Friday, December 19, 2014

সদ্‌গুরু:------


আমাদের  মাথার  চুলের  অস্তিত্ব  সম্বন্ধে  আমরা  যেমন  সবসময় সজাগ  থাকি  না, কিন্তু  কেউ  যদি  সন্তর্পণে  চুপি  চুপি  এসে  পিছন দিক  থেকে  একটা  চুল  টেনে  ধরে  তাহলে  যেমন  আমরা সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠি, তেমনি  সদ্‌গুরুর  সঙ্গে  শিষ্যের  সেইরকম নিকটতম সম্বন্ধ। শিষ্য  মাত্রই  সদ্‌গুরুর  যেন  মাথার  চুল!  হাজার হাজার মাইল  দূরেও যদি  শিষ্যের  কিছু  বিপদ  ঘটে, যথার্থ  সদ্‌গুরু হলে তিনি  সহজেই  সঙ্গে  সঙ্গে  তা  জানতে  পারবেন ।


শিষ্যের দেহ সদ্‌গুরুর সাধন মন্দির, তিনি শিষ্যের জন্য ক্রিয়া করেন, এটি গভীর উপলব্ধির কথা। দীক্ষালাভান্তে শিষ্যের কোন সংশয় থাকতে পারে না। সদ্‌গুরুকে শিষ্য চিন্তে পারে। দীক্ষালাভের পূর্বে সদ্‌গুরু চিনবার উপায় ---

1. সাপুড়ের সন্নিধানে, তার ঝুলিতে যে সমস্ত বিষঘ্ন লতাপাতা মূল থাকে, তার গন্ধ প্রভাবে বিষধর সর্প যেমন বশীভুত ও শান্ত হয়, তেমনি সদ্‌গুরুর সন্নিধানে উপবিষ্ট হলে মন যতই চঞ্চল, বিষন্ন চিন্তাগ্রস্ত, বিরক্ত, বিক্ষিপ্ত থাকুক না কেন সদ্‌গুরুর দেহ-নিংসৃত অদৃশ্য দিব্য জ্যোতিঃকণা এবং সুগন্ধে মন শান্ত ও স্থির হতে বাধ্য। সদ্‌গুরু শান্তিদাতা। 

2. জলের যেমন নিজস্ব কোন আকার নেই,  যে পাত্রে থাকে তার আকার ধারণ করে, তদ্রূপ সদগুরুর চিত্তবৃত্তি এবং মনোনাশ ঘটে বলে তার নিজস্ব কোন ভাবের লহর খেলে না। যে যেমন ভাবে উপস্থিত হবে লোকটির কর্ম অনুযায়ী তাঁর মধ্যে তদনুরূপ ভাব ও ভাষার প্রকাশ ঘটবে। ফলে সদগুরুরূপী আধারটির মধ্যে আকার, প্রকার, আচরণ, বৈখরীতে ক্ষণে ক্ষণে পটপরিবর্তন ঘটতে পারে। কখনও রুদ্ররূপ কখনও শান্ত প্রসন্ন মূর্তি। অত্যন্ত স্থূল ও দুনিয়াদারীর আলোচনাতেও তিনি যেমন পটু তেমনি শাস্ত্রের দুরাবগাহ তত্ত্বে তাঁর স্বচ্ছন্দে বিচরণ করবার ক্ষমতা ক্ষণে ক্ষণে পরিলক্ষিত হবে। ধৈর্য ধরে কিছুদিন নিরীক্ষণ করলেই এই লক্ষণটি ধরা যায়।


3. একই সময়ে বিভিন্ন লোক সদ্‌গুরুর স্থূলদেহের ফটো তুললে বিভিন্ন লোকের পৃথক পৃথক ভাবানুসারে পৃথক পৃথক ফটো উঠবে। যিনি সদ্‌গুরু, তিনি অহরহ দিব্য ভাবলোকে বিচরণ করেন। স্তর ও মণ্ডল ভেদে বিচ্ছুরিত জ্যোতিছটায় তাঁর দেহে ক্ষণে ক্ষণে পরিণাম ঘটে। স্থূল চোখে ধরা না পড়লেও শক্তিশালী ক্যামারেতে তার ছায়াপাত ঘটে।বস্তুতঃ সদ্‌গুরুর একটি ফটো অন্যটি হতে সর্বদাই পৃথক এবং বৈশিষ্ট্যব্যঞ্জক।


4. যং লব্ধা পুমান্‌ সিদ্ধো ভবতি, অমৃতী ভবতি, তৃপ্তো ভবতি, যৎ প্রাপ্য ন কিঞ্চিৎ বাঞ্ছতি, ন শোচতি, ন দ্বেষ্টি, ন রমতে, নোৎসাহী ভবতি তদেব ব্রহ্মঃ। ব্রহ্মকে জানলে সমুদয় তত্ত্বই বিঞ্জাত হয়। সদ্‌গুরুর ব্রহ্মসিদ্ধির ফলে ঞ্জানসিদ্ধি হয়। তাই যিনি সদ্‌গুরু তিনি স্থূল, সূক্ষ্ম, কারণ কারণাতীত জগতের তাবৎ প্রশ্নের উত্তরদানে সমর্থ। 


5. সদ্‌গুরুর সম্মুখে বিভিন্ন লোক একই প্রশ্ন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে উত্থাপন করলে প্রত্যেকের মস্তিষ্ককোষের পৃথক পৃথক স্পন্দনানুসুরে তিনি একই প্রশ্নের ভিন্ন ভিন্ন উত্তরদানে সমর্থ। প্রত্যেকটি উত্তরই শাস্ত্রসম্মত, যুক্তি-সিদ্ধ এবং অনুভব সিদ্ধ হবে। 


6. এমন কি যদি কোন বিঞ্জানী বা বিঞ্জানের গবেষক ছাত্র কোন জটিলতম সূত্রের উদ্ভাবনের জন্য সদ্‌গুরুকে প্রশ্ন করেন তিনি ইচ্ছা করলে সেই জিঞ্জাসুর প্রঞ্জাক্ষেত্রে এমন এক চেতনার উন্মেষ বা এমন এক চিৎ স্পন্দনের উদ্ভব ঘটান যে সেই ব্যক্তির তদ্বিষয়ক ঞ্জান স্বতঃই উপজিত হয়। যা তার অঞ্জাত ছিল, তা আর অঞ্জাত থাকে না।বুদ্ধি ক্ষেত্রে তত্ত্বটির আকস্মিক স্ফুরণ ঘটে। এই অভাবনীয় ঘটনার কারণ- সদ্‌গুরু সমাধিবান, তিনিই প্রকৃত সমাধানমূলক জীবন্ত বিগ্রহ। 


7. সদ্‌গুরুর নিকট বহু লোক বহু প্রশ্ন নিয়ে আসলে তিনি যে কোন একজনের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে সকলের জিঞ্জাসার সমাধান করে দেন। পৃথকভাবে আর কাউকেও কোন প্রশ্ন করতে হয় না। 


8. ঞ্জাতসারে বা অঞ্জাতসারে সদ্‌গুরুর দর্শন ঘটলে সঞ্জানে মৃত্যু হয়।সদ্‌গুরুকে সামান্য মানুষ ভেবে কেউ যদি তাঁকে গালি দেয়, তারও সঞ্জানে মৃত্যু হয়। এটি দিব্যৌঘ বস্তুতত্ত্বের সংক্রমণ-জনিত অবশ্যম্ভাবী শুভফল। 


9. সদ্‌গুরু চিনবার বিশিষ্ট লক্ষণ হল--- *সদ্‌গুরু কোন বিভূতি দেখান না। তাঁর বিভূতি বা যোগৈশ্বর্য তাঁর অনুগৃহীত ভক্তের মধ্যে দিয়ে প্রকট হয়। ঐ ভক্ত অবশ্যই আক্ষরিক অর্থে দীক্ষাপ্রাপ্ত হওয়া চাই।


এর বিশদ অর্থ হল দীর্ঘকাল যোগাভ্যাসের ফলে যে সকল যোগৈশ্বর্য যোগীর আয়ত্তে আসে, সদ্‌গুরু-আশ্রিত শিষ্যের তা বিনা সাধনে আয়ত্তে আসে। শিষ্যের ভাব, ভাবনা, ইচ্ছা এবং বাক্যদানকে সত্য করবার জন্য সদ্‌গুরুর কটাক্ষে অলৌকিক বিভূতিগুলির প্রকাশ ঘটে।

10. জীবনের যে কোন সঙ্কটময় মুহূর্তে যদি কেউ তাঁকে স্মরণ করে, কিংবা অনিবার্য বিপৎপাতের সম্ভাবনা দেখে সে যদি সদ্‌গুরুরূপে অনুমিত ব্যক্তিটির দোহাই দেয় তাহলে সে বিপদ নিশ্চয়ই প্রতিহত হবে। কেননা-ভক্তবাৎসল্য এবং রক্ষাকর্ত্তৃত্ব সদ্‌গুরু সত্ত্বার পরিচায়ক। 


*** যোগীসমাজে দশটি সূত্র সংক্ষেপে ‘দশমীয়াঁ’ নামে প্রসিদ্ধ। 
লক্ষণগুলির একটি বা দুটি মিললে চলবে না। সদ্‌গুরুর মধ্যে দশমীয়াঁর সমুদয় লক্ষণগুলিই বর্তমান থাকবে। 


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191



Friday, December 12, 2014


"ন গুরোরধিকং তত্ত্বং ন গুরোরধিকং তপঃ" অর্থাৎ গুরুর চেয়ে বড় তত্ত্ব আর নেই  গুরু সেবার মত আর কোন শ্রেষ্ঠ তপস্যা নেই। গুরুভক্তি বিনা সবই নিরর্থক। গুরুঃ ব্রহ্মা, গুরুঃ বিষ্ণু, গুরুদেবঃ মহেশ্বরঃ।


প্রকৃত আধ্যাত্মিক জীবন  লাভ করতে  হলে  বিষয়  বাসনা সর্বতোভাবে  ত্যাগ করে অণুক্ষণ গুরুদত্ত সাধনক্রিয়ার আশ্রয় নিয়ে পড়ে থাকতে হয়। এইভাবে একবার স্বভাবের যোগ পথে পড়তে পারলে আর কোন চিন্তা থাকে না। কোন  দ্রব্যকে  স্রোতে ভাসিয়ে  দিলে তা যেমন আপনা হতেই স্রোতের বেগে ভেসে যায়, তেমনি  গুরুশক্তিই সাধককে পরম বাঞ্ছিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেয়। চাই শুধু  গুরুর উপর একান্ত নির্ভরতা এবং পূর্ণ আত্মসমর্পণ।"

Tuesday, December 2, 2014


মা  নর্মদার  কৃপাসিদ্ধ  এক  হরিভক্ত  মহাত্মার  অনুভূতিঃ----


সুরত  যমুনা  বহি  ঞ্জান  মথুরা  বসা। গ্রাম  গোকুল  বিশোয়াস আয়া। শান্তি যশোদা দেত্তকী, সত্‌গুরু নন্দ বসুদেও যদু প্রীতি লায়া। জিও ও বরম্‌  শ্রীকৃষ্ণ  বলদেও জি কংস অহংকার  কো  মার লায়া। বিবেক  বৃন্দাবন  সন্তোষ  কা  কদম্‌  হৈ। গোয়াল  দ্বীং  বিচ দয়া। সন্দেশা শ্রীরাধিকা  শোলকী  গোপ্তা  তত্ত্ব  লৈছিন  খায়া।


মনোরূপী  যমুনা  নদী  প্রবাহিত  হয়ে  চলেছে। ঞ্জানরূপী  মথুরাপুরী বসে  গেছে  বা  ধ্বসে  গেছে। বিশ্বাস-রূপী  গোকুল  গ্রাম  উৎপন্ন হয়েছে। শান্তি  জেগেছে  মনে;  ঐ  শান্তি  হলেন  যশোদা  ও  দেবকী স্বরূপিনী। সদ্‌গুরু  হলেন  নন্দ  ও  বসুদেব  স্বরূপ,  প্রীতি  যদুকূল স্বরূপ।  জীবও  ব্রহ্মরূপ  কৃষ্ণ  ও  বলদেব   অহংকার  রূপ  কংসকে ধ্বংস  করেছে। বিবেক  বৃন্দাবন  স্বরূপ। সন্তোষ  কদম্ব  বৃক্ষস্বরূপ হয়েছে। শরীরের  অভ্যন্তরস্থিত  দয়া  হল  গোপ  ও  গোপাল  স্বরূপ। সন্দেহ  রূপ  অর্থাৎ  জিঞ্জাসা  শ্রীরাধিকা  তত্ত্ব  রূপ (ননী) জোর  করে কেড়ে  নিয়ে  ভক্ষণ  করেছেন।