Monday, June 20, 2016


"অতীতের নেপথ্য হইতে
অযাচিত করুণার মত
এসেছিলে হাসিতে হাসিতে
ভুলাইতে পথক্লেশ যত।

কি জানি, কি রহস্য জড়িত,
এই অন্ধ মানব-জীবন!
কোন দিব্য-প্রেমে নিয়ন্ত্রিত,
পর কেন হয় গো আপন?

অজানিত অতিথির কাছে
মুক্ত করি হৃদয়-ভাণ্ডার,
সুখ দু:খ সঞ্চিত যা আছে,
সমাদরে দিলে উপহার!

নিরাশায় হয়ে প্রতিহত 
তব পাশে আসিনু যখন;
মায়াময়ী জননীর  মত
স্নেহাঞ্চলে করিলে ব্যজন।

যদি এই আশ্রিতে তোমার,
হেরিয়াছ স্নেহের নয়নে;
তবে এরে ভুলিও না আর ---

Wednesday, June 1, 2016


শাস্ত্রে, যোগীর দুর্ঞ্জেয় যোগবলের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে --- 

যদ্‌ দুষ্করং যদ্‌ দুরাপং যদ দুর্গং যচ্চ দুস্তরম্‌।
সর্বং তৎ তপসা সাধ্যং তপো হি দূরতিক্রমম্‌।। 

অর্থাৎ যা কিছু দুঃসাধ্য, দুর্লভ, দুর্গম এবং দুস্তর --- সে সকলই তপস্যার দ্বারা লাভ করা যায়। তপস্যার শক্তি অলঙ্ঘ্য। যোগীর যোগবল সাধারণ মানুষের ঞ্জানবুদ্ধির অগোচর। ভৃগু, দুর্বাশা, বিশ্বামিত্র, অগস্ত্য প্রভৃতি ঋষিদের যোগবলের কাছে রাজচক্রবর্তী ও সম্রাট থেকে আরম্ভ করে দুর্ধর্ষ দেব দৈত্য রাক্ষসরা পর্যন্ত নতশির থাকতেন। তপোসিদ্ধ মহাযোগীরা প্রকৃতির অধীন নন, তাঁরা প্রকৃতির নিয়ামক বা অধীশ্বরের সঙ্গে নিত্যযুক্ত থাকার ফলে তাঁরা ইচ্ছা করলে প্রকৃতিকেও নিয়ন্ত্রন করতে পারেন। পাতঞ্জল যোগদর্শনে যোগীর এই শক্তি বা বিভূতিকে বলা হয়েছে --- প্রকৃতি-বশিত্ব। প্রকৃতি-বশিত্ব যাঁদের করায়ত্ত থাকে, তাঁরা সহসা প্রকৃতির উপর হস্তক্ষেপ করেন না, প্রাকৃতিক নিয়মের স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই বিধি।

www.twitter.com/tapobhumi30

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

Tuesday, March 22, 2016


দোলযাত্রার পুণ্যক্ষণে "মা নর্মদার" কৃপাধন্য "তপোভূমি নর্মদা"র লেখক স্বর্গীয় শৈলেন্দ্রনারায়ণ ঘোষাল শাস্ত্রীজীর জন্মদিনে তাঁকে জানাই সশ্রদ্ধ প্রণাম


হোম আরতি ঘি এর বাতি তপতপস্যার আড়ম্বর,
জপবো না নাম ন্যাস প্রাণায়াম করব নাকো অতঃপর।
কাজ কি মিছা জঞ্জালে,
কী হবে মোর চক্ষু মুদে
আসন পেতে বাঘছালে?
তুমিই আমার স্বর্গপিতঃ!
তুমিই আমার দেবতাগো
দাও চরণের পুণ্যধূলি
আশিস্‌ তোমার মহার্ঘ!

Monday, March 21, 2016

"কোটেশ্বর তীর্থ" ---


নর্মদার উত্তরতট, দক্ষিণতট মিলিয়ে পাঁচটি কোটেশ্বর তীর্থ আছে। এটি নর্মদার উত্তরতটে অবস্থিত। মন্দিরের যাওয়ার পথ খুবই দুর্গম। পথের উপর, গাছের গোড়াতে দুই তিন হাত পর্যন্ত পলিমাটি জমে থাকায় স্পষ্ট বোঝা যায় নর্মদায় যখন জোয়ার আসে এই সব স্থান ডুবে যায়। বড় বড় গাছপালায় ঢাকা বলে কোটেশ্বরের প্রস্তর নির্মিত সুপ্রাচীন মন্দির তট থেকে চোখে পড়ে না। মন্দির চত্বর বিশাল। মন্দিরে পূজিত শিবলিঙ্গটি খুবই জাগ্রত। মন্দিরের গর্ভগৃহে সূর্যের কিরণ প্রবেশ করে না। গর্ভগৃহের দরজা সব সময় বন্ধ থাকে। পূজা করে  গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ করে দিতে হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহের আয়তনের চেয়ে মন্দিরের বারান্দা অনেক বেশী প্রশস্ত। বারান্দা থেকে প্রশস্ত বাঁধানো সিঁড়ি ধাপে ধাপে নেমে গেছে। মন্দিরটি গাছপালায় ঢাকা বলে পরিক্রমাবাসী সাধুরা গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেন। এই মন্দিরের পিছনে, আশে পাশে পরিক্রমাবাসী সাধুরা থাকেন।

মন্দিরে পূজিত শিবলিঙ্গটি হল আগ্নেয় লিঙ্গ। এই আগ্নেয় লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য হল ---

"আরুণং হিত্য কীলালমুষ্ণস্পর্শং করোত্যলম্‌।
আগ্নেয়ং তচ্ছক্তিনিভমথবা শক্তিলাঞ্ছিতম্‌।
ইদং লিঙ্গবরং স্থাপ্য তেজসাধিপতির্ভবেৎ।।"

আগ্নেয় লিঙ্গ অরুণ বর্ণের মত লাল হয়, করতলে উষ্ণ স্পর্শ লাগে, লিঙ্গের মধ্যে অর্ধনারীশ্বর বা শক্তির চিহ্ন স্পষ্ট অঙ্কিত থাকে। এই লিঙ্গ যিনি স্থাপন করেন স্থাপয়িতা তেজের অধীশ্বর হন।

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191





Saturday, March 12, 2016


মহাদেব বিষপান করেও মৃত্যুঞ্জয় হয়েছেন কেন!

একে শূলী, তায় জ্বলে গলায় গরল
যন্ত্রণায় তাই শিব হইয়া বিহ্বল,
অপর্ণা পার্বতী মহারোগ-বিনাশিনী
একমাত্র ঔষধিরে সার মনে গণি,
মহানন্দে লইলেন তাঁহারি আশ্রয়
সে অবধি হয়েছেন ভবে মৃত্যুঞ্জয়।

মহাদেব বিষপানকালে প্রাণের আশঙ্কা করেন নি কেন!

স্বয়ং শিব আছে এই ভবে
বিষপানে মৃত্যু হলে শিবত্বই রবে
পবিত্র জাহ্নবী-জল স্পর্শ যদি করে
শবের শিবত্ব হয়, জানি এ সংসারে।
যে শিবত্ব সে শিবত্ব থাকিতে আমার,
বিষপানে তবে মোর ভয় কিবা আর?
গঙ্গাধর মনে মনে ইহাই বিচারি
বিষপান করিলেন আশঙ্কা না করি! 

মহাদেবের মাথায় চন্দ্র কেন! 

ঢলঢল করিতেছে শিরে গঙ্গাজল
ধক্‌ ধক্‌ জ্বলিতেছে নয়নে অনল।
জল অনলের শত্রু, পাছে তথা গিয়া।
নির্ঝণ করিয়া দেয়, ইহাই ভাবিয়ে,
চন্দ্রকলা গিয়া সেই শঙ্করের শিরে,
মধ্যস্থ হইয়া আছে চিরদিন ধরে! 

অন্নপূর্ণা যাঁর গৃহিনী, সেই মহাদেব ভিক্ষা পাত্র হাতে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করেন কেন! 

অন্নদানে ত্রিসংসারে রাখিবার তরে
ভগবতী অন্নপূর্ণা নিত্য যাঁর ঘরে,
লইয়া মড়ার মাথা তবু সেই হর 
দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে হইয়া কাতর !
ললাটের বিধিলিপি যেবা করে লয়? 

মহাদেব কালীর চরণ বক্ষে ধারণ করেছেন কেন! 

দেবগণ করে যবে সমুদ্র মন্থন,
পরম প্রচণ্ড বিষ উঠিল তখন।
চুক্‌ চুক্‌ করি সেই বিষপান করি,
ছট্‌ফট্‌ করে হর বহুকাল ধরি।
অবশেষে বুঝে কালী-চরণ-কমল
একে মুক্তিপ্রদ, তায় পরম শীতল;
আনন্দে মাতিয়া তাই দেব দিগম্বর
কালীপদ-যুগ নিজ বক্ষের উপর
রাখিয়া পরম সুখে বিভোর হইয়া
দুর্জয় বিষের জ্বালা গিয়াছে ভুলিয়া।
ছাড়িলে বিষের জ্বালা পুনঃ বেড়ে যায়,
অদ্যাপি শঙ্কর তাই ছাড়িতে না চায়। 

www.twitter.com/tapobhumi30

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

Sunday, February 28, 2016

"স্বামী ভোলানন্দ তীর্থ" ---


কামরূপ মঠের উত্তরাধিকারের যোগ্যতম উত্তর সাধক ছিলেন --- স্বামী ভোলানন্দ তীর্থ। এঁর পূর্বাশ্রমের নাম ছিল ভোলানাথ মুখোপাধ্যায়। জন্মস্থান --- বর্ধমান। সংসারে তাঁর একমাত্র বন্ধন ছিলেন মা। মায়ের দেহান্তের সঙ্গে সঙ্গে তিনি বর্ধমান, পুরী, ভুবনেশ্বর, হরিদ্বার, কাশী ও প্রয়াগ প্রভৃতি স্থানের ১২ খানি অট্টালিকা এবং নগদ ৩ লক্ষ টাকা চতুষ্পাঠী স্থাপন এবং সৎ কাজের জন্য দান করে দিয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্ন্যাস গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে  কামরূপ মঠের যে গুফাটিতে আশ্রয় নেন, সেখানে থেকে রাত্রি ৩টে একমাত্র গঙ্গা স্নান ছাড়া অন্য কোন কারণেই মঠের বাইরে যেতেন না। মঠের পেছনে প্রায় দুইশত গজ দূরেই গোধূলিয়ার মোড়। কিন্তু তিনি তাঁর সুদীর্ঘ ৬২ বৎসরের সন্ন্যাস জীবনে গোধূলিয়া দেখেন নি। পবিত্র সন্ন্যাস-ধর্ম যে কী কঠিনতম ব্রত, তা অজগর-বৃত্তিধারী এই মহাতপা যোগীর পুণ্যজীবন দেখলে তবেই মর্মে মর্মে অনুভব করা যায়। 

তাঁর জীবন-দর্শনের আভাষ ---

ভারত বিখ্যাত মহামহোপাধ্যায় বামাচরণ ন্যায়াচার্যের পুত্র পণ্ডিত গোপাল ন্যায়াচার্য একদিন স্বামীজীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তিনি ছিলেন, তাঁর ভগ্নীপতি কবিরাজ নিবারণ ভট্টাচার্যের প্রতিষ্ঠিত দিল্লী আয়ুর্বেদিক ফার্মেসীর কর্মাধ্যক্ষ। দিল্লী ও উত্তরপ্রদেশের নানা স্থানে তার শাখা প্রশাখা আছে। এই কবিরাজী দোকানের কাজে তাঁরা বহু অর্থ উপার্জন করেছিলেন। তিনি স্বামীজীকে বললেন --- 'তোমার আশীর্বাদে আমরা বহু অর্থ উপার্জন করেছিলাম, অহংকারে তোমাকে মানিনি, আজ বড় দুঃসময়, গতবছর থেকে আমরা ব্যবসায়ে মার খাচ্ছি। তুমি আশীর্বাদ কর। আমাদের পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে দাও।' 

স্বামীজী --- সে কি ভগবন্‌। আমি আবার তোমার ভাগ্য ফিরালুম কবে? আমি নিজে ভিখিরি, বিশ্বনাথের দুয়ারে পড়ে আছি। ভিখিরি আবার টাকার সন্ধান জানবে কি করে? তুমি তোমার কর্ম অনুযায়ী ফল পেয়েছ বা পাচ্ছ। অতবড় পণ্ডিতের ছেলে তুমি, পাছে টাকার প্রয়োজনে অন্য কোন বৃত্তি তুমি অবলম্বন করে ফেল, এজন্য বলেছিলাম সংস্কৃত জান যখন, আয়ুর্বেদের চর্চা করে বিশুদ্ধ কবিরাজী ঔষধের দোকান কর। আশা ছিল --- তোমার সংসারের প্রয়োজনও মিটবে আর ...... আর যে বিরাট প্রতিভা থেকে তোমার জন্ম, হয়ত একদিন তোমার হাত দিয়ে কোন বিস্ময়কর ওষুধও বের হয়ে যেতে পারে। নতুবা আমার মত ভিখিরি, টাকার সুলুক-সালুক কি করে জানবে ধন? ছিঃ বাবা, সন্ন্যাসীর কাছে টাকা চাইতে নেই, টাকা দিতে নেই, টাকার প্রসঙ্গ তুলতে নেই। 

স্বামীজীর এই কথা শুনে গোপালবাবু বড় কাতর হয়ে পড়লেন। কিছু পরে স্বামীজী উঠে পড়লেন। বললেন চল ভগবন্‌, উপরে লাইব্রেরী ঘরে যাই। তিনতলায় ছাদের উপর তখন মঠ সংলগ্ন একটা অশ্বত্থ গাছের ছায়া পড়েছে। সূর্যাস্ত হতে তখন বেশী দেরী ছিল না। হঠাৎ স্বামীজী গোপালবাবুকে জিঞ্জেস করলেন --- ' ভগবন্‌! এই যে এখানে দাঁড়িয়ে আছি, একটু আগে এখানে রোদ ছিল, এখন ছায়া পড়েছে। এই যে ছায়া এটা কি সূর্যের জন্য, না কালের জন্য? 

গোপাল --- কালের জন্য। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তাই ছায়া। 

স্বামীজী --- আবার রোদ আসবে? 

গোপাল --- হ্যাঁ, আবার রাত্রি গত হলে কাল সকালে এইখানে রোদ আসবে। 

স্বামীজী --- তবে দেখ, রোদের পর ছায়া, দিনের আলোর পর সন্ধ্যা --- এই তো নিয়ম। কাল শুভ হয়েছিল, তোমার ঐশ্বর্য হয়েছিল, এখন সন্ধ্যা --- অপেক্ষা কর, আবার ঘুরে ঘুরে সূর্যের আলো এইখানেই এসে পড়বে। এই নিয়ম। এতে কারও হাত নেই। মনে কর, একটা নাচ-উলি, হাসিমুখে নাচ দেখিয়ে চলে গেল সোনারপুরার দিকে। তুমি বসে আছ জঙ্গমবাড়ীতে। এখন তুমি যদি তাকে ঐখানে আটকে রাখতে না পার অথচ তার নাচ দেখবার জন্য আবার যদি ইচ্ছা কর, তাহলে তোমাকে অপেক্ষা করতেই হবে, ঠায় ঐখানটায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে যতক্ষণ না সে নাচ-উলি আবার ঐ রাস্তা দিয়ে ফিরে আসে। আবার এটাও ভেবে দেখা দরকার, ঠিক এই পথ দিয়েই সে আসতেও পারে, নাও পারে। এলেও হাসিমুখে আবার নাচ দেখাবে কিনা তার কোন ঠিক নেই। সবই তাঁর ইচ্ছা ভগবন্‌।

Monday, February 15, 2016

"কামরূপ মঠ" ---


কামরূপ মঠ হল কাশীর প্রাচীনতম মঠগুলির মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে যেখানে বারাণসী শহর অতি প্রাচীনকালে তার উপর দিয়ে গোদাবরী নদী বয়ে যেত। এই নদী দাক্ষিণাত্যের বিখ্যাত গোদাবরী নয়। কাশীস্থ এই গোদাবরী নদীর উভয়দিকে বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি ছিল, গোক্ষুরোত্থিত ধূলিতে গোদাবরীর উভয়তীর সমাচ্ছন্ন থাকতো বলে পরবর্তীকালে কাশীর বিখ্যাত কেন্দ্রস্থলটির নাম হয়েছে গোধূলিয়া। 


গোদাবরী, বরুণা এবং অসি নদীর সঙ্গমস্থলেই ছিল ব্রহ্মা কর্ত্তৃক অনুষ্ঠিত  দশটি অশ্বমেধ যঞ্জের কেন্দ্রস্থল। কালক্রমে নদীগুলি একটু একটু করে স্থান পরিবর্তন করে গঙ্গার সঙ্গে মিশে গেছে। 


ব্রহ্মার প্রধান যঞ্জকুণ্ডের উপরেই এই কামরূপ মঠ গড়ে ওঠে। মঠের তাম্রশাসনে দেখা যায়, কামরূপের রাজা চন্দ্রকান্ত সিংহ মবল ১২৩০ শকাব্দে তাঁর গুরু মহাযোগী মহাদেবানন্দ তীর্থের তপস্যা-ক্ষেত্র হিসাবে এই মঠ স্থাপন করেন। এই মঠের আচার্যগণের ত্যাগ ও তপস্যার নানা কাহিনী প্রবাদ বাক্যের মত প্রচলিত। স্মরণাতীতকাল থেকে ভারতের সাধু সমাজে এই মঠ এক অসাধারণ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। 


অদ্বৈতবেদান্ত রাজ্যের যিনি দ্বিতীয় শঙ্করাচার্য, অমূল্য মহাগ্রন্থ অদ্বৈতসিদ্ধিঃ প্রণেতা আচার্য শ্রীমধুসূদন সরস্বতীও এই মঠের তলদেশস্থ ধ্যান গুহায় কিছুদিন বাস করেছিলেন। পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য, বিশ্ববিশ্রুত অঙ্কবিদ্‌ এবং বৈদান্তিক শ্রীমৎ স্বামী ভারতী কৃষ্ণতীর্থ মহারাজের গুরুদেব শ্রীমৎ স্বামী মধুসূদন তীর্থজীও ছিলেন এই মঠেরই অনুগত সন্ন্যাসী। তিনি প্রায়ই বলতেন --- 'সন্ন্যাসীর পক্ষে অহমিকা থাকা অপরাধ। কিন্তু যখনই মনে করি যে আমি কামরূপ মঠের সন্ন্যাসী, তখন আমার মনে অহঙ্কার জাগে!'



September 2, 2013  ("সাধু হো তো য়্যাসা")

Wednesday, January 27, 2016

"অশ্বত্থামা" ---


পূর্বকালের ঋষিরা কেবল ব্রহ্মের ধ্যানে নিমগ্ন থাকাকে একমাত্র ব্রত বলে ভাবতেন না। ঞ্জান বিঞ্জানের সকল স্তরে অবাধে বিচরণ করে গবেষণা করে নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করাও তাঁদের ব্রতের অঙ্গ ছিল। সুপ্রাচীন যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্রাচার্য ও বহু বিশ্ব বিধ্বংসী অস্ত্রের আবিষ্কারক ছিলেন ঋষি ভরদ্বাজ। তাই বলে তপস্যায় তিনি কোন ঋষির চেয়ে কম ছিলেন না। ঋগ্বেদের ৬ষ্ঠ মণ্ডলের এক থেকে ত্রিশ সূক্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫৬ টি মন্ত্রের তিনি ছিলেন দ্রষ্টা। 

ঋষি ভরদ্বাজের পৌত্র, কুরু পণ্ডবের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র ছিলেন অশ্বত্থামা। অশ্বত্থামার মায়ের নাম কৃপী, কৃপাচার্যের ভগিনী। জন্মমাত্রই নবজাতক উচ্চৈঃস্বরে অশ্বের মত হ্রেষা রব করেছিলেন বলে ইনি অশ্বত্থামা নামে অভিহিত হন। 

অশ্বত্থামা, পিতা দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলেন এবং অনেক মারাত্মক গুহ্য অস্ত্রের প্রয়োগে সিদ্ধহস্ত হন। পিতার কাছ থেকেই তিনি নারায়ণ প্রদত্ত  নারায়ণাস্ত্র এবং ব্রহ্মশির অস্ত্র লাভ করেছিলেন। পাণ্ডবদের বনবাস কালে অশ্বত্থামা দ্বারকায় গিয়ে যুদ্ধে অজেয় হবার অভিপ্রায়ে ব্রহ্মশির অস্ত্রের বিনিময়ে কৃষ্ণের কাছ হতে সুদর্শন চক্র প্রার্থনা করেন। কিন্তু সুদর্শন চক্র উত্তোলন করতে অক্ষম হওয়ায় বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে আসেন। 

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অশ্বত্থামা পিতার সঙ্গে কৌরব পক্ষে যোগ দেন। যুদ্ধে ধৃষ্টদ্যুম্ন কতৃক দ্রোণাচার্যের জঘন্য ভাবে শিরচ্ছেদের পর সেই শোচনীয় দৃশ্য দেখে অশ্বথামা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি পাণ্ডবদের সবংশে এবং সসৈন্যে সংহার করার জন্য নারায়ণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বসেন। নারায়ণাস্ত্রের মহিমা এই যে, সশস্ত্র যে কোন মহাবীর ঐ অস্ত্রকে রুখবার জন্য আস্ফালন বা  challenge  করলেই অস্ত্র তাকে ভস্মীভূত করে ফেলে। কিন্তু কৃষ্ণের উপদেশে সকলেই রথ থেকে নেমে নিরস্ত্র অবস্থায় নিক্ষিপ্ত প্রলয়ঙ্কর মহাস্ত্রের দিকে পিছন ফিরে নতশির হতেই, অস্ত্রে কারও কোন ক্ষতি হল না। পাণ্ডবরা অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন। অশ্বত্থামার পিতৃশোক কিছুতেই প্রশমিত হল না। 

দুর্যোধনের উরুভঙ্গের পর হতাবশিষ্ট কুরুসৈন্যের সেনাপতি হন অশ্বত্থামা। তিনি ঐ সময় একদিন গুপ্তভাবে মাতুল কৃপাচার্য এবং কৃতবর্মাকে সঙ্গে নিয়ে পাণ্ডব শিবিরে প্রবেশ করে পিতৃহন্তা ধৃষ্টদ্যুম্ন, উত্তমৌজা, যুধামন্যু, শিখণ্ডী ও দ্রোপদীর পাঁচ পুত্রসহ আরও অনেক পাণ্ডব সৈন্যকে হত্যা করে আসেন। সেইসময় পঞ্চপাণ্ডব, শ্রীকৃষ্ণ ও সাত্যকি সেখানে না থাকায় তাঁরা ঐ গুপ্ত হত্যার হাত থেকে কোন মতে রক্ষা পান। পুত্রশোকে  দ্রৌপদী প্রয়োপবেশন আরম্ভ করেন এবং ভীমকে বলেন, অশ্বত্থামাকে নিহত করে তার মাথার সহজাত মণি না পেলে তিনি কিছুতেই প্রয়োপবেশন ভঙ্গ করবেন না। 

তখন ভীম অশ্বত্থামাকে হত্যা করার জন্য অর্জুন ও যুধিষ্ঠিরকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন অশ্বত্থামার খোঁজে। তাঁরা দেখলেন অশ্বত্থামা ব্যাস ও অন্যান্য ঋষিদের মধ্যে লুকিয়ে আছেন। পাণ্ডবরা সেখানেই তাঁকে আক্রমণ করলেন। আক্রান্ত অশ্বত্থামা তখন ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগের ইচ্ছা করে একটি ঈষিকা অর্থাৎ কাশতৃণ মন্ত্রপুত করে নিক্ষেপ করলেন। অর্জুনও তখন ব্রহ্মশির নিক্ষেপ করলেন। দুই অস্ত্রের সংঘাতে প্রলয়ের আশঙ্কায় ব্যাস এবং নারদ এসে দুই অস্ত্র হতে নিঃসৃত অগ্নুদ্‌গীরণের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং উভয়কে অস্ত্র প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ দিলেন। 

ঋষিদের নির্দেশে অর্জুন 'ব্রহ্মশির' প্রত্যাহার করে নিতে পারলেন বটে কিন্তু অশ্বত্থামা অস্ত্র সংবরণে অপারগ হলেন। তিনি সেই অস্ত্র অভিমন্যুর পত্নী উত্তরার গর্ভে নিক্ষেপ করে বসলেন। ফলে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয় কিন্তু পরে কৃষ্ণ যোগবলে শিশুকে পুনর্জীবিত করে তোলেন। এইভাবে অশ্বত্থামা পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে তাঁর মাথার সহজাত মণি পাণ্ডবদের হাতে তুলে দিয়ে বনে গমন করেন। 

সারা ভারতবর্ষে এত পাহাড় পর্বত অরণ্য থাকতেও পিতৃগত প্রাণ অশ্বত্থামা মোক্ষদাত্রী সিদ্ধিদায়িনী নর্মদার দক্ষিণতটের শূলপাণির ঝাড়িকে তাঁর বসবাসের শ্রেষ্ঠ স্থান হিসাবে নির্বাচন করে নিয়েছিলেন, এতে তাঁর অর্ন্তদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। নর্মদাতটের এই ক্ষেত্রটি ------ অশ্বত্থামার সাধন-গুহা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।


www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.twitter.com/tapobhumi30

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

Monday, January 18, 2016


"মত পথ যত দেখ সকলি জঞ্জাল,
মনে প্রাণে ডাক তাঁরে নাহি কালাকাল;
দান ধ্যান পূজা পাঠ দানে শুভফল,
ওষ্ঠপুটে পিতৃবীজ শেষের সম্বল।
বুদ্ধিমান জীবে যবে দুষ্ট কর্ম করে,
কেন্দ্র হ'তে ক্রমে ক্রমে দূরে যায় সরে;
এই অপহ্নবে ঘটে স্বরূপের চ্যুতি
সদা জপ পিতৃবীজ পাইবে নিষ্কৃতি।।"





Wednesday, January 6, 2016


"নমঃ পিত্রে জন্মদাত্রে সর্ব দেবময়ায় চ।
সুখদায় প্রসন্নায় সুপ্রীতায় মহাত্মনে।।
সর্ব যঞ্জ-স্বরূপায় স্বর্গায় পরমেষ্ঠিনে।
সর্ব তীর্থাবলোকায় করুণা-সাগরায় চ।।
পিত্রে তুভ্যং নমো নিত্যং সদারাধ্যতমাঙ্ঘ্রয়ে।
বিমলঞ্জানদাত্রে চ নমস্তে গুরুবে সদা।।
নমস্তে জীবনাধিক্যদর্শিনে সুখহেতবে।
নমঃ সদাশুতোষায় শিবরূপায় তে নমঃ।।
সদাপরাধক্ষমিণে সুখদায় সুখয়ে চ।
দুর্লভং মনুষ্যমিদং যেন লব্ধং ময়া বপুঃ।
সম্ভাবনীয়ং ধর্ম্মার্থে তস্মৈ পিত্রে নমো নমঃ।।"