Tuesday, August 18, 2015

"পিষাণহারী" ---


পিষাণহারী কোন দেবীর বিগ্রহ নয়, ইনি শিবই। তবে এই শিবের উৎপত্তি রহস্য বড়ই বিচিত্র। প্রায় দেড়শ বছর আগে এই কলিযুগে নর্মদাতটে এক অদ্ভূত দৈবলীলা প্রকট হয়েছিল তারই জাজ্জ্বল্যমান দৃষ্টান্ত এই পিষাণহারী। 


পিষাণহারী অতি সাধারণ একজন চাষীর বৌ। তার স্বামীর নাম ছিল রামদীন। সে অত্যন্ত অলস এবং নিষ্কর্মা প্রকৃতির লোক ছিল। সে 'ক্ষেতি-উতির' কাজ করত বটে কিন্তু সেদিকে তার মন ছিল না। 'ক্ষেতির' কাজ ছেড়ে দিয়ে 'ক্ষেতির' ধারে বসেই নাম জপ করত। বাড়ীর কোন কাজ করত না। সারাদিন এমনকি রাত্রেও সে নাম-কীর্তনে মেতে থাকত। অগত্যা এই অকর্মণ্য, সংসার-উদাসীন স্বামী এবং নাবালক তিনটি ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব পড়েছিল পিষাণহারীর উপর। 


সাধ্বী পিষাণহারী প্রতিবেশীদের গম, বাজরা চাকীতে পিষে দিয়ে বিনিময়ে যা পেতেন, তাই দিয়ে স্বামী ও পুত্রদের মুখে অন্ন জোগাতেন। নিজের চাকীটি মাথায় নিয়ে পিষাণহারী প্রতিবেশীদের বাড়ীতে হাজির হতেন, গম, বাজরা পিষতেন আর অহরহ নর্মদামায়ী ও মহাদেবের নাম জপ করতেন। কিন্তু এইটুকু সুখও তাঁর ভাগ্যে সইল না। 


হঠাৎ একদিন ভাবাবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে রামদীন পাহাড়ের একটা টিলা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান। বসন্তরোগ হয়ে দুটো ছেলে অকালে প্রাণত্যাগ করল, ছোট ছেলেটিকে একরাত্রে কুটিরের দাওয়া থেকে বাঘে টেনে নিয়ে গেল। শোকে দুঃখে হতভাগিনী পাগলের মত হয়ে গেলেন। ঘর থেকে আর বাইরে যেতেন না। চাকীটিকে বুকে নিয়েই কখনও আদর করতেন, কখনও বা কেঁদে কেঁদে বলতেন --- ভগবান! একে একে সবাইকেই ত তুলে নিয়েছ, এতকাল আমি যাদের জন্য পরিশ্রম করে এসেছি, তারা ত এখন আর নেই। আমি ত মন্ত্রতন্ত্র জানি না, এতকাল চাকী পিষে যাদের পূজা সেবা করতাম, তারা সবাই আমাকে ছেড়ে গেছে। এখন আর কার সেবা করব? 


হে শিউজী, এখন তোমার আমার মাঝখানে এসে আর কেউ আড়াল করে দাঁড়াবে না। এই বলে চাকীটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে শিউজী শিউজী বলে হাউ হাউ করে কাঁদতেন। চাকীটিই যেন তাঁর শিউজী! এইভাবে অর্ধোন্মাদ অবস্থাতেই একদিন, চাকীটিকে বুকে জড়িয়েই পিষাণহারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। 


প্রতিবেশীরা নর্মদার চড়ায় চাকী সহ পিষাণহারীকে সমাধিস্থ করে এল। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল সেই চাকীটি একটি শিবলিঙ্গে পরিণত হয়ে গেছে এবং নর্মদা পিষাণহারীর সেই সমাধিস্থল এবং শিবলিঙ্গকে মাঝখানে রেখে দুইদিকে দুইটি ধারায় বয়ে চলেছে। হতচকিত এবং বিস্মিত নর্মদার উভয়তটের অধিবাসীরা পিষাণহারীর সমাধিস্থলের সেইস্থানে 1832 সালে মহাদেবের একটি মন্দির নির্মাণ করে তার নাম দিয়েছে --- পিষাণহারী। 


সেই থেকে পিষাণহারীর মন্দির তীর্থের মর্যাদা পেয়ে আসছে। নর্মদার প্রবল বন্যায় কতবার কত কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে কিন্তু পিষাণহারীর মন্দিরের কিছু ক্ষতি হয়নি। পিষাণহারীর চাকীর বিবর্তিত রূপ হল শিবলিঙ্গ। সেই শিবলিঙ্গ অর্থাৎ ভক্তবৎসল মহাদেব ভক্তদের অভীষ্ট পূরণ করে চলেছেন।





www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com


www.twitter.com/tapobhumi30