ঋষিরা ধ্যান দৃষ্টিতে মহাদেবের অষ্টমূর্তিকে দেখেছেন ---
"ওঁ ভবঃ শর্বো রুদ্রঃ পশুপতিরথোগ্রঃ সহমহান্
তথা ভীমেশানাবিতি যদভিধানাষ্টক মিদম্।
অমুষ্মিন্ প্রত্যেকং প্রবিচরতি দেবশ্রুতিরপি
প্রিয়ায়াস্মৈ ধাম্নে প্রণিহিতনমমস্যোহস্মি ভবতে।
হে মহেশ্বর! তুমি জটাজূটধারী, সমস্ত প্রাণীর অধীশ্বর, তৃতীয় নয়ন দিয়ে মদনকে ভষ্ম করেছ। হে নীলকণ্ঠ! তুমি দেবগণের পরম দেবতা, প্রভুগণের পরম প্রভু, নিয়ন্তাদের পরম নিয়ন্তা, ব্রহ্মাদি সৃষ্টি কর্তাদের মধ্যে প্রধান, ত্রিলোচন, সর্বব্যাপক, দেবগণেরও গতি তুমি। তুমি বিদ্যা অবিদ্যার অতীত, নিত্য স্তবনীয়, পরম পূজ্য, স্বয়ং জ্যোতি। দেবদানব মনুষ্য সমন্বিত সমগ্র জগতের দ্বারা নমস্কৃত হে অজেয় পুরুষ! তুমি একাধারে বিষ্ণুরূপী শিব এবং শিবরূপী বিষ্ণু। দক্ষযঞ্জ বিনাশকারী হে বীরভদ্র! তুমি ললাটনেত্র অর্থাৎ মহাযোগীদের ধ্যানলভ্য তৃতীয় নেত্রস্বরূপ, জগতের সৃষ্টি ও সংহারকর্তা, শূলপাণি, পিনাকধনুর্ধারী মঙ্গলময় বিধাতা।
যখন অঞ্জান নিবৃত্ত হয়, দিবা বা রাত্রি থাকে না, কার্য বা কারণ থাকে না, একমাত্র স্বয়ং জ্যোতিস্বরূপ জগদীশ্বর মহাদেব নির্বিকারভাবে বিরাজমান থাকেন। তিনি নিত্য, সূর্যের বরেণ্য, তাঁর থেকেই অনাদিসিদ্ধ আত্মবিদ্যা নির্গত হয়েছে। তিনি প্রমথদের অধিপতি, জগতের মঙ্গল বিধানকারী, সৃষ্টিকর্তাদেরও সৃষ্টিকর্তা, প্রকৃতি পুরুষের অতীত, শ্রেষ্ঠদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ, পরমসূক্ষ্ম তুরীয় ব্রহ্মস্বরূপ এ জগৎ তাঁরই সৃষ্টি। তিনি সূর্য, তিনি চন্দ্র, তিনি পবন, তিনি অগ্নি, তিনি জল, তিনি আকাশ, তিনি পৃথিবী এবং তিনি আত্মা --- এই জগতে এমন কোন তত্ত্ব নেই, যা তিনি নন। মহাদেবের স্বরূপ ব্যাখ্যায় বেদ সম্পূর্ণরূপে সচেষ্ট।
তিনি পরমাত্মা বা ব্রহ্মেরই নামান্তর। তিনি "শান্তং শিবং অদ্বৈতং"। শিবই বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং --- তিনি বিশ্বদেব, বিশ্বরূপ, বিশ্বাতিগ, বিশ্বান্তর্যামী। শিবপুরাণে মহাদেবের উক্তি ---
"অহম্ শিবঃ শিবশ্চাহং ত্বঞ্চাপি শিব এব চ।
সর্বং শিবময়ং ব্রহ্মণ্ শিবাৎ পরং ন কিঞ্চন ।।"
অর্থাৎ আমি শিব, তুমিও শিব, সমস্তই শিবময়। শিব ভিন্ন অপর কিছুই নেই। দেবাদিদেব অষ্টমূর্তিময়। তিনিই অষ্টমূর্তি সূত্রে মণিগণের ন্যায় নিখিল জগৎ ব্যাপ্ত করে রয়েছেন। মহাদেবের অষ্টমূর্তির নাম --- শর্ব, ভব, রুদ্র, উগ্র, ভীম, পশুপতি, মহাদেব ও ঈশান।
"অষ্টমূর্তাত্মনা বিশ্বং অধিষ্ঠায় স্থিতং শিবং
ভজস্ব সর্বভাবেন রুদ্রং পরম কারণং।।"
পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে মহাদেবের অষ্টমূর্তির স্বতন্ত্র তীর্থ আছে।
1. সূর্যমূর্তি --- সূর্য প্রত্যক্ষ দেবতা। উদয়াস্ত আকাশ পথে যাঁর দ্যুতির প্রকাশ দেখি, তিনি স্বরূপতঃ শিব ছাড়া আর কেউ নন।
"আদিত্যঞ্চ শিবং বিদ্যাৎ শিবমাদিত্য রূপিনং।
উভয়োরন্তরং নাস্তি আদিত্যস্য শিবস্য চ।।
অর্থাৎ শিবে এবং সূর্যে কোন ভেদ নেই। সূর্যমন্দির মাত্রেই শিবমন্দির আর শিবমন্দির মাত্রেই সূর্যমন্দির।
2. চন্দ্র --- চন্দ্রও শিবের এক মূর্তি। গুজরাটের সোমনাথ এবং বাংলার চন্দ্রনাথ --- মহাদেবের সোমমূর্তির তীর্থ।
3. নেপালের পঞ্চমুখ পশুপতিনাথ --- মহাদেবের যজমান মূর্তির তীর্থ।
বাকী পাঁচটি তীর্থ মাদ্রাজ অঞ্চলে অবস্থিত। এগুলি অতি প্রাচীন ও পবিত্র তীর্থ। এই মন্দিরগুলির কারুকার্যময় বিশাল বিশাল স্তম্ভ মণ্ডপ, বিমল সলিল পূর্ণ সরোবর প্রভৃতি দ্রাবিড় স্থাপত্যের নিদর্শন। দাক্ষিণাত্যে ৬৩ জন শিবভক্ত আবির্ভূত হয়েছিলেন। যাঁদেরকে আদিয়ার বলা হয়। তাঁদের রচিত তামিল প্রবন্ধম্ দ্রাবিড়দের নামে প্রসিদ্ধ। শিব ভক্তগণের লীলাক্ষেত্র এইসব তীর্থ।
4. শিবকাঞ্চিতে একাম্বরেশ্বর --- ক্ষিতিমূর্তির তীর্থ।
5. মাদ্রাজের ত্রিচিনপল্লী জেলায় শ্রীরঙ্গম তীর্থের সন্নিকটে জম্বুকেশ্বর --- অপ্ মূর্তির তীর্থ। এখানে লিঙ্গমূলে একটি জলের উৎস আছে। মন্দিরে সর্বদাই জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে।
6. দক্ষিণে আর্কট জেলায় তিরুভান্নামালাই বা অরুণাচল তীর্থে --- মহাদেবের তেজোমূর্তির তীর্থ।
7. উত্তর আর্কট জেলায় কালাহস্তীশ্বর মহাদেব --- বায়ুমূর্তির তীর্থ।
8. চিদাম্বরম্ --- আকাশ মূর্তির তীর্থ। সেখানকার মূল মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। আকাশেই পূজা হয়। পৃথক একটি গৌণ মন্দিরে তাণ্ডব নৃত্যকারী চিদাম্বরেশ্বরের মনোরম নটরাজ মূর্তি বিরাজমান আছেন।
অসিতগিরিসমং স্যাৎ কজ্জ্বলং সিন্ধুপাত্রং সুর তরুরব শাখা লেখনী পত্রমুর্খী।
লিখতি যদি গৃহীত্বা সারদা সর্বকালং তদপি তব গুণানামীশ পারং ন যাতি।।
https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191