Wednesday, November 18, 2015

"হংসবতী ঋক" ---


হংস বিদ্যা হল প্রকৃত পরমাত্মা বিদ্যা। 'হংস' মন্ত্রের মূল অনুসন্ধান করতে হলে বৈদিক যুগের ঋষিদের সাধন রহস্যের সন্ধান করতে হয়।



ওঁ হংসঃ শুচিষৎ বসুঃ অন্তরিক্ষসৎ হোতা বেদিষৎ অতিথিঃ দুরোৎসৎ।
নৃষৎ বরসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ অব্‌জা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতম্‌।। ওঁ

1. হংসঃ = পরমাত্মা 
2. শুচিষৎ = শুদ্ধ-সত্ত্ব-স্বরূপ 
3. বসু = সর্বত্র সমভাবে বিদ্যমান 
4. অন্তরিক্ষসৎ = সাক্ষীরূপে জীবমাত্রের অন্তরে অবস্থিত  
5. হোতা = যজমান স্বরূপ 
6. বেদিষৎ = কেবলমাত্র ঞ্জানগম্য 
7. অতিথিঃ = স্বপ্রকাশ স্বরূপ 
8. দুরোৎসৎ = পূর্ণ ব্রহ্ম হয়েও জীবরূপে এবং ব্রহ্মাণ্ড রূপে প্রতীত অর্থাৎ বিশ্বাতীত হয়েও বিশ্বরূপ 
9. নৃষৎ = চিতিশক্তি রূপে জীবমাত্রেই অবস্থিত 
10. বরসৎ = সকলের বরণীয় বা পূজ্য 
11. ঋতসৎ = অভেদে ঋতম্‌ এ অবস্থিত 
12. ব্যোমসৎ = বিশ্বকাশব্যাপী 
13. অব্‌জা, 14. গোজা = জলজ ও স্থলজ প্রভৃতি সর্বপ্রাণীরূপে বিরাজিত 
15. ঋতজা = সর্বত্র সত্য রূপে পরিদৃশ্যমান 
16. অদ্রিজা = আদিত্য রূপে বিরাজিত 
17. ঋতম্‌ =  সর্বাধিষ্ঠান সত্য ব্রহ্মতত্ত্ব স্বরূপ

এইভাবে মুখ্যতঃ ও গৌণতঃ হংসবতী ঋক মন্ত্রের সকল পদেরই ভাবার্থ দাঁড়ায় নিরপেক্ষ চরমতত্ত্ব সচ্চিদানন্দ স্বরূপ ব্রহ্ম। মহা চিন্ময় হংস মন্ত্রের মূলবীজ রয়েছে হংসবতী ঋকে। হংস শব্দ পরমাত্মা অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।


একো হংসো ভুবনস্যাস্য মধ্যে, স এবাগ্নি সলিলে সন্নিবিষ্টঃ।
তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায়।।

অর্থাৎ এই পৃথিবীর মধ্যে এক পরমাত্মাই আছেন, আর কিছু নেই। তিনি প্রত্যেকের দেহে জীব চৈতন্যরূপে স্থিত আছেন। জল ও অগ্নির একত্র স্থিতি যেমন স্বভাব বিরুদ্ধ হয়েও বাড়বানল প্রভৃতিতে দৃষ্ট হয়, তেমনি পরমাত্মারও এই মায়াময় জগতে একত্র অবস্থিতি স্বভাব বিরুদ্ধ হলেও প্রত্যক্ষ দৃষ্ট হয়। পরমাত্মা তত্ত্বতঃ জীবজগৎ হতে নিরপেক্ষ হলেও জীবজগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই পরমাত্মাকে স্ব স্বরূপ বলে জানতে পারলে তবেই জীব মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারে। মুক্তির অপর কোন উপায় নেই।

বৈদিক ঋষিগণ প্রায় প্রত্যেকেই প্রাতঃকালে নবোদিত সূর্যকে অর্থাৎ ভর্গদেবতাকে হংসবতী ঋক মন্ত্র পাঠ করতে করতে দর্শন করতেন।

মহর্ষি শৌনক প্রণীত ঋগ্‌ বিধান গ্রন্থে তিনি বিধান দিয়েছেন --- শুচি হয়ে হংসবতী  ঋক মন্ত্র পাঠ করে সূর্য দর্শন করবে। মৃত্যুকালে এই ঋক মন্ত্র জপ করলে শাশ্বত ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি হয়। শুধু তাই নয়, মহর্ষি শৌনক আরও বিধান দিয়েছেন --- যে ব্যক্তি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত সেই ব্যক্তি যদি বিষ্ণু মন্দিরে এই মন্ত্র জপ করলে এবং এই মন্ত্রে অর্ঘ্য প্রদান করলে কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তিলাভ করে এবং সুবর্ণকান্তি লাভ করে।

হংসবতী ঋক মন্ত্র হংসযোগ সাধনার প্রাণ হলেও হংস মন্ত্রের চৈতন্য ঘটে রূদ্র-হৃদয়োপনিষদের মন্ত্রতে।


www.twitter.com/tapobhumi30

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

No comments:

Post a Comment