Wednesday, November 11, 2015

"অজপা গায়ত্রী দীক্ষা বা হংস- মন্ত্রের সাধনা" ---


গুরু গোরক্ষনাথ এই গুহ্যসাধন পদ্ধতির সঙ্কেত বলতে গিয়ে বলেছেন ------


"'হং' কারেণ বর্হিযাতি 'স' কারেণ বিশেৎ পুনঃ।

হংস- হংসেতি অমুং মন্ত্রং জীবো জপতি সর্বদা।।
ষট্‌শতানি দিবারাত্রৌ সহস্রাণ্যেক বিংশতিঃ।
এতৎ সংখ্যান্বিতং মন্ত্রং জীবো জপতি সর্বদা।।
অজপা নাম গায়ত্রী যোগিনাং মোক্ষদায়িনী।
তস্যাঃ স্মরণমাত্রেণ সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে।।"

নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময়ে 'হং' শব্দের সঙ্গে বায়ু বাইরে আসে এবং 'স' শব্দের সঙ্গে পুনরায় প্রবেশ করে। জীব স্বভাবতঃ সর্বদাই হংস মন্ত্র জপ করছে। দিবা-রাত্রিতে 21600 বার প্রত্যেকেই এই মন্ত্র জপ করে। (প্রতি মিনিটে 15 বার শ্বাস-প্রশ্বাস হয় এই হিসাবে 24 X 60 X 15 = 21600 বার) প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যে হংস জপ চলছে, তা যদি মনোযোগের সঙ্গে শ্বাস প্রশ্বাসের গতি লক্ষ্য করে অনুভব করতে অভ্যাস করা যায়, তবে অজপা নামক গায়ত্রীর সাধন হয়। ঠোঁট, জিহ্বা বা মনের সাহায্যে বিশেষ কোন বীজমন্ত্রকে বারবার উচ্চারণ করে এই জপ করা হচ্ছে না, তাই এর নাম অজপা। 


অজপা গায়ত্রী যোগীগণের মোক্ষদায়িনী। সিদ্ধ মহাপুরুষ ছাড়া আর কারও পক্ষে এই কৌশল ধরবার এবং সেই পথে চালনা করবার ক্ষমতা নেই। 

শ্বাস-প্রশ্বাস অহরহ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে হংস মন্ত্রের তাৎপর্য 'অহংস' --- সোহহং অর্থাৎ আমি স্বরূপতঃ ব্রহ্ম। শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের মধ্যবর্তী ক্ষণে স্বভাবতঃ আমরা ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হই। হংস অর্থাৎ পরমাত্মা শিব চৈতন্যই প্রত্যেকের পাঞ্চভৌতিক দেহে অবস্থান করে। জীব চৈতন্য হংস নামে কথিত হয়। 'হন্তি গচ্ছিন্তি কৃৎস্ন - শরীরং ব্যাপ্য বর্ততে ইতি হংসঃ প্রাণঃ জীবচৈতন্যম্‌' অর্থাৎ সমস্ত শরীর ব্যেপে বর্তমান থাকেন এবং এক শরীর হতে অন্য শরীরে সংসরণ করে এই ব্যুৎপত্তিগত অর্থেও জীব চৈতন্য হংস নামে সংঞ্জিত হয়।

বুদ্ধিপূর্বক শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুসরণ করে এই ভাবটি স্মরণ করতে করতে স্থায়ী করবার চেষ্টাই এই সাধনার উদ্দেশ্য। অন্তর্দর্শী গুরুর নিকট বসে শ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের মধ্যবর্তী ক্ষণটি ধরার কৌশল জেনে নিতে হয়। হংস যোগের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে হলে  "হংসবতী ঋক" এবং "শ্রীরূদ্রহৃদয়োপনিষৎ" এর মন্ত্রগুলিকে নিত্যপাঠ করতে হয়, মন্ত্রের মর্মার্থ ও প্রতিদিন মনন করতে হয়।


হংসবতী ঋকের হংস পদই ক্রমশঃ জপ্য মন্ত্রে পরিণত হয়। যোগশাস্ত্রে এবং শৈবাগমতন্ত্রে হংস মন্ত্রকেই অজপা বলা হয়। হংসবতী ঋক মন্ত্রে 'হংস' পদ এবং আথর্বণী শ্রুতি এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের 'হংস' পদ হল বৈদিক মূল। শৈবাগমের অন্তর্গত সারদা তিলক তন্ত্রে হংস মন্ত্রের ইষ্ট দেবতাকে অর্ধনারীশ্বর রূপে কল্পনা করা হয়েছে।



www.twitter.com/tapobhumi30


www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com   (Hindi)


www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

No comments:

Post a Comment