Sunday, October 23, 2011



আমি নাই, তুমি নাই
আমি তুমি মিশে গেছি
অসীমে হারিয়ে গেছি
ভাষা নাই ভাব নাই
আমি নাই, তুমি নাই।
মিশে গেছি আলো ছায়া---
মিশে গেছে কায়া মায়া।
একাকার হয়ে গেছে,
সব আছে, কিছু নাই।
চাওয়া পাওয়া কারে বলে
সে ত কিছু জানি না।
জপ তপ কারে বলে
সেও ত হায় বুঝি না।
নিত্যানিত্য যারা বোঝে
আসল নকল তারা খোঁজে,
বোঝাবুঝি খোঁজাখুঁজির
আমার কোন নাই বালাই
আমি নাই, তুমি নাই।





আহাম্মকঃ---


আহাম্মক এক, যৌবনে নেয় ভেক !
আহাম্মক দুই, গুরুজনকে বলে তুই !
আহাম্মক তিন, আপন কড়ি পরকে দিয়ে নিজে করে ঋণ !
আহাম্মক চার, মাকে ধরে মার !
আহাম্মক পাঁচ, পরের পুকুরে ছাড়ে মাছ !
আহাম্মক ছয়, এর কথা ওকে কয় !
আহাম্মক সাত, নিচের ঘরে খায় 
ভাত!

আহাম্মক আট, বৌ-ঝিকে পাঠায় হাট !
আহাম্মক নয়, পিছনে কথা কয় !
আহাম্মক দশ, বৌ-এর কথায় বশ !



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

"মাণ্ডবগড় কেল্লা" ------


".......... ঠিক, ঠিক এইসময় মাণ্ডবগড় কেল্লার পাশ থেকে আমরা সবাই কারও কণ্ঠস্বর শুনে উৎকর্ণ হয়ে উঠলাম। কেউ যেন গান গাইতে গাইতে আসছেন। তাঁর গলার স্বর গানের সুরে ভেসে আসছে---

গগনে জাগিল মহাকাল।
ঘন ডম্বরু বাজে ভীম রুদ্র সাজে
জাগে ভৈরব জাগে মৃত্যু করাল।
গগনে জাগিল মহাকাল।।
মাভৈঃ! মাভৈঃ!
তাথৈ! তাথৈ! তা তা থৈ, তা তা থৈ!
জাগে ভৈরব জাগে মৃত্যু করাল।
মরণ-আঁধার কোলে, জীবন আলোকে জ্বলে
শংকর শিব সাজে সাজিয়ে দয়াল।
মাভৈঃ! মাভৈঃ! মাভৈঃ! মাভৈ!


কণ্ঠস্বর যতই এগিয়ে আসছে, ততই আমার মহাত্মা সোমানন্দেরই কণ্ঠস্বর বলেই মনে হচ্ছে ! কিন্তু তা কি করে সম্ভব। তিনি ত এখন চব্বিশ অবতারে কিংবা সেই সীতামায়ীর বনে বসে আছেন। এখানে বসে তাঁর গলা শুনব কি করে? যাঁর কণ্ঠস্বর শুনলাম তাঁকে এখনও চোখে দেখতে পাচ্ছি না। আবার কণ্ঠস্বর ভেসে এল, এবারে আরও স্পষ্ট ---


গরজ়ে গম্ভীর গগনে কম্ভু! নাচিছে সুন্দর নাচে স্বয়ম্ভূ।
সে নাচ হিল্লোলে জটা আবর্তনে সাগর ছুটে আসে গগন-প্রাঙ্গনে!
আকাশে শূলহানি, শোনাও কৃপাবাণী, তরাসে কাঁপে প্রাণী, প্রসীদ শম্ভু।।

পাহাড় বেয়ে দুটো ঝাঁকড়া আবলুষ গাছের পাশ দিয়ে আমাদের সামনে উঠে আসতেই মোহান্তজী এবং লক্ষ্মণভারতীজী আনন্দে ফিস্‌ ফিস্‌ করে বলে উঠলেন ---- সীতা বনকী মহাপুরুষ ইধর ক্যায় সে পধারেঁ ? আমি ত তাঁকে দেখে আনন্দে আত্মহারা! 'বন্দে মহাপুরুষ্য চরণারবিন্দম্‌, ,বন্দে মহাপুরুস্য চরণারবিন্দম্, নমো নারায়ণায়' বলে সবাই কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁকে আমরা প্রণাম করলাম দূর থেকে। তাঁর আমাদের দিকে নজর পড়ল বলে মনে হল না। তাঁর পূর্বের মতই শতচ্ছিন্ন পোষাক, ঝাঁপড় ঝাঁপড় চুল এবং ছোট ছোট জটা দুলাতে দুলাতে তিনি টলতে টলতে গান গাইতে গাইতে এগিয়ে আসছেন-----


ললাট-শশী টলি জটায় পড়ে ঢলি,
সে শশী-চমকে গো বিজুলি ওঠে ঝলি,
ঝাঁপে নীলাঞ্চলে মুখ দিগঙ্গনা,
মূরছে ভয়ভীতা নিশি নিরঞ্জনা
আঁধারে পথ-হারা ভকত কেঁদে সারা,
যাচিছে কৃপাধারা প্রসীদ শম্ভু!


নাচতে নাচতে পাথরের উপর পায়ের তাল ঠুকতে বলতে থাকলেন---


তাথৈ, তাথৈ, তা-তা-থৈ, তা-তা-থৈ,
মাভৈঃ! মাভৈঃ! প্রসীদ শম্ভু ! প্রসীদ শম্ভু ! 

আমার আর তর সইলো না। তাঁর সেই অবস্থাতেই আমি নিভন্ত দুটো ধুনির মাঝখান দিয়ে কোনমতে পেরিয়ে তাঁর কাছাকাছি গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে ত্র্যস্ত ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলাম, সামনের দিকে তাকিয়ে দেখুন চোদ্দটা কালো চিতা আমাদেরকে আক্রামণ করার জন্য বসে আছে, আমাদেরকে বাচাঁন!' আমার কথায় চমকে উঠেই সেইখানেই একটা পাথরের উপর বসে পড়লেন। সঙ্গে সঙ্গে অট্টহাসি। সে কি হাসি! হাসির দমকে দমকে তিনি দুলতে দুলতেই বলতে থাকলেন ---

'চোখ মেললে সকলই পাই, চোখ মুদলে কিছুই নাই। দিনে সৃষ্টি, রেতে লয়, নিরন্তর ত এই-ই হয়।'

'যম বেটা হায় দুমুখো থলি, তাই বেটার আঁৎ খালি। বেটা কেবল খাচ্ছে, খাচ্ছে, খাচ্ছে, ওর পেটে কি কিছু থাকছে! হাঁ, হাঁ কিছু থাকছে!'
'বলি ও বামুন ছানা! তুই এখানে এলি কি করে? রাঁধুনী নাই ত রাঁধালে কে, রান্না নেই ত সবাই খাচ্ছেন কি? আরে বুঝিস না কেন, যে রাঁধলে সেই ত খেলে এই ত দুনিয়ার ভেল্কি।'

এইভাবে কথা বলতে বলতেই তিনি মোহান্তজীর দিকে তাকিয়ে আমাকে বলতে লাগলেন --- 'ওহো তুই ঐ রাত ভিখারীটার দলে ভিড়ে এখানে পৌঁছে গেছিস! ভাল, ভাল



* রাত ভিখারির ধামাধরা থাকে একজন
হরিনাম বলে না মুখে, চাল কড়ি কুড়াতে তার মন! 

এই বলেই তিনি আবার হেসে লুটোপুটি! 'ওহে রাত ভিখারি বাবু! 


রাত ভোর ত গুরুর কাছে মাথা ঠুকলি আর ভিখ চাইলি, সকাল হতেই "হর নর্মদে"! আরে গুরুশক্তি আবার পারে না কি? আরে বেটা! যেই হর, সেই গুরু, সেই নর্মদা। সঙ্কটকালে তোর মন তিনদিকে ছুটবে কেন? গুরুকে ধরে সকলেই জয়, নয়ত সব লয়! ঐ যে কথায় আছে না? 


দেবতা থাকুক শত শত গুরু করব সার, 
গুরুর মধ্যেই কৃপার প্রকাশ দেবী আর দেবার। 

'তাই বলি মাঝি! গুরুর শরণ লও, কেন তুফান পানে চাও, হাল ধরে আছেন গুরু নিরঞ্জন! ফড়্যা যারা, মজবে তারা, বাটখারা যাদের কম, ধরে তসিল করবে যম আর গদিয়ান জহুরী যারা, দেখ গে তারা বসে বসে ব্যাপার করছে গুরুর প্রেম রতন।' 

'আমি বাপু স্বরূপের বাজারে থাকি। শোনরে খেপা, বেড়াস একা, চিন্তে নারলে ধরবি কি? কালার সঙ্গে বোবার কথা হয়, কালা গিয়ে শরণ মাগে কে পাবে নির্ণয়! আর অন্ধ যেয়ে রূপ নেহারে তার মর্মকথা বলব কি! মড়ার সঙ্গে মড়া ভেসে যায়,জীয়ান্ত ধরতে গেলে হাবুডুবু খায়। ওরে, সে মড়া নয়কো রসের গোড়া, তার রূপেতে দিয়ে আঁখি, আমি এখন রূপ দেখি!' 


এই বলে পাগলা সাধু চুপ করে বসে চোখ বন্ধ করে দুলতে থাকলেন। তাঁর দুলুনি আর থামতে চায় না। আমরা পড়লাম মহা ফাঁপরে। রাতভর আমরা ভয়ে ভয়ে কাটিয়েছি, আগুনের তাপে জর্জরিত হয়েছি। এখন দেখতে পাচ্ছি কালো চিতা গুলো মুখ ব্যাদন করে সবাই খাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে এবারে আক্রমণের উদ্যোগ করছে, এবারে নির্ঘাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে। অমিত শক্তিধর এই মহাপুরুষকে দেখে আমাদের বুকে আশা ভরসা জেগেছিল কিন্তু ইনি ত প্রথম থেকেই ভাবের রাজ্যে বিচরণ করছেন। এখন ত একেবারে মস্ত। 


সবচেয়ে বিপদের কথা, এর ভাবের খেলা এতক্ষণ তন্ময় হয়ে আমরা দেখছিলাম, মশাল গুলোর দিকে লক্ষ্য করি নি সেগুলো সব নিভতে বসেছে। আমি মরিয়া হয়ে তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে চেচিয়ে বললাম মা রেবার দোহাই, সীতামায়ীর দোহাই আপনি আমাদের দিকে একটু নজর দিন, কালো চিতার দল আমাদের উপর  ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে। আমার চিৎকারে তিনি চমকে উঠেই কালো চিতাগুলোর দিকে ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন। 


তাকিয়ে তাকিয়ে বলতে লাগলেন --- ওকারের বুড়ো যে অগস্ত্যি গুহায় তোকে যে বেদ মন্ত্রটা শিখালো সেটা একবার আউড়িয়ে দেখ না। এখনই বেটাদের নড়ন চড়ন থাকবে না।


---- আমি তা আওড়াবার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু কিছুতেই বেদ মন্ত্র স্মরণে আনতে পারি নি।
---- তা হলে ত তোর বেটা রাবণের দশা! রাবণ বেটাও মরণকালে সব অস্ত্র ভুলে গেছিল। অতবড় মহাবীর কর্ণ সে বেটারও মৃত্যুকালে রথচক্র মেদিনী গ্রাস করল। পরশুরামের দেওয়া ব্রহ্মাস্ত্রও ভুলে গেল। বুঝলি রে, এসবই সেই নিয়তি হারামজাদীর খেল! 

আমার আর ধৈর্য রইল না, যে কাজ কখনও করিনি, তাঁর এতসব আদিখ্যেতায় অধীর হয়ে সেই কাজই করে বসলাম। তাঁর দুই কাঁধ স্পর্শ করে ঝাঁকিয়ে দিতে দিতে বললাম ,'তবে এই নিয়তির মুখে আপনাকেই ছুঁড়ে ফেলে দেব।' 


এত বড় উচ্চকোটি মহাপুরুষের সঙ্গে আমাকে এইরকম বেয়াদপি করতে দেখে সকলেই হকচকিয়ে গেছেন। মোহান্তজী চুপি চুপি কণ্ঠে আমাকে ধমকে উঠলেন --- 'ক্যা পাগলপন কর রহে হো।' 


কিন্তু সেদিকে কান দেওয়ার সময় নেই। মহাপুরুষ সবেগে উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতের বদ্ধমুষ্ঠি আস্ফালন করতে করতে কালো চিতাদের দিকে এগোতে এগোতে বললেন ---"কী তোদের কে আমি বলে দিয়েছি না,বামুনের মাংস তিতা হয়। সাধুদের মাংস বিষ !বিষ! চাবল মারবি কি সঙ্গে সঙ্গে অক্কা! দেখছিস না, তোদেরই এক বড় কুটুম ইমলি গাছের তলায় কেমন চিৎপটাং হয়ে পড়ে আছে। পালা পালা নয়ত সকলেই চিৎপটাং হবি!" 


জানোয়ারগুলো কি বুঝল জানি না, আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, মহাপুরুষ যতই এগোচ্ছেন, তারা ততই পিছিয়ে যাচ্ছে। তারপর তারা দুড়দাড় শব্দে বন বাদাড় ভেদ করে দৌড়ে পালাল। মহাপুরুষ কিন্তু থামলেন না, তিনি এগিয়ে চললেন। আমরা সকলেই তাঁর পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম।"


Thursday, October 13, 2011

তীর্থ পরিক্রমা হল হিন্দুর প্রাণশিখাঃ-----


গত ১৯৫১ সালে দ্বিতীয়বার অমরনাথ (কাশ্মীর) হতে ফিরবার পথে ভায়া পাঠানকোট হয়ে আমি জ্বালামুখী গিয়েছিলাম। সে এক নতুন অভিঞ্জতা। ট্রেনে কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর দেখলাম, ট্রেনের পাঞ্জাবী এবং পুশ্‌তভাষী পাগড়ীধারী দীর্ঘকায় নরপুঙ্গবের দল সহসা ঝটপট করে কামরার জানলা কপাট বন্ধ করে দিতে লাগলেন। কারণটা অনুধাবন করতে পারছি না অথচ "মাথায় বড় বহরে চোট" নিরীহ বাঙালী সন্তান হিসাবে তাঁদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিবাদ করার ও সাহস পাচ্ছিলাম না। নির্বাক বিস্ময় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রহস্যটা আমার কাছে ধরা পড়ল। যতই ট্রেন এগিয়ে যেতে লাগল ততই বন্ধ জানালা কপাট ভেদ করে অজস্র ধূলা এসে সমস্ত কামরাটিকে ভরিয়ে দিল। আমরা যখন জ্বালামুখী রোডে গিয়ে নামলাম, তখন প্রত্যেকেরই ধূলিধুসরিত কিম্ভূতকিমাকার চেহারা। তখন বুঝতে পারলাম যে যদি জানালা খোলা থাকত, তাহলে কী দশাই না হত? যাইহোক, ঐরকম ধূলি-মলিন অবস্থাতেই জ্বালামুখী রোড হতে বাসে "খাস" নামক স্থানটি অতিক্রম করে জ্বালামুখী মন্দিরের নিকট নেমে নিষ্কৃতি পেলাম ধূলার হাত থেকে।


এই জ্বালামুখীতে জয়শ্রী পাণ্ডার বাড়ীতে ছিলাম। জয়শ্রী পাণ্ডার আতিথেয়তা এবং মিষ্টি ব্যবহার সম্বন্ধে বোঝানো যাবে না। শুধু জয়শ্রী পাণ্ডা কেন, এখান কার সমস্ত পাণ্ডার ব্যবহার খুব ভাল। পুরী ও গয়া প্রভৃতি তীর্থক্ষেত্রের ভয়ঙ্কর লোভী এবং দুবৃর্ত্ত পাণ্ডাদের তুলনায় জ্বালামুখীর পাণ্ডাদেরকে দেবতা বলা যায়। জয়শ্রী পাণ্ডার কাছে একটি নতুন তথ্য জানলাম। কলিকাতার মহানির্বাণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা শ্রী নিত্যগোলাপ অবধূত দীর্ঘকাল এই জ্বালামুখীতে সাধনা করেছিলেন। জয়শ্রী পাণ্ডার পিতা ছিলেন তাঁর শিষ্য। এইজন্য বাঙালী যাত্রী মাত্রকেই এই পাণ্ডামশাই ভালবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন।


জ্বালামুখী পাহাড়ের উপরে শ্রী নিত্যগোপালের সাধনপীঠ ছাড়াও মহাত্মা গোরক্ষনাথজীর প্রাচীন সাধনপীঠও পাণ্ডাজী আমাকে দেখিয়েছেন। তাঁর কাছে গল্প শুনেছি যে, দেবী দুর্গা একবার গোরক্ষনাথজীকে দর্শন দিয়ে কিছু আহার করতে চান। রিক্ত সন্ন্যাসীর ঝুলিতে তখন কিছু ছিল না। গোরক্ষনাথজী দেবীর এই পরীক্ষা এবং ছলনা বুঝতে পেরে, ভিক্ষা সংগ্রহ করে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত প্রতীক্ষা করার জন্য সোজা চলে যান হিমালয়ে। দেবী আর কি করেন, স্বয়ং সশরীরে তো আর তাঁর নিত্যস্থিতি সম্ভব নয়, কাজেই তিনি নাকি সেই থেকে সেখানে জ্যোতিরূপে বর্তমান আছেন ।


ভারতের প্রত্যেক তীর্থস্থানের উৎপত্তির মূলে যেমন কোন একটি রোচক উপাখ্যান থাকে তেমনি জ্বালামুখী তীর্থকে কেন্দ্র করেও এই উপাখ্যানের সৃষ্টি। উপাখ্যানটি বিশ্বাস করি বা না করি, মন্দিরের অভ্যন্তরে চিরপ্রজ্বলিত অগ্নিশিখা সত্যই বিস্ময়কর। বিশেষতঃ একটি পাত্রে দুধ নিয়ে তা যখন দেবীরূপে বর্ণিত জ্বালামুখী পাহাড়ের গাত্রে নৈবেদ্য রূপে ধরা হয়। তার উপর যখন নতর্নশীল অগ্নিশিখাটি লাফিয়ে এসে জ্বলতে থাকে। তখন সে দৃশ্য সত্যই সুন্দর। বর্তমানে বৈঞ্জানিকগণ এই অগ্নিশিখার মূলে হিলিয়াম গ্যাসের বিদ্যমান তা ইত্যাদি যা কিছুই অনুমান করুন না কেন, এই তীর্থকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ হিন্দুজনতার মনে যে শ্রদ্ধার বীজটি বর্তমান তাকে উপেক্ষা করার সাহস কারোর নেই।


এই শ্রদ্ধাই হিন্দুদের প্রাণশিখা। শ্রদ্ধায়াগ্নিঃ সমিধ্যতে শ্রদ্ধয়া হূয়তে হবি ------ শ্রদ্ধাই যুগ যুগ ধরে হিন্দুজনতাকে দীপ্ত এবং তৃপ্ত করে আসছে।ভারতের তীর্থক্ষেত্রগুলিতে এই শ্রদ্ধারই জীবন্ত প্রকাশ দেখা যায়।


তীর্থগুলির নানা অভাবাত্মক দিক আংশিকভাবে সত্য হলেও তীর্থের কতকগুলি কল্যাণকর দিকও আছে, সেগুলিকে কোন মতেই অগ্রাহ্য করা যায় না। অতীতের ভাব লোকে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যমই হল তীর্থ। তীর্থে গেলেই অতীত নিকটস্থ হয়, সুদূর অতীত যুগ হতে বর্তমান যুগ পর্যন্ত যে দুস্তর ব্যবধান তা সাময়িকভাবে মুছে যায়, অতীতের নানা সংস্কার বিশ্বাস এবং কিংবদন্তী এমনভাবে আমাদের মনের মধ্যে গুঞ্জন তুলতে শুরু করে, মনে হয় যেন নিজের হৃৎস্পন্দনের তালে তালে অতীত যুগের হৃৎস্পন্দন, পুলক, অশ্রু এবং আবেগ নূতন করে অনুভব করছি। যে যুগ গত হয়ে গেছে অন্তরপথে কখন যে সেখানে পাদচারণা আরম্ভ হয়ে যায় তা বুঝা যায় না --- এক অবর্ণনীয় সুখাবেশে মনটি আপ্লুত হয়ে পড়ে। এইভাবে শুধু বাইরের দৃশ্য পরিবর্তনই নয়, মানসিক স্থিতিরও যে একটা অভিনব বিন্যাস ঘটে ---- এমনটি তীর্থ ছাড়া আর কোথায় সম্ভব?


বুদ্ধিদোষে ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে কেউ যদি কোন বস্তুকে অপব্যবহার করে তাহলে তাতে মূল বস্তুটির দোষ ঘটে কি? একথা সত্য যে তীর্থ মাহাত্ম্য বর্ণনা প্রসঙ্গে যে সব মনোহর পুষ্পিত বাক্যের প্রয়োগ দেখা যায়, অনেক লোকই তীর্থের ভাবাদর্শ গ্রহণের পরিবর্তে সেগুলিতেই অযথা গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন কিন্তু সেজন্য তীর্থকে কোন মতেই দায়ী করা চলে না, তীর্থের মহিমাও তাতে ক্ষুন্ন হয় না।


এক একটি মহত্তম আধ্যাত্মিক ভাবাদর্শকেই আমাদের দেশে শাস্ত্রকারগণ তীর্থ ও তীর্থদেবতা রূপে চিত্রিত করেছন এবং তীর্থের মহিমাঞ্জাপনচ্ছলে এমন সুকৌশলে শ্রদ্ধার বীজটি উপ্ত করে দিয়েছেন যে--"বনত বনত বনি যাই"-----------এই নিয়মানুসারে মানুষ তীর্থে যেতে যেতেই এক সময় শ্রেয়ের প্রতি টান অনুভব করতে থাকে। আর এইভাবে শ্রেয়ের প্রতি টান অর্থাৎ শ্রদ্ধা একবার হৃদয়ে সঞ্চারিত হলে মানুষের আর অলভ্য কিছু থাকে না। কারণ, শ্রদ্ধা দ্বারা পরম পুরুষার্থ পর্যন্ত লাভ হয়। এটিকে আমি তীর্থযাত্রার একটি বড় অবদান বলে মনে করি।


কাজেই কোথায় কোন্‌ অভিসন্ধিপরায়ণ ব্যক্তি পাপ-স্খালনের আকাঙ্খায় তীর্থকে অপব্যবহার করল সেটাই বড় কথা নয়। লক্ষ লক্ষ হিন্দু জনতা শ্রদ্ধাসহকারে যে তীর্থ পরিক্রমা করে সেই শ্রদ্ধাই তীর্থ যাত্রার প্রাণ। তাই শ্রদ্ধাকে প্রচোদিত করবার জন্য শাস্ত্রে শ্রদ্ধার বহুতর প্রশংসা আছে দেখতে পাই। ঋষিরা বলেছেন---"যথাদেবা অসুরেষু শ্রদ্ধামুগ্রেষু চক্রিরে"। দেবতারা অসুরদের মধ্যেও শ্রদ্ধার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কোটিপতি কালোবাজারী পাষণ্ড পামরও তীর্থে গিয়ে শ্রদ্ধাপ্লুত হয়, এইখানেই তীর্থের মাহাত্ম্য।



প্রিয়ং শ্রদ্ধে দদতঃ প্রিয়ং শ্রদ্ধে দিদাসতঃ।

-----হে শ্রদ্ধা, যে দান করে তাকে তুমি শ্রদ্ধা দাও। যে দিতে চায় তাকে প্রিয় কর। শ্রদ্ধাপীঠ তীর্থগুলি যে পাপাত্মা পুণ্যাত্মা নির্বিশেষে সকলের চিত্তকে সাময়িকভাবে হলেও সেই প্রিয় পরমের রসে নিষিক্ত করে, এটাই পরম লাভ।


যারা কেবলই কৌতূহল বশে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নূতন স্থান দেখার আগ্রহে কিংবা প্রাচীন শিল্পকলা ভাস্কর্য এবং স্থাপত্য দেখবার জন্যে তীর্থে যায় তাকে প্রকৃতপক্ষে তীর্থযাত্রা বলে না। পাতঞ্জল যোগদর্শনে আছে --- যে জানা, চেনা এবং দেখার মধ্যে চিত্তের সম্প্রসাদ থাকে তাকেই বলে শ্রদ্ধা। অন্তরে শ্রদ্ধার ভাবটি থাকলে শ্রদ্ধেয় বস্তুর গুণদর্শন এবং তার প্রতি আসক্তি উত্তরোত্তর বেড়েই যায়। তীর্থে গিয়ে তীর্থদেবতার তত্ত্ব বহু সাধু পুরুষই মনন করে থাকেন। শৈব শৈব তীর্থে, বৈষ্ণব বৈষ্ণব তীর্থে, শাক্ত শাক্ত তীর্থে গিয়ে তাঁদের অন্তরস্থ শ্রদ্ধাকে প্রদীপ্ত করে নেন।


তীর্থ ভ্রমণ করতে যে কষ্ট সহ্য করতে হয়, তা কেবল সস্তায় পাপ হতে মুক্ত হওয়ার জন্যই লোকে করে একথা ভাবতেও আমার কষ্ট হয়।আমার মতে মানুষের মধ্যে নিহিত যে সহজাত শ্রদ্ধা এবং ধর্মবোধ, তাই তাকে সমস্ত কষ্ট সহ্য করার প্রেরণা দেয়। পাতঞ্জল যোগদর্শনের সমাধিপাদের ২০নম্বর সূত্রের ব্যাস ভাষ্যে বলা হয়েছে :



শ্রদ্ধা চেতসঃ সম্প্রসাদঃ।সা হি জননীর কল্যাণী যোগীনং পাতি।

---অর্থাৎ শ্রদ্ধা হল চিত্তের সম্প্রসাদ। তা তীর্থযাত্রীকে বিশেষতঃ যোগীকে কল্যাণী জননীর ন্যায় প্রতিপালন করেন।

তীর্থেই যোগী এবং সাধুদের দর্শন মিলে আর যোগী এবং মহাত্মারাই হলেন ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতির জীবন্ত বিগ্রহ। তাঁরা নিজেরাও যেমন তীর্থের অনুকূল পরিবেশে চিত্তের সম্প্রসাদ লাভ করেন, তেমনি তীর্থে গিয়ে সাধারণ লোক ও তাদের দুর্লভ সঙ্গলাভ করে কৃতকৃত্য হয়ে থাকেন। এটি তীর্থ যাত্রার একটি বড় সুফল। তীর্থই সাধারণকে অসাধারণের পুণ্য সঙ্গলাভের সুযোগ করে দেয়।


আমি দেখেছি, মানুষের শ্রদ্ধা তীর্থকে কেন্দ্র করেই সহসা বিকশিত হয়ে উঠে। গ্রাম বা শহরের গৃহগত পরিবেশে যে বিষয়াসক্ত ব্যক্তির মধ্যে বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়েই আগ্রহ দেখা যায় না, সেই লোকই যখন তিরুপতি, জ্বালামুখী বা বিশ্বনাথের মন্দিরে গিয়ে দেবতার সম্মুখে দরবিগলিত অশ্রু হয়ে সাষ্টাঙ্গ দেয় তখন বুঝা যায় তীর্থ নির্বিষয় রসেরও উদ্বোধক।


পরিক্রমায় বের হয়ে আমার বারংবার মনে হয়েছে যে তীর্থগুলি ভারতের সম্পদস্বরূপ। পথের অসাধারণ কষ্ট এবং সাধ্যাতীত অর্থ ব্যয়ের বিনিময়ে কেবল ধর্মের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষের লোকেরা যেমন তীর্থে তীর্থে ভ্রমণ করেন এমনটি কোন দেশে আছে বলে মনে হয় না।মধ্যযুগের ইউরোপে খ্রীষ্টধর্মের জোয়ার যখন এসেছিল, তখন বহুস্থানে বহু মন্দির মঠ ও গীর্জাদি স্থাপিত হয়েছিল সত্য এবং সেগুলি আজ ও ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করে বটে কিন্তু তার মূলে ধর্ম লাভের জন্য চিত্তের আকুলতা কদাচিৎ দৃষ্ট হয়।


ভ্রমণকারীরা ঐ সব গীর্জাদির অপরূপ শিল্পকলা এবং সৌন্দর্য উপভোগ করবার জন্যই ভীড় করে থাকেন। মুসলমানদের মধ্যে অবশ্য ধর্ম সাধনার অঙ্গরূপে তীর্থভ্রমণ এখনও প্রচলিত আছে। বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রতি বৎসরই মক্কা মদিনা প্রভৃতি দর্শনকে জীবনের চরিতার্থতা বলে মনে করেন।


কিন্তু মনে রাখতে হবে, আরব দেশের এই তীর্থগুলিতে যে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধসংস্কার এবং বিশ্বাস বর্তমান তা তাঁদের জীবন ধারাতেও প্রচলিত বলে ঐ সমস্ত পবিত্র তীর্থ দর্শন তাঁদের জীবনগত বিশ্বাস এবং আচরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু ভারতবর্ষে প্রগতিশীল মনোবৃত্তির দ্রুত পরিবর্তন এবং নানা বিজাতীয় ভাবধারার প্রচণ্ড আলোড়ন সত্ত্বেও যেভাবে এখানে প্রাচীন ধর্ম-বিশ্বাস এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে, তা কিভাবে সম্ভব হল তা গভীরভাবে চিন্তা করলে ভারতীয় হিন্দুর অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ঠ্যটি ধরা পড়বে।


ভারতবর্ষের যেখানে যেখানে মন্দির আছে তার চারপাশে আধুনিক শহর গড়ে উঠেছে। কিন্তু মন্দিরাভ্যন্তরে তীর্থ দেবতাকে কেন্দ্র করে যেভাবে পূজার্চনা এবং আচার অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন হয় তা একটু লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে সেই আবেষ্টনীর মধ্যে মধ্যযুগীয় বিশ্বাস এবং পবিত্র ভাবাদর্শ এখনও অক্ষুণ্ণ। পাশাপাশি আধুনিক যুগ এবং মধ্যযুগ----পরস্পর বিরোধী এই দুইটি যুগের প্রবল অবস্থিতি বিস্ময়ের বিষয় সন্দেহ নেই। অন্ধকারের মধ্যেও একটি স্তিমিত স্নিগ্ধ আলোক রেখা বলে মনে হয়।


অবশ্য তীর্থগুলির অভাবাত্মক দিকও যে নেই এমন নয়। তীর্থভ্রমণের মূলে মানুষের পাপস্খলনের প্রবৃত্তিটাই বড় বেশী বলে মনে হয়। তীর্থে গিয়ে সাধারণ লোকে মনে করে যে সে কলুষ মুক্ত হল। তীর্থের ভাবাদর্শকে বরণ করে গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর প্রাত্যহিক জীবনেও তা প্রতিফলিত করি এমন সংকল্প তার মনে কদাচিৎ উদিত হয়।


বরঞ্চ অনেক স্থানে দেখা যায় লোকে তীর্থভ্রমণকে পাপের প্রায়শ্চিত্তের সহজ পন্থা বলে মনে করে। হজমী ঔষধ হাতের কাছে থাকলে একজন লোভী ব্যক্তি যেমন এই ভরসায় অতিভোজন করে যে, একমাত্রা হজমী ঔষধ খেলেই সব হজম হয়ে যাবে। তেমনি তীর্থ করে আসলেই পাপমোচন হয়ে যাবে এই ধরণের মনোবৃত্তিই মানুষকে অনেক সময় নূতন পাপ অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত করে। এটা কতকটা শিশু খাদ্যে ভেজালকারী অসাধু কোটিপতি ব্যবসায়ীর রাম নাম করতে নিত্য গঙ্গাস্নান করবার মত। এরফল এই হয় যে, গঙ্গাস্নান কালে ঐ ধনী ব্যক্তিটির মনে সাময়িকভাবে যে ভাবপ্রবণতাটি দেখা যায়, তা গদীতে বসা মাত্রই মন হতে কর্পূরের মত উবে যায়। রাম নাম করলে বা কোন তীর্থে গিয়ে মন্দির বা ধর্মশালাদি করে নিলেই অর্জিত পাপ লঘু হবে, এই ধারণা তাকে পাপ কর্মের অনুষ্ঠানে অধিকতর প্ররোচিত করে।


জ্বালামুখীতেই দেখেছিলাম, একজন সাধক উদয়াস্ত প্রবল নিষ্ঠার সঙ্গে একাসনে বসে ধ্যান জপ করছেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, জ্বালামুখীর মত মহাপীঠস্থানে দশ লক্ষ নাম জপ করলে মন্ত্রসিদ্ধি অনিবার্য। তিনি দশ লক্ষ মন্ত্র জপ করে প্রফুল্ল মনে সেখানে থেকে চলে যান। কয়েক বৎসর পরে তাঁকে তারাপীঠে অন্য এক অবস্থায় দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম।


জ্বালামুখীতে তাঁর মধ্যে যে তপস্যার নিষ্ঠা এবং পবিত্রতা দেখেছিলাম, তাঁর তারাপীঠের জীবন যাত্রার সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সঙ্গতি ছিল না।দুই-তিন টি ভৈরবী সহ নানাবিধ পাপাচরণ এবং শিষ্য বঞ্চনাতে তিনি মত্ত ছিলেন। এই বিষয়ে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেছিলেন, "পুনরায় জ্বালামুখীতে গিয়া দশ লক্ষ মন্ত্র জপ করলেই আমি আমার শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারব।"


তীর্থ এইভাবে মানুষকে পাপাচরণে প্ররোচিত করে। এছাড়া তীর্থবাসী পাণ্ডা এবং পুরোহিতদের মনে যে তীর্থ একটা মায়াময় অন্ধ প্রভাব সৃষ্টি করে তাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন। তাঁদের মধ্যে অনেকই উত্তরধিকার সূত্রে কতকটা অন্ধসংস্কার এবং কতকটা ব্যবসায়িক বুদ্ধির প্রেরণা তীর্থ দেবতাকে জীবনে ধ্যানঞ্জান করে বসেন।


তাঁদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনেও এর ফলটা হয় মারাত্মক।কুসংস্কার এমনভাবে তাঁদেরকে আচ্ছন্ন করে যে প্রাণসংশয়কারী কঠিন পীড়াতে বৈঞ্জানিক চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তে শান্তি স্বস্ত্যয়ন এবং দেবতার চরণামৃত পান কেই তাঁরা অধিকতর মূল্য দিয়ে বসেন।কাশীতে দেখেছি, একজন পাণ্ড্য কঠিন নিমুনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে কোন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন না। তাঁর আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বিদ্ধান্‌ পুত্রগণ ও অগাধ বিশ্বাসে গৃহে শান্তি স্বস্ত্যয়নের অনুষ্ঠান এবং রোগীকে পরণামৃত পান করাতে লাগলেন। এর ফল হল এই যে পাণ্ডা মহাশয়ের মৃত্যু হল।


তীর্থকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে যে অন্ধসংস্কার এবং বিশ্বাস দানা বেঁধে উঠে, তাকেই আমি (লেখক) এখানে তীর্থের অভাবাত্মক দিক বলছি।



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191