ্যে ছিল তাঁর একটি কৌপীন, একটা নেকড়াতে বাঁধা আধসেরটাক আটা এবং উনুন ধরানোর জন্য দুটো শুকনো ঘুঁটে। যে নাগারা তাদেরকে ত্রিশূলের খোঁচা মেরেছিল তাঁদেরকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে সিঁড়ির ধাপ থেকে নিচে।

ইতিমধ্যে প্রত্যেক নাগাই তাঁদের ঝুলি ঝেড়ে প্রত্যেকের সঞ্চিত সেই আধসেরটাক করে আটা তাদের পাতা একটা ময়লা কাপড়ে উপুড় করে ঢেলে দিতে লাগলেন । যে ভীল দস্যুটা লক্ষ্মণভারতীর ঝোলা উপুড় করে দেখছিল । সে তাঁর সেই ঘুঁটে দুটো ভেঙে গুঁড়ো করতে আরম্ভ করতেই তার ভিতর থেকে ঠং করে পড়ল দুটো গিনি । আর যায় কোথায় ? প্রচণ্ড উল্লাসে মূক্‌ মূক্‌ শব্দে হুঙ্কার দিতে দিতে তারা তাঁকে চড় চাপড় দিতে লাগল । যে ভীল দুজনকে ত্রিশূলের খোঁচা মারা হয়েছিল তাদের শরীর রক্ত ঝরছে । তারা ক্রুদ্ধ আক্রোশে যাকেই হাতের কাছে পাচ্ছে তাকেই এলোপাতাড়ি লাঠিপেটা করছে। চারদিকে হৈ হৈ শব্দ, আর্তনাদ, "হর নর্মদে হর নর্মদে" শব্দে পরিত্রাহি চীৎকার।


দুজন ভীল এসে আমার গাঁঠরী খুলে আমার ঋগ্বেদ ও রেবাখণ্ড প্রভৃতি বই চার খানাকে পাতা উলটিয়ে দেখতে লাগল তাতে কোন টাকা লুকানো আছে কিনা । মতীন্দ্রজীর কোর্তা ঘেঁটে পেয়ে গেল তার হাতঘড়ি।


মোহান্তজীর ঝোলা ঘেঁটে পেল কিছু টাকা এবং একটি পকেট ঘড়ি । একজন সেগুলি তাদের সর্দারের কাছে জমা দিল, একজন তাঁর মাথায় যে জটার কুণ্ডলী চূড়ার আকারে কুণ্ডলিত ছিল, তা ধরে টান দিয়ে খুলে ফেলতেই আবার ঠং ঠং করে পড়ল তিনটি গিনি। সর্দার সেগুলি কুড়িয়ে নিয়ে কিছু ইশারা করল। দুজন তাঁকে কিল ঘুষি লাগাতে লাগাতে জটা ধরে টান দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে লাথি মারতে লাগল। এ দৃশ্য আমাদের সহ্য হল না।


জয় 'মা নর্মদে' বলে আমি (লেখক) এবং মতীন্দ্রজী একসঙ্গে ত্রিশূল উঁচিয়ে প্রাণপণ শক্তিতে যে মোহান্তজীকে লাথি মারছিল তাকে আঘাত করলাম। লোকটা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে গেল ঠিকই কিন্তু প্রায় দশজন ভীল দৌড়ে এসে আমাদেরকে পিছন থেকে জাপ্‌টে ধরে নিরস্ত্র করে টেনে নিয়ে গিয়ে বেঁধে ফেলল দুটো থাম্বায়। সর্দারের আদেশে দুজন দুটো টাঙ্গি নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়াল। তাদের উদ্যত টাঙ্গির সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু সন্নিকট জেনে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছি।

এমন সময় মন্দিরের ভিতরটা এমন প্রবল হুঙ্কার এবং অট্টাট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল যে, আমি ত কেঁপে উঠে চোখ খুললামই, আমাদের সামনের দুজন ঘাতকও এমন কেঁপে উঠেছে যে তাদের হাত থেকে টাঙ্গি খসে পড়ল। দরজা খুলে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন সেই সাড়ে ছ'ফুট দীর্ঘদেহী দিগম্বর করপাত্রীজী।

তাঁর বিরাট কলেবর ক্রোধে রক্তবর্ণ, হুঙ্কার তুলছেন ----- অ-মূক্‌ রগড়্যা, অ-মূক্‌ রগ্যাড়া ! চকমকি ঠুকলে যেমন্ অগ্নিস্ফুর্লিঙ্গ বেরোয়, তেমনি তাঁর রক্তবর্ণ বড় বড় চোখ দুটি থেকে অগ্নুদ্‌গীরণ হচ্ছে। তিনি দরজার চৌকাঠ পেরিয়েই দড়াম্‌ শব্দে বসে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে ভীলরাও যে যেখানে যে যে অবস্থায় ছিল দড়াম্‌ দড়াম্‌ শব্দে পড়ে যেতে লাগল। ভীলরা পড়েই থাকল, মহাত্মা উঠে দাঁড়িয়ে একটি হাত ঊর্ধ্বে তুলে হুকুম দিবার ভঙ্গীতে গর্জন করে বলে উঠেলেন ------ অকাতে ভাগ বাকেকানা। ভীলরা তখন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কেবলই মাথা ঠুকে চলেছে মহাত্মার উদ্দেশ্যে। তবুও তাঁর জ্বলন্ত চুক্ষু দেখে মনে হল, তিনি এখনও শান্তভাব ধারণ করেন নি। মহাত্মা স্বয়ং এগিয়ে এসে আমার আর মতীন্দ্রজীর বন্ধন মোচন করলেন।

ভীলদের সর্দার পাঁচটি গিনি এবং দুটি ঘড়ি মেঝের উপর রেখে, এমন কি তাদের অস্ত্র-শস্ত্রও ফেলে রেখে বিষণ্ণ বদনে শূন্য হাতে ফিরে যেতে লাগল। মোহান্তজী মহাত্মার পদতলে পড়ে অশ্রু নয়নে প্রার্থনা জানালেন --- ভগবন! এই ভীল লোক বড়ই অভাবী, অভাবের তাড়নায় লুটপাট করে। আপনি দয়া করে এদেরকে আটাগুলি নিয়ে যাবার অনুমতি দিন। বনে জঙ্গলে হিংস্র শ্বাপদের সঙ্গে লড়াই করেই এদেরকে বেঁচে থাকতে হয়, কাজেই তাদেরকে অস্ত্র-শস্ত্রও নিয়ে যেতে আঞ্জা দেওয়া হোক। মহাত্মা মাথা নেড়ে সম্মতি দিতেই ভীলরা আটা এবং তাদের অস্ত্রশস্ত্র কুড়িয়ে নিয়ে মন্দিরের পিছন দিকে নেমে গিয়ে পেণ্ড্রার দিকে চড়াই এর পথ ধরল। 


মহাত্মাও দ্রুত মন্দির থেকে নেমে তাদের পেছনে পেছনে যেতে লাগলেন। আমরা করজোড়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাঁকে পিছনে ফিরে দেখতে পেয়েই ভীলরা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড় লাগালো। করপাত্রীজী অনেকখানি চড়াই এর পথে উঠে গিয়ে হেঁকে বললেন --- সামকা বখৎ ভেট হোগা। আভি আরাম করিয়ে।"




https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Wednesday, July 6, 2011

৭--এর মাহাত্ম্য------------


জ্যোতিষশাস্ত্রের মতে, বিশেষতঃ চেরো যিনি সুদূর ইউরোপ হতে হরিদ্বারে এসে এক হিন্দু মহাত্মার কাছে হিন্দুজ্যোতিষের কিছু গুহ্য সূত্র আয়ত্ত করে সারা ইউরোপের শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠ রাজপুরুষ ও বিখ্যাত বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনা সম্বন্ধে নির্ভুল ভবিষ্যৎবাণী করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন সেই চেরোর এবং Sepharial নামক আর এক জন সুপ্রসিদ্ধ পাশ্চাত্ত্য জ্যোতির্বিঞ্জানীর মতানুসারে ৭ তারিখটা [৭,১৬=(১+৬)=৭,২৫=(২+৫)=৭] বিষম ঝঞ্ঝাটের দিন।

তিনি সংখ্যাতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে (Neumerology) এই অভিনব কথা বলেছেন যে "৭" হচ্ছে কেতুগ্রহের নম্বর আর কেতু মানেই রহস্য (Mystry); কেতু মানুষের জীবনে অকস্মাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে বিপদ ডেকে আনে। কিন্তু আমি ত একটা জমায়েতের সঙ্গে আছি, জমায়েতের নেতার ইচ্ছানুসারে চলতে হবে, উপায় নেই। কাজেই যা ঘটার ঘটুক।

বাবার কথা স্মরণ করে মনে সান্ত্বনা ও ভরসা আনলাম। তিনি বলতেন ----"ভূত এবং গ্রহের উপর যারা বড় বেশী আস্থা রাখে, তারা ভগবদ্‌-বিশ্বাসী নয়। যা কিছু ঘটছে তার মূলে আছে ভগবদ্‌ ইচ্ছা, এক বিশ্বনিয়ন্তাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন, এই বিশ্বাসের বদলে কেউ যদি কেবলই ভাবে এটা গ্রহবলে হচ্ছে, মঙ্গল এখন খারাপ, এখন রাহুর দশা, শনির দৃষ্টি পড়েছে বৃহস্পতির মাসীর উপর কিংবা শনির ক্রুর দৃষ্টি শুক্রগ্রহের পিসীকে লটপট খাওয়াচ্ছে, এইসব চিন্তা যদি কাউকে গ্রাস করে অর্থাৎ কেউ যদি মনে প্রাণে গ্রহফলে বিশ্বাসী হয় তাহলে বুঝতে হবে, সেই লোকের সত্তার গভীরে ভগবদ্‌-বিশ্বাস বেঁধে উঠেনি।"


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Wednesday, April 13, 2011

গুরুভক্তিঃ--


4.  ধাবড়ীকুণ্ডে অবস্থানকালে সম্বিদানন্দজী বলেছিলেন----- 

'অভয়ানন্দজীর মত গুরুগত প্রাণ শিষ্য আর একজনকেও দেখি নি। আমি চারধাম পরিক্রমা করছি, কত যে মঠ ও সন্ন্যাসী দেখেছি তার ইয়াত্তা নাই। সকলেরই হাজার হাজার ভক্ত আছে। কেউ চায় তার গুরুর কাছে ঐহিক কামনা বাসনার পূর্তি, কেউ চায় পরমার্থিক কল্যাণ। গুরুর কাছে সাধনপ্রাপ্ত হয়ে কতজনকে দেখেছি পাহাড়ে গুহায় তীব্র শীত গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে উগ্র তপস্যায় রত আছেন। কেউ ঊর্ধ্বপদে নত মুণ্ডে, কেউ বা অগ্নি-প্রাকারের মধ্যে বসে তপস্যা করছেন। তুমিও হয়ত পরিক্রমা করতে করতে অনেক উৎকট তপস্বীকে দেখে থাকবে। আমিও তাঁদেরকে দেখেছি এবং ভগবান আমাকে যেটুকু যোগদৃষ্টি দিয়েছেন তারই সাহায্যে আমি বলতে পারি, অভয়ানন্দজী তাঁদের অনেক উপরের অবস্থা লাভ করেছেন অথচ তারজন্য তাঁকে কোন উগ্র তপস্যা করতে হয় নি। শুধুমাত্র গুরুসেবা এবং গুরুগত প্রাণতার জোরে তিনি উচ্চকোটি হতে উচ্চতার কোটিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। ত্যাগ বৈরাগ্য ত তাঁর আছেই, গুরুর প্রতি ভালবাসার টানে তিনি রাজৈশ্বর্য ত্যাগ করে এসেছেন, সে কথা তোমাকে আগেই বলেছি।এক লিঙ্গস্বামীই তাঁর ধ্যান-ঞ্জান।গুরুর স্থূল দেহের সেবা ত তিনি করছেনই, তাঁর সমস্ত খুঁটিনাটি প্রয়োজনেও অভয়ানন্দজী সব সময়েই হাজির থাকে।আমার যখন সময় ধরে নিয়ম করে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ধ্যান ধারণায় মগ্ন থাকি,গুরু উপরের গুহায় কখন কিভাবে কি অবস্থায় আছেন,প্রতিকূল জলহাওয়া তাঁর স্থূলদেহের কোন অসুবিধা ঘটাচ্ছে কিনা,তার কোন খোঁজ নিই না,তখন ও অভয়ানন্দজী গুরুসেবায় রত থাকেন।


একবার মাঘ মাসের প্রচণ্ড শীতে এখানে বরফ পড়ছিল, আমরা যে যার গুহার মধ্যে ধূনি জ্বেলে নিজেদের অন্তরঙ্গ সাধনে মত্ত ছিলাম; সকালে উঠে দেখলাম, এখানকার পাহাড় ও গাছপালাগুলো বরফে ঢেকে গেছে। গুহার বাইরে হঠাৎ-সমাধিস্থ  গুরুজীর উপর একটা ত্রিপল টাঙ্গিয়ে ত্রিপলের তিন দিক গাছের ডালে বেঁধে গুহার গায়ে যেদিক টায় কোন গাছ নাই, সেদিকের খুঁটটা নিজের হাতে ধরে গোটা রাত দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বেলা আটটা নাগাদ ঐ দৃশ্য আমার চোখে পড়ে। আমি সবকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুরু-শিষ্য উভয়ের চারদিকে আগুন জ্বালি।'বটুকনাথ ' গুহার মধ্যে ঢুকে গিয়ে বরফের হাত থেকে আত্মরক্ষা করেছিল।প্রায় দু'ঘণ্টা বাদে গুরুজীর ধ্যান ভাঙে, তিনি অভয়ানন্দজীর দুর্দশা  দেখে অধীর হয়ে পড়েন। সারারাত্রি বরফ পড়ে অভয়ানন্দজীর দেহ বরফের কুচিতে ঢেকে গেছল।


'হম ত নর্মদামায়ীকা গোদমেঁ থা লেকিন হমারা অভয়ানন্দকা হালৎ ক্যায়সে বুরা হো গয়া'---এই বলে মহাযোগী কেঁদে ফেলেন। নিজে দুহাতে জড়িয়ে ধরে অভয়ানন্দের দেহ আগলে তিনি বসেছিলেন। অভয়ানন্দের সারা গায়ে বড় বড় ঘা হয়ে গিয়েছিল তুষারপাতের ফলে। গুরুজী নিজ হাতে তার পরিচর্যা করেছিলেন। সেবা বলতে বুঝায় স ইব=সেব্‌ ধাতুর উত্তর আপ্‌। স ইব মানে তাঁর অর্থাৎ ঈশ্বরের মত। গুরুকে জীবন্ত ঈশ্বরবোধে সেবা; তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন এই অভয়ানন্দজী।


নানাবিধ যোগযাগ, ধ্যানধারণায় যা লাভ করা যায় না, কেবল মাত্র গুরুসেবা দ্বারা তা প্রাপ্তব্য। উপনিষদে পড়েছেন ত উদ্দালক ও আরুণির কথা। তাঁরা কেবল গুরুসেবা করেই পরম পদ লাভ করেছিলেন। শ্রুতিবাক্য মিথ্যা নয়। যে কোন তপস্যার চেয়ে গুরুসেবা পরম পদ-প্রাপ্তির অব্যর্থ ফলপ্রদ পন্থা।


আমরা একই গুরুর শিষ্য হয়েও যতই সাধনা করিনা কেন, নিজেদের পূর্বজন্মার্জিত সাধনা ও সুকৃতি, তার সঙ্গে এ জন্মের তপস্যার বল যুক্ত হয়ে যত উচ্চপদই পাই না কেন, আমরা কিছুতেই শিবকল্প মহাযোগী এক লিঙ্গস্বামীর সমান হতে পারব না, কিন্তু অভয়ানন্দজী তাঁর গুরুসেবার জোরেই দ্বিতীয় এক লিঙ্গস্বামী হয়ে যাবেন।এক লিঙ্গস্বামীর সমূহ সাধন--- সম্পদ এবং সাধন- শক্তি অবলীলাক্রমে তাঁর মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে যাবে। নর্মদাতটে দাঁড়িয়ে আমি মিথ্যা বলছি না, এ কথাকে ধ্রুবসত্য বলে জানবেন।



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Monday, April 4, 2011

গুরুভক্তিঃ----


3. শঙ্করাচার্যের শিষ্য পদ্মপাদাচার্য ছিলেন গুরুভক্তি ও গুরুগত প্রাণতার এক মূর্ত প্রতীক। তাঁর গুরুভক্তির স্বীকৃতি স্বরূপ আচার্য শংকর তাঁর প্রধান চারটি মঠের অন্যতম পুরুষোত্তম ক্ষেত্রস্থিত গোবর্ধন পীঠের আচার্য পদে অভিষিক্ত করেছিলেন। তিনি কিরকম গুরুগতপ্রাণ ছিলেন, তাঁর গল্প  হল---

পদ্মপাদাচার্যের অন্য নাম সনন্দন। আচার্যের সব শিষ্যরা অসাধারণ গুরুভক্ত ছিলেন এবং সকলেই প্রাণপণে তাঁর সেবা করতেন। তবুও আচার্য কেবল সনন্দনের গুরুগতপ্রাণতার পুনঃপুনঃ প্রশংসা করতেন। 


এজন্য অন্যান্য শিষ্যদের মনে সনন্দনের প্রতি একটা অসূয়ার ভাব ছিল। তাই সর্বসমক্ষে সনন্দনের একক বৈশিষ্ট প্রকট করার জন্য একদিন সনন্দন যখন অলকানন্দার অপর পারে গিয়েছিলেন, তখন সকলের সামনেই আচার্য অন্য পার থেকে ডাক দিলেন---'সনন্দন! সনন্দন ! শীঘ্র এস।' 


গুরুদেবের ত্রস্ত আহ্বানে সনন্দন অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি ভাবলেন দুর্গম হিমালয়ের বিপদ সঙ্কুল অরণ্যের মধ্যে হয়ত কোন বিপদ উপস্থিত হয়েছে । সেতুর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে পা ফেলে গেলে দেরী হয়ে যাবে, এই চিন্তা করে তিনি কোন দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে সোজা অলকানন্দায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।


বরফাচ্ছন্ন খরস্রোতা নদী। স্রোতের বেগ এমনই প্রচণ্ড এবং উদ্দাম যে, তাতে মত্ত মাতাঙ্গ ও পড়ে গেলে ভেসে যাবে মুহূর্তের মধ্যে।এই দৃশ্য দেখে আচার্যের অন্যান্য শিষ্যরা সনন্দনের মৃত্যু সুনিশ্চিত জেনে হাহাকার করে উঠলেন। 


কিন্তু গুরুগতপ্রাণ শিষ্যের দেহকে সর্বদাই গুরু রক্ষা করেন ।


গুরুশক্তিতে বলীয়াণ সনন্দনের প্রতি পদক্ষেপেই এক একটি করে পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়ে উঠতে লাগল।সেই সকল পদ্মের উপরেই এক একটি পা রেখে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে গুরুর চরণে এসে বন্দনা করলেন।


এই অলৌকিক ঘটনা দেখে তাঁর গুরুভ্রাতাদের আর বাক্যস্ফুর্তি হয় না।সনন্দনকে আলিঙ্গন করে অপরাপর শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আজ হতে সনন্দনের নাম হল পদ্মপাদ। তোমরা মনে রাখবে----ন গুরোরধিকং তত্ত্বং গুরু সেবার মত আর কোন শ্রেষ্ঠ তপস্যা নেই।' অদ্বৈতবাদের প্রধান আচার্য, মায়াবাদের প্রবক্তা, ঞ্জান-বিচারের নব ভগীরথ সেদিনই ঘোষণা করেছিলেন---



শরীরং সুরূপং সদা রোগ মুক্তং
যশশ্চারু চিত্রং ধনং মেরুতুল্যং
গুরোঘন্র--পদ্মে মনশ্চেয় লগ্নং
ততঃ কিং ততঃ কিং ততঃ কিং ততঃ কিং।।


অর্থাত, কারও শরীর কন্দর্পকান্তিই হোক, কিংবা সে নীরোগ শরীরের অধিকারীই হোক, সে যত বড় যশস্বী হোক, কিংবা তার মেরুপর্বত তুল্য ধনরত্নের পাহাড়ই থাক, গুরুপাদপদ্মে যদি চিত্ত লগ্ন না থাকে, তবে তার কি লাভ হল? অর্থাৎ গুরুভক্তি বিনা সবই নিরর্থক।


পঞ্চপাদিকা, বিঞ্জানদীপিকা, প্রপঞ্চসার এবং পঞ্চাক্ষরী ভাষ্য প্রভৃতি গ্রন্থ লিখে পদ্মপাদ গুরুর মতবাদের পুষ্টিসাধন করেছিলেন।




Monday, March 21, 2011

গুরু ভক্তিঃ----


1. আগ্রাতে স্বামীবাগের রাধাস্বামী সম্প্রদায়ের প্রথম সন্ত শিবদয়াল সিংজীর (রাধাস্বামী সাহেবের) একজন শিষ্য ছিলেন। তাঁর নাম রায়বাহাদুর শালগ্রাম সিং। তিনি তাঁর সময়ে ভারতের পোষ্টমাষ্টার জেনারেল ছিলেন। তিনি প্রতি মাসে বেতন হিসাবে তখনকার দিনে সাড়ে তিনহাজার বা চারহাজার টাকা বেতন পেতেন।

বেতনপ্রাপ্তি মাত্র তা গুরুর চরণে এসে 'ভেট' দিতেন। গুরু সেই টাকা থেকে একহাতে মুঠো করে যা তুলে দিতেন, তাই দিয়ে তিনি সংসার নির্বাহ করতেন। অফিস যাবার আগে এবং অফিস থেকে ফিরে এসে গুরুকে দর্শন করা ছিল তার নিত্য কাজ। 


যদি কোন সময় এসে দেখতেন, গুরু ভজনগৃহে আছেন, তাহলে যত রাত্রি হোক তিনি অফিসের সেই ধড়াচূড়া পরেই ভজনগৃহের রুদ্ধ দরজার কাছেই বসে থাকতেন । একদিন রাধাস্বামী সাহেব সমাধিমগ্ন ছিলেন।


রাত্রি অতিবাহিত হল, সকাল আটটা হল, তবুও তাঁর দরজা খুলল না । রায় শালগ্রাম সাহেবের বাড়ীর পরিজনরা বারবার এসেও তাঁকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না। বেলা ৯টার সময় রাধাস্বামী সাহেবের ধর্মপত্নী রাধাবাঈ এসে দেখেন, একটা সিঁড়ি লাগিয়ে ভজনগৃহের দেওয়ালের উপর দিকে যে সংকীর্ণ ভেণ্টিলেটার আছে তার মধ্যে তিনি নিজের মাথা ও মুখ ঢুকিয়ে নিজের ইষ্টমূর্তি গুরুকে দর্শন করছেন। 


শ্রীমতী রাধাবাঈ তাঁকে সস্নেহে মৃদু ভৎর্সনা সুরু করলে তিনি অতিকষ্টে মুখ বের করে নিয়ে মাতাজীকে বলেন---মাতাজী গুরুজীকা শ্রীমূর্তি দর্শনকে লিয়ে মেরে দিল তড়পাতে হৈ। তিনি সিঁড়ি বেয়ে যখন নামলেন, তখন দেখা গেল, তাঁর গালের চামড়া ঘর্ষণের চাপে উঠে গেছে, কপাল ও দুটো কানও রক্তাক্ত । 


যাইহোক এই সময় সমাধি হতে রাধাস্বামী সাহেবের ব্যুত্থান ঘটে। তিনি টলতে টলতে দরজা খুলে শালগ্রামজীকে তদবস্থায় দেখে নিজেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কাঁদতে থাকেন । শালগ্রামজীর গুরুভক্তির আরও কাহিনী শুনেছিলাম । তাঁর গুরুর নিবাসস্থল থেকে প্রায় চারমাইল দূরে যমুনা । তিনি অতদূরে হেঁটে গিয়ে প্রতিদিন গুরুর স্নানের জন্য জল বয়ে আনতেন।


এজন্যে সাধারণের মধ্যে গুঞ্জন উঠে । সকলেই বলতে থাকেন----গুরুর পাল্লায় পড়ে এতবড় একটা লোক পাগল হয়ে গেছে ।


শালগ্রামজী এই লোকাপবাদের কথা শুনতে পেয়ে দুপায়ে ঘুঙুর বেঁধে দুবাহু ও মাথায় টুকরো টুকরো নেকড়া বেঁধে নাচতে নাচতে জল বয়ে আনতে লাগলেন। গুরুসেবার জন্য তিনি লোকপবাদকে বিন্দুমাত্র পরোয়া করেন নি ।তাঁর এই রকম বেপরোয়া ভাব ও গুরুভক্তি দেখে লোকের গুঞ্জন আপনা হতে স্তব্ধ হয়ে গেছেল।


পরবর্তীকালে দেখা যায় রাধাস্বামী সাহেব তাঁর এই গুরুগত প্রাণ ভক্তকেই তাঁর গদীতে দ্বিতীয় সন্তসদ্‌গুরু হিসাবে মনোনীত করে গেছলেন । সন্তমতালম্বী লক্ষলক্ষ ভক্তদের কাছে আজ ও তিনি 'হুজুর' মহারাজ নামে পুজা পাচ্ছেন ।




2. একবার গুরুনানক তাঁর কয়েকজন শিষ্যসহ ভ্রমণ করছিলেন তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত লাহিনাও সেই দলে ছিলেন। হঠাৎ বনের মধ্যে একটি মৃতদেহ তাঁর চোখে পড়ল। পচা মৃতদেহ একটা কাপড় দিয়ে ঢাকা।

গুরুনানক সেই দুর্গন্ধময় শবটি দেখিয়ে শিষ্যদেরকে বললেন---তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে আমার কথায় পচা গলিত শবদেহ ভক্ষণ করতে পারে? গুরুর এইকথা শুনে সবাই অবোবদনে দাঁড়িয়ে রইলেন। 


কেউ কেউ ভাবতে লাগলেন, গুরুজী কি আজ অপ্রকৃতিস্থ নতুবা এমন ন্যক্কারজনক প্রস্তাব কি করে করতে পারলেন? আমরা শিখ, অঘোর পন্থী ত নই ! নানক অধিকাংশ শিষ্যদের এই রকম মনোভাব বুঝে পুনরায় ঘোষণা করলেন---'নির্দ্ধিধায় যে বিনা বিচারে গুরুবাক্য পালন করতে পারে, সেই প্রকৃত শিখ। 


প্রকৃত গুরুগতপ্রাণ শিখই পরম পদ অর্থাৎ অলখ্‌ নিরঞ্জনতত্ত্ব উপলব্ধির যোগ্য আধার। যারা তা পারে না, তারা গুরুর চারধারে থেকে কেবলই ভীড় বাড়ায়'। নত মস্তক সব শিষ্য নীরবে গুরুর এই ধিক্কার শুনলেন, কিন্তু তাঁর আদেশ পালন করতে এগিয়ে এলেন না। 


অবশেষে লাহিনাকে দেখা গেল, তিনি ধীরে,ধীরে মৃতদেহের কাছে করজোড়ে বললেন---গুরুজী আপনি দয়া করে বলে দিন, এই মৃতদেহের কোন অংশ থেকে আমি সর্বপ্রথম খেতে আরম্ভ করব ?


লাহিনার কথা শুনে তার গুরুভ্রাতারা স্তম্ভিত। কিন্তু নানক শান্ত কণ্ঠেই উত্তর দিলেন, 'কোমরের দিক থেকেই আরম্ভ কর'। গুরুর বাক্য শেষ হতে না হতেই নির্বিকার চিত্তে লাহিনা শবদেহ কামড় দেবার জন্য হাঁ করে ঝুকে পড়লেন। কিন্তু শবদেহ থেকে চাদরের আচ্ছাদন তুলতে দেখা গেল, সেখানে থরেথরে সুমিষ্ট ফল ও মিষ্টান্ন দ্রব্য সাজানো রয়েছে। 


বিস্ময়ে হতবাক শিষ্যরা ভাবলেন, ও হল সর্বশক্তিমান গুরুজীর এক অত্যাশ্চর্য বিভূতির খেলা! গুরুনানক চেলাদের ভাব-ভাবনার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে লাহিনার মাথায় হাত দিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন---'এ আমার কোন বিভূতি নয়, তোমার গুরুভক্তির গুণেই এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।


মনে রাখবে, অষ্টাঙ্গ যোগমার্গ, লয়যোগ, মন্ত্রযোগ, শব্দযোগ, সিদ্ধযোগ, বিহঙ্গীযোগ, সুরতশব্দযোগ, প্রভৃতির নিরন্তর অভ্যাসেও যে পরমপদ লাভ করা যায় না।


প্রকৃত একজন শিখ তার গুরুভক্তির গুণে তা অবলীলাক্রমে লাভ করতে পারে। লাহিনা! তোমার অসাধারণ গুরু সত্ত্বাকে গুরুর অঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছ, সর্বতোভাবে তুমি আমার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।তাই তোমার নাম দিলাম  অঙ্গদ। আমার পরেই তুমিই হবে সমগ্র শিখপন্থের গুরু।'




Tuesday, March 15, 2011


1. শক্তি চাহতে হো, তো শক্তিকে কেন্দ্রসে সম্বন্ধ জোড়ো। থোড়া থোড়া নিত্য ভগবানকে ভজন কা অভ্যাস করকে চলো। বুঁদ বুঁদসে ঘড়া ভরতা হৈ।

2. সংসারতো কজ্জল কী কোঠরী হৈ । ইসকা জিতনা জ্যাদা সম্পর্ক বঢ়াওগে, উতনী হী কালিমা লাগেগী ।


3. সংসার কী সুন্দরতা ঐসী হৈ, জৈসে শ্বশুরাল কী গালী। গালী তো গালী হী হৈ পর উসমেঁ আচ্ছী ভাবনা করলী গই হৈ ।সংসার মেঁ কুছু সুন্দর হৈ নহী পরন্তু ইসে সুন্দর মান লিয়া গয়া হৈ।


4. মনতো বালু কা ভিত্‌ হৈ--- জরা দো বুঁদ পানী পড়া কি খিস্‌কী। ইসমেঁ পরমাত্মারূপী সিমেণ্ট কা থোড়া যোগ দে দিয়া জায়, তো ফির বহূৎ মজবুত হো জায়গী।


5. অনেক বাসনা- সূত্রঁকো ইকট্‌ঠা করকে ভগবৎ বাসনারূপী মোটি রস্‌সী তৈয়ার করো, ঔর উসীকে সহারে ভবকুপসে বাহর নিকল যাও।


6. সংসার মেঁ আয়ে হো--- ঐসী চাতুরী সে কাম লো, কি ফির লৌট কর্‌ মলমূত্রকে ভাণ্ডমেঁ না আনা পড়ে।


7. ভগবানকী ধ্যানমেঁ লগ্ন ঔর মগ্ন হো যাও। জিতাজিত্‌ মুক্তি হাসিল করনা চাহিয়ে।


8. যব গুরুকা অনুগ্রহ হোতা হৈ, তব শিষ্যকী চেতন-শক্তিকা আরোহ হোতা হৈ। গুরুকা অবতরণ ঔর শিষ্যকা আরোহ, গুরুকী অনুকম্পা ঔর শিষ্যকী শুশ্রূষা পরস্পর উপকারক হৈ। ইস্‌ প্রকার কা অবরোহ ঔর আরোহ ক্রমকা অনুবর্তন প্রত্যক্ষ সূর্য ঔর পৃথ্বীপরকে ভূতগ্রাম মেঁ দৃষ্টিগোচর হোতা হৈ।


9. জীব ঔর পরমাত্মা মৈঁ যো ভেদ দিখাই দেতা হৈ, বহ্‌, ঐসা হৈ যৈসা ধান ঔর চাবল (চাউল) কা ভেদ। জীব যবতক কর্মবন্ধনমে পড়া হৈ, তবতক পরমাত্মসে ভিন্ন হৈ ।কর্ম বন্ধন নষ্ট হোনে পর্‌ উহ্‌ পরমাত্মা হি হৈ।


10. ভগবান দীন দয়ালু হৈ, দুঃখীদয়ালু নঁহী। যো দীন হৈ, উসকে লিয়ে পরমাত্মা দয়ালু হৈ। দীনতা কা অর্থ বিনম্র আত্মসমর্পণ হী ভাগবৎ-চেতনা-লাভ করনে কো লিয়ে কুঞ্জী হৈ।



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Monday, March 14, 2011

শোক এবং দুঃখ:---


শোক এবং দুঃখ হচ্ছে মানবজীবনের মহৎ অধিকার। এই অধিকার হতে দেবতারা বঞ্চিত। দুঃখ হচ্ছে মানবজীবনে মুক্তির যৌতুক। এই যৌতুক মানুষকে অপরাজিত মনুষ্যত্ব দান করে। রামচন্দ্র দুঃখ পেয়েছিলেন, দুঃখ পেয়েছিলেন বুদ্ধদেব। শোক দুঃখের পতাকা তিনি যাকে তাকে দেন না, যাকে দেন তাকে বইবার ক্ষমতাও দেন । মাটির তালটাকে কুমোর গড়ে পিটে আঘাত দেয়, কিন্তু তার হাতটি থাকে পেছনে। ঘট প্রস্তুত করার জন্য এই আঘাত প্রয়োজন। আঘাতে  চঞ্চল হয়ো না, আড়ালে যে মঙ্গল উদ্দেশ্যটি আছে, তার অনুসন্ধান কর । মনে রেখ, দুঃখের হূল না ফুটলে মানুষের জীবন কখনও ফুল হয়ে ফুটে ওঠে না।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

শিষ্য কি?


কোন যোগীগুরুর কাছে যেসব শিষ্য বা জিঞ্জাসু আসেন, তাঁরা সাধারণতঃ তিনশ্রেণীর হয়ে থাকেন । তাদের অধিকাংশ হয় 'অধোমুখকুম্ভ' শ্রেণীর। ------কলসীকে উপুর করে জলে ডুবালে তাতে যেমন জল ঢোকে না, জলে ডুবানোর পূর্বেও যেমন খালি থাকে, জল থেকে উঠিয়ে নেবার পরেও খালি থেকে যায়, তেমনই মহাপুরুষদের কাছেও এমন সব ধর্মার্থী আসে, যারা মহাপুরুষদের উপদেশ শুনে, সেই উপদেশানুসারে নিজেদের জীবনকে গঠন করার চেষ্টা করে না । দীর্ঘকাল সৎসঙ্গ করেও তারা খালি থেকে যায় । এরা হল অধমশ্রেণীর।

মধ্যমশ্রেণী শিষ্যদেরকে বলা হয় 'উৎসঙ্গবদর'। বদর মানে কুল । কোন কুলগাছের তলায় কেউ কাপড়ের খুঁট বা শাড়ীর আঁচল পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকল । গাছ থেকে টুপ্‌টুপ্‌ , করে কুল পড়ছে । সে যদি উঠবার সময় কুলগুলোকে ভাল করে বেঁধে না নিয়ে উঠে দাঁড়ায়, তাহলে কুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছের তলায় পড়ে থাকবে । তেমনই একধরণের শিষ্য আছে যারা সাচ্চা মহাপুরুষের সঙ্গে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর সঙ্গ করে, উপদেশ শোনে কিন্তু কোন কিছুই গলাধঃকরণ করে না, হৃদয়ঙ্গম করে না, জপ তপ সাধন ভজন করে না, নিজেদের অন্ধ সংস্কার টেক্‌ জিদ্‌ বা অহংকারও ত্যাগ করে না । কেবল গুরুমুখে কিছু কিছু বাছা বাছা বুলি শিখে নিয়ে, টুকে নিয়ে ভাব-চোরা বকম্‌বাজ তালবাজ এবং চালবাজ হয়ে উঠে, তারা হল 'উৎসঙ্গবদর' কুলগাছের তলায় সারাদিন বসে থেকেও গাছের কুল গাছের তলাতে ফেলে রেখে শূন্য হাতে শূন্য কোছড়ে তারা ফিরে আসে ।

ধর্মার্থী শিষ্যদের মধ্যে আবার কেউ কেউ এমন থাকে, যারা যথার্থ ধর্ম জীবন লাভের জন্য যথোচিত আর্তি ও শরণাগতি বুকে নিয়ে মহাপুরুষের কাছে আসে । আন্তরিকভাবে গুরু বা মহাপুরুষের উপদেশ গ্রহণ করে, সেইভাবে নিজেদের জীবনকে গঠন করার চেষ্টা করে । সাধনায় তাদের কোন শৈথিল্য থাকে না । প্রাণপণে মহাপুরুষের বাণী ও উপদেশানুসারে নিজেদের জৈব জীবনের যেসব ত্রুটি বা ভ্রান্ত সংস্কার তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে । অক্ষম হলে চোখের জলে প্রাণের ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানায় । এই প্রকৃতির ধর্মার্থীদেরই ধীরে ধীরে শিব- জীবনে উত্তরণ ঘটে । একটা শূণ্য কলসীকে ভরে তুলতে হলে তাকে যেমন ঊর্ধ্বমুখ করে জলে ডোবাতে হয়, তবেই তা যেমন ধীরে ধীরে জল ভরে যায়, তেমনই যারা নির্বিচারে গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাঁর জীবন ও বাণীর অনুকরণ, অনুশীলন ও অনুবর্তন করতে পারে তারাই সর্বোত্তম শ্রেণীর শিষ্য ।তাদেরকেই বলা হয় 'উর্ধ্বমুখকুম্ভ'।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Wednesday, January 26, 2011

অলৌকিক দর্শন:---


............... সূর্যাস্ত হতে আর দেরী নাই। নাঙ্গা বাবা ঘাট খুঁজে জলস্পর্শ করাতে নিয়ে গেলেন আমাদেরকে। কিন্তু ঘাট পেলাম না, মরিয়া হয়ে যে কোন স্থানে নামতেও সাহস হল না কারও। তিনিই সাহস করে একস্থানে নেমে জলস্পর্শ করে জল ছিটিয়ে দিলেন আমাদের গায়ে। যাঁদের কমণ্ডলুর জল কম ছিল কিংবা শেষই হয়ে গেছল, সেগুলো ভরে ভরে হাত উঁচু করে এগিয়ে দিলেন আমাদের দিকে। কোন মতে হামাগুড়ি দিয়ে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট গাছপালা আঁকড়ে ধরে কোন মতে উঠে এলেন উপরে।

সূর্যাস্ত হয়ে গেছে, অন্ধকার নেমে এসেছে, যেন হঠাৎ একটা নীরন্ধ্র কালো যবনিকা নেমে এসেছে পৃথিবীর উপর। আমরা তাড়াতাড়ি ফিরে এলাম সেই শিমূল ও বেলগাছের তলায়। কনকনে ঠাণ্ডা, নর্মদা হতে মাঝে মাঝে ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে আমাদের কাতর করে তুলেছে। তাড়াতাড়ি কাঠে আগুন লাগানো হল কাঠে ধীরে ধীরে আগুন ধরতে লাগল আমরা আসন কম্বল পেতে মাথায় গেরুয়া কাপড়ের ফেটি, মাফলার, গরম টুপী যার যেমন আছে সেইভাবে বেঁধে নিয়ে বসলাম। মুক্ত আকাশের তলায় সম্পূর্ণ নিরাবরণ অবস্থায় আমাদের সঙ্গে বসে রইলেন দিগম্বর সাধু।

আগুন ধীরে ধীরে স্তূপীকৃত কাঠের মধ্যে জাঁকিয়ে উঠে আমাদের সাজানো অনুযায়ী ঘিরে ধরল আমাদেরকে মণ্ডলাকারে। আমাদের শয্যা হতে দূরে আগুন ধিকি ধিকি জ্বলে উঠতেই আমরা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হতে নিস্তার পেলাম। পালা করে ৪জন করে প্রতি প্রহরে জেগে থাকার বন্দোবস্ত করা হল। নাঙ্গা মহাত্মা এবং হিরন্মায়ানন্দজীকে এই প্রহরা দেবার কাজ হতে অব্যাহতি দেওয়া হল। নাঙ্গা সাধু বললেন --- আমার এখন যেখানে বসে আছি, এখান থেকে মাত্র দেড় মাইল হেঁটে গেলেই ভৃগুপর্বতের কাছে শূলপাণীশ্বর মহাদেবের মন্দিরে পৌঁছে যেতে পারব।

সকালে সূর্যোদয় হলেই ভৃগু পর্বত এইখান থেকেই দেখা যাবে।
সকালে উঠে উত্তরতটের দিকে তাকালেই এখানকার যে মহল্লা আমাদের চোখে পড়বে, তার নাম বড়গাঁও। প্রাচীন যুগে ঐখানে গোপাল নামক এক গয়লার হাতে অনবধানতা বশতঃ একটি গাভীর মৃত্যু হয় ।

গোপাল তার ঐ গরুটিকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসত। এই ঘটনার পর গোপালের মন অনুশোচনায় ভরে যায়। নিজেকে গো-হত্যার অপরাধে অপরাধী ভেবে সে নিরম্বু উপবাসে থেকে কঠোর তপস্যা করে। আশুতোষ তাকে দর্শন দিয়ে বিমলেশ্বর তীর্থ স্থাপন করতে আদেশ দেন।

তার প্রতিষ্ঠিত বিমলেশ্বর শিবের পূজা এখানও সেখানে হয়। ওঁঙ্কলেশ্বর হতে আসার পথে হরিধাম অতিক্রম করে কিছুদূরেই যে আর একটি বিমলেশ্বর তীর্থ আছে, নামের সাদৃশ্য থাকলেও ঐ দুটি পৃথক পৃথক তীর্থ। হরিধামে পেরিয়ে এই দক্ষিণতটেই যে বিমলেশ্বর দেখে এসেছেন তিনি স্বয়ং শিব। আর এখানে আমাদের সামনে যে বিমলেশ্বর তাঁকে শিব ঞ্জানে পূজা করলেও তিনি অনাদি লিঙ্গ নন, একজন শিবের গণ বা ভৈরব মাত্র।


তাঁর কথা শেষ হতে না হতেই খস্‌ খস্‌ শব্দ শুনে আমরা চমকে উঠলাম। আগুনের শিখায় দেখতে পেলাম চারটে নেকড়ে বাঘ এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের লক্‌লকে জিহ্বা বের করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। একত্রে এতগুলো লোভনীয় শিকার চোখের সামনে দেখে তাদের নোলা থেকে জল ঝরছে। তাদের এবং আমাদের মধ্যে অগ্নির লেলিহান শিখা দাউদাউ করে জ্বলছে বলে ভয়ে, ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছে না, নতুবা আমাদের কী যে দশা হত, তা মা নর্মদাই জানেন।

রাত্রি প্রায় দশটা নাগাদ আমাদের পিছনে যে অগ্নিপ্রাকার তার থেকে কিছুদূরে " হাঃ হাঃ হাঃ" অট্টহাসি শুনে আমরা চমকে পিছন দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল প্রায় একসঙ্গে ছ'টা হায়না এসে জড় হয়েছে ।
সামনে নেকড়ে এবং পিছনে হায়নার দল দেখে ভয়ে বাসবানন্দজী এবং আরও দুজন ব্রহ্মচারী মূর্চ্ছিত হয়ে পড়লেন । ঠিক সময়ে হরানন্দজী, বাসবানন্দজীকে এবং রঞ্জন আর দুজন ব্রহ্মচারীকে জাপটে ধরে আসনের উপর শুইয়ে না দিলে তাঁদের হাত পা মাথা নির্ঘাৎ টলটলায়মান অবস্থায় আগুনে পড়ে বিপর্যয় ঘটত।

এইভাবে নেকড়ে এবং হায়নার দল আমাদেরকে ঘিরে ধরায় আমার তখনও যারা দাঁড়িয়েছিলাম, ক্রমে আমাদের মনে প্রবল ভয় দেখা দিল ।


হিরন্ময়ানন্দজী এবং প্রেমানন্দ এই দুজনের শরীর এমনভাবে থরথর করে কাঁপতে লাগল যে তারা হাতের লাঠি ফেলে দিয়ে বসে পড়লেন ধীরে ধীরে। আমি 'বাবা, বাবাগো রক্ষা কর' বলে বড় অসহায়ভাবে প্রাণের আর্তি জানাতে লাগলাম । আমার চোখ দিয়ে জল পড়ছে । রঞ্জনও মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদছেন। যেখানটায় কাঠ কম ছিল সেদিকের অগ্নিশিখার উচ্চতা ক্রমেই কমে আসছে দেখে পিছনের হায়নারা এবং সামনের নেকড়েরা সেই সব স্থান দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদ্যোগ করতেই দেখলাম। গর্জে উঠলেন নাঙ্গা মহাত্মা। তিনি দুহাতে দু্টো জ্বলন্ত কাঠ নিয়ে মাথার উপর ঘোরাতে ঘোরাতে মন্ত্র পাঠ করতে লাগলেন--- 

ওঁ তৎ সবিতুর্বরেণ্যম্‌ ত্র্যম্বকং যঞ্জামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনং ভর্গোদেবস্য ধীমহি। উর্বারুকমিব বন্ধনাৎ ধিয়োয়োনঃ প্রচোয়াৎ। মৃত্যোর্মূক্ষীয় মা অমৃতাং' 


গম্ভীর কণ্ঠে মন্ত্র পাঠের পর তিনি সামনে পিছনে দুদিকে দুটি কাঠ ছুড়ে দিলেন ।পরে আর আগুনের হল্কা চোখে পড়ল না । মিলিয়ে গেল অরণ্যের অন্ধকারের মধ্যে । আমরা স্তম্ভিত হয়ে বসে দুটো কাঠের কোনটাই কোনদিকের বাঘের গায়ে লাগেনি, তবুও পরম বিস্ময়ের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করলাম, নিক্ষিপ্ত দুই কাঠের জ্বলন্ত আগুন দুই দিকে পাথরের উপর পড়া মাত্রই তার হলকা ছুটে চলল তাদেরকে তাড়া করে নিয়ে । বাঘগুলো প্রাণপণে পালিয়ে যাচ্ছে, আমরা স্পষ্টতঃ দেখতে পেলাম দুই টুকরো কাঠের আগুন দশটা হলকা বিভক্ত হয়ে দশটি বাঘকে তাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে । কিছুক্ষণ পরে আর আগুনের হল্কা চোখে পড়ল না । মিলিয়ে গেল অরণ্যের অন্ধকারের মধ্যে । আমরা স্তম্ভিত হয়ে বসে পড়লাম ।


নমো নর্মদে মাতু ঈশান তন্যা
নমো শর্মদে বর্মদে দেবি ধন্যা ।
কলিকাল গঙ্গে সে তেরি বিশোষা,
কথৈঁ মাহাত্ম্য মানৌ দেবা সুরেশা ।।


অর্থাৎ মা নর্মদে!  তুমি ঈশান মহেশ্বরের তনু হাতে জাত। তুমি একাধারে সুখদাত্রী এবং জীবের রক্ষাকর্ত্রী। ধন্য তোমার করুণা।কলিকালে গঙ্গার চেয়ে তোমার মহিমা বেশী। তোমার এই বিশেষত্বের কথা, সমস্ত দেবতা, এমন কি স্বয়ং সুরেশ্বরও মেনে থাকেন। হর নর্মদে।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Sunday, January 23, 2011

দীক্ষা:---


............ আণবী দীক্ষা দশরকম। যথা ------- স্মার্তী, মানসী, যৌগী, চাক্ষুষী, স্পর্শিনী, বাচিকী, মান্ত্রিকী, হৌত্রী, শাস্ত্রী ও আভিষেচিকী।

*স্মার্তী দীক্ষা--- সমর্থ গুরু বিদেশস্থ শিষ্যকে স্মরণ করে ক্রমশঃ তার আণবমল, কর্মমল ও মায়িক মলের আবরণকে বিশ্লিষ্ট অর্থাৎ চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেন এবং লয়যোগাঙ্গবিধানে তাকে পরম শিবে যোজনা করেন। 

*মানসী দীক্ষা--- শিষ্যকে নিজের কাছে বসিয়ে অন্তঃদৃষ্টিতে তার মলত্রয়কে অবলোকন করে, সেই মলত্রয়কে নিশ্চিহ্নকরণ । 


*যৌগী দীক্ষা--- যোগোক্ত ক্রমে গুরু শিষ্য দেহে প্রবিষ্ট হয়ে তার আত্মাকে নিজের আত্মাতে যুক্ত করেন । তার নাম যৌগদীক্ষা । 


*চাক্ষুষী দীক্ষা--- শিবোহহং ভাবে সমাবিষ্ট হয়ে গুরু করুণাদৃষ্টিতে শিষ্যকে নির্ণিমেষ নেত্রে দেখতে থাকেন তাতেই শিষ্যের মধ্যে অকস্মাৎ শিবভাবের বোধন ঘটে যায় । 


*স্পর্শিনী দীক্ষা--- গুরু স্বয়ং পরমশিবভাবে ভাবিত হয়ে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন । সেই সময় তাঁর হস্তই শিবহস্ত, তাঁর মুখই শিববক্ত্র । আনন্দ জ্যোতিতে উদ্ভাসিত গুরু শিষ্যের উপযোগী বীজমন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে তাঁর শিবহস্ত শিষ্যের মাথায় অর্পণ করেন । সঙ্গে সঙ্গে নাদ ও জ্যোতি প্রকট হয়ে যায় ।


*বাচিকী দীক্ষা--- গুরু তাঁর গুরুভাবে ভাবিত হয়ে নিজ দেহে স্বীয় গুরুশক্তির আবেশ ঘটান । নিজের বক্ত্রকে তখন গুরুবক্ত্ররূপে অনুভব করে শ্রদ্ধাপ্লুত অবস্থায় শিষ্যের নিকট দিব্যমন্ত্র প্রকট করে থাকেন।সেই সদ্যপ্রকটিত মন্ত্রের উপযোগী মুদ্রান্যাসাদি সাধন প্রণালীও শিখিয়ে দেন।


*মান্ত্রিকী দীক্ষা---এই দীক্ষায় গুরু মন্ত্রন্যাস যুক্ত অবস্থায় স্বয়ং মন্ত্রতনু হয়ে শিষ্যকে মন্ত্রদান করে থাকেন ।গুরু যে মন্ত্রতনু হলেন তা শিষ্য এই দেখে বুঝতে পারেন যে গুরুর ললাটে কিংবা বক্ষস্থলে শিষ্যের বীজ অত্যাশ্চর্য উপায় যেন ক্ষোদিত হয়ে জ্বলজ্বল- করছে ।

*হৌত্রী দীক্ষা--- গুরুকুণ্ডে বা স্থণ্ডিলে অগ্নিস্থাপন করে লয়যোগের ক্রমে শিষ্যকে দিয়ে প্রসিদ্ধ বেদমন্ত্রে ক্রমাগত আহুতি দেওয়াতে থাকেন । তাঁর সংকল্প থাকে শিষ্যের মলশুদ্ধি ও পাশ মুক্তি । বেদমন্ত্র হল---


ওঁ অগ্নিং দূতং বৃনীমহে হোতারং বিশ্ববেদসং
অস্য যঞ্জস্য সুক্রতুম ।।*

হোম করতে করতে শিষ্য প্রথমে খুব জ্বলন বা তাপ অনুভব করেন । এই যঞ্জাগ্নির তাপে শিষ্যের দেহাবস্থিত পাশ সমূহ দগ্ধীভূত হয় । তারপর শান্ত স্নিগ্ধ শীতলতার আবির্ভাব হয় । সেই স্নিগ্ধ অমৃতরসে শিষ্যের সকল সত্তা আপ্লাবিত হয়ে যায় ।

*শাস্ত্রী দীক্ষা--- গুরু তাঁর যোগ্য শুশ্রূষু ভক্তকে যে সাধনায় সিদ্ধ করতে চান কিংবা যে তত্ত্ব তিনি তার মধ্যে প্রকট করতে চান, সেই তত্ত্ব বিষয়ক বা সাধনা বিষয়ক গ্রন্থ শিষ্যের হাতে দিয়ে আশীর্বাদ করেন ।তাঁর আশীর্বাদের ফলে সেই তত্ত্ব বা সাধন রহস্য শিষ্যের অধিগত হয়ে যায় ।


উপনিষদে গল্প আছে, আরুণি, উদ্দালক ও উপমন্যু প্রভৃতির গুরু সেবায় তুষ্ট হয়ে তাঁদের স্ব স্ব গুরুবর্গ কোন সাধনা না করিয়েও কেবল আশীর্বাদ করতেন--- সর্ববিদ্যা তোমার অধিগত হোক, তুমি ব্রহ্মের স্বরূপ উপলব্ধি কর, আর গুরুর অমোঘ আশীর্বাদের গুণে তাঁরা অচিরাৎ ব্রহ্মবিদ্যায় পারংগম হয়ে উঠতেন ।এরই নাম শাস্ত্রী দীক্ষা।

*আভিষেচিকী দীক্ষা---এই দীক্ষার অপর নাম শিবকুম্ভভিষেক দীক্ষা। সাধারণতঃ একটি কুম্ভে শিব ও শিবানীকে পূজা করে শিষ্যকে মন্ত্রদান করা হয় ।সাধারণ তন্ত্র গ্রন্থে এই বিধান । কিন্তু শৈবাগমের ঋষিদের মতে, শিষ্যকে গন্ধপুষ্পাদি দ্বারা পূজা করে স্বয়ং গুরু তার দেহরূপ ঘটে আপন তপঃশক্তির বলে শিব ও শিবানীর আবেশ সঞ্চার করে দেন ।সেটাই যথার্থ আভিষেচিকী দীক্ষা । অন্তররাজ্যে প্রবেশ করার জন্য গুরু কর্তৃক শিষ্যের এই হল----অভিষেক ক্রিয়া ।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Sunday, January 9, 2011

মা


অন্তর কার কুসুম- কোমল, বহিছে কোথায় ফলগুধারা ?
মোর ভাবনায় দিবস-রজনী কে রহে বল আত্মহারা ?

প্রতিদিন কার আহ্বান আসে ক্ষুধার অন্ন চা'বার আগে
সুশীতল বারি কাহার হস্তে নেহারি সহসা তৃষ্ণা জাগে?

বিপদে কাহার আকুল হৃদয় যাচে দেবতার প্রসাদটুক ?
অমঙ্গলের বিষম ভাবনা শেলসম বিঁধে কাহার বুক ?

জীবন- পথের বিঘ্ন বাধায় পশ্চাতে ঠেলে কাহার হাত ?
সংসার-মরু ছায়াময় রয় সে শুধু কাহার আশীর্বাদ ?

আমার সুখ-যশ-গৌরবে কার বুক ভরে সবার চেয়ে ?
শুভদিনে কার স্মিতহাসিখানি ঝরে পড়ে দু'টি নয়ন বেয়ে ?

স্বরগ হতেও প্রিয় আপনার করিয়াছে কেবা ধরার মাটি ?
তাঁরে কি চেন না ? চিনাইতে হবে ? তিনি যে মোদের মধুরা মা-টি !





Saturday, January 8, 2011


এই মাটিতে পিতঃ। তোমার চরণ স্পর্শ আছে ।
তাই এই মাটি, স্বর্গসম, মধুর আমার কাছে। ।
এই হাওয়াতে বাবা তুমি নিয়েছিলে শ্বাস
তাই এই হাওয়া স্নিগ্ধ হলো, তাই এত সুবাস ।
এই আলোতে ভাগ্যবলে হেরেছিনু নয়ন মেলে
তোমায় পিতঃ! তাই এ আলো হৃদয় দীপ জ্বালে ।।
সকল ধ্বনি রণরণি কানে শোনায় মধুর বাণী
হৃদয় বীণায় নিত্য তোমার অমৃত গান শুনি ।
ঝরণা, নদী, বৃষ্টিধারা মন্দাকিনী সুধাভরা
তোমার স্নেহসাগর মাঝে হয় যে প্রভু হারা ।।
সকল ধ্যানের সকল ঞ্জানের শেষ যে তোমার কাছে ।
পুত্র তোমায় নিত্য যে তাই অভয় চরণ যাচে ।।