Monday, July 27, 2015

"নেমাবর এবং হণ্ডিয়া"


নেমাবর তীর্থ এবং হণ্ডিয়া, এই দুই স্থানকে নর্মদার নাভিস্থল বলা হয়। এই দুই স্থানই অমরকণ্টক হতে রেবাসংগম পর্যন্ত দূরত্বের মাঝামাঝি স্থানে অর্থাৎ কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। নেমাবর তীর্থ এবং হণ্ডিয়া এই দুই স্থানই কুবেরের শিবতপস্যার সিদ্ধক্ষেত্র।

নেমাবর তীর্থ --- নেমাবর নর্মদার উত্তরতটে অবস্থিত। এখানকার বাতাবরণ বড়ই পবিত্র। এই স্থান প্রাচীনকালে হতেই তপস্যার অনুকূল। এখানকার পূজিত শিবলিঙ্গ --- সিদ্ধনাথ, প্রায় দুই ফুট উঁচু। শিবলিঙ্গের সামনের দিকটা কালো এবং যোনিপীঠের দিকটা সাদা। জ্যামিতিক মাপে সাদা ও কালো অংশ প্রায় সমান সমান। শিবলিঙ্গের গাত্রে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ চিহ্ন, দক্ষিণাবর্ত গতিতে পরিস্ফুট চক্র চিহ্ন এবং কৌমদকী অর্থাৎ গদার চিহ্ন ও পদ্মচিহ্ন থাকায় --- সিদ্ধনাথ হল বৈষ্ণবলিঙ্গ।

হণ্ডিয়া --- হণ্ডিয়া নর্মদার দক্ষিণতটে অবস্থিত। মন্দিরের চূড়ায় পিতলের দ্বাদশ কলস রয়েছে। এখানকার পূজিত শিবলিঙ্গ --- ঋদ্ধনাথ প্রায় দুই ফুট উঁচু। শিবলিঙ্গের সামনের দিকটা কালো এবং যোনিপীঠের দিকটা সাদা। জ্যামিতিক মাপে সাদা ও কালো অংশ প্রায় সমান সমান। শিবলিঙ্গের গাত্রে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ চিহ্ন, দক্ষিণাবর্ত গতিতে পরিস্ফুট চক্র চিহ্ন এবং কৌমদকী অর্থাৎ গদার চিহ্ন ও পদ্মচিহ্ন থাকায় -- ঋদ্ধনাথ হল বৈষ্ণবলিঙ্গ।

"বৈষ্ণবং শঙ্খচক্রাঙ্কগদাব্জাদিবিভূষিতম্‌।
শ্রীবৎসকৌস্তুভাঙ্কঞ্চ সর্বসিংহাসনাঙ্কিতম্‌।।
বৈনতেয়সমাঙ্কং বা তথা বিষ্ণুপদাঙ্কিতম্‌।
বৈষ্ণবং নাম তৎপ্রোক্তং সর্বৈশ্বর্যফলপ্রদম।।" 

সিদ্ধনাথ ও ঋদ্ধনাথ  শিবলিঙ্গে  শ্রীবৎস, কৌস্তভ, গরুড় ও বিষ্ণু পদচিহ্ন না থাকলেও শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম প্রভৃতি বিষ্ণু চিহ্ন থাকায়, ইনি বৈষ্ণবলিঙ্গ। এই শিবলিঙ্গ সর্বৈশ্বর্য প্রদান করেন।

****** পুরাণ এবং রামায়ণে আছে --- কুবের যক্ষদের রাজা, তিনি ধনপতি। পুলস্ত্য ঋষির পুত্র বিশ্রবামুনি কুবেরের পিতা। বিশ্রবার পুত্র বলে এঁর আর এক নাম বৈশ্রবণ। উগ্র তপস্যার বলে কুবের ব্রহ্মার বরে অমরত্ব, উত্তর দিগন্তের দিকপালত্ব এবং ধনাধ্যক্ষতা লাভ করেন। ব্রহ্মা তাঁকে পুষ্পক রথ দান করেছিলেন। এই দিব্য রথের বৈশিষ্ট্য --- স্মরণ মাত্রই এই রথ তাঁর কাছে উপস্থিত হত এবং যথা সংকল্পিত স্থানে পৌঁছে দিত। বিশ্রবামুনি তাঁর এই পুত্রের জন্য লঙ্কাপুরী বাসস্থান হিসাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্রবার অপর পুত্র কুবেরের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা বিশ্বত্রাস, রাক্ষসরাজ রাবণ কুবেরের কাছ হতে স্বর্ণলঙ্কা এবং পুষ্পক রথ অধিকার করে নেন। তখন বিশ্রবামুনি অলকাপুরীকে কুবেরের বাসস্থান নির্দিষ্ট করে দেন।

রাবণ কুবেরের কাছ হতে স্বর্ণলঙ্কা এবং পুষ্পক রথ কেড়ে নিলে মনের দুঃখে কুবের নর্মদার উত্তরতটস্থ নেমাবরে সিদ্ধনাথের স্থানে ষড়ক্ষরী শিববীজ জপ করতে থাকেন। মহাদেব প্রসন্ন হয়ে কুবেরকে নবনিধি অর্থাৎ দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ, মহাপদ্ম, মকর কচ্ছপ, নীল, কুন্দ, মুকুন্দ, খর্ব প্রভৃতি মহামূল্য মণিমাণিক্যের সঙ্গে পুষ্পক রথ এবং অলকাপুরী দান করেন। রাবণ পুনরায় তা কেড়ে নিলে মহাদেবের প্রত্যাদেশে কুবের নর্মদার দক্ষিণতটে হণ্ডিয়াতে ঋদ্ধনাথের স্থানে বসে তপস্যা করেন এবং পুনরায় সেই নবনিধি এবং অলকাপুরী ফিরে পান।

মহাকবি কালিদাসের অমর গীতিকাব্য "মেঘদূতম্‌" এ বর্ণিত এই অলকাপুরী লোকমানসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। একবার হিমালয়ে কুবের দেবী রুদ্রানীকে দৈবাৎ দেখতে পান, ফলে তাঁর দক্ষিণ চক্ষু দগ্ধ এবং বাম চক্ষু বিগলিত হয়ে পিঙ্গল বর্ণ ধারণ করে। সেইজন্য কুবেরের নাম হয় এক পিঙ্গল। এঁর তিনটি পা এবং আটটি দাঁত থাকায় দেহের গঠন এইরকম কুৎসিৎ বলেই এর নাম কুবের। 

পৌরাণিক কাহিনী বাদ দিলে বৈদিক মতে কুবের শব্দের অর্থ --- পরমেশ্বর। কুবি আচ্ছাদনে এই ধাতু হতে কুবের শব্দ নিষ্পন্ন হয়। 'যঃ সর্বং কুবতি স্বব্যাপ্ত্যাচ্ছদয়তি স কুবেরো জগদীশ্বরঃ।' অর্থাৎ যিনি স্বীয় ব্যাপ্তির দ্বারা সকলকে আচ্ছাদন করেন সেই পরমেশ্বরের নাম কুবের।

https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Friday, July 10, 2015

"পিতামাতাই প্রকৃত সদ্‌গুরু" ------


"মন্ত্রদাতা ঞ্জানদাতা, তাঁরে বলি গুরু,

সদ্‌গুরু সেই যাঁহা হতে, ব্রহ্মদর্শন শুরু।
স্থিতি ভেদে সংঞ্জা ভেদে, সুকৃতিতে মেলে
মহাগুরু মাতাপিতার, জন্ম হতেই কোলে।।"

বেদ উপনিষদ থেকে আরম্ভ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঋষি মুনি মহাযোগীদের মতে ---


"ওঁ " --- ব্রহ্মমন্ত্র, মন্ত্ররাজ। ব্রহ্মসাধনের একাধারে সাধ্য ও সাধনতত্ত্ব "ওঁ " --- ওমিতি ব্রবীমি তৎ। অ উ ম এর সমবায়ে "ওঁ"। "অ" = ব্রহ্মা অর্থাৎ সৃষ্টিতত্ত্ব, "উ" = বিষ্ণু অর্থাৎ স্থিতিতত্ত্ব বা পালনী শক্তি এবং "ম" = মহেশ্বর অর্থাৎ লয় বা পর্যাবসানের প্রতীক। "ঁ " (পরপ্রণব) সূচিত করে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরেরও অতীত পরমতত্ত্ব মহাউদগীথ, পরম জ্যোতি, আনন্দ, রস ও অমৃতস্বরূপ পরমব্রহ্ম।


"ঐং" --- এই মন্ত্র পূর্ণ ব্রহ্মবিদ্যা স্বরূপা বাগেশ্বরী বা সরস্বতীর বীজ। সরস্বত্যর্থ "ঐঁ" শব্দোবিন্দু দুঃখহরার্থকঃ। "ঐ" = সরস্বতী,  "ঁ" = দুঃখহরণ। সরস্বতী শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় --- স,  রসবতী, স + রস + বতুপ, স্ত্রীলিঙ্গে ঈপ্‌ অর্থাৎ স, রসবতী রসস্বরূপ পরমব্রহ্ম। ব্রহ্মবিদ্‌বরিষ্ঠ ঋষিগণ মন্ত্রোদ্ধার করে আদি গুরুর বীজ হিসাবে ঐং কে প্রত্যক্ষ করেছেন। গুরু ঞ্জানদাতা, মুক্তিদাতা, স্বয়মেব ব্রহ্ম। "ঐং" পিতার বীজমন্ত্র হিসাবে নির্দিষ্ট হওয়ায় অর্থ দাঁড়াল --- ঞ্জানদাতা, মুক্তিদাতা, পরমব্রহ্মের  সচল বিগ্রহ  পিতৃদেব আমাদের সর্ববিধ দুঃখ হতে পরিত্রাণ করেন।


"হ্রীঁ " --- ব্রহ্মস্বরূপিণী "হ্রীঁ" বীজ একাধারে মায়া ও ভুবনেশ্বরী  বীজ। স্নেহময়ী মায়ের মধ্যে যাঁর পূর্ণ  প্রকাশ। "হ" = শিব। "র্‌" = প্রকৃতি। "ঈ" = মহামায়া, জগজ্জননী।  "ঁ " = দুঃখহরণ। অর্থাৎ মহাদেবের মহাকল্যাণময়ী শক্তি মহানাদময়ী  জগজ্জননীর ছায়া মা আমাদের দুঃখ হরণ করেন।


মাতাপিতার বীজমন্ত্র  "ওঁ  ঐঁ  হ্রীঁ " এই মহাবীজের মধ্যে শিবশক্তির সামরস্য ঘটছে।


"পরমদুর্লভং বীজং ভজতাং কামদো মণিঃ।" ----- এই বীজ পরম  দুর্লভ  বস্তু, কামদমণির  কাছে  যদৃচ্ছা  প্রার্থনা করলে যেমন সর্বাভীষ্ট সিদ্ধ হয়, সেইজন্য কামদমণি ঞ্জানে এই বীজের ভজনা করা উচিত।।