Wednesday, November 20, 2013


"মরম  না  জানে, ধরম  বাখানে, এমন  আছয়ে  যারা
কাজ  নাই  সখী  তাদের  কথায়  বাহিরে  রহুন  তারা।
আমার  বাহির  দুয়ারে  কপাট  লেগেছে, ভিতর  দুয়ার  খোলা
তোরা  নিসাড়া  হইয়া  আয়লো  সজনি, আঁধার  পেরিয়া  আলা
আলার  ভিতরে  কালাটি  রয়েছে, চৌকি  রয়েছে  সেথা
সে  দেশের  কথা  এদেশে  কহিলে  মরমে  লাগিবে  ব্যথা।"



Monday, November 11, 2013


........... বিকেল  তখন  সাড়ে  তিনটে  চারটে  বাজে। হঠাৎ  নজর গেল  মন্দিরের  বাঁদিকে  প্রায়  দেড়  মানুষ  সমান  উঁচু  পাঁশুটে  রঙা ঘাসের  মধ্যে  সোনালী  চমক। আমি সেদিকে  সকলের  দৃষ্টি  আকর্ষণ করে  সকলকে  নিয়ে  মন্দিরের  দরজা  ধাক্কা  দিয়ে  খুলে  ভিতরে ঢুকে  দরজা  বন্ধ  করে  দিলাম।  শিবমন্দিরের  বাঁদিকের  জানলা খুলে  দেখি  ঘাসের  জঙ্গল  ভেদ  করে  দেখা  যাচ্ছে  না  কিছুই। বুক ঢিপঢিপ  করছে।


হরানন্দজী  ফিস্‌ফিস্‌  করে  বললেন --- চিতা! দেখুন একটা  নয় একসঙ্গে  চারটে। মা  এবং  প্রায়  সাবালক  তিনটি  শাবক। ঘাসের মধ্যে  গা  ডুবিয়ে  সর্তক  ভঙ্গীতে  এগোচ্ছে  শিকারের  সন্ধানে। শাবকগুলি  একইভাবে  মাকে  অনুসরণ  করছে। এবার  একটা  বড় পাথরের  উপর  এসে  উঠে  দাঁড়াল  মা চিতা। বাচ্চাগুলিও  মায়ের গা  ঘেঁসে  পাথরের  উপর  উঠে  দাঁড়াল। সোনালী  চামড়ার  উপর কালো  বুটি। তার  সবল  পেশীতে  ফুটে  উঠছে  যেন  নৃত্যের সুষমা। চিতাগুলির  দাঁড়াবার  ভঙ্গী  দেখে  মনে  হল  চিতার  লক্ষ্য  চিতল হরিণ। কিন্তু  না!  মা  চিতা  হঠাৎ  দিক  পরিবর্তন  করে  গা ডাকা দিয়ে  গুঁড়ি  মেরে  এগোতে  আরম্ভ  করল  বাইসনগুলির দিকে।

হরিণের  গতি  ও  চিতার  গতি  ঘণ্টায়  ৫০ মাইল  হলেও  হরিণ একটানা  দৌড়াতে  পারে  কিন্তু  চিতার  অতক্ষণ  দৌড়াবার  ক্ষমতা নেই।  পাছে  শিকার  ফস্কে  যায়  তাই  সুচতুর  চিতা  লক্ষ্য  পরিবর্তন করে  ঘাসের  মধ্যে  গা  ঢাকা  দিয়ে  গুঁড়ি  মেরে  এগোতে  আরম্ভ করেছে। চিতা এগিয়ে  চলেছে  সন্তর্পণে।  হঠাৎ  চিতাটি  লাফিয়ে গিয়ে  পড়ল  বাইসনদের  মধ্যে।


যে  বাইসনটি  লক্ষ্য  করে  চিতা  ছুটছে, সেই  পালাচ্ছে  প্রাণভয়ে। মনে  হচ্ছে  চিতাটি  বাতাসে ভর  করে  উড়ে  যাচ্ছে। মাটি  স্পর্শ করছে  না  তার  পা। হঠাৎ  বাইসনটি  তার  শিং  বাগয়ে  ঘুরে দাঁড়াল। কিন্তু  চিতাটি  তার  বেগ  সামলাতে  না  পেরে  কিছুটা  এ গিয়ে  গেল।


তারপর  চিতাটি  ফিরে  আসতেই  আমরা  দেখলাম  এক  লোমহর্ষক বাইসন  ও  চিতার  লড়াই।দুজনেই  রক্তাক্ত  হয়ে  উঠেছে। হঠাৎ বাইসনটি  তার  সরু  সূচালো  শিঙটা  ঢুকিয়ে  দিল  চিতার  পেটে। কিন্তু  তাতেও  সে  থামবে  না। বীভৎস! বীভৎস! এদৃশ্য! আস্তে  আস্তে থেমে এল  অসম  লড়াই। তারপর  দেখলাম  দুজনেই  দুদিকে  ছিটকে পড়ল।


বাইসনটা  কয়েকবার  উঠবার  চেষ্টা  করল। কয়েকবার  ঘড়ঘড়ে আওয়াজে  ডেকে  উঠল। কিন্তু চিতার  দেহ  নিথর, নিষ্পন্দ। তারপর সব  চুপচাপ। এবার  যে  পাথরের  উপর  বাচ্চা  চিতাগুলি  দাঁড়িয়ে ছিল  সেদিকে  তাকিয়ে দেখি  তারাও  উধাও।


আমাদের  হাঁফ  ছাড়ল। আমরা  সবাই  ঘেমে  নেয়ে  গেছি। শরীর, হাত, পা  সবই  অবশ। ঘটনার  বীভৎসতা  ও  প্রচণ্ডতা  আমাদের বিহ্বল  করে  তুলেছে।  পিপাসায়  গলা  শুকিয়ে  গেছে। জল খাওয়ার জন্য  কমণ্ডলুর  দিকে  যেতে  গিয়ে  পা  দুটো  থরথর করে  কেঁপে উঠল। কিছুক্ষণ  পরে  কতকটা  সামলে  নিয়ে  কমণ্ডলুর  সমস্ত জলটা  ঢকঢক  করে  গিলে  ফেললাম। যেন  ধড়ে  প্রাণ  ফিরে  এল। আমার  সঙ্গীদের  কোন  সাড়া  পাচ্ছি  না। সকলের  অবস্থা  তথৈবচ। সবাইকে  কমণ্ডলুর  জল  পান  করালাম। কিছুক্ষণ  পরে  হরানন্দজী কাঁপাকাঁপা  গলায়  রব তুললেন--- হর  নর্মদে, হর  নর্মদে, হর  নর্মদে।


আজ  আর  জপে  মন  নেই। কোনক্রমে  নিজেদের  গাঁঠরী  খুলে বিছানা  পেতে  শুয়ে  পড়লাম। রাত্রি বাড়ছে। গভীর  রাত্রে  অরণ্যের ভাষা  মুখর  হয়ে  ওঠে। মাঝে  মাঝেই  নানা  শব্দ  কানে  ভেসে আসতে  থাকল। রাত্রিচর  কোন  পাখীর  ডাক  শুনতে  পেলাম। মিষ্টি সুর। আশ্চর্য, সারাদিন  দেহমনে  এত  পরিশ্রম  হয়েছে  কিন্তু  ঘুম আসছে  না  কেন? চোখ  খোলা  রেখেই  আমি  ধ্যানে  ডুববার  চেষ্টা করছি। মনে  হচ্ছে  নিরবিচ্ছিন্ন  একটা  সুরেলা  ধ্বনি  বা  তান গমকে  গমকে  যেন  ঊর্ধ্বের  দিকে  উঠে  যাচ্ছে। একটা  অস্বাভাবিক আনন্দ  আমাকে  পেয়ে  বসল।


সকালে  জেগে  উঠলাম। মন্দিরের  বারান্দায়  বসে  বসে  দেখলাম ভুবন  প্রকাশক  উদিত  হচ্ছেন, সাতপুরার  শীর্যদেশে; তাঁর রশ্মিছটায়  আলোয়  আলোয়  সব  কিছুকে  ফুটিয়ে  তুলছেন, প্রকাশ করছেন। দূরে  চিতা ও বাইসনের  দেহকে  ঘিরে  ধরেছে শকুনির দল।


প্রায় ৮ টা নাগাদ  যাত্রা  শুরু  করলাম।  প্রায়  আরো  দুমাইল  হাঁটার পর  উৎরাই-এর  মুখে  এসে  পৌঁছলাম। সাবধানে  পা  ফেলে  ফেলে নামতে  লাগলাম  ঢালুতে। একটু  অসাবধান  হলে  গড়িয়ে  পড়তে হবে খাদের  মুখে। বনের  প্রকৃতি  ক্রমশ  বদলে  যাচ্ছে। চারদিকে শুধু পাথর পাথর  আর  পাথর  কিন্তু  বড়  বড়  বনস্পতির  আর  দেখা মিলছে  না।


প্রায়  আধঘণ্টা  উৎরাই-এর  পথে  হাঁটার  পরে  আমরা  মোটামুটি সমতল  প্রান্তরে  নেমে  এলাম। সামনেই  মা  নর্মদাকে  দেখা  যাচ্ছে।যতক্ষণ  দুর্গম  বনপথে  হাঁটছিলাম  তখন  ডানদিকেই  তাঁর জলধারা  দেখতে  পাচ্ছিলাম। এখন  সামনে  বাঁদিকে  তাকিয়ে দেখছি  নর্মদা  বন  পাহাড়  ভেদ  করে  বক্রযান  গতিতে  সামনে এসে উপস্থিত  হয়েছেন।এ  অঞ্চলে  দেখছি, পাহাড়  ফাটিয়ে  তার  খাঁজে খাঁজে  বহু  চাষযোগ্য  জমি  বের  করা  হয়েছে, তাতে চাষবাস হচ্ছে। কোন  কোন  জমিতে  গম  জোয়ার  ভুট্টার  গাছ  দেখা  যাচ্ছে। ধীরে ধীরে  আমরা  নর্মদার  কিনারে  এসে  পৌঁছলাম।


নর্মদার  পবিত্রধারাকে  স্পর্শ  ও প্রণাম  করে  আমরা  পূর্বদিকে  বাঁক নিতেই  দূরে  একটা মন্দিরের  চূড়া  দেখতে  পেলাম। শিবমন্দিরটি পাথরের  তৈরী, পোতার  উপর  একটা  বড়  হলঘর। হলটা  দেখলেই বুঝা  যায়  বেশ  পুরাতন। দরজা  জানলাও  নেই।  থাকলেও তা খসে পড়ে  জীর্ণ  হয়ে  নষ্ট  হয়ে  গেছে।


আমরা  আমাদের  ঝোলা  গাঁঠরী  একস্থানে  রেখে  সবাই  মিলে  ঘাটে স্নান  তর্পণাদি  করতে  বসলাম। আজ  আমরা  তিন দিন  অভুক্ত। নর্মদার  জল  ছাড়া  কিছুই  জোটে  নি।  তা  বলে  আমাদের  ক্ষিদেও নেই, শরীরে  ক্লান্তিও  নেই। বসে  বসে  ভাবতে  লাগলাম, বিচার করতে  লাগলাম --- এই  পরিক্রমা পথে  পরিক্রমা বাসীদের তপ  জপ ও  বিভিন্ন  সাধুসঙ্গ ও নূতন  নূতন  ঞ্জান লাভ  ছাড়াও  যে  বিরুদ্ধ পরিবেশের  মধ্যে  পড়ে  স্বতঃই  যে  শম দম  ত্যাগ  তিতিক্ষা  হিংস্র শ্বাপদসঙ্কুল  দুর্গম  অরণ্যের  মধ্যে  ঘুরতে  ঘুরতে  প্রতিপদে  যে  ঈশ্বর নির্ভরতা  বাড়ছে, সঙ্কটকালে  যখন  দিশেহারা  হয়ে  পড়েছি, নিজেকে  একান্ত  অসহায়  ভাবছি, তখন  যেভাবে  আচম্বিতে অভাবনীয়ভাবে  রক্ষা  পাচ্ছি, হঠাৎ  হঠাৎ  যেভাবে  দরদী  সঙ্গী ও সাথীরা  জুটে  যাচ্ছেন  তাতে  স্পষ্টতই  মনে  হচ্ছে  কেউ  যেন আড়ালে  থেকে  রক্ষা  করছেন। কেবলেই  মনে  হচ্ছে  নর্মদা  মাতা রক্ষা  করছেন, নর্মদেশ্বর  শিব  রক্ষা  করছেন।  এই  শরণাগতির ভাবটাই  এই পরিক্রমার  সর্বশ্রেষ্ঠ  প্রাপ্তি।




https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Friday, November 1, 2013

*** সরস্বতীর স্বরূপ বর্ণনা:---


ব্রহ্ম-বৈবর্ত পুরাণে আছে, সৃষ্টিকালে প্রধানা শক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছায় পাঁচভাগে বিভক্ত হন --- রাধা, পদ্মা, সাবিত্রী, দুর্গা ও সরস্বতী। সরস্বতী  কৃষ্ণ কণ্ঠ  হতে  উদ্ভুতা। শ্রীকৃষ্ণ এই দেবীকে প্রথমে পূজা করেন। তখন থেকেই এই দেবীর পূজা প্রচলিত হয়। দেবী শ্রীকৃষ্ণ হতে উদ্ভুতা হয়ে শ্রীকৃষ্ণকেই কামনা করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ সরস্বতীকে নারায়ণ ভজনা করতে বলেন। লক্ষ্মী এবং সরস্বতী দুজনেই নারায়ণের স্ত্রী। ভাগবত মতে সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী।


পুরাণকারদের  মতে, পরমাত্মার  মুখ  হতে এই  দেবীর আবির্ভাব হয়। এই  দেবী  শুক্লবর্ণা, বীণাধারিণী এবং চন্দ্রে শোভাযুক্তা,  ইনি  শ্রুতি ও শাস্ত্রের  মধ্যে  শ্রেষ্ঠা, কবি এবং বিদ্বানদের  ইষ্টদেবতা, এইজন্য  এঁর নাম  সরস্বতী।


সরস্বতী জ্যোতিঃ (প্রঞ্জাজ্যোতিঃ) এবং রসের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। 

সরস্বতী স, রসবতী। "রসো বৈ সঃ" অর্থাৎ রসস্বরূপ পরব্রহ্মের তিনি পরম প্রকাশ।

ঋগ্বেদেরই ১৪২ সূক্তে ঋষি দীর্ঘতমা দৃষ্ট ৯ নম্বর মন্ত্রে দেবী সরস্বতীকে ইলা এবং ভারতী নামে অভিহিত করা হয়েছে।


"শুচির্দেবেষ্বপিতা হোত্রা মরুৎসু ভারতী।

ইলা সরস্বতী মহী বর্হিঃ সীদন্তু যঞ্জিয়াঃ।"

এই মন্ত্রে ইলা, সরস্বতী, ভারতীকে অগ্নির ত্রিমূর্তি হিসাবে বন্দনা করা হয়েছে। ভারতী স্বর্গস্থ বাক্‌দেবতা, ইলা পৃথিবীস্থ বাক্‌দেবতা এবং সরস্বতী অন্তরীক্ষস্থ বাক্‌দেবতা।


সরঃ শব্দের অর্থ হল জল; সরস্বতীর প্রথম অর্থ নদী। আর্যাবর্তে সরস্বতী নামে যে নদী ছিল (এখন লুপ্তপ্রায়) তাই প্রথমে সরস্বতী দেবী বলে পূজিত হয়েছিলেন।এই নদীতটেই বৈদিক ঋষিদের আবাসস্থল ছিল। সারা বৎসর ধরে এই নদী তীরে নানাবিধ যঞ্জ সম্পাদন করা হত এবং বেদধ্বনি হত বলে কালক্রমে সরস্বতী নদী পবিত্রমন্ত্রে দেবী বাক্‌দেবীরূপে রূপান্তরিত হলেন। বেদমন্ত্রে সরস্বতীর এই ভাবে মহিমা প্রকাশ পেয়েছে।


বাক্‌দেবীরূপে এঁর মহিমা ঋষিরা এইভাবে প্রকাশ করেছেন --- মানুষের হৃদয়কে পবিত্র ও নির্মল করেন, যিনি যঞ্জশালিনী এবং অন্নদাত্রী সেই সরস্বতী আমাদের যঞ্জ কামনা করেন। ইনি সুন্দর ও সত্যবাক্যের প্রেরণকর্ত্রী, ইনি মহাসমুদ্রের ন্যায় অসীম পরমাত্মাকে চিহ্নের দ্বারা প্রকাশ করেন। ইনি সমুদয় নরনারীর হৃদয়ে জ্যোতিঃ সঞ্চারিত করেন।


শৈবাগমতন্ত্রে যাঁকে সিদ্ধবিদ্যা ষোড়শী বিদ্যা বলা হয় সেই ষোড়শী বিদ্যার দেবীকেই সরস্বতী বলা হয়। শৈবাগম সাধকদের নিকট সাধারণভাবে ইনি বাণী, বীণাপানি, বাক্‌দেবী, শুভ্রা, হংসবাহনা প্রভৃতি নামে পরিচিত।


পৌরাণিক সরস্বতী এবং বৈদিক সরস্বতীর সঙ্গে এঁর সাদৃশ্য থাকলেও ধ্যান ও মন্ত্ররহস্য সম্পূর্ণ পৃথক। এই দেবী নানা স্থানে নানাভাবে পূজিত হয়ে থাকেন। দেবীর বহুরূপ, বহুবাহন ও বহুলীলা।



দেবী কখনও দ্বিভূজা, কখনো চতুর্ভুজা আবার প্রয়োজনবোধে কখনো বা ষোড়শভূজা। প্রত্যেক রূপেই মন্ত্র যন্ত্র পৃথক পৃথক। ষোড়শী বিদ্যাদেবীর ষোলটি নাম, ষোল রকমের রূপ। সকলেরই মাথার উপর মন্দিরের মত উঁচু মুকুট। সকলেই ললিত মুদ্রাসনে আসীনা, একটি পা নীচু করে রেখেছেন, একটি পা আসনের দিকে গুটানো। সকলেরই দক্ষিণ হস্ত বক্ষোপরি বরমুদ্রায় স্থাপিত, বামহস্ত মোড়া এবং উঁচুতে তোলা। প্রত্যেকটি অঙ্গভঙ্গীই গভীর ভাবের দ্যোতক, বিভিন্ন যোগরহস্যের সঙ্কেত-সূচক।

সরস্বতীর ষোড়শ নামের:---


1. রোহিনী --- দেবীর বাহন জলচৌকি। দেবী চতুর্ভুজা। দক্ষিণ ও বাম উভয় হস্তেই চক্র। দেবীর অপর নাম ---"অজিতবালা"।


2. প্রঞ্জপ্তী --- দেবীর বাহন হংস। দেবী  ষষ্ঠভুজা। তাঁর হাতে অসি, কুঠার, চন্দ্রহাস ও দর্পণ। দেবীর অপর নাম --- "দুরিতারী"।


3. বজ্রশৃঙ্খলা --- দেবীর বাহন হংস। দেবী  চতুর্ভুজা। হাতে পারিখ ও বৈষ্ণবাস্ত্র।


4. কুলিশাঙ্কুশা --- দেবীর বাহন অশ্ব। দেবী চতুর্ভুজা। তাঁর ডান হাতে অসি এবং বাম হাতে ভূষণ্ডী। দেবীর অন্যান্য নাম যথাক্রমে "মনোবেগা", "মনোগুপ্তি", "শ্যামা"।


5. চক্রেশ্বরী ---  দেবীর বাহন গরুড়। দেবী ষোড়শভূজা। উপরের দক্ষিণ ও বাম হস্তে শতঘ্নী এবং ১০ হাত মুষ্টিবদ্ধ। দুই হাত কোলে স্থিরভাবে পতিত এবং বাকী দুই হাতে বরদানের মুদ্রা।


6. পুরুষদত্তা  ভারতী --- দেবীর বাহন হস্তী। দেবীর দক্ষিণ হস্তে চক্র এবং বাম হস্তে শতঘ্নী। এঁর মুখমণ্ডল চতুস্কোণ বিশিষ্ট, পুরুষাকৃতি। দেহের গঠন সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ, কোমর সিংহের মত সরু।


7. কালী --- এই কালী দশমহাবিদ্যার কালী নন। বাহন  বৃষ। দেবী চতুর্ভূজা। দক্ষিণ  হস্তে ত্রিশূল ও বাম হস্তে শতঘ্নী। দেবীর অপর নাম "শান্তি"।


8. মহাকালী --- ইনিও তন্ত্রোক্ত দশমহাবিদ্যার মহাকালী নন। দেবীর কোন বাহন নেই। দেবী  চতুর্ভুজা। ডান হাতে ষষ্ঠি এবং বাম হাতে শতঘ্নী। দেবীর অপর নাম "অজিতা" এবং "সুরতারকা"।


9. গৌরী ---  দেবীর বাহন বৃষ। দেবী চতুর্ভূজা। এঁর দক্ষিণ হস্তে মঙ্গলঘট এবং বাম হস্তে ষষ্ঠি। দেবীর মস্তকের মন্দিরাকৃতি মুকুটের বাম পার্শ্বে "চন্দ্র"। দেবীর অপর নাম "মানসী"ও "অশোকা"।


10. গান্ধারী --- দেবী চতুর্ভূজা, কোন বাহন নেই। এঁর ডান হাতে পরিখ অর্থাৎ লৌহকণ্টকযুক্ত মুদগর আর বাম হাতে সীর(লাঙ্গলাস্ত্র); এর দুই স্থান বাঁকা। মুখ ও মূলাংশ লৌহবদ্ধ, সাধ্য ত্রিহস্ত পরিমিত দীর্ঘ। এই মন্ত্রের কাজ আকর্ষণ ও নিপাতন। এই দেবীর অপর নাম "চণ্ডা"।


11. সর্বাস্ত্রমহাজ্বালা --- দেবী অষ্টভূজা। এঁর বাহন বৃষ। দক্ষিণহস্তে অসি, ত্রিশূল, ভল্ল (বর্শা বিশেষ)। কার্য--- নিক্ষেপে ছেদন, নিপাতন ও শায়িত করণ। বৈষ্ণবাস্ত্র এবং বাম হস্তে ব্রহ্মশির অস্ত্র, তীর ও পাশ। মস্তকে মন্দিরাকৃতি বিরাট মুকুট। মুকুটের চতুর্দিকে অরণ্য। দেবীর অপর নাম "জ্বালামালিনী","ভৃকুটি"।


12. মানবী --- দেবী চতুর্ভূজা।এঁর বাহন সাপ। দেবীর দু'হস্তে দর্পণ, এক হাতে ষষ্ঠি, অপর হাত বরমুদ্রায় স্থাপিত। দেবীর অপর নাম "অশোকা"।


13. বৈরাট্যা --- দেবী চতুর্ভূজা।এঁর বাহন সাপ।এঁর দু'হস্তে বৈষ্ণবাস্ত্র ও ভল্ল। দেবীর অপর নাম "বৈরোটি"।


14. অচ্ছুপ্তা --- দেবী চতুর্ভূজা। এঁর বাহন হংস। দক্ষিণ হস্তে ভল্ল  এবং বাম হস্তে  বিজয়ধনু। দেবীর অপর নাম "অনন্তবতী","অঙ্কশা"।


15. মানসী --- দেবী চতুর্ভূজা। এঁর বাহন সিংহ। দক্ষিণ হস্তে ভল্ল ও কুঠার এবং বাম হস্তে দর্পণ ও বিজয়ধনু। দেবীর অপর নাম "কন্দর্পা"।


16. মহামানবী --- দেবী চতুর্ভূজা। এঁর বাহন ময়ূর। দক্ষিণ হস্তে ভল্ল ও বাম হস্তে চক্র। দেবীর অপর নাম "নির্বাসী"।



ষোড়শী বিদ্যা সরস্বতীর এই ষোল রকমের দিব্যমূর্তি নিয়ে ভক্তের কাছে প্রকাট হন। তাই তাঁর  ষোড়শী রূপই আমাদের ধ্যানের ধন। তাঁর প্রত্যেকটি রূপেরই মন্ত্র যন্ত্র পৃথক পৃথক থাকলেও সব মিলিয়ে তাঁর যে দিব্যস্বরূপ, সরস্বতী বলতে আমরা তাঁকেই বুঝি।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191