Monday, January 28, 2013

পরশুরাম কে?


পরশুরামকে  নিয়ে  মহাভারত  এবং  বিভিন্ন  পুরাণে  নানা  আখ্যায়িকা  বর্তমান। তিনি  যে  পিতৃহত্যার  প্রতিশোধ  নেবার জন্য  একুশবার  পৃথিবীকে  নিঃক্ষত্রিয়  করেছিলেন  একথা  ভারতের  আবালবৃদ্ধবণিতা  পুরাণের  কল্যানে  জেনে  গেছেন। ইক্ষুকুবংশের  মহারাজা  সগরের  (৫০২০ খ্রীঃ পূঃ)  আমলে  তিনি বিদ্যমান  ছিলেন  আবার  সগর  হতে  ছাব্বিশ  পুরুষ  অধঃস্তন  রামচন্দ্রকে (৪৫০০ খ্রীঃ পূঃ)  হরধনুভঙ্গের  অপরাধে  দণ্ড  দিতে  তাঁর  পথ  অবরোধ  করে  দাঁড়ায়েছেন, রামায়ণে  বাল্মীকি  তা  বর্ণনা  করেছেন।


ব্যাসদেব  বর্ণনা  করেছেন  কুরুক্ষেত্রের  যুদ্ধের (৩৯০০ খ্রীঃপূঃ)  মহারথী  ভীষ্মের  সঙ্গে  এই  পরশুরাম  যুদ্ধ  করেছিলেন, মহবীর  কর্ণকে  ব্রহ্মাস্ত্র  শিক্ষা  দিয়ে  পরে  অভিসম্পাতও  দিয়েছিলেন।


এই  তিনটি  ঘটনা  সত্য  হলে  পরশুরাম ( ৫০২০---৩৯০০ )= ১১২০  বৎসরেরও  অধিককাল  বেঁচেছিলেন। একথা  বিশ্বাস  করতে  হয়। কিন্তু  কোন  নরদেহধারী  জীবের  পক্ষেই  এতকাল  বেঁচে  থাকা  সম্ভব  বলে  মনে  হয়  না। যদি  বলা  হয়  যোগবলে  সব  অসম্ভবকেই  সম্ভব  করা  যায়, তবে  একথাও  মনে  জাগে, এইরকম  মহাযোগেশ্বরের  পক্ষে  কি  সবসময়  রণং  দেহি  ক্রুদ্ধমূর্তি  নিয়ে  বারংবার আবির্ভূত  হওয়া  সম্ভব?  যোগ  আর  যুদ্ধ--- দু'টি  বিপরীত  মেরুর  বস্তু !


পরশুরাম  ১১২০  বৎসরের  অধিককাল  বেঁচেছিলেন একথা  ভক্ত  ও  সরলবিশ্বাসী  ছাড়া  আর  কারও পক্ষে  বিশ্বাস  করা  সম্ভব  নয়। কিন্তু  যদি  পরশুরামকে  একটি  ধর্মমত  বা  একটি  বিশিষ্টপুরুষানুক্রমিক  ঐতিহ্যবাহী  ধারা  বলে  ধরা  হয়, তাহলে  পরশুরামের  অনুবর্তী  পরশুরামগণের  পক্ষে  সহস্রাধিক  বৎসর  বেঁচে  থাকতে  কোন  অসুবিধা  হয়  না। কারণ  কোন  ধর্মমতের  তথা  ধর্মসম্প্রদায়ের  পরমায়ু  সহস্র  বৎসর  হতে  কোন  বাধা  নেই।


আধুনিক  কালের  কোন  লেখক  যদি  খ্রীষ্টধর্মের  বা  ইসলামধর্মের  ইতিবৃত্ত  রচনা  করতে  গিয়ে  যদি  লেখেন  যে  খ্রীষ্টের  বা  হজরত  মহম্মদের  বয়স  যথাক্রমে  ২০০০  ও ১৪০০  বৎসর  হয়েছে, তাহলে  এ যুগের  লোকদের  মনে  যেমন  কোন  সন্দেহ  বা  বিস্ময়ের  সঞ্চার  হবে  না--- সেকালেও  তেমনি  পরশুরাম  রাবণ  নারদ  প্রভৃতির  দীর্ঘজীবিতায়  কেউ  কোন  সন্দেহ  বা  অবিশ্বাসের  ভাব  পোষণ  করতেন  না।  কারণ, তাঁদের  প্রত্যেকেই  যে  এক  একটি  ধর্মমত  বা  পূর্বাপর  ঐতিহ্যের  code  mark  মাত্র, তা  তাঁরা  ভালভাবেই  জানতেন।


এই  দৃষ্টিকোণ  থেকে  বিচার  করলে  পরশুরামের  একুশবার  ক্ষত্রিয়বর্গ  নিধন  বা  নিঃশেষের  গুঢ়ার্থ  এই  যে, পরশুরাম  অর্থাৎ  তাঁর  অনুবর্তী  পরশুরামগণ  বারবার  মনুষ্য  সমাজকে  রাজন্যনিয়ন্ত্রণ  ব্যবস্থা  বা  ক্ষাত্রশাসনের  যন্ত্রণা  হতে  মুক্ত  করেছিলেন।


ভারতের  ধর্ম-ইতিহাস  পর্যালোচনা  করলে  দেখা  যায়  সে  যুগে কোন  পক্ষ  গুরুতন্ত্র  অর্থাৎ  গুরুতান্ত্রিক  সমাজব্যবস্থা, কোন  পক্ষ  দ্বৈততন্ত্র, কোন  পক্ষ  বা  রাজতন্ত্রের  পক্ষপাতী  হয়ে  পড়েছিলেন। পরশুরামগণ  ছিলেন  গুরুতন্ত্রের  পক্ষপাতী।


এইজন্য  তাঁরা  ক্ষাত্রশাসন  বা  নির্জলা  রাজতন্ত্রের  ঘোরতর  বিরোধী  ছিলেন  এবং  সুদীর্ঘকাল  ধরে  ভারতবর্ষীয়  ক্ষাত্রতন্ত্রের সঙ্গে  পরশুরামগণের  যে  ধর্মযুদ্ধ  চলেছিল  তারফলে  বারংবার  ক্ষাত্রনিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থার  উচ্ছেদ  ও  বিলুপ্তি  ঘটেছিল। এ ঘটনা  ঐতিহাসিক  সত্য বলেই  সেকালের  পুরাণকাররা  নানা  রোমাঞ্চকর  গল্পের  মাধ্যমে  বলে  গেছেন  যে  পরশুরাম  একবিংশতিবার  পৃথিবীকে  নিঃক্ষত্রিয়  করেছিলেন।



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Tuesday, January 1, 2013


"ন  মন্ত্রং  নো  যন্ত্রং  তদপি  চ  ন  জানে  নূতি  মহো
ন  চাহ্বানং  ধ্যানং  তদপি  চ  ন  জানে  স্তুতিকথাঃ।
ন  জানে  মুদ্রান্তে  তদপি  চ  ন  জানে  বিলপনং  
পরং  জানে  মাতস্ত্বদনুসরণং  ক্লেশ  হরণং।।"

'অহো,  আমি  যন্ত্র  মন্ত্র  জানি না, এমন  কি  স্তুতিও জানি  না; আবাহন ও ধ্যানও  জানি  না। তোমার  মুদ্রা এমন  কি  তোমার যথার্থ  মন্ত্রও  জানি  না, কি  ভাবে  তোমার  কাছে  আর্তি  ও কাতরতা  জানাতে  হয়, তাও  আমাদের  জানা  নাই। কিন্তু  মা, একথা  ভালভাবেই  জানি  যে  তোমার  স্মরণ  নিলে  দুঃখ  নাশ  হয়।


"নমো  নর্মদে  মাতু  ঈশান  তন্যা
নমো  শর্মদে  বর্মদে  দেবি  ধন্যা।
কলিকাল  গঙ্গে  সে  তেরি  বিশোষা,
কথৈঁ  মাহাত্ম্য  মানৌ  দেবা  সুরেশা।।"

অর্থাৎ  মা  নর্মদে!  তুমি  ঈশান  মহেশ্বরের  তনু  হতে  জাত। তুমি একাধারে  সুখদাত্রী  এবং  জীবের  রক্ষাকর্ত্রী। ধন্য  তোমার  করুণা। কলিকালে  গঙ্গার  চেয়ে  তোমার  মহিমা  বেশী। তোমার  এই বিশেষত্বের  কথা, সমস্ত  দেবতা, এমন  কি  স্বয়ং  সুরেশ্বরও  মেনে থাকেন। হর  নর্মদে।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191