Friday, November 27, 2015

"শ্রীরুদ্রহৃদয়োপনিষৎ মন্ত্রের ব্যাখ্যা : ---


Cont ...... (Last)

16. নিত্য, ব্যাপক, সর্বগত, সূক্ষ্মতম ও ব্যয় রহিত সর্বভূতের উৎপত্তি স্থান-স্বরূপ  অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, গোত্রহীন, রূপ বিহীন, চক্ষু-কর্ণ-হস্ত-পদপরিহীন আত্মাকে ধীরগণ আত্মাতেই অবলোকন করে থাকেন।

17. যিনি সর্বঞ্জ ও বিশেষতঃ সর্ববিৎ, যাঁহার তপ ঞ্জানময় সেই পরম পুরুষ হতে অন্নাদি ভোগ্যরূপে জগৎ আবির্ভূত হয়।

18. রজ্জুতে যেমন সর্পভ্রম হয়, সেই রকম পরম পুরুষে সর্পভানের মত জগদ্‌ভান হয়। রজ্জু সর্প বস্তুতঃ মিথ্যা হলেও যেমন সত্য বলে প্রতিভাত হয়, তেমনই জগৎ মিথ্যা হলেও সত্যরূপে আভাসিত হয়। জগতের অধিষ্ঠান স্বরূপ সেই পরমাত্মা সত্য, তাঁকে জানলেই ভবপাশ হতে মুক্ত হওয়া যায়।

19. তত্ত্বঞ্জানের দ্বারাই সংসার ভ্রমের বিনাশ হয়, কর্মের দ্বারা নয়। ঞ্জানার্থী, ব্রহ্মনিষ্ঠ শ্রোত্রিয় অর্থাৎ শ্রুতিশাস্ত্রবিদ্‌ গুরুর নিকট গমন করেন গুরু সেই ঞ্জানার্থী শিষ্যকে ব্রহ্মাত্মবোধিনী পরাবিদ্যা দান করেন।

20. লোকে যদি সেই গুহা নিহিত পরব্রহ্মকে জানতে পারে, তবে অবিদ্যারূপ মহাগ্রন্থি ছেদ করে সনাতন শিব পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হয়। এই আত্মা প্রাপ্তি বা আত্মাঞ্জান লাভই অমৃত বা মুক্তি। মমুক্ষুগণের এইটাই একমাত্র বোদ্ধব্য।

21. প্রণব ধনুঃ-স্বরূপ, জীবাত্ম শর বা বানস্বরূপ, ব্রহ্ম লক্ষ্যস্বরূপ। শর যেমন ধনুর সাহায্যে লক্ষ্যে ডুবে তন্ময় হয়ে যায়, জীবও সেই রকম অপ্রমত্তভাবে শিবোপাসনার সাহায্যে শিব লক্ষ্যে শরবৎ তল্লীন হয়। লক্ষ্য শিব সর্বগত, বেদ্ধা সাধকও সর্বগত, এই লক্ষ্য শিব সান্নিধ্য লাভের উপায়, তাতে কোন সংশয় নেই।

22. যেখানে চন্দ্র, সূর্যের প্রকাশ নেই, বায়ুর প্রবাহ নেই, দেবগণের দীপ্তি নেই, সেই পরম দীপ্তিময় সর্বভাব স্বরূপ বিরজঃ বিশুদ্ধ শিবতত্ত্ব স্বয়ং-ই প্রকাশ পেয়ে থাকেন।

23. দেহ বৃক্ষে দুটি পক্ষী বাস করে। একটি জীব, অন্যটি ঈশ। জীব কর্মফল ভোগ করে আর যিনি ঐশী সত্তা তিনি ভোগ করেন না, কেবল সাক্ষিরূপে বিরাজ করেন। ভোগ নিবৃত্ত হলেও জীবই ঈশ্বর শিব বা সাক্ষীরূপে প্রকাশ পান। জীব ও ঈশ্বরের যে ভেদ, সেটা যথার্থ নয়, মায়ার দ্বারা তা কল্পিত। যেমন ঘটাকাশ এবং মহাকাশ বস্তুতঃ ভিন্ন নয়, উপাধি বশে ভিন্নরূপে কল্পিত; সেইরূপ জীব ও শিব অভিন্ন, কিন্তু মায়োপাধি দ্বারা ভিন্নরূপে কল্পিত হন।

24. প্রকৃতপক্ষে শিব সাক্ষাৎ চিৎস্বরূপ, জীবও স্বয়ং স্বরূপতঃ সতত চিন্মাত্র। চিৎ চিদাকার হতে ভিন্ন এরূপ বলা যায় না কারণ চিৎ-এ ভেদ থাকলে চিৎ-এর বা চৈতন্য স্বরূপেরই হানি স্বীকার করতে হয়। অতএব চিৎ স্বরূপ শিব চিদাকার জীব হতে স্বরূপতঃ ভিন্ন নয়।
  
চিৎ-এ ভেদ না খাকুক, জড়ে জড়ে ত ভেদ আছে, এ কথাও বলা যায় না কারণ ভেদ জড়েই থাকবে, চিৎ-এ নয়। কারণ চিৎ জড় নয়,বস্তু।জড় অবস্তু। জড়ে জড়ে ভেদ থাকে থাকুক, কিন্তু চিৎ-এ চিৎ-এ ভেদ নেই। সব চিৎ-ই এক। সুতরাং এক চিৎ-ই প্রকাশ পায়। তর্ক ও প্রমাণ দ্বারা এইরূপে চিৎ-এর একত্ব ব্যবস্থাপন পূর্বক চিৎ-এর একত্ব সম্যক রূপে অনুভব করতে পারলে শোক মোহ আদি অপগত হয়।

25. চিৎ-এর একত্ব অনুভব করতে পারলে সাধক জগতের অধিষ্ঠান-স্বরূপ সত্যঞ্জানময় পরমানন্দ স্বরূপ অদ্বৈত শিবসুন্দরকে তবেই লাভ করতে পারেন।

26. অহমস্মি অর্থাৎ আমি সেই আত্মা এইরকম নিশ্চয় করে, মননশীল সাধক শোক হতে মুক্ত হন। নির্দোষ সাধকরা স্বদেহেই জ্যোতিঃস্বরূপ বিশ্বসাক্ষী পরমাত্মাকে দর্শন করে। মায়ামুগ্ধ অঞ্জ জনগণ দেখতে পায় না।

27. এইরূপে যে পরমযোগী আত্ম দর্শন বা আত্মঞ্জান লাভ করেন, সেই পূর্ণ স্বরূপের আত্মা গতাগতি বা লোকান্তর গমন অর্থাৎ জন্মগ্রহণ নিতে বিড়ম্বিত হতে বাধ্য হন না।

আকাশ যেমন স্বয়ংই সম্পূর্ণ, ঞ্জানীও তেমনি স্বয়ং সম্পূর্ণ। আকাশ যেমন গমন করেন না। ঞ্জানীও সেইরকম সর্বময়ত্ব লাভ করে কোথাও গমন করেন না। কারণ তিনি সর্বব্যাপক ব্রহ্ম হয়ে যান। যে মননশীল সাধক পরমব্রহ্মকে অবগত হন, তিনি স্বয়ংই সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মে আত্মস্থ হন।।" 


www.twitter.com/tapobhumi30

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com


শ্রীরুদ্রহৃদয়োপনিষৎ মন্ত্রের ব্যাখ্যা :---


1. অবনত মস্তকে ব্যাসদেবের চরণে প্রণাম পূর্বক শুকদেব জিঞ্জাসা করিলেন, দেব! কোন্‌ দেব সর্বদেবে বিরাজমান? কোন দেবের সেবা করলে সকল দেবতার প্রীতি জন্মে, দয়া করে আমাকে বলুন। 

2. শুকদেবের এই কথা শুনে পিতা ব্যাসদেব শুককে প্রত্যুত্তর দিতে আরম্ভ করলেন। বললেন, ভগবান রুদ্র সর্বদেবাত্মক এবং সকল দেবতাই শিবাত্মক। 

3. রুদ্রের দক্ষিণ পার্শ্বে  রবি, ব্রহ্মা ও গার্হপত্য, আহবনীয় এবং দক্ষিণাগ্নি নামক তিন রকমের অগ্নি অধিষ্ঠিত। রুদ্রের বাম পার্শ্বে দ্যোতনশীলা উমা, বিষ্ণু এবং সোম এই ত্রিমূর্তি সমাশ্রিত। যিনি উমা তিনি স্বয়ং বিষ্ণু। যিনি বিষ্ণু তিনিই চন্দ্রমা। 

4. যারা গোবিন্দকে নমস্কার করে, তারা শঙ্করকেই নমস্কার করে। যারা ভক্তি সহকারে হরিকে অর্চনা করে, তারা বৃষধ্বজ রুদ্রেরই অর্চনা করে। যারা বিরুপাক্ষ শিবের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা জনার্দনকেই বিদ্বেষ করে। যারা রুদ্রকে জানে না, তারা কেশবকেও জানে না। 

5. রুদ্র হতে বীজ প্রবর্তিত হয়। জনার্দন সে বীজের যোনি স্বরূপ। যিনি রুদ্র, তিনিই ব্রহ্মা, যিনি ব্রহ্মা তিনিই অগ্নি। 

6. রুদ্র ব্রহ্মা বিষ্ণুময়। জগৎ অগ্নিষোমাত্মক। পুংলিঙ্গ সমস্তই শিব, স্ত্রীলিঙ্গ সকলই উমা। স্থাবর জঙ্গমাত্মক জগৎ সমস্তই শিবশক্ত্যাত্মক। ব্যক্তরূপ সমস্তই উমা, আর অব্যক্ত রূপ মাত্রই পরমেশ্বর রুদ্র। উমা এবং শঙ্করের যে যোগ, সেই যোগই বিষ্ণু নামে কথিত হয়। 

7. যে ব্যক্তি ভক্তি সহকারে রুদ্রকে নমস্কার করে সে আত্মা, অন্তরাত্মা এবং পরমাত্মাকে অবগত হয়ে পরমাত্মারই আশ্রয় গ্রহণ করে। 

8. ব্রহ্মা অন্তরাত্মা, মহেশ্বর পরমাত্মা এবং বিষ্ণুই সর্বভূতের সনাতন আত্মা। 

9. বিটপশালী ভূমিশাখ উর্ধ্বমূল সংসার-বৃক্ষের অগ্র, মধ্য ও মূল বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও রূদ্র। 

10. বিষ্ণু কার্য, ব্রহ্মা ক্রিয়া এবং মহেশ্বর কারণ। প্রয়োজনানুসারে রুদ্র এই ত্রিমূর্তি ধারণ করেছেন। রুদ্র ধর্মস্বরূপ, বিষ্ণু জগদাত্মক, পিতামহ ব্রহ্মা সর্বঞ্জানাত্মক। 

11. ত্রিমূর্তিস্বরূপ ভগবানকে যে 'শ্রীরুদ্র', 'রুদ্ররুদ্র' নামে অভিহিত করে সে ব্যক্তি বিচক্ষণ। যে ব্যক্তি 'রুদ্র' নাম কীর্তন করে, সে  সকল পাপ হতে মুক্ত হয়। 

12. রুদ্র নররূপী, উমা নারীরূপা, সেই রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র ব্রহ্মা স্বরূপ এবং উমা বাণীস্বরূপা, সেই ব্রহ্মা ও বাণীরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বিষ্ণু স্বরূপ ও উমা লক্ষ্মীরূপা, সেই বিষ্ণু ও লক্ষ্মীরূপা রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র সূর্যস্বরূপ, উমা ছায়ারূপা, সূর্য ও ছায়ারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র দিবাস্বরূপ, উমা রত্রিরূপা, সেই দিন ও রাত্রিরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র যঞ্জরূপী, উমা বেদিস্বরূপা; সেই যঞ্জ ও বেদিরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বহ্নিস্বরূপ, উমা স্বাহারূপা, সেই অগ্নি ও স্বাহারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বেদরূপী, উমা বিদ্যারূপা; সেই বেদ ও বিদ্যারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বৃক্ষস্বরূপ, উমা লতারূপিনী, সেই বৃক্ষ ও বল্লীরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র গন্ধস্বরূপ, উমা পুষ্পরূপা, গন্ধ ও পুষ্পরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র অর্থস্বরূপ, উমা অক্ষররূপা, সেই অর্থ ও অক্ষররূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র লিঙ্গরূপী, উমা গৌরী পীঠরূপা, সেই লিঙ্গ ও পীঠরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 

13. সর্বদেবাত্মক রুদ্রের স্বতন্ত্র রূপকে পৃথক পৃথক মন্ত্রে নমস্কার করবে। যে যে স্থানে রুদ্র ও উমা অর্থাৎ শিবশক্তি --- লিঙ্গমূর্তিসহ গৌরীপীঠের অর্চনা করবে, সেই সেই স্থানে এই মন্ত্র প্রযুক্ত হবে। বিশেষতঃ ব্রহ্মহত্যায় লিপ্ত ব্যক্তিও যদি জলের মধ্যে অবস্থান করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে, সে সর্বপাপ হতে মুক্তি লাভ করবে। 

14. সকলের অধিষ্ঠানভূত দ্বন্দ্বতীত সনাতন নিত্যঞ্জান --- সুখস্বরূপ বাক্যমনের অগোচর পরব্রহ্ম সেই রুদ্রই। ব্রহ্মস্বরূপ রূদ্রকে জানলে এ সংসারের সমস্তই পরিঞ্জাত হয়। কারণ, সেই রুদ্রই বিশ্বাত্মক, রুদ্র ভিন্ন এ সংসারে অপর কিছুই নেই। 

15. এ সংসারে বেদিতব্য বিদ্যা দুটি --- পরাবিদ্যা ও অপরা বিদ্যা। যে বিদ্যা দ্বারা অক্ষয় স্বরূপ পরমাত্মা প্রকাশিত হন, সেই ব্রহ্মবিদ্যা বা আত্মবিদ্যাই পরাবিদ্যা। ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ, সামবেদ, অর্থববেদ, শিক্ষাকল্প ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ এবং অনাত্ম বিষয়ক অপরাপর সমস্ত ঞ্জানই অপরা বিদ্যা। 

To be continued ......

Wednesday, November 18, 2015

"হংসবতী ঋক" ---


হংস বিদ্যা হল প্রকৃত পরমাত্মা বিদ্যা। 'হংস' মন্ত্রের মূল অনুসন্ধান করতে হলে বৈদিক যুগের ঋষিদের সাধন রহস্যের সন্ধান করতে হয়।



ওঁ হংসঃ শুচিষৎ বসুঃ অন্তরিক্ষসৎ হোতা বেদিষৎ অতিথিঃ দুরোৎসৎ।
নৃষৎ বরসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ অব্‌জা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতম্‌।। ওঁ

1. হংসঃ = পরমাত্মা 
2. শুচিষৎ = শুদ্ধ-সত্ত্ব-স্বরূপ 
3. বসু = সর্বত্র সমভাবে বিদ্যমান 
4. অন্তরিক্ষসৎ = সাক্ষীরূপে জীবমাত্রের অন্তরে অবস্থিত  
5. হোতা = যজমান স্বরূপ 
6. বেদিষৎ = কেবলমাত্র ঞ্জানগম্য 
7. অতিথিঃ = স্বপ্রকাশ স্বরূপ 
8. দুরোৎসৎ = পূর্ণ ব্রহ্ম হয়েও জীবরূপে এবং ব্রহ্মাণ্ড রূপে প্রতীত অর্থাৎ বিশ্বাতীত হয়েও বিশ্বরূপ 
9. নৃষৎ = চিতিশক্তি রূপে জীবমাত্রেই অবস্থিত 
10. বরসৎ = সকলের বরণীয় বা পূজ্য 
11. ঋতসৎ = অভেদে ঋতম্‌ এ অবস্থিত 
12. ব্যোমসৎ = বিশ্বকাশব্যাপী 
13. অব্‌জা, 14. গোজা = জলজ ও স্থলজ প্রভৃতি সর্বপ্রাণীরূপে বিরাজিত 
15. ঋতজা = সর্বত্র সত্য রূপে পরিদৃশ্যমান 
16. অদ্রিজা = আদিত্য রূপে বিরাজিত 
17. ঋতম্‌ =  সর্বাধিষ্ঠান সত্য ব্রহ্মতত্ত্ব স্বরূপ

এইভাবে মুখ্যতঃ ও গৌণতঃ হংসবতী ঋক মন্ত্রের সকল পদেরই ভাবার্থ দাঁড়ায় নিরপেক্ষ চরমতত্ত্ব সচ্চিদানন্দ স্বরূপ ব্রহ্ম। মহা চিন্ময় হংস মন্ত্রের মূলবীজ রয়েছে হংসবতী ঋকে। হংস শব্দ পরমাত্মা অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।


একো হংসো ভুবনস্যাস্য মধ্যে, স এবাগ্নি সলিলে সন্নিবিষ্টঃ।
তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায়।।

অর্থাৎ এই পৃথিবীর মধ্যে এক পরমাত্মাই আছেন, আর কিছু নেই। তিনি প্রত্যেকের দেহে জীব চৈতন্যরূপে স্থিত আছেন। জল ও অগ্নির একত্র স্থিতি যেমন স্বভাব বিরুদ্ধ হয়েও বাড়বানল প্রভৃতিতে দৃষ্ট হয়, তেমনি পরমাত্মারও এই মায়াময় জগতে একত্র অবস্থিতি স্বভাব বিরুদ্ধ হলেও প্রত্যক্ষ দৃষ্ট হয়। পরমাত্মা তত্ত্বতঃ জীবজগৎ হতে নিরপেক্ষ হলেও জীবজগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই পরমাত্মাকে স্ব স্বরূপ বলে জানতে পারলে তবেই জীব মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারে। মুক্তির অপর কোন উপায় নেই।

বৈদিক ঋষিগণ প্রায় প্রত্যেকেই প্রাতঃকালে নবোদিত সূর্যকে অর্থাৎ ভর্গদেবতাকে হংসবতী ঋক মন্ত্র পাঠ করতে করতে দর্শন করতেন।

মহর্ষি শৌনক প্রণীত ঋগ্‌ বিধান গ্রন্থে তিনি বিধান দিয়েছেন --- শুচি হয়ে হংসবতী  ঋক মন্ত্র পাঠ করে সূর্য দর্শন করবে। মৃত্যুকালে এই ঋক মন্ত্র জপ করলে শাশ্বত ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি হয়। শুধু তাই নয়, মহর্ষি শৌনক আরও বিধান দিয়েছেন --- যে ব্যক্তি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত সেই ব্যক্তি যদি বিষ্ণু মন্দিরে এই মন্ত্র জপ করলে এবং এই মন্ত্রে অর্ঘ্য প্রদান করলে কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তিলাভ করে এবং সুবর্ণকান্তি লাভ করে।

হংসবতী ঋক মন্ত্র হংসযোগ সাধনার প্রাণ হলেও হংস মন্ত্রের চৈতন্য ঘটে রূদ্র-হৃদয়োপনিষদের মন্ত্রতে।


www.twitter.com/tapobhumi30

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Wednesday, November 11, 2015

"অজপা গায়ত্রী দীক্ষা বা হংস- মন্ত্রের সাধনা" ---


গুরু গোরক্ষনাথ এই গুহ্যসাধন পদ্ধতির সঙ্কেত বলতে গিয়ে বলেছেন ------


"'হং' কারেণ বর্হিযাতি 'স' কারেণ বিশেৎ পুনঃ।

হংস- হংসেতি অমুং মন্ত্রং জীবো জপতি সর্বদা।।
ষট্‌শতানি দিবারাত্রৌ সহস্রাণ্যেক বিংশতিঃ।
এতৎ সংখ্যান্বিতং মন্ত্রং জীবো জপতি সর্বদা।।
অজপা নাম গায়ত্রী যোগিনাং মোক্ষদায়িনী।
তস্যাঃ স্মরণমাত্রেণ সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে।।"

নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময়ে 'হং' শব্দের সঙ্গে বায়ু বাইরে আসে এবং 'স' শব্দের সঙ্গে পুনরায় প্রবেশ করে। জীব স্বভাবতঃ সর্বদাই হংস মন্ত্র জপ করছে। দিবা-রাত্রিতে 21600 বার প্রত্যেকেই এই মন্ত্র জপ করে। (প্রতি মিনিটে 15 বার শ্বাস-প্রশ্বাস হয় এই হিসাবে 24 X 60 X 15 = 21600 বার) প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যে হংস জপ চলছে, তা যদি মনোযোগের সঙ্গে শ্বাস প্রশ্বাসের গতি লক্ষ্য করে অনুভব করতে অভ্যাস করা যায়, তবে অজপা নামক গায়ত্রীর সাধন হয়। ঠোঁট, জিহ্বা বা মনের সাহায্যে বিশেষ কোন বীজমন্ত্রকে বারবার উচ্চারণ করে এই জপ করা হচ্ছে না, তাই এর নাম অজপা। 


অজপা গায়ত্রী যোগীগণের মোক্ষদায়িনী। সিদ্ধ মহাপুরুষ ছাড়া আর কারও পক্ষে এই কৌশল ধরবার এবং সেই পথে চালনা করবার ক্ষমতা নেই। 

শ্বাস-প্রশ্বাস অহরহ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে হংস মন্ত্রের তাৎপর্য 'অহংস' --- সোহহং অর্থাৎ আমি স্বরূপতঃ ব্রহ্ম। শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের মধ্যবর্তী ক্ষণে স্বভাবতঃ আমরা ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হই। হংস অর্থাৎ পরমাত্মা শিব চৈতন্যই প্রত্যেকের পাঞ্চভৌতিক দেহে অবস্থান করে। জীব চৈতন্য হংস নামে কথিত হয়। 'হন্তি গচ্ছিন্তি কৃৎস্ন - শরীরং ব্যাপ্য বর্ততে ইতি হংসঃ প্রাণঃ জীবচৈতন্যম্‌' অর্থাৎ সমস্ত শরীর ব্যেপে বর্তমান থাকেন এবং এক শরীর হতে অন্য শরীরে সংসরণ করে এই ব্যুৎপত্তিগত অর্থেও জীব চৈতন্য হংস নামে সংঞ্জিত হয়।

বুদ্ধিপূর্বক শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুসরণ করে এই ভাবটি স্মরণ করতে করতে স্থায়ী করবার চেষ্টাই এই সাধনার উদ্দেশ্য। অন্তর্দর্শী গুরুর নিকট বসে শ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের মধ্যবর্তী ক্ষণটি ধরার কৌশল জেনে নিতে হয়। হংস যোগের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে হলে  "হংসবতী ঋক" এবং "শ্রীরূদ্রহৃদয়োপনিষৎ" এর মন্ত্রগুলিকে নিত্যপাঠ করতে হয়, মন্ত্রের মর্মার্থ ও প্রতিদিন মনন করতে হয়।


হংসবতী ঋকের হংস পদই ক্রমশঃ জপ্য মন্ত্রে পরিণত হয়। যোগশাস্ত্রে এবং শৈবাগমতন্ত্রে হংস মন্ত্রকেই অজপা বলা হয়। হংসবতী ঋক মন্ত্রে 'হংস' পদ এবং আথর্বণী শ্রুতি এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের 'হংস' পদ হল বৈদিক মূল। শৈবাগমের অন্তর্গত সারদা তিলক তন্ত্রে হংস মন্ত্রের ইষ্ট দেবতাকে অর্ধনারীশ্বর রূপে কল্পনা করা হয়েছে।



www.twitter.com/tapobhumi30


www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com   (Hindi)


www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191