Wednesday, January 27, 2016

"অশ্বত্থামা" ---


পূর্বকালের ঋষিরা কেবল ব্রহ্মের ধ্যানে নিমগ্ন থাকাকে একমাত্র ব্রত বলে ভাবতেন না। ঞ্জান বিঞ্জানের সকল স্তরে অবাধে বিচরণ করে গবেষণা করে নতুন নতুন তত্ত্ব আবিষ্কার করাও তাঁদের ব্রতের অঙ্গ ছিল। সুপ্রাচীন যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্রাচার্য ও বহু বিশ্ব বিধ্বংসী অস্ত্রের আবিষ্কারক ছিলেন ঋষি ভরদ্বাজ। তাই বলে তপস্যায় তিনি কোন ঋষির চেয়ে কম ছিলেন না। ঋগ্বেদের ৬ষ্ঠ মণ্ডলের এক থেকে ত্রিশ সূক্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫৬ টি মন্ত্রের তিনি ছিলেন দ্রষ্টা। 

ঋষি ভরদ্বাজের পৌত্র, কুরু পণ্ডবের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্যের পুত্র ছিলেন অশ্বত্থামা। অশ্বত্থামার মায়ের নাম কৃপী, কৃপাচার্যের ভগিনী। জন্মমাত্রই নবজাতক উচ্চৈঃস্বরে অশ্বের মত হ্রেষা রব করেছিলেন বলে ইনি অশ্বত্থামা নামে অভিহিত হন। 

অশ্বত্থামা, পিতা দ্রোণাচার্যের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করেছিলেন এবং অনেক মারাত্মক গুহ্য অস্ত্রের প্রয়োগে সিদ্ধহস্ত হন। পিতার কাছ থেকেই তিনি নারায়ণ প্রদত্ত  নারায়ণাস্ত্র এবং ব্রহ্মশির অস্ত্র লাভ করেছিলেন। পাণ্ডবদের বনবাস কালে অশ্বত্থামা দ্বারকায় গিয়ে যুদ্ধে অজেয় হবার অভিপ্রায়ে ব্রহ্মশির অস্ত্রের বিনিময়ে কৃষ্ণের কাছ হতে সুদর্শন চক্র প্রার্থনা করেন। কিন্তু সুদর্শন চক্র উত্তোলন করতে অক্ষম হওয়ায় বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে আসেন। 

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অশ্বত্থামা পিতার সঙ্গে কৌরব পক্ষে যোগ দেন। যুদ্ধে ধৃষ্টদ্যুম্ন কতৃক দ্রোণাচার্যের জঘন্য ভাবে শিরচ্ছেদের পর সেই শোচনীয় দৃশ্য দেখে অশ্বথামা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি পাণ্ডবদের সবংশে এবং সসৈন্যে সংহার করার জন্য নারায়ণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বসেন। নারায়ণাস্ত্রের মহিমা এই যে, সশস্ত্র যে কোন মহাবীর ঐ অস্ত্রকে রুখবার জন্য আস্ফালন বা  challenge  করলেই অস্ত্র তাকে ভস্মীভূত করে ফেলে। কিন্তু কৃষ্ণের উপদেশে সকলেই রথ থেকে নেমে নিরস্ত্র অবস্থায় নিক্ষিপ্ত প্রলয়ঙ্কর মহাস্ত্রের দিকে পিছন ফিরে নতশির হতেই, অস্ত্রে কারও কোন ক্ষতি হল না। পাণ্ডবরা অনিবার্য মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেন। অশ্বত্থামার পিতৃশোক কিছুতেই প্রশমিত হল না। 

দুর্যোধনের উরুভঙ্গের পর হতাবশিষ্ট কুরুসৈন্যের সেনাপতি হন অশ্বত্থামা। তিনি ঐ সময় একদিন গুপ্তভাবে মাতুল কৃপাচার্য এবং কৃতবর্মাকে সঙ্গে নিয়ে পাণ্ডব শিবিরে প্রবেশ করে পিতৃহন্তা ধৃষ্টদ্যুম্ন, উত্তমৌজা, যুধামন্যু, শিখণ্ডী ও দ্রোপদীর পাঁচ পুত্রসহ আরও অনেক পাণ্ডব সৈন্যকে হত্যা করে আসেন। সেইসময় পঞ্চপাণ্ডব, শ্রীকৃষ্ণ ও সাত্যকি সেখানে না থাকায় তাঁরা ঐ গুপ্ত হত্যার হাত থেকে কোন মতে রক্ষা পান। পুত্রশোকে  দ্রৌপদী প্রয়োপবেশন আরম্ভ করেন এবং ভীমকে বলেন, অশ্বত্থামাকে নিহত করে তার মাথার সহজাত মণি না পেলে তিনি কিছুতেই প্রয়োপবেশন ভঙ্গ করবেন না। 

তখন ভীম অশ্বত্থামাকে হত্যা করার জন্য অর্জুন ও যুধিষ্ঠিরকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন অশ্বত্থামার খোঁজে। তাঁরা দেখলেন অশ্বত্থামা ব্যাস ও অন্যান্য ঋষিদের মধ্যে লুকিয়ে আছেন। পাণ্ডবরা সেখানেই তাঁকে আক্রমণ করলেন। আক্রান্ত অশ্বত্থামা তখন ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগের ইচ্ছা করে একটি ঈষিকা অর্থাৎ কাশতৃণ মন্ত্রপুত করে নিক্ষেপ করলেন। অর্জুনও তখন ব্রহ্মশির নিক্ষেপ করলেন। দুই অস্ত্রের সংঘাতে প্রলয়ের আশঙ্কায় ব্যাস এবং নারদ এসে দুই অস্ত্র হতে নিঃসৃত অগ্নুদ্‌গীরণের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং উভয়কে অস্ত্র প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ দিলেন। 

ঋষিদের নির্দেশে অর্জুন 'ব্রহ্মশির' প্রত্যাহার করে নিতে পারলেন বটে কিন্তু অশ্বত্থামা অস্ত্র সংবরণে অপারগ হলেন। তিনি সেই অস্ত্র অভিমন্যুর পত্নী উত্তরার গর্ভে নিক্ষেপ করে বসলেন। ফলে গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয় কিন্তু পরে কৃষ্ণ যোগবলে শিশুকে পুনর্জীবিত করে তোলেন। এইভাবে অশ্বত্থামা পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে তাঁর মাথার সহজাত মণি পাণ্ডবদের হাতে তুলে দিয়ে বনে গমন করেন। 

সারা ভারতবর্ষে এত পাহাড় পর্বত অরণ্য থাকতেও পিতৃগত প্রাণ অশ্বত্থামা মোক্ষদাত্রী সিদ্ধিদায়িনী নর্মদার দক্ষিণতটের শূলপাণির ঝাড়িকে তাঁর বসবাসের শ্রেষ্ঠ স্থান হিসাবে নির্বাচন করে নিয়েছিলেন, এতে তাঁর অর্ন্তদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়। নর্মদাতটের এই ক্ষেত্রটি ------ অশ্বত্থামার সাধন-গুহা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।


www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.twitter.com/tapobhumi30

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

Monday, January 18, 2016


"মত পথ যত দেখ সকলি জঞ্জাল,
মনে প্রাণে ডাক তাঁরে নাহি কালাকাল;
দান ধ্যান পূজা পাঠ দানে শুভফল,
ওষ্ঠপুটে পিতৃবীজ শেষের সম্বল।
বুদ্ধিমান জীবে যবে দুষ্ট কর্ম করে,
কেন্দ্র হ'তে ক্রমে ক্রমে দূরে যায় সরে;
এই অপহ্নবে ঘটে স্বরূপের চ্যুতি
সদা জপ পিতৃবীজ পাইবে নিষ্কৃতি।।"





Wednesday, January 6, 2016


"নমঃ পিত্রে জন্মদাত্রে সর্ব দেবময়ায় চ।
সুখদায় প্রসন্নায় সুপ্রীতায় মহাত্মনে।।
সর্ব যঞ্জ-স্বরূপায় স্বর্গায় পরমেষ্ঠিনে।
সর্ব তীর্থাবলোকায় করুণা-সাগরায় চ।।
পিত্রে তুভ্যং নমো নিত্যং সদারাধ্যতমাঙ্ঘ্রয়ে।
বিমলঞ্জানদাত্রে চ নমস্তে গুরুবে সদা।।
নমস্তে জীবনাধিক্যদর্শিনে সুখহেতবে।
নমঃ সদাশুতোষায় শিবরূপায় তে নমঃ।।
সদাপরাধক্ষমিণে সুখদায় সুখয়ে চ।
দুর্লভং মনুষ্যমিদং যেন লব্ধং ময়া বপুঃ।
সম্ভাবনীয়ং ধর্ম্মার্থে তস্মৈ পিত্রে নমো নমঃ।।"