Monday, March 21, 2011

গুরু ভক্তিঃ----


1. আগ্রাতে স্বামীবাগের রাধাস্বামী সম্প্রদায়ের প্রথম সন্ত শিবদয়াল সিংজীর (রাধাস্বামী সাহেবের) একজন শিষ্য ছিলেন। তাঁর নাম রায়বাহাদুর শালগ্রাম সিং। তিনি তাঁর সময়ে ভারতের পোষ্টমাষ্টার জেনারেল ছিলেন। তিনি প্রতি মাসে বেতন হিসাবে তখনকার দিনে সাড়ে তিনহাজার বা চারহাজার টাকা বেতন পেতেন।

বেতনপ্রাপ্তি মাত্র তা গুরুর চরণে এসে 'ভেট' দিতেন। গুরু সেই টাকা থেকে একহাতে মুঠো করে যা তুলে দিতেন, তাই দিয়ে তিনি সংসার নির্বাহ করতেন। অফিস যাবার আগে এবং অফিস থেকে ফিরে এসে গুরুকে দর্শন করা ছিল তার নিত্য কাজ। 


যদি কোন সময় এসে দেখতেন, গুরু ভজনগৃহে আছেন, তাহলে যত রাত্রি হোক তিনি অফিসের সেই ধড়াচূড়া পরেই ভজনগৃহের রুদ্ধ দরজার কাছেই বসে থাকতেন । একদিন রাধাস্বামী সাহেব সমাধিমগ্ন ছিলেন।


রাত্রি অতিবাহিত হল, সকাল আটটা হল, তবুও তাঁর দরজা খুলল না । রায় শালগ্রাম সাহেবের বাড়ীর পরিজনরা বারবার এসেও তাঁকে বাড়ীতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলেন না। বেলা ৯টার সময় রাধাস্বামী সাহেবের ধর্মপত্নী রাধাবাঈ এসে দেখেন, একটা সিঁড়ি লাগিয়ে ভজনগৃহের দেওয়ালের উপর দিকে যে সংকীর্ণ ভেণ্টিলেটার আছে তার মধ্যে তিনি নিজের মাথা ও মুখ ঢুকিয়ে নিজের ইষ্টমূর্তি গুরুকে দর্শন করছেন। 


শ্রীমতী রাধাবাঈ তাঁকে সস্নেহে মৃদু ভৎর্সনা সুরু করলে তিনি অতিকষ্টে মুখ বের করে নিয়ে মাতাজীকে বলেন---মাতাজী গুরুজীকা শ্রীমূর্তি দর্শনকে লিয়ে মেরে দিল তড়পাতে হৈ। তিনি সিঁড়ি বেয়ে যখন নামলেন, তখন দেখা গেল, তাঁর গালের চামড়া ঘর্ষণের চাপে উঠে গেছে, কপাল ও দুটো কানও রক্তাক্ত । 


যাইহোক এই সময় সমাধি হতে রাধাস্বামী সাহেবের ব্যুত্থান ঘটে। তিনি টলতে টলতে দরজা খুলে শালগ্রামজীকে তদবস্থায় দেখে নিজেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে ঝরঝর করে কাঁদতে থাকেন । শালগ্রামজীর গুরুভক্তির আরও কাহিনী শুনেছিলাম । তাঁর গুরুর নিবাসস্থল থেকে প্রায় চারমাইল দূরে যমুনা । তিনি অতদূরে হেঁটে গিয়ে প্রতিদিন গুরুর স্নানের জন্য জল বয়ে আনতেন।


এজন্যে সাধারণের মধ্যে গুঞ্জন উঠে । সকলেই বলতে থাকেন----গুরুর পাল্লায় পড়ে এতবড় একটা লোক পাগল হয়ে গেছে ।


শালগ্রামজী এই লোকাপবাদের কথা শুনতে পেয়ে দুপায়ে ঘুঙুর বেঁধে দুবাহু ও মাথায় টুকরো টুকরো নেকড়া বেঁধে নাচতে নাচতে জল বয়ে আনতে লাগলেন। গুরুসেবার জন্য তিনি লোকপবাদকে বিন্দুমাত্র পরোয়া করেন নি ।তাঁর এই রকম বেপরোয়া ভাব ও গুরুভক্তি দেখে লোকের গুঞ্জন আপনা হতে স্তব্ধ হয়ে গেছেল।


পরবর্তীকালে দেখা যায় রাধাস্বামী সাহেব তাঁর এই গুরুগত প্রাণ ভক্তকেই তাঁর গদীতে দ্বিতীয় সন্তসদ্‌গুরু হিসাবে মনোনীত করে গেছলেন । সন্তমতালম্বী লক্ষলক্ষ ভক্তদের কাছে আজ ও তিনি 'হুজুর' মহারাজ নামে পুজা পাচ্ছেন ।




2. একবার গুরুনানক তাঁর কয়েকজন শিষ্যসহ ভ্রমণ করছিলেন তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত লাহিনাও সেই দলে ছিলেন। হঠাৎ বনের মধ্যে একটি মৃতদেহ তাঁর চোখে পড়ল। পচা মৃতদেহ একটা কাপড় দিয়ে ঢাকা।

গুরুনানক সেই দুর্গন্ধময় শবটি দেখিয়ে শিষ্যদেরকে বললেন---তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে আমার কথায় পচা গলিত শবদেহ ভক্ষণ করতে পারে? গুরুর এইকথা শুনে সবাই অবোবদনে দাঁড়িয়ে রইলেন। 


কেউ কেউ ভাবতে লাগলেন, গুরুজী কি আজ অপ্রকৃতিস্থ নতুবা এমন ন্যক্কারজনক প্রস্তাব কি করে করতে পারলেন? আমরা শিখ, অঘোর পন্থী ত নই ! নানক অধিকাংশ শিষ্যদের এই রকম মনোভাব বুঝে পুনরায় ঘোষণা করলেন---'নির্দ্ধিধায় যে বিনা বিচারে গুরুবাক্য পালন করতে পারে, সেই প্রকৃত শিখ। 


প্রকৃত গুরুগতপ্রাণ শিখই পরম পদ অর্থাৎ অলখ্‌ নিরঞ্জনতত্ত্ব উপলব্ধির যোগ্য আধার। যারা তা পারে না, তারা গুরুর চারধারে থেকে কেবলই ভীড় বাড়ায়'। নত মস্তক সব শিষ্য নীরবে গুরুর এই ধিক্কার শুনলেন, কিন্তু তাঁর আদেশ পালন করতে এগিয়ে এলেন না। 


অবশেষে লাহিনাকে দেখা গেল, তিনি ধীরে,ধীরে মৃতদেহের কাছে করজোড়ে বললেন---গুরুজী আপনি দয়া করে বলে দিন, এই মৃতদেহের কোন অংশ থেকে আমি সর্বপ্রথম খেতে আরম্ভ করব ?


লাহিনার কথা শুনে তার গুরুভ্রাতারা স্তম্ভিত। কিন্তু নানক শান্ত কণ্ঠেই উত্তর দিলেন, 'কোমরের দিক থেকেই আরম্ভ কর'। গুরুর বাক্য শেষ হতে না হতেই নির্বিকার চিত্তে লাহিনা শবদেহ কামড় দেবার জন্য হাঁ করে ঝুকে পড়লেন। কিন্তু শবদেহ থেকে চাদরের আচ্ছাদন তুলতে দেখা গেল, সেখানে থরেথরে সুমিষ্ট ফল ও মিষ্টান্ন দ্রব্য সাজানো রয়েছে। 


বিস্ময়ে হতবাক শিষ্যরা ভাবলেন, ও হল সর্বশক্তিমান গুরুজীর এক অত্যাশ্চর্য বিভূতির খেলা! গুরুনানক চেলাদের ভাব-ভাবনার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে লাহিনার মাথায় হাত দিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলতে লাগলেন---'এ আমার কোন বিভূতি নয়, তোমার গুরুভক্তির গুণেই এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে।


মনে রাখবে, অষ্টাঙ্গ যোগমার্গ, লয়যোগ, মন্ত্রযোগ, শব্দযোগ, সিদ্ধযোগ, বিহঙ্গীযোগ, সুরতশব্দযোগ, প্রভৃতির নিরন্তর অভ্যাসেও যে পরমপদ লাভ করা যায় না।


প্রকৃত একজন শিখ তার গুরুভক্তির গুণে তা অবলীলাক্রমে লাভ করতে পারে। লাহিনা! তোমার অসাধারণ গুরু সত্ত্বাকে গুরুর অঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছ, সর্বতোভাবে তুমি আমার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে।তাই তোমার নাম দিলাম  অঙ্গদ। আমার পরেই তুমিই হবে সমগ্র শিখপন্থের গুরু।'




Tuesday, March 15, 2011


1. শক্তি চাহতে হো, তো শক্তিকে কেন্দ্রসে সম্বন্ধ জোড়ো। থোড়া থোড়া নিত্য ভগবানকে ভজন কা অভ্যাস করকে চলো। বুঁদ বুঁদসে ঘড়া ভরতা হৈ।

2. সংসারতো কজ্জল কী কোঠরী হৈ । ইসকা জিতনা জ্যাদা সম্পর্ক বঢ়াওগে, উতনী হী কালিমা লাগেগী ।


3. সংসার কী সুন্দরতা ঐসী হৈ, জৈসে শ্বশুরাল কী গালী। গালী তো গালী হী হৈ পর উসমেঁ আচ্ছী ভাবনা করলী গই হৈ ।সংসার মেঁ কুছু সুন্দর হৈ নহী পরন্তু ইসে সুন্দর মান লিয়া গয়া হৈ।


4. মনতো বালু কা ভিত্‌ হৈ--- জরা দো বুঁদ পানী পড়া কি খিস্‌কী। ইসমেঁ পরমাত্মারূপী সিমেণ্ট কা থোড়া যোগ দে দিয়া জায়, তো ফির বহূৎ মজবুত হো জায়গী।


5. অনেক বাসনা- সূত্রঁকো ইকট্‌ঠা করকে ভগবৎ বাসনারূপী মোটি রস্‌সী তৈয়ার করো, ঔর উসীকে সহারে ভবকুপসে বাহর নিকল যাও।


6. সংসার মেঁ আয়ে হো--- ঐসী চাতুরী সে কাম লো, কি ফির লৌট কর্‌ মলমূত্রকে ভাণ্ডমেঁ না আনা পড়ে।


7. ভগবানকী ধ্যানমেঁ লগ্ন ঔর মগ্ন হো যাও। জিতাজিত্‌ মুক্তি হাসিল করনা চাহিয়ে।


8. যব গুরুকা অনুগ্রহ হোতা হৈ, তব শিষ্যকী চেতন-শক্তিকা আরোহ হোতা হৈ। গুরুকা অবতরণ ঔর শিষ্যকা আরোহ, গুরুকী অনুকম্পা ঔর শিষ্যকী শুশ্রূষা পরস্পর উপকারক হৈ। ইস্‌ প্রকার কা অবরোহ ঔর আরোহ ক্রমকা অনুবর্তন প্রত্যক্ষ সূর্য ঔর পৃথ্বীপরকে ভূতগ্রাম মেঁ দৃষ্টিগোচর হোতা হৈ।


9. জীব ঔর পরমাত্মা মৈঁ যো ভেদ দিখাই দেতা হৈ, বহ্‌, ঐসা হৈ যৈসা ধান ঔর চাবল (চাউল) কা ভেদ। জীব যবতক কর্মবন্ধনমে পড়া হৈ, তবতক পরমাত্মসে ভিন্ন হৈ ।কর্ম বন্ধন নষ্ট হোনে পর্‌ উহ্‌ পরমাত্মা হি হৈ।


10. ভগবান দীন দয়ালু হৈ, দুঃখীদয়ালু নঁহী। যো দীন হৈ, উসকে লিয়ে পরমাত্মা দয়ালু হৈ। দীনতা কা অর্থ বিনম্র আত্মসমর্পণ হী ভাগবৎ-চেতনা-লাভ করনে কো লিয়ে কুঞ্জী হৈ।



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Monday, March 14, 2011

শোক এবং দুঃখ:---


শোক এবং দুঃখ হচ্ছে মানবজীবনের মহৎ অধিকার। এই অধিকার হতে দেবতারা বঞ্চিত। দুঃখ হচ্ছে মানবজীবনে মুক্তির যৌতুক। এই যৌতুক মানুষকে অপরাজিত মনুষ্যত্ব দান করে। রামচন্দ্র দুঃখ পেয়েছিলেন, দুঃখ পেয়েছিলেন বুদ্ধদেব। শোক দুঃখের পতাকা তিনি যাকে তাকে দেন না, যাকে দেন তাকে বইবার ক্ষমতাও দেন । মাটির তালটাকে কুমোর গড়ে পিটে আঘাত দেয়, কিন্তু তার হাতটি থাকে পেছনে। ঘট প্রস্তুত করার জন্য এই আঘাত প্রয়োজন। আঘাতে  চঞ্চল হয়ো না, আড়ালে যে মঙ্গল উদ্দেশ্যটি আছে, তার অনুসন্ধান কর । মনে রেখ, দুঃখের হূল না ফুটলে মানুষের জীবন কখনও ফুল হয়ে ফুটে ওঠে না।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

শিষ্য কি?


কোন যোগীগুরুর কাছে যেসব শিষ্য বা জিঞ্জাসু আসেন, তাঁরা সাধারণতঃ তিনশ্রেণীর হয়ে থাকেন । তাদের অধিকাংশ হয় 'অধোমুখকুম্ভ' শ্রেণীর। ------কলসীকে উপুর করে জলে ডুবালে তাতে যেমন জল ঢোকে না, জলে ডুবানোর পূর্বেও যেমন খালি থাকে, জল থেকে উঠিয়ে নেবার পরেও খালি থেকে যায়, তেমনই মহাপুরুষদের কাছেও এমন সব ধর্মার্থী আসে, যারা মহাপুরুষদের উপদেশ শুনে, সেই উপদেশানুসারে নিজেদের জীবনকে গঠন করার চেষ্টা করে না । দীর্ঘকাল সৎসঙ্গ করেও তারা খালি থেকে যায় । এরা হল অধমশ্রেণীর।

মধ্যমশ্রেণী শিষ্যদেরকে বলা হয় 'উৎসঙ্গবদর'। বদর মানে কুল । কোন কুলগাছের তলায় কেউ কাপড়ের খুঁট বা শাড়ীর আঁচল পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকল । গাছ থেকে টুপ্‌টুপ্‌ , করে কুল পড়ছে । সে যদি উঠবার সময় কুলগুলোকে ভাল করে বেঁধে না নিয়ে উঠে দাঁড়ায়, তাহলে কুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছের তলায় পড়ে থাকবে । তেমনই একধরণের শিষ্য আছে যারা সাচ্চা মহাপুরুষের সঙ্গে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর সঙ্গ করে, উপদেশ শোনে কিন্তু কোন কিছুই গলাধঃকরণ করে না, হৃদয়ঙ্গম করে না, জপ তপ সাধন ভজন করে না, নিজেদের অন্ধ সংস্কার টেক্‌ জিদ্‌ বা অহংকারও ত্যাগ করে না । কেবল গুরুমুখে কিছু কিছু বাছা বাছা বুলি শিখে নিয়ে, টুকে নিয়ে ভাব-চোরা বকম্‌বাজ তালবাজ এবং চালবাজ হয়ে উঠে, তারা হল 'উৎসঙ্গবদর' কুলগাছের তলায় সারাদিন বসে থেকেও গাছের কুল গাছের তলাতে ফেলে রেখে শূন্য হাতে শূন্য কোছড়ে তারা ফিরে আসে ।

ধর্মার্থী শিষ্যদের মধ্যে আবার কেউ কেউ এমন থাকে, যারা যথার্থ ধর্ম জীবন লাভের জন্য যথোচিত আর্তি ও শরণাগতি বুকে নিয়ে মহাপুরুষের কাছে আসে । আন্তরিকভাবে গুরু বা মহাপুরুষের উপদেশ গ্রহণ করে, সেইভাবে নিজেদের জীবনকে গঠন করার চেষ্টা করে । সাধনায় তাদের কোন শৈথিল্য থাকে না । প্রাণপণে মহাপুরুষের বাণী ও উপদেশানুসারে নিজেদের জৈব জীবনের যেসব ত্রুটি বা ভ্রান্ত সংস্কার তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে । অক্ষম হলে চোখের জলে প্রাণের ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানায় । এই প্রকৃতির ধর্মার্থীদেরই ধীরে ধীরে শিব- জীবনে উত্তরণ ঘটে । একটা শূণ্য কলসীকে ভরে তুলতে হলে তাকে যেমন ঊর্ধ্বমুখ করে জলে ডোবাতে হয়, তবেই তা যেমন ধীরে ধীরে জল ভরে যায়, তেমনই যারা নির্বিচারে গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাঁর জীবন ও বাণীর অনুকরণ, অনুশীলন ও অনুবর্তন করতে পারে তারাই সর্বোত্তম শ্রেণীর শিষ্য ।তাদেরকেই বলা হয় 'উর্ধ্বমুখকুম্ভ'।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191