......... তোমাকে দীক্ষা যে দিব, তার দক্ষিণা কি দিবে? তাঁর কথা শুনে আমি হকচকিয়ে যাই; নীরবে তাঁর দিকে তাকাতেই তিনি তাঁর কাঁধের ঝুলিটি দেখিয়ে বললেল--- আমার এই ঝুলিতে ঋদ্ধি সিদ্ধি দুই আছে। মা নর্মদার দয়ায় আমার সবই পূর্ণ।
লৌকিক প্রথানুসারে শিষ্য যে গুরুকে স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা, অন্নপানাদি এবং পত্রপুষ্পাঞ্জলি দান করে থাকে, তার নাম ঋদ্ধি।এগুলি যথার্থ গুরুদক্ষিণা নয়।
কারণ এই জাগতিক উপঢৌকন সম্পূর্ণ অনিত্য বস্তু, এই জগতেই এগুলি থেকে যায়। ঐ সব অনিত্য বস্তুর গুরুদক্ষিণা প্রদানে পরকালে স্বর্গসুখ প্রাপ্তি বা পরজন্মে শ্রীমানের কুলে জন্মলাভ ঘটে বটে কিন্তু তার ফলে অনিত্য সংসারে পুনরায় এসে সুখ-দুঃখ ভোগ করতে হয়।
কিন্তু সিদ্ধি কোন মতেই অনিত্য বস্তু নয়। সিদ্ধমন্ত্র থেকে সিদ্ধফল উৎপন্ন হয়। তোমাকে এই রুদ্রাক্ষের মালা মন্ত্রপূত করে দিচ্ছি। আমার প্রদত্ত মন্ত্র এই মালায় জপ করবে এবং জপান্তে মন্ত্রেরফল জপের অভীষ্ট স্বরূপ গুরুদেবের উদ্দেশ্যে সমর্পণ করবে। তোমার নিত্য জপের ফল আমার কাছে গচ্ছিত থাকবে। যথালগ্নে যথাসময়ে তোমার সেই গচ্ছিত বস্তু শতগুণ বর্ধিত করে তোমাকেই সমর্পণ করব। সেই সিদ্ধফলই যথার্থ মুক্তির সোপান নির্মাণ করে থাকে।
তাঁর সেই কথা মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে শোনার পর তাঁর চরণে আমি প্রণত হতেই তিনি বললেন---" হ্যাঁ, এই হল সর্বশ্রেষ্ঠ গুরুদক্ষিণা। তোমার যে মাথা গুরুপদে ঠেকিয়েছ, সেই মাথাই দেহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অঙ্গ, সেইখানে সহস্রদল কমলের মধ্যে গুরুস্বত্তা সতত বিরাজিত আছেন; সেই সহস্রদল কমলের মধ্যে গুরুস্বরূপের ধ্যান করবে এবং আজ হতে তোমার তন্ মন ধন সকলই গুরুদেবের হল, তুমি যখন যা করবে, গুরুদেব সতত তোমার সঙ্গে আছেন। এই দৃঢ় ভাবনা অবিচলিত নিষ্ঠা রাখতে পারলেই তোমার নিত্য বস্তু লাভ হবে।" তাঁর এই উপদেশই আমার কাছে ধ্যানঞ্জান।
দেবি নর্মদে! কৃপা করো অপরাধ বিসারো।
ভব সাগরমেঁ ডুবি-রহে! আই উবারো।।
পুত্র কুপুত্র কহায় কুমাতা হোয় ন কবহুঁ।
করে ন হম শুভ করম লগায়ে আশা তবহুঁ।।
মাঁ তুম্ অশরণ শরণ হো, গোদীমেঁ বৈঠাই লৈঁ।
ভলে বুরে জৈসে তনয়, কিরপা করি আপনাই লৈঁ।।