কোন যোগীগুরুর কাছে যেসব শিষ্য বা জিঞ্জাসু আসেন, তাঁরা সাধারণতঃ তিনশ্রেণীর হয়ে থাকেন । তাদের অধিকাংশ হয় 'অধোমুখকুম্ভ' শ্রেণীর। ------কলসীকে উপুর করে জলে ডুবালে তাতে যেমন জল ঢোকে না, জলে ডুবানোর পূর্বেও যেমন খালি থাকে, জল থেকে উঠিয়ে নেবার পরেও খালি থেকে যায়, তেমনই মহাপুরুষদের কাছেও এমন সব ধর্মার্থী আসে, যারা মহাপুরুষদের উপদেশ শুনে, সেই উপদেশানুসারে নিজেদের জীবনকে গঠন করার চেষ্টা করে না । দীর্ঘকাল সৎসঙ্গ করেও তারা খালি থেকে যায় । এরা হল অধমশ্রেণীর।
মধ্যমশ্রেণী শিষ্যদেরকে বলা হয় 'উৎসঙ্গবদর'। বদর মানে কুল । কোন কুলগাছের তলায় কেউ কাপড়ের খুঁট বা শাড়ীর আঁচল পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকল । গাছ থেকে টুপ্টুপ্ , করে কুল পড়ছে । সে যদি উঠবার সময় কুলগুলোকে ভাল করে বেঁধে না নিয়ে উঠে দাঁড়ায়, তাহলে কুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাছের তলায় পড়ে থাকবে । তেমনই একধরণের শিষ্য আছে যারা সাচ্চা মহাপুরুষের সঙ্গে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর সঙ্গ করে, উপদেশ শোনে কিন্তু কোন কিছুই গলাধঃকরণ করে না, হৃদয়ঙ্গম করে না, জপ তপ সাধন ভজন করে না, নিজেদের অন্ধ সংস্কার টেক্ জিদ্ বা অহংকারও ত্যাগ করে না । কেবল গুরুমুখে কিছু কিছু বাছা বাছা বুলি শিখে নিয়ে, টুকে নিয়ে ভাব-চোরা বকম্বাজ তালবাজ এবং চালবাজ হয়ে উঠে, তারা হল 'উৎসঙ্গবদর'। কুলগাছের তলায় সারাদিন বসে থেকেও গাছের কুল গাছের তলাতে ফেলে রেখে শূন্য হাতে শূন্য কোছড়ে তারা ফিরে আসে ।
ধর্মার্থী শিষ্যদের মধ্যে আবার কেউ কেউ এমন থাকে, যারা যথার্থ ধর্ম জীবন লাভের জন্য যথোচিত আর্তি ও শরণাগতি বুকে নিয়ে মহাপুরুষের কাছে আসে । আন্তরিকভাবে গুরু বা মহাপুরুষের উপদেশ গ্রহণ করে, সেইভাবে নিজেদের জীবনকে গঠন করার চেষ্টা করে । সাধনায় তাদের কোন শৈথিল্য থাকে না । প্রাণপণে মহাপুরুষের বাণী ও উপদেশানুসারে নিজেদের জৈব জীবনের যেসব ত্রুটি বা ভ্রান্ত সংস্কার তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে । অক্ষম হলে চোখের জলে প্রাণের ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা জানায় । এই প্রকৃতির ধর্মার্থীদেরই ধীরে ধীরে শিব- জীবনে উত্তরণ ঘটে । একটা শূণ্য কলসীকে ভরে তুলতে হলে তাকে যেমন ঊর্ধ্বমুখ করে জলে ডোবাতে হয়, তবেই তা যেমন ধীরে ধীরে জল ভরে যায়, তেমনই যারা নির্বিচারে গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ করে তাঁর জীবন ও বাণীর অনুকরণ, অনুশীলন ও অনুবর্তন করতে পারে তারাই সর্বোত্তম শ্রেণীর শিষ্য ।তাদেরকেই বলা হয় 'উর্ধ্বমুখকুম্ভ'।
https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191
https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191
No comments:
Post a Comment