Monday, December 28, 2015


"মহানাম মূর্ত্ত যবে হয় চিদাকাশে 
ধূস্তরের সম ফোটে জ্যোতির প্রকাশে;
মিলিলে জ্যোতির সনে ঝঙ্কারিবে নাদ 
তালে তানে স্মর পিতা ঘুচিবে প্রমাদ।।"

Friday, December 11, 2015

"মহাযোগিনী পাগলীমা" ---


মেদিনীপুর শহর থেকে দশ-বারো মাইল দূরে ধলহারা নামক গ্রামে শ্রীশ্রী পাগলীমা নামে এক যোগসিদ্ধা মা ছিলেন। তাঁর অলৌকিক যোগবিভূতি ছিল। প্রতিদিনই তাঁর কাছে হাজার হাজার লোক যেত ভাগ্য গণনা করতে। তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই তিনি নাম, ধাম, কে কিজন্য এসেছে, কোন সমস্যায় পড়ে এসেছে, তার প্রতিকারই বা কি, তা তিনি গড়গড় করে বলে দিতেন। মনে হত, ভক্ত তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছে, তাঁর সমগ্র জীবনপট তাঁর সামনে যেন আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে গেছে। তিনি কেবল দেখছেন আর বলে যাচ্ছেন। এমনকি তাঁর কাছে আসতে আসতে ভক্ত কোথায় কোথায় বিশ্রাম করেছিল বা কার সঙ্গে কি কি কথা বলেছিল, তাও তিনি বলে দিতে পারতেন। সারা মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তাঁর নাম ছিল। তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বাংলাদেশ জুড়ে। কলকাতায় তাঁর অজস্র ধনী মানী ভক্ত ছিল।

তাঁর পূজিত অষ্টধাতু নির্মিত ন'ইঞ্চি দীর্ঘ একটি গৌরী মূর্তি ছিল। শ্রীশ্রী গৌরীই ছিলেন তাঁর ইষ্টদেবী। তাঁর গৌরী পূজার রীতিও ছিল বিচিত্র।

একটা ছোট্ট তামার বাটিতে ছটাক খানিক মধু নিয়ে তিনি মন্দিরে ঢুকতেন ঠিক বেলা ১২ টায়। ঢুকেই অশ্লীল ভাষায় গালি পাড়তেন গৌরীর উদ্দেশ্যে। তারপর আঙুলে করে মধু তুলে তুলে গৌরীমূর্তির ঠোঁটে ঠেকাতেন আর সেখানে সঙ্গে সঙ্গে চুক করে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠত। হাজার হাজার ভক্তের সামনেই এই ঘটনা নিত্য ঘটত।

১৯৫০ সালের বাসন্তী পূজার দিন তিনি যোগাসনে বসে মহাসমাধিতে প্রবেশ করেন। মৃত্যুর ১৫ দিন আগে থেকে তিনি তাঁর দেহান্তের তিথি, বার ও ক্ষণ সকল ভক্ত শিষ্যদের কাছে পূর্বাহ্নেই জানিয়ে দিয়েছিলেন।


www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.twitter.com/tapobhumi30

Friday, November 27, 2015

"শ্রীরুদ্রহৃদয়োপনিষৎ মন্ত্রের ব্যাখ্যা : ---


Cont ...... (Last)

16. নিত্য, ব্যাপক, সর্বগত, সূক্ষ্মতম ও ব্যয় রহিত সর্বভূতের উৎপত্তি স্থান-স্বরূপ  অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, গোত্রহীন, রূপ বিহীন, চক্ষু-কর্ণ-হস্ত-পদপরিহীন আত্মাকে ধীরগণ আত্মাতেই অবলোকন করে থাকেন।

17. যিনি সর্বঞ্জ ও বিশেষতঃ সর্ববিৎ, যাঁহার তপ ঞ্জানময় সেই পরম পুরুষ হতে অন্নাদি ভোগ্যরূপে জগৎ আবির্ভূত হয়।

18. রজ্জুতে যেমন সর্পভ্রম হয়, সেই রকম পরম পুরুষে সর্পভানের মত জগদ্‌ভান হয়। রজ্জু সর্প বস্তুতঃ মিথ্যা হলেও যেমন সত্য বলে প্রতিভাত হয়, তেমনই জগৎ মিথ্যা হলেও সত্যরূপে আভাসিত হয়। জগতের অধিষ্ঠান স্বরূপ সেই পরমাত্মা সত্য, তাঁকে জানলেই ভবপাশ হতে মুক্ত হওয়া যায়।

19. তত্ত্বঞ্জানের দ্বারাই সংসার ভ্রমের বিনাশ হয়, কর্মের দ্বারা নয়। ঞ্জানার্থী, ব্রহ্মনিষ্ঠ শ্রোত্রিয় অর্থাৎ শ্রুতিশাস্ত্রবিদ্‌ গুরুর নিকট গমন করেন গুরু সেই ঞ্জানার্থী শিষ্যকে ব্রহ্মাত্মবোধিনী পরাবিদ্যা দান করেন।

20. লোকে যদি সেই গুহা নিহিত পরব্রহ্মকে জানতে পারে, তবে অবিদ্যারূপ মহাগ্রন্থি ছেদ করে সনাতন শিব পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হয়। এই আত্মা প্রাপ্তি বা আত্মাঞ্জান লাভই অমৃত বা মুক্তি। মমুক্ষুগণের এইটাই একমাত্র বোদ্ধব্য।

21. প্রণব ধনুঃ-স্বরূপ, জীবাত্ম শর বা বানস্বরূপ, ব্রহ্ম লক্ষ্যস্বরূপ। শর যেমন ধনুর সাহায্যে লক্ষ্যে ডুবে তন্ময় হয়ে যায়, জীবও সেই রকম অপ্রমত্তভাবে শিবোপাসনার সাহায্যে শিব লক্ষ্যে শরবৎ তল্লীন হয়। লক্ষ্য শিব সর্বগত, বেদ্ধা সাধকও সর্বগত, এই লক্ষ্য শিব সান্নিধ্য লাভের উপায়, তাতে কোন সংশয় নেই।

22. যেখানে চন্দ্র, সূর্যের প্রকাশ নেই, বায়ুর প্রবাহ নেই, দেবগণের দীপ্তি নেই, সেই পরম দীপ্তিময় সর্বভাব স্বরূপ বিরজঃ বিশুদ্ধ শিবতত্ত্ব স্বয়ং-ই প্রকাশ পেয়ে থাকেন।

23. দেহ বৃক্ষে দুটি পক্ষী বাস করে। একটি জীব, অন্যটি ঈশ। জীব কর্মফল ভোগ করে আর যিনি ঐশী সত্তা তিনি ভোগ করেন না, কেবল সাক্ষিরূপে বিরাজ করেন। ভোগ নিবৃত্ত হলেও জীবই ঈশ্বর শিব বা সাক্ষীরূপে প্রকাশ পান। জীব ও ঈশ্বরের যে ভেদ, সেটা যথার্থ নয়, মায়ার দ্বারা তা কল্পিত। যেমন ঘটাকাশ এবং মহাকাশ বস্তুতঃ ভিন্ন নয়, উপাধি বশে ভিন্নরূপে কল্পিত; সেইরূপ জীব ও শিব অভিন্ন, কিন্তু মায়োপাধি দ্বারা ভিন্নরূপে কল্পিত হন।

24. প্রকৃতপক্ষে শিব সাক্ষাৎ চিৎস্বরূপ, জীবও স্বয়ং স্বরূপতঃ সতত চিন্মাত্র। চিৎ চিদাকার হতে ভিন্ন এরূপ বলা যায় না কারণ চিৎ-এ ভেদ থাকলে চিৎ-এর বা চৈতন্য স্বরূপেরই হানি স্বীকার করতে হয়। অতএব চিৎ স্বরূপ শিব চিদাকার জীব হতে স্বরূপতঃ ভিন্ন নয়।
  
চিৎ-এ ভেদ না খাকুক, জড়ে জড়ে ত ভেদ আছে, এ কথাও বলা যায় না কারণ ভেদ জড়েই থাকবে, চিৎ-এ নয়। কারণ চিৎ জড় নয়,বস্তু।জড় অবস্তু। জড়ে জড়ে ভেদ থাকে থাকুক, কিন্তু চিৎ-এ চিৎ-এ ভেদ নেই। সব চিৎ-ই এক। সুতরাং এক চিৎ-ই প্রকাশ পায়। তর্ক ও প্রমাণ দ্বারা এইরূপে চিৎ-এর একত্ব ব্যবস্থাপন পূর্বক চিৎ-এর একত্ব সম্যক রূপে অনুভব করতে পারলে শোক মোহ আদি অপগত হয়।

25. চিৎ-এর একত্ব অনুভব করতে পারলে সাধক জগতের অধিষ্ঠান-স্বরূপ সত্যঞ্জানময় পরমানন্দ স্বরূপ অদ্বৈত শিবসুন্দরকে তবেই লাভ করতে পারেন।

26. অহমস্মি অর্থাৎ আমি সেই আত্মা এইরকম নিশ্চয় করে, মননশীল সাধক শোক হতে মুক্ত হন। নির্দোষ সাধকরা স্বদেহেই জ্যোতিঃস্বরূপ বিশ্বসাক্ষী পরমাত্মাকে দর্শন করে। মায়ামুগ্ধ অঞ্জ জনগণ দেখতে পায় না।

27. এইরূপে যে পরমযোগী আত্ম দর্শন বা আত্মঞ্জান লাভ করেন, সেই পূর্ণ স্বরূপের আত্মা গতাগতি বা লোকান্তর গমন অর্থাৎ জন্মগ্রহণ নিতে বিড়ম্বিত হতে বাধ্য হন না।

আকাশ যেমন স্বয়ংই সম্পূর্ণ, ঞ্জানীও তেমনি স্বয়ং সম্পূর্ণ। আকাশ যেমন গমন করেন না। ঞ্জানীও সেইরকম সর্বময়ত্ব লাভ করে কোথাও গমন করেন না। কারণ তিনি সর্বব্যাপক ব্রহ্ম হয়ে যান। যে মননশীল সাধক পরমব্রহ্মকে অবগত হন, তিনি স্বয়ংই সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মে আত্মস্থ হন।।" 


www.twitter.com/tapobhumi30

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com


শ্রীরুদ্রহৃদয়োপনিষৎ মন্ত্রের ব্যাখ্যা :---


1. অবনত মস্তকে ব্যাসদেবের চরণে প্রণাম পূর্বক শুকদেব জিঞ্জাসা করিলেন, দেব! কোন্‌ দেব সর্বদেবে বিরাজমান? কোন দেবের সেবা করলে সকল দেবতার প্রীতি জন্মে, দয়া করে আমাকে বলুন। 

2. শুকদেবের এই কথা শুনে পিতা ব্যাসদেব শুককে প্রত্যুত্তর দিতে আরম্ভ করলেন। বললেন, ভগবান রুদ্র সর্বদেবাত্মক এবং সকল দেবতাই শিবাত্মক। 

3. রুদ্রের দক্ষিণ পার্শ্বে  রবি, ব্রহ্মা ও গার্হপত্য, আহবনীয় এবং দক্ষিণাগ্নি নামক তিন রকমের অগ্নি অধিষ্ঠিত। রুদ্রের বাম পার্শ্বে দ্যোতনশীলা উমা, বিষ্ণু এবং সোম এই ত্রিমূর্তি সমাশ্রিত। যিনি উমা তিনি স্বয়ং বিষ্ণু। যিনি বিষ্ণু তিনিই চন্দ্রমা। 

4. যারা গোবিন্দকে নমস্কার করে, তারা শঙ্করকেই নমস্কার করে। যারা ভক্তি সহকারে হরিকে অর্চনা করে, তারা বৃষধ্বজ রুদ্রেরই অর্চনা করে। যারা বিরুপাক্ষ শিবের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা জনার্দনকেই বিদ্বেষ করে। যারা রুদ্রকে জানে না, তারা কেশবকেও জানে না। 

5. রুদ্র হতে বীজ প্রবর্তিত হয়। জনার্দন সে বীজের যোনি স্বরূপ। যিনি রুদ্র, তিনিই ব্রহ্মা, যিনি ব্রহ্মা তিনিই অগ্নি। 

6. রুদ্র ব্রহ্মা বিষ্ণুময়। জগৎ অগ্নিষোমাত্মক। পুংলিঙ্গ সমস্তই শিব, স্ত্রীলিঙ্গ সকলই উমা। স্থাবর জঙ্গমাত্মক জগৎ সমস্তই শিবশক্ত্যাত্মক। ব্যক্তরূপ সমস্তই উমা, আর অব্যক্ত রূপ মাত্রই পরমেশ্বর রুদ্র। উমা এবং শঙ্করের যে যোগ, সেই যোগই বিষ্ণু নামে কথিত হয়। 

7. যে ব্যক্তি ভক্তি সহকারে রুদ্রকে নমস্কার করে সে আত্মা, অন্তরাত্মা এবং পরমাত্মাকে অবগত হয়ে পরমাত্মারই আশ্রয় গ্রহণ করে। 

8. ব্রহ্মা অন্তরাত্মা, মহেশ্বর পরমাত্মা এবং বিষ্ণুই সর্বভূতের সনাতন আত্মা। 

9. বিটপশালী ভূমিশাখ উর্ধ্বমূল সংসার-বৃক্ষের অগ্র, মধ্য ও মূল বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও রূদ্র। 

10. বিষ্ণু কার্য, ব্রহ্মা ক্রিয়া এবং মহেশ্বর কারণ। প্রয়োজনানুসারে রুদ্র এই ত্রিমূর্তি ধারণ করেছেন। রুদ্র ধর্মস্বরূপ, বিষ্ণু জগদাত্মক, পিতামহ ব্রহ্মা সর্বঞ্জানাত্মক। 

11. ত্রিমূর্তিস্বরূপ ভগবানকে যে 'শ্রীরুদ্র', 'রুদ্ররুদ্র' নামে অভিহিত করে সে ব্যক্তি বিচক্ষণ। যে ব্যক্তি 'রুদ্র' নাম কীর্তন করে, সে  সকল পাপ হতে মুক্ত হয়। 

12. রুদ্র নররূপী, উমা নারীরূপা, সেই রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র ব্রহ্মা স্বরূপ এবং উমা বাণীস্বরূপা, সেই ব্রহ্মা ও বাণীরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বিষ্ণু স্বরূপ ও উমা লক্ষ্মীরূপা, সেই বিষ্ণু ও লক্ষ্মীরূপা রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র সূর্যস্বরূপ, উমা ছায়ারূপা, সূর্য ও ছায়ারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র দিবাস্বরূপ, উমা রত্রিরূপা, সেই দিন ও রাত্রিরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র যঞ্জরূপী, উমা বেদিস্বরূপা; সেই যঞ্জ ও বেদিরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বহ্নিস্বরূপ, উমা স্বাহারূপা, সেই অগ্নি ও স্বাহারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বেদরূপী, উমা বিদ্যারূপা; সেই বেদ ও বিদ্যারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বৃক্ষস্বরূপ, উমা লতারূপিনী, সেই বৃক্ষ ও বল্লীরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র গন্ধস্বরূপ, উমা পুষ্পরূপা, গন্ধ ও পুষ্পরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র অর্থস্বরূপ, উমা অক্ষররূপা, সেই অর্থ ও অক্ষররূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র লিঙ্গরূপী, উমা গৌরী পীঠরূপা, সেই লিঙ্গ ও পীঠরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 

13. সর্বদেবাত্মক রুদ্রের স্বতন্ত্র রূপকে পৃথক পৃথক মন্ত্রে নমস্কার করবে। যে যে স্থানে রুদ্র ও উমা অর্থাৎ শিবশক্তি --- লিঙ্গমূর্তিসহ গৌরীপীঠের অর্চনা করবে, সেই সেই স্থানে এই মন্ত্র প্রযুক্ত হবে। বিশেষতঃ ব্রহ্মহত্যায় লিপ্ত ব্যক্তিও যদি জলের মধ্যে অবস্থান করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে, সে সর্বপাপ হতে মুক্তি লাভ করবে। 

14. সকলের অধিষ্ঠানভূত দ্বন্দ্বতীত সনাতন নিত্যঞ্জান --- সুখস্বরূপ বাক্যমনের অগোচর পরব্রহ্ম সেই রুদ্রই। ব্রহ্মস্বরূপ রূদ্রকে জানলে এ সংসারের সমস্তই পরিঞ্জাত হয়। কারণ, সেই রুদ্রই বিশ্বাত্মক, রুদ্র ভিন্ন এ সংসারে অপর কিছুই নেই। 

15. এ সংসারে বেদিতব্য বিদ্যা দুটি --- পরাবিদ্যা ও অপরা বিদ্যা। যে বিদ্যা দ্বারা অক্ষয় স্বরূপ পরমাত্মা প্রকাশিত হন, সেই ব্রহ্মবিদ্যা বা আত্মবিদ্যাই পরাবিদ্যা। ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ, সামবেদ, অর্থববেদ, শিক্ষাকল্প ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ এবং অনাত্ম বিষয়ক অপরাপর সমস্ত ঞ্জানই অপরা বিদ্যা। 

To be continued ......

Wednesday, November 18, 2015

"হংসবতী ঋক" ---


হংস বিদ্যা হল প্রকৃত পরমাত্মা বিদ্যা। 'হংস' মন্ত্রের মূল অনুসন্ধান করতে হলে বৈদিক যুগের ঋষিদের সাধন রহস্যের সন্ধান করতে হয়।



ওঁ হংসঃ শুচিষৎ বসুঃ অন্তরিক্ষসৎ হোতা বেদিষৎ অতিথিঃ দুরোৎসৎ।
নৃষৎ বরসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ অব্‌জা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতম্‌।। ওঁ

1. হংসঃ = পরমাত্মা 
2. শুচিষৎ = শুদ্ধ-সত্ত্ব-স্বরূপ 
3. বসু = সর্বত্র সমভাবে বিদ্যমান 
4. অন্তরিক্ষসৎ = সাক্ষীরূপে জীবমাত্রের অন্তরে অবস্থিত  
5. হোতা = যজমান স্বরূপ 
6. বেদিষৎ = কেবলমাত্র ঞ্জানগম্য 
7. অতিথিঃ = স্বপ্রকাশ স্বরূপ 
8. দুরোৎসৎ = পূর্ণ ব্রহ্ম হয়েও জীবরূপে এবং ব্রহ্মাণ্ড রূপে প্রতীত অর্থাৎ বিশ্বাতীত হয়েও বিশ্বরূপ 
9. নৃষৎ = চিতিশক্তি রূপে জীবমাত্রেই অবস্থিত 
10. বরসৎ = সকলের বরণীয় বা পূজ্য 
11. ঋতসৎ = অভেদে ঋতম্‌ এ অবস্থিত 
12. ব্যোমসৎ = বিশ্বকাশব্যাপী 
13. অব্‌জা, 14. গোজা = জলজ ও স্থলজ প্রভৃতি সর্বপ্রাণীরূপে বিরাজিত 
15. ঋতজা = সর্বত্র সত্য রূপে পরিদৃশ্যমান 
16. অদ্রিজা = আদিত্য রূপে বিরাজিত 
17. ঋতম্‌ =  সর্বাধিষ্ঠান সত্য ব্রহ্মতত্ত্ব স্বরূপ

এইভাবে মুখ্যতঃ ও গৌণতঃ হংসবতী ঋক মন্ত্রের সকল পদেরই ভাবার্থ দাঁড়ায় নিরপেক্ষ চরমতত্ত্ব সচ্চিদানন্দ স্বরূপ ব্রহ্ম। মহা চিন্ময় হংস মন্ত্রের মূলবীজ রয়েছে হংসবতী ঋকে। হংস শব্দ পরমাত্মা অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।


একো হংসো ভুবনস্যাস্য মধ্যে, স এবাগ্নি সলিলে সন্নিবিষ্টঃ।
তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায়।।

অর্থাৎ এই পৃথিবীর মধ্যে এক পরমাত্মাই আছেন, আর কিছু নেই। তিনি প্রত্যেকের দেহে জীব চৈতন্যরূপে স্থিত আছেন। জল ও অগ্নির একত্র স্থিতি যেমন স্বভাব বিরুদ্ধ হয়েও বাড়বানল প্রভৃতিতে দৃষ্ট হয়, তেমনি পরমাত্মারও এই মায়াময় জগতে একত্র অবস্থিতি স্বভাব বিরুদ্ধ হলেও প্রত্যক্ষ দৃষ্ট হয়। পরমাত্মা তত্ত্বতঃ জীবজগৎ হতে নিরপেক্ষ হলেও জীবজগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই পরমাত্মাকে স্ব স্বরূপ বলে জানতে পারলে তবেই জীব মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারে। মুক্তির অপর কোন উপায় নেই।

বৈদিক ঋষিগণ প্রায় প্রত্যেকেই প্রাতঃকালে নবোদিত সূর্যকে অর্থাৎ ভর্গদেবতাকে হংসবতী ঋক মন্ত্র পাঠ করতে করতে দর্শন করতেন।

মহর্ষি শৌনক প্রণীত ঋগ্‌ বিধান গ্রন্থে তিনি বিধান দিয়েছেন --- শুচি হয়ে হংসবতী  ঋক মন্ত্র পাঠ করে সূর্য দর্শন করবে। মৃত্যুকালে এই ঋক মন্ত্র জপ করলে শাশ্বত ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি হয়। শুধু তাই নয়, মহর্ষি শৌনক আরও বিধান দিয়েছেন --- যে ব্যক্তি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত সেই ব্যক্তি যদি বিষ্ণু মন্দিরে এই মন্ত্র জপ করলে এবং এই মন্ত্রে অর্ঘ্য প্রদান করলে কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তিলাভ করে এবং সুবর্ণকান্তি লাভ করে।

হংসবতী ঋক মন্ত্র হংসযোগ সাধনার প্রাণ হলেও হংস মন্ত্রের চৈতন্য ঘটে রূদ্র-হৃদয়োপনিষদের মন্ত্রতে।


www.twitter.com/tapobhumi30

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Wednesday, November 11, 2015

"অজপা গায়ত্রী দীক্ষা বা হংস- মন্ত্রের সাধনা" ---


গুরু গোরক্ষনাথ এই গুহ্যসাধন পদ্ধতির সঙ্কেত বলতে গিয়ে বলেছেন ------


"'হং' কারেণ বর্হিযাতি 'স' কারেণ বিশেৎ পুনঃ।

হংস- হংসেতি অমুং মন্ত্রং জীবো জপতি সর্বদা।।
ষট্‌শতানি দিবারাত্রৌ সহস্রাণ্যেক বিংশতিঃ।
এতৎ সংখ্যান্বিতং মন্ত্রং জীবো জপতি সর্বদা।।
অজপা নাম গায়ত্রী যোগিনাং মোক্ষদায়িনী।
তস্যাঃ স্মরণমাত্রেণ সর্বপাপৈঃ প্রমুচ্যতে।।"

নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময়ে 'হং' শব্দের সঙ্গে বায়ু বাইরে আসে এবং 'স' শব্দের সঙ্গে পুনরায় প্রবেশ করে। জীব স্বভাবতঃ সর্বদাই হংস মন্ত্র জপ করছে। দিবা-রাত্রিতে 21600 বার প্রত্যেকেই এই মন্ত্র জপ করে। (প্রতি মিনিটে 15 বার শ্বাস-প্রশ্বাস হয় এই হিসাবে 24 X 60 X 15 = 21600 বার) প্রত্যেক শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যে হংস জপ চলছে, তা যদি মনোযোগের সঙ্গে শ্বাস প্রশ্বাসের গতি লক্ষ্য করে অনুভব করতে অভ্যাস করা যায়, তবে অজপা নামক গায়ত্রীর সাধন হয়। ঠোঁট, জিহ্বা বা মনের সাহায্যে বিশেষ কোন বীজমন্ত্রকে বারবার উচ্চারণ করে এই জপ করা হচ্ছে না, তাই এর নাম অজপা। 


অজপা গায়ত্রী যোগীগণের মোক্ষদায়িনী। সিদ্ধ মহাপুরুষ ছাড়া আর কারও পক্ষে এই কৌশল ধরবার এবং সেই পথে চালনা করবার ক্ষমতা নেই। 

শ্বাস-প্রশ্বাস অহরহ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে হংস মন্ত্রের তাৎপর্য 'অহংস' --- সোহহং অর্থাৎ আমি স্বরূপতঃ ব্রহ্ম। শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগের মধ্যবর্তী ক্ষণে স্বভাবতঃ আমরা ব্রহ্মত্ব প্রাপ্ত হই। হংস অর্থাৎ পরমাত্মা শিব চৈতন্যই প্রত্যেকের পাঞ্চভৌতিক দেহে অবস্থান করে। জীব চৈতন্য হংস নামে কথিত হয়। 'হন্তি গচ্ছিন্তি কৃৎস্ন - শরীরং ব্যাপ্য বর্ততে ইতি হংসঃ প্রাণঃ জীবচৈতন্যম্‌' অর্থাৎ সমস্ত শরীর ব্যেপে বর্তমান থাকেন এবং এক শরীর হতে অন্য শরীরে সংসরণ করে এই ব্যুৎপত্তিগত অর্থেও জীব চৈতন্য হংস নামে সংঞ্জিত হয়।

বুদ্ধিপূর্বক শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুসরণ করে এই ভাবটি স্মরণ করতে করতে স্থায়ী করবার চেষ্টাই এই সাধনার উদ্দেশ্য। অন্তর্দর্শী গুরুর নিকট বসে শ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের মধ্যবর্তী ক্ষণটি ধরার কৌশল জেনে নিতে হয়। হংস যোগের সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে হলে  "হংসবতী ঋক" এবং "শ্রীরূদ্রহৃদয়োপনিষৎ" এর মন্ত্রগুলিকে নিত্যপাঠ করতে হয়, মন্ত্রের মর্মার্থ ও প্রতিদিন মনন করতে হয়।


হংসবতী ঋকের হংস পদই ক্রমশঃ জপ্য মন্ত্রে পরিণত হয়। যোগশাস্ত্রে এবং শৈবাগমতন্ত্রে হংস মন্ত্রকেই অজপা বলা হয়। হংসবতী ঋক মন্ত্রে 'হংস' পদ এবং আথর্বণী শ্রুতি এবং শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের 'হংস' পদ হল বৈদিক মূল। শৈবাগমের অন্তর্গত সারদা তিলক তন্ত্রে হংস মন্ত্রের ইষ্ট দেবতাকে অর্ধনারীশ্বর রূপে কল্পনা করা হয়েছে।



www.twitter.com/tapobhumi30


www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com   (Hindi)


www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Friday, October 23, 2015


"তপোভূমি নর্মদার" পক্ষ থেকে সমস্ত পাঠককে জানাই 'শুভ বিজয়ার' শুভেচ্ছা।

Monday, October 12, 2015


"ওঁ ললিত সিত দুকূলা মঞ্জুমূলাং মাহেশীং,

করকলিত কুটাব্জামিশ্ব মিষ্টাং সুকেশীং।
মণি খচিত বিভূষাং ভালবালেন্দু ভূষাং ---
শিরসি ধৃত কিরীটাং নর্মদাং চিন্তয়ামি।"

Monday, September 28, 2015

"আদি শূলপাণিশ্বর" ---


আদি শূলপাণিশ্বরের মহিমা অনন্ত। তাঁকে মহাজাগ্রত জ্যোতির্লিঙ্গের আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এই জ্যোতির্লিঙ্গের লক্ষণগুলি হল --- 


১) স্নানার্থ লিঙ্গ মস্তকে জল দিলেই লিঙ্গ মধ্যে বিস্ফুলিঙ্গ স্পন্দিত হতে দেখা যায়।  ২) লিঙ্গের অঙ্গে তৈল বিন্দু নিক্ষেপ করলে তা স্থির থাকেন, কদাপি নিসর্পিত হয় না অর্থাৎ গড়িয়ে পড়ে না।  


শূলপাণি ক্ষেত্র ভগবান সূর্যনারায়ণের তপস্যাক্ষেত্র বলে, আদি শূলপাণিশ্বরকে কেউ কেউ হিরণ্যপাণি বলে থাকেন। শিবলিঙ্গটি সুবর্ণ জ্যোতিতে ভাস্বর বলে সুবর্ণলিঙ্গ নামে জগৎ প্রসিদ্ধ হয়েছে। পরিক্রমাকারী সাধু বিশেষতঃ দণ্ডী সন্ন্যাসীদেরকে স্বহস্তে পূজা করতে দেওয়া হত। শূলপাণিশ্বর মহাদেবের মর্যাদা ওঁকারেশ্বরের সমতুল্য। জ্যোতির্লিঙ্গ বিশ্বনাথের কাশীক্ষেত্র যেমন পঞ্চক্রোশ বিশিষ্ট, তেমনি শূলপাণি মহাদেবের ক্ষেত্রও পঞ্চক্রোশ বিশিষ্ট। উজ্জ্বয়িনীর মহাকালেশ্বর জ্যোর্তিলিঙ্গের যেমন ভস্মারতি হয় তেমনি শূলপাণিশ্বর মহাদেবেরও ভস্মারতি হত, যা কেবল পরিক্রমাবাসী এবং সন্ন্যাসীদের দর্শনের অধিকার ছিল। 


নর্মদাতে বাঁধ দেওয়ার ফলে হিরণ্যগর্ভ শূলপাণিশ্বর মহাদেব আজ নর্মদা গর্ভে নিমজ্জিত হয়েছেন। তাই শূলপাণি ক্ষেত্রে শূলপাণিশ্বরের অনুরূপ বলে আর এক শূলপাণিশ্বরের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 



www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191


www.twitter.com/tapobhumi30


www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com  (Hindi)



Monday, September 7, 2015

"ভস্মারতি" ---


"......... মন্দিরে যখন পৌঁছালাম, তখন প্রাত্যহিক সন্ধ্যারতি শুরু হয়ে গেছে। নাঙ্গা মহাত্মার সঙ্গে সকলেই হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। আরতির শেষে নাঙ্গা বাবাকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় এলাম। এসেই রঞ্জন এবং বাসবানন্দজী হৈ হৈ করে বলে উঠলেন --- আমরা ত সব এক সঙ্গেই আছি, আপনাদের পঞ্চক্রোশী পরিক্রমার বিবরণ যে কোন সময় শুনে নিতে পারব, আপনারা নিরাপদে ফিরে এসেছেন এতেই আপাততঃ নিশ্চিন্ত হয়েছি। বাব্‌বা! সারাদিন আমাদের কি দুশ্চিন্তাতেই না কেটেছে! স্বয়ং পুরোহিতজীও ঐ দুর্গম জঙ্গলের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করছিলেন। যাই হোক, এ দিকে একটা মজার সংবাদ শুনুন ---

আজ রাত্রি সাড়ে ৩টের সময় শূলপাণিশ্বরের ভস্মারতি হবে। আপনারা পরিক্রমা করে একেবারে সন্ধ্যার মুখে ফিরে এলেন, তাই পুরোহিতজী আমাদেরকে জানাবার সুযোগ পাননি। এ জিনিষ নাকি শিবময় ভারতবর্ষের আর কোন মন্দিরে হয় না। এখানে একজন অঘোরী শিবসাধক থাকেন। তিনি প্রতি সোমবার শেষ রাত্রে ভস্ম নিয়ে পৌছান। কোন সন্ন্যাসীর দেহান্ত হলে অগ্নিতে তাঁর মৃতদেহ সৎকারকালে সর্বাঙ্গ ভস্মীভূত হয়ে গেলে, তাঁর ব্রহ্মতালু যখন ফেটে যায়, সেই ভস্মীভূত ব্রহ্ম তালু সংগ্রহ করে। সেই ভস্ম দিয়ে শূলপাণীশ্বরের আরতি হয়। ঐ আরতি দর্শনের অধিকার কোন স্ত্রীলোক বা গৃহীর নেই। শুধু পরিক্রমাবাসী এবং সন্ন্যাসীদের তা দর্শনের অধিকার আছে।

আমি বললাম --- শুধু এই মন্দিরেই ভস্মারতি হয়, ভারতের আর কোন মন্দিরে হয় না, একথা  মানতে পারলাম না। উজ্জয়িনীর মহাকাল মন্দিরে সপ্তাহে শুধু একদিন মাত্র নয়, প্রতিদিনই সেখানে রাত্রি ৩ টের সময় ভস্মারতি শুরু হয়। মহাকাল মন্দিরে একজন অঘোরপন্থী সাধক আছেন তিনি সারা সপ্তাহ ধরে ভস্মারতির ভস্ম সংগ্রহ করে থাকেন, এক বিশেষ নিয়মে। সেই আরতি দর্শনকালে মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নেই। তবে পুরুষ গৃহীরা তা দর্শন করতে পারে। অবগাহন স্নান কিংবা সেখান কার কোটিতীর্থের জল মাথায় ছিটিয়ে আরতি দেখার নিয়ম। কোটিতীর্থের মধ্যে ৫০ ফুট বা ১০০ ফূট দীর্ঘ এক সুবিশাল ত্রিশূল প্রোথিত আছে।

তোমার কথা সম্পূর্ণ সত্য। তবে এই মন্দিরে আরতিকালে মহর্ষি জৈগীষব্য কৃত একটি স্তোত্র এবং সামবেদের একটি মন্ত্র পাঠ হয় বিশুদ্ধ সুর ও স্বর সংযোগে সে জিনিষ মহাকালেশ্বর মন্দিরেও হয় না। এখানকার পুরোহিত মশাইকে জিঞ্জাসা করলেই জানতে পারবেন, ভস্মারতির জন্য প্রতি সোমবার তাঁকে সারাদিন রাত নিরম্বু উপবাসে থাকতে হয়। মহাকাল মন্দিরের পুরোহিতরা সন্ধ্যা থেকে উপবাসী থাকলেও দিনের বেলা নিরম্বু উপবাসে থাকেন না।"



www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.twitter.com/tapobhumi30

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com (Hindi)

Wednesday, September 2, 2015


বিশ্বেশ্বর বিশ্বপাবন ভব, ভব-ভয়-ভঞ্জন,
মৃত্যুঞ্জয় মদন-দমন মরণ-জনম-নিবারণ।
চরণ-সরোজ নবারুণ ছটা, তাহে বিল্বদল চন্দনের ছিটা,
শার্দুল ছালে কটিতট আঁটা যোগীজন-মনোমোহন।।
গলে হাড়মালা দল দল দোলে, বব বব বম্‌ বাজে ঘন গালে 
বাজায়ে ডমরু নাচে তালে তালে, নাচে সাথে ভূত অগণন।।
পন্নগভূষা পিণাকপাণি ঝলমল ভালে জ্বলে নিশামণি,  
কুলুকুলু শিরে বহে মন্দাকিনী, ঢুলুঢুলু প্রেমে দুনয়ন।।  
সৃষ্টিলয়কারী জগৎ পিতা, ঞ্জানময় প্রেম ভক্তিদাতা, 
এ দীন সন্তানে ভুলে আছ কোথা, নিজ গুণে দাও দরশন।।
বিশ্বেশ্বর বিশ্বপাবন ভব ভব-ভয়-ভঞ্জন।।






Tuesday, August 18, 2015

"পিষাণহারী" ---


পিষাণহারী কোন দেবীর বিগ্রহ নয়, ইনি শিবই। তবে এই শিবের উৎপত্তি রহস্য বড়ই বিচিত্র। প্রায় দেড়শ বছর আগে এই কলিযুগে নর্মদাতটে এক অদ্ভূত দৈবলীলা প্রকট হয়েছিল তারই জাজ্জ্বল্যমান দৃষ্টান্ত এই পিষাণহারী। 


পিষাণহারী অতি সাধারণ একজন চাষীর বৌ। তার স্বামীর নাম ছিল রামদীন। সে অত্যন্ত অলস এবং নিষ্কর্মা প্রকৃতির লোক ছিল। সে 'ক্ষেতি-উতির' কাজ করত বটে কিন্তু সেদিকে তার মন ছিল না। 'ক্ষেতির' কাজ ছেড়ে দিয়ে 'ক্ষেতির' ধারে বসেই নাম জপ করত। বাড়ীর কোন কাজ করত না। সারাদিন এমনকি রাত্রেও সে নাম-কীর্তনে মেতে থাকত। অগত্যা এই অকর্মণ্য, সংসার-উদাসীন স্বামী এবং নাবালক তিনটি ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব পড়েছিল পিষাণহারীর উপর। 


সাধ্বী পিষাণহারী প্রতিবেশীদের গম, বাজরা চাকীতে পিষে দিয়ে বিনিময়ে যা পেতেন, তাই দিয়ে স্বামী ও পুত্রদের মুখে অন্ন জোগাতেন। নিজের চাকীটি মাথায় নিয়ে পিষাণহারী প্রতিবেশীদের বাড়ীতে হাজির হতেন, গম, বাজরা পিষতেন আর অহরহ নর্মদামায়ী ও মহাদেবের নাম জপ করতেন। কিন্তু এইটুকু সুখও তাঁর ভাগ্যে সইল না। 


হঠাৎ একদিন ভাবাবস্থায় হাঁটতে হাঁটতে রামদীন পাহাড়ের একটা টিলা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যান। বসন্তরোগ হয়ে দুটো ছেলে অকালে প্রাণত্যাগ করল, ছোট ছেলেটিকে একরাত্রে কুটিরের দাওয়া থেকে বাঘে টেনে নিয়ে গেল। শোকে দুঃখে হতভাগিনী পাগলের মত হয়ে গেলেন। ঘর থেকে আর বাইরে যেতেন না। চাকীটিকে বুকে নিয়েই কখনও আদর করতেন, কখনও বা কেঁদে কেঁদে বলতেন --- ভগবান! একে একে সবাইকেই ত তুলে নিয়েছ, এতকাল আমি যাদের জন্য পরিশ্রম করে এসেছি, তারা ত এখন আর নেই। আমি ত মন্ত্রতন্ত্র জানি না, এতকাল চাকী পিষে যাদের পূজা সেবা করতাম, তারা সবাই আমাকে ছেড়ে গেছে। এখন আর কার সেবা করব? 


হে শিউজী, এখন তোমার আমার মাঝখানে এসে আর কেউ আড়াল করে দাঁড়াবে না। এই বলে চাকীটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে শিউজী শিউজী বলে হাউ হাউ করে কাঁদতেন। চাকীটিই যেন তাঁর শিউজী! এইভাবে অর্ধোন্মাদ অবস্থাতেই একদিন, চাকীটিকে বুকে জড়িয়েই পিষাণহারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। 


প্রতিবেশীরা নর্মদার চড়ায় চাকী সহ পিষাণহারীকে সমাধিস্থ করে এল। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল সেই চাকীটি একটি শিবলিঙ্গে পরিণত হয়ে গেছে এবং নর্মদা পিষাণহারীর সেই সমাধিস্থল এবং শিবলিঙ্গকে মাঝখানে রেখে দুইদিকে দুইটি ধারায় বয়ে চলেছে। হতচকিত এবং বিস্মিত নর্মদার উভয়তটের অধিবাসীরা পিষাণহারীর সমাধিস্থলের সেইস্থানে 1832 সালে মহাদেবের একটি মন্দির নির্মাণ করে তার নাম দিয়েছে --- পিষাণহারী। 


সেই থেকে পিষাণহারীর মন্দির তীর্থের মর্যাদা পেয়ে আসছে। নর্মদার প্রবল বন্যায় কতবার কত কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে কিন্তু পিষাণহারীর মন্দিরের কিছু ক্ষতি হয়নি। পিষাণহারীর চাকীর বিবর্তিত রূপ হল শিবলিঙ্গ। সেই শিবলিঙ্গ অর্থাৎ ভক্তবৎসল মহাদেব ভক্তদের অভীষ্ট পূরণ করে চলেছেন।





www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com


www.twitter.com/tapobhumi30



Monday, July 27, 2015

"নেমাবর এবং হণ্ডিয়া"


নেমাবর তীর্থ এবং হণ্ডিয়া, এই দুই স্থানকে নর্মদার নাভিস্থল বলা হয়। এই দুই স্থানই অমরকণ্টক হতে রেবাসংগম পর্যন্ত দূরত্বের মাঝামাঝি স্থানে অর্থাৎ কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। নেমাবর তীর্থ এবং হণ্ডিয়া এই দুই স্থানই কুবেরের শিবতপস্যার সিদ্ধক্ষেত্র।

নেমাবর তীর্থ --- নেমাবর নর্মদার উত্তরতটে অবস্থিত। এখানকার বাতাবরণ বড়ই পবিত্র। এই স্থান প্রাচীনকালে হতেই তপস্যার অনুকূল। এখানকার পূজিত শিবলিঙ্গ --- সিদ্ধনাথ, প্রায় দুই ফুট উঁচু। শিবলিঙ্গের সামনের দিকটা কালো এবং যোনিপীঠের দিকটা সাদা। জ্যামিতিক মাপে সাদা ও কালো অংশ প্রায় সমান সমান। শিবলিঙ্গের গাত্রে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ চিহ্ন, দক্ষিণাবর্ত গতিতে পরিস্ফুট চক্র চিহ্ন এবং কৌমদকী অর্থাৎ গদার চিহ্ন ও পদ্মচিহ্ন থাকায় --- সিদ্ধনাথ হল বৈষ্ণবলিঙ্গ।

হণ্ডিয়া --- হণ্ডিয়া নর্মদার দক্ষিণতটে অবস্থিত। মন্দিরের চূড়ায় পিতলের দ্বাদশ কলস রয়েছে। এখানকার পূজিত শিবলিঙ্গ --- ঋদ্ধনাথ প্রায় দুই ফুট উঁচু। শিবলিঙ্গের সামনের দিকটা কালো এবং যোনিপীঠের দিকটা সাদা। জ্যামিতিক মাপে সাদা ও কালো অংশ প্রায় সমান সমান। শিবলিঙ্গের গাত্রে দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ চিহ্ন, দক্ষিণাবর্ত গতিতে পরিস্ফুট চক্র চিহ্ন এবং কৌমদকী অর্থাৎ গদার চিহ্ন ও পদ্মচিহ্ন থাকায় -- ঋদ্ধনাথ হল বৈষ্ণবলিঙ্গ।

"বৈষ্ণবং শঙ্খচক্রাঙ্কগদাব্জাদিবিভূষিতম্‌।
শ্রীবৎসকৌস্তুভাঙ্কঞ্চ সর্বসিংহাসনাঙ্কিতম্‌।।
বৈনতেয়সমাঙ্কং বা তথা বিষ্ণুপদাঙ্কিতম্‌।
বৈষ্ণবং নাম তৎপ্রোক্তং সর্বৈশ্বর্যফলপ্রদম।।" 

সিদ্ধনাথ ও ঋদ্ধনাথ  শিবলিঙ্গে  শ্রীবৎস, কৌস্তভ, গরুড় ও বিষ্ণু পদচিহ্ন না থাকলেও শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম প্রভৃতি বিষ্ণু চিহ্ন থাকায়, ইনি বৈষ্ণবলিঙ্গ। এই শিবলিঙ্গ সর্বৈশ্বর্য প্রদান করেন।

****** পুরাণ এবং রামায়ণে আছে --- কুবের যক্ষদের রাজা, তিনি ধনপতি। পুলস্ত্য ঋষির পুত্র বিশ্রবামুনি কুবেরের পিতা। বিশ্রবার পুত্র বলে এঁর আর এক নাম বৈশ্রবণ। উগ্র তপস্যার বলে কুবের ব্রহ্মার বরে অমরত্ব, উত্তর দিগন্তের দিকপালত্ব এবং ধনাধ্যক্ষতা লাভ করেন। ব্রহ্মা তাঁকে পুষ্পক রথ দান করেছিলেন। এই দিব্য রথের বৈশিষ্ট্য --- স্মরণ মাত্রই এই রথ তাঁর কাছে উপস্থিত হত এবং যথা সংকল্পিত স্থানে পৌঁছে দিত। বিশ্রবামুনি তাঁর এই পুত্রের জন্য লঙ্কাপুরী বাসস্থান হিসাবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্রবার অপর পুত্র কুবেরের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা বিশ্বত্রাস, রাক্ষসরাজ রাবণ কুবেরের কাছ হতে স্বর্ণলঙ্কা এবং পুষ্পক রথ অধিকার করে নেন। তখন বিশ্রবামুনি অলকাপুরীকে কুবেরের বাসস্থান নির্দিষ্ট করে দেন।

রাবণ কুবেরের কাছ হতে স্বর্ণলঙ্কা এবং পুষ্পক রথ কেড়ে নিলে মনের দুঃখে কুবের নর্মদার উত্তরতটস্থ নেমাবরে সিদ্ধনাথের স্থানে ষড়ক্ষরী শিববীজ জপ করতে থাকেন। মহাদেব প্রসন্ন হয়ে কুবেরকে নবনিধি অর্থাৎ দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ, মহাপদ্ম, মকর কচ্ছপ, নীল, কুন্দ, মুকুন্দ, খর্ব প্রভৃতি মহামূল্য মণিমাণিক্যের সঙ্গে পুষ্পক রথ এবং অলকাপুরী দান করেন। রাবণ পুনরায় তা কেড়ে নিলে মহাদেবের প্রত্যাদেশে কুবের নর্মদার দক্ষিণতটে হণ্ডিয়াতে ঋদ্ধনাথের স্থানে বসে তপস্যা করেন এবং পুনরায় সেই নবনিধি এবং অলকাপুরী ফিরে পান।

মহাকবি কালিদাসের অমর গীতিকাব্য "মেঘদূতম্‌" এ বর্ণিত এই অলকাপুরী লোকমানসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। একবার হিমালয়ে কুবের দেবী রুদ্রানীকে দৈবাৎ দেখতে পান, ফলে তাঁর দক্ষিণ চক্ষু দগ্ধ এবং বাম চক্ষু বিগলিত হয়ে পিঙ্গল বর্ণ ধারণ করে। সেইজন্য কুবেরের নাম হয় এক পিঙ্গল। এঁর তিনটি পা এবং আটটি দাঁত থাকায় দেহের গঠন এইরকম কুৎসিৎ বলেই এর নাম কুবের। 

পৌরাণিক কাহিনী বাদ দিলে বৈদিক মতে কুবের শব্দের অর্থ --- পরমেশ্বর। কুবি আচ্ছাদনে এই ধাতু হতে কুবের শব্দ নিষ্পন্ন হয়। 'যঃ সর্বং কুবতি স্বব্যাপ্ত্যাচ্ছদয়তি স কুবেরো জগদীশ্বরঃ।' অর্থাৎ যিনি স্বীয় ব্যাপ্তির দ্বারা সকলকে আচ্ছাদন করেন সেই পরমেশ্বরের নাম কুবের।

https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

Friday, July 10, 2015

"পিতামাতাই প্রকৃত সদ্‌গুরু" ------


"মন্ত্রদাতা ঞ্জানদাতা, তাঁরে বলি গুরু,

সদ্‌গুরু সেই যাঁহা হতে, ব্রহ্মদর্শন শুরু।
স্থিতি ভেদে সংঞ্জা ভেদে, সুকৃতিতে মেলে
মহাগুরু মাতাপিতার, জন্ম হতেই কোলে।।"

বেদ উপনিষদ থেকে আরম্ভ করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঋষি মুনি মহাযোগীদের মতে ---


"ওঁ " --- ব্রহ্মমন্ত্র, মন্ত্ররাজ। ব্রহ্মসাধনের একাধারে সাধ্য ও সাধনতত্ত্ব "ওঁ " --- ওমিতি ব্রবীমি তৎ। অ উ ম এর সমবায়ে "ওঁ"। "অ" = ব্রহ্মা অর্থাৎ সৃষ্টিতত্ত্ব, "উ" = বিষ্ণু অর্থাৎ স্থিতিতত্ত্ব বা পালনী শক্তি এবং "ম" = মহেশ্বর অর্থাৎ লয় বা পর্যাবসানের প্রতীক। "ঁ " (পরপ্রণব) সূচিত করে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরেরও অতীত পরমতত্ত্ব মহাউদগীথ, পরম জ্যোতি, আনন্দ, রস ও অমৃতস্বরূপ পরমব্রহ্ম।


"ঐং" --- এই মন্ত্র পূর্ণ ব্রহ্মবিদ্যা স্বরূপা বাগেশ্বরী বা সরস্বতীর বীজ। সরস্বত্যর্থ "ঐঁ" শব্দোবিন্দু দুঃখহরার্থকঃ। "ঐ" = সরস্বতী,  "ঁ" = দুঃখহরণ। সরস্বতী শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় --- স,  রসবতী, স + রস + বতুপ, স্ত্রীলিঙ্গে ঈপ্‌ অর্থাৎ স, রসবতী রসস্বরূপ পরমব্রহ্ম। ব্রহ্মবিদ্‌বরিষ্ঠ ঋষিগণ মন্ত্রোদ্ধার করে আদি গুরুর বীজ হিসাবে ঐং কে প্রত্যক্ষ করেছেন। গুরু ঞ্জানদাতা, মুক্তিদাতা, স্বয়মেব ব্রহ্ম। "ঐং" পিতার বীজমন্ত্র হিসাবে নির্দিষ্ট হওয়ায় অর্থ দাঁড়াল --- ঞ্জানদাতা, মুক্তিদাতা, পরমব্রহ্মের  সচল বিগ্রহ  পিতৃদেব আমাদের সর্ববিধ দুঃখ হতে পরিত্রাণ করেন।


"হ্রীঁ " --- ব্রহ্মস্বরূপিণী "হ্রীঁ" বীজ একাধারে মায়া ও ভুবনেশ্বরী  বীজ। স্নেহময়ী মায়ের মধ্যে যাঁর পূর্ণ  প্রকাশ। "হ" = শিব। "র্‌" = প্রকৃতি। "ঈ" = মহামায়া, জগজ্জননী।  "ঁ " = দুঃখহরণ। অর্থাৎ মহাদেবের মহাকল্যাণময়ী শক্তি মহানাদময়ী  জগজ্জননীর ছায়া মা আমাদের দুঃখ হরণ করেন।


মাতাপিতার বীজমন্ত্র  "ওঁ  ঐঁ  হ্রীঁ " এই মহাবীজের মধ্যে শিবশক্তির সামরস্য ঘটছে।


"পরমদুর্লভং বীজং ভজতাং কামদো মণিঃ।" ----- এই বীজ পরম  দুর্লভ  বস্তু, কামদমণির  কাছে  যদৃচ্ছা  প্রার্থনা করলে যেমন সর্বাভীষ্ট সিদ্ধ হয়, সেইজন্য কামদমণি ঞ্জানে এই বীজের ভজনা করা উচিত।।


Saturday, June 27, 2015


"মহেশ মঙ্গলময় জ্যোতির আধার
ধুন্‌ নাদ বম্‌ ওম্‌ তাঁহার আকার।
মিলিত হলেন শিব যবে শক্তি সাথ
তার ধারা মাতাপিতা দেবতা সাক্ষাৎ।

ভুবনবীণার মূল তারেতে শাশ্বত
যে অনাদি প্রাণবাণী হতেছে ঝঙ্কৃত,
তার উৎস শক্তিপীঠে অর্ধনারীশ্বর
তারই ছায়া পিতামাতা প্রত্যক্ষ ঈশ্বর।"

Saturday, June 6, 2015

"বাণলিঙ্গ নির্বাচনের পদ্ধতি" ---


শিবলিঙ্গপ্রার্থী কোন শিবলিঙ্গ পূজা করার জন্য বাণলিঙ্গ প্রার্থনা করলে তুলাদণ্ডের একদিকে শিবলিঙ্গটি বসিয়ে অন্যদিকে আতপ চাল দিয়ে ওজন করতে হয়। ওজন সমান করে অর্থাৎ শিবলিঙ্গের সম পরিমাণ চাল একটি কৌটায় রেখে মিনিট পাঁচেক ধরে শিবের কাছে প্রার্থনা করতে হয় 'প্রভু! তুমি যদি এই ভক্তের পূজা গ্রহণ করতে চাও, তাহলে চালগুলির পরিমাণ তোমার অনুগ্রহদৃষ্টিতে বেড়ে যাক। নতুবা ওজন কমে যাক।' 


পাঁচ মিনিট পরে তুলাদণ্ডের একদিকে শিব এবং অন্যদিকে সেই কৌটায় রাখা চালগুলি রেখে ৫ বা ২১ বার ওজন করলে প্রতিবারেই চালের ওজন ক্রমশ উত্তরোত্তর বেড়ে যেতে দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে শিবলিঙ্গটি বাণলিঙ্গ। 


৫ বা ২১ বারের ওজনে যদি শিবলিঙ্গ এবং চালের তুলাসাম্য না ঘটে অর্থাৎ একবার চালের ওজন আরেক বার শিবের ওজন বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে সেটি বাণলিঙ্গ। এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলে বুঝতে হবে শিবলিঙ্গটি বাণলিঙ্গ নন। 


সর্বাবস্থায় শিব ও চালের ওজন সমান থাকলে সেটি প্রস্তর নির্মিত কোন সাধারণ শিবলিঙ্গ বলে বুঝতে হবে। তা গ্রহণ করা উচিত নয়। এই শিবলিঙ্গ অর্চনায় ভক্তের কোন ক্ষতি হবে না বটে তবে কোন অভীষ্ট সিদ্ধিও হবে না।


প্রকৃত বাণলিঙ্গ হলে তাঁকে যদি নদীপ্রবাহে ছুঁড়ে ফেলা যায়, তাহলে নদীতে নেমে কিছুক্ষণ জলে হাত  চুবিয়ে খুঁজতে থাকলে সেই বাণলিঙ্গ পুণরায় হাতে এসে ঠেকবেন অর্থাৎ হারানিধি আবার ফিরে পাওয়া যাবে। এইরকম মহাজাগ্রত বাণলিঙ্গের পূজায় ভক্তের সুখ-সমৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান হয়ে থাকে। 


শিবলিঙ্গ ও চালের প্রথম বারের ওজনে চাল যেটুকু বাড়ল, পরপর ওজন করলেও যদি চালের পরিমাণ ঐ একই অবস্থায় থাকে, ক্রমে ক্রমে চাল না বাড়তে থাকে, তাহলে শিবলিঙ্গটি নর্মদেশ্বর। বাণলিঙ্গ নয়। প্রতিটি নর্মদেশ্বরই পূজার্হ।


শিবলিঙ্গ ও চালের ওজনে যদি শিবলিঙ্গের তুলনায় চালের ওজন বেড়ে যায়, তা গৃহী বা সন্ন্যাসীর পূজ্য বলে অবধারিত।


যদি চালের চেয়ে শিবের ওজন বেশী হয়, তা গৃহী বা সন্ন্যাসী কারও পক্ষে মঙ্গলদায়ক নয়।



www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191


www.twitter.com/tapobhumi30


www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com 




Wednesday, June 3, 2015

"বাণলিঙ্গ" ---


বলিরাজার পুত্র বাণাসুরের রাজধানী ছিল নর্মদাতটে। প্রবল পরাক্রান্ত বাণ শুধু অসাধারণ শৌর্যবীর্যের অধিকারী ছিলেন এটাই তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয় নয়, তিনি ছিলেন অসাধারণ শিবভক্ত। মহারাজ বাণের উগ্র শিব-তপস্যায় ভক্তিবশ ভগবান মহাদেব এতই পরিতুষ্ট হয়েছিলেন যে তিনি নিজেই "বাণ" নাম গ্রহণ করে ভক্তের অতুলনীয় ভক্তি ও তপস্যাকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছেন। 

তাই "বাণ" শব্দের অর্থ হল শিব। তিনি (মহাদেব) বাণলিঙ্গ রূপে (ধাবড়ী কুণ্ডে) স্বতঃই  নর্মদার জলে উদ্ভূত হয়ে নিয়ত নর্মদাতে বিরাজমান থাকেন। 

যাঞ্জবল্ক্য সংহিতায় আছে ---

"প্রশস্তং নর্মদাং লিঙ্গং পক্কজম্বুফলাকৃতি।
মধুবর্ণং তথা শুক্লং নীলং মরকতপ্রভম্‌।।
হংসডিম্বাকৃতি পুনঃ স্থাপনায়ং প্রশস্যতে।
স্বয়ং সংশ্রবতে লিঙ্গং গিরিতো নর্মদাজলে।।
পুরা বাণাসুরেণাহং প্রার্থিতো নর্মদাতটে।
অবিবশং গিরৌ তত্র লিঙ্গরূপী মহেশ্বরঃ।।
বাণলিঙ্গমপি খ্যাতমতোহর্পাজ্জগতীতলে।।
অন্যেষাং কোটি লিঙ্গাণাং পূজনে যতফলং লভেৎ।
তৎফলং লভতে মর্ত্ত্যো বাণলিঙ্গৈকপূজনাৎ।।" 

শত সহস্র শিবলিঙ্গের মধ্যে যেগুলির আকৃতি হবে পাকা জাম বা হংস ডিম্বের মত, বর্ণ হবে পাকা জামের মত কিংবা মধুবর্ণ, শ্বেত, নীল এবং মরকতের মত দ্যুতি সম্পন্ন --- সেগুলি শিবের বাণলিঙ্গ রূপ। অন্যান্য কোটি কোটি লিঙ্গ পূজার যা ফল, একটি বাণলিঙ্গ পূজা করলে তার সমস্ত সুফল পাওয়া যায়।  

তামা, স্ফটিক, স্বর্ণ, প্রস্তর বা রৌপ্য দিয়ে নির্মিত যোনিপীঠ যেমন বাণলিঙ্গের আধার, বেদীও তেমনি প্রশস্ত আধার। 

প্রতিদিন যে নর্মদা-জাত বাণলিঙ্গের অর্চনা করে --- ঐহিক সম্পদ, সুদুর্লভ মুক্তিও তার করতালগত হয়।





Tuesday, May 19, 2015


মন-মন্দিরে মণি-দীপ জ্বালি
আরতি যাঁহার করিছ নিতি,
ধূপ-সৌরভে মন্দিরতল
সুরভিত করি ঢালিয়া প্রীতি,
ভকতি কুসুমে প্রেম চন্দনে 
ভরি দাও যাঁর চরণতল,
জনকের মাঝে দেখিলে তাঁহাকে
তবে তুই পাবি পূজার ফল।




Friday, April 24, 2015


ওঁ সর্বেষাং মঙ্গলং ভূয়াৎ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু মা কশ্চিৎ দুঃখভাগ্‌ ভবেৎ।।
অসতো মা সদ্‌গময়।।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।।
মৃত্যোর্মা অমৃতংগময়।

অসত্যের পথ হতে হে দয়াল!
নিয়ে চল সদা সত্য পথে,
অবিদ্যা তিমির ভেদি
নিয়ে চল জ্যোতির সাক্ষাতে
মৃত্যু পথ হতে নিয়ে চল,
যেথা আছে অমৃতের ধাম।
হে সত্য! অমৃত জ্যোতিঃ!
লহ মোর প্রাণের প্রণাম।।


ওঁ  হিরন্ময়েন পাত্রেন, সত্যস্যাপিহিতম্‌ মুখম্‌।
তৎ তং পুষণ্! অপাবৃণু, সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে।।

হে সবিতা! তোমার কল্যাণতম রূপ,
করো অপাবৃত।
সেই দিব্য আবির্ভাবে হেরি আমি,
আপন আত্মারে,
মৃত্যুর অতীত।।


ওঁ আণোরণীয়ান্‌ মহতো মহীয়ান্‌ আত্মাহস্য জন্তো নির্হিতো গুহায়াম।
তম্‌ অক্রতুম্‌ পশ্যতি বীতশোকো, ধাতু প্রসাদাৎ  মহিমানম্‌  ঈশম্‌।।
বেদাহমেতম্‌  অজরং পুরাণম্‌, সর্বাত্মানম্‌  সর্বগতম্‌  বিভূত্বাৎ।
জন্মনিরোধং  প্রবদন্তি  যস্য, আনন্দরূপপম্‌  অমৃতম্‌  যদ্‌  বিভাতি।।

ধূলির আসনে বসি,
ভূমারে দেখেছি ধ্যান চোখে,
আলোকের অতীত আলোকে।
অণু হতে অণীয়ান্‌
মহৎ হতে মহীয়ান্‌ ---
ইন্দ্রিয়ের পারে তার 
পেয়েছি সন্ধান।
ক্ষণে ক্ষণে দেখিয়াছি ---
দেহের ভেদিয়া যবনিকা।

Wednesday, April 15, 2015


"তপোভূমি নর্মদা"র পক্ষ থেকে সমস্ত পাঠককে জানাই "শুভ নববর্ষের" শুভেচ্ছা।
"শুভ নববর্ষ ১৪২২"

Wednesday, February 4, 2015

শ্রীরঙ্গনাথের সাধক যামুনাচার্য ---


ভক্তিবাদের স্তম্ভস্বরূপ বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের শ্রেষ্ঠ আচার্য যামুনাচার্যের জীবন কাহিনী বড়ই চিত্তাকর্ষক। তিনি দক্ষিণ ভারতের মাদুরাই -এর এক বিখ্যাত বিষ্ণুভক্ত ব্রাহ্মণ পরিবারে ৯৫৩ খৃঃ আষাঢ় মাসে উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীসম্প্রদায়ের মতে ইনি শ্রীনারায়ণের সিংহাসনের অংশাবতার। আচার্য নাথমুনি ছিলেন তাঁর পিতামহ। দাক্ষিণাত্যের শ্রীরঙ্গনাথের কৃপাধন্য যামুনাচার্যের পিতার নাম ঈশ্বরমুনি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অসাধারণ মেধা ও প্রতিভার অধিকারী। তাঁর গুরু ছিলেন ভাষ্যাচার্য। ঈশ্বরদত্ত প্রতিভায় মাত্র বারো বছর বয়সে তিনি শাস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন।


সেই সময় দাক্ষিণাত্যের পাণ্ড্য রাজ্যের সভা আলো করেছিলেন পণ্ডিত শিরোমণি বিদ্বজ্জন কোলাহল। সারা দেশে শ্রেষ্ঠ শাস্ত্রবিদ্‌রা প্রায় সকলেই তাঁর কাছে তর্কযুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন। একদিন ভাষ্যাচার্যের অনুপস্থিতকালে পণ্ডিত শিরোমণির এক শিষ্য যামুনাচার্যের সামনে তাঁর গুরুর সম্বন্ধে অপমান সূচক মন্তব্য করলে বালক যামুনাচার্য পণ্ডিত শিরোমণিকে তর্কযুদ্ধে আহ্বান করেন। গুরু ফিরে এসে সব শুনে হাহাকার করে ওঠেন কারণ তিনিও কোলাহলকে গুরুর মতন শ্রদ্ধা করেন। তিনি যামুনাচার্যকে নানাভাবে বুঝিয়ে কোলাহলের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে বলেন। কিন্তু যামুনাচার্য অনড়। তিনি কিছুতেই তাঁর গুরুর অপমান সহ্য করতে পারবেন না। তিনি গুরুর কাছে আশীর্বাদ প্রার্থনা করলেন। গুরু ভাষ্যাচার্য যামুনাচার্যকে আশীর্বাদ করলেন বটে কিন্তু মনে মনে ভাবলেন একমাত্র দৈবী কৃপাই যামুনাচার্যকে রক্ষা করবে। 


পণ্ডিত শিরোমণি বিদ্বজ্জন কোলাহলকে তর্কযুদ্ধে আহ্বান করেছে এক বারো বছরের বালক --- এই সংবাদ দাবানলের মত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন যামুনাচার্যের পরাজয় শুধু সময়ের অপেক্ষামাত্র। কারণ বালক যামুনাচার্য কোলাহলের সামনেই মূর্চ্ছা যাবেন। যথাসময়ে পাণ্ড্য রাজের সভাপতিত্বে তর্ক সভা শুরু হল। রাজসভায় তিল ধারণের স্থান নেই। সকলেই অধীর প্রতীক্ষায় অপেক্ষমান। 


যামুনাচার্যকে দেখে দিগ্বিজয়ী পণ্ডিতের চোখে মুখে ঝরে পড়ে তাচ্ছিল্য। কোলাহল জিঞ্জাসা করেন --- আল্‌ওয়ান্দারা? এই বালক আমাকে জয় করতে চায়। একে অপরকে প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করতে চান। কিন্তু কেউই কম যান না। সারা সভা স্তম্ভিত, হতচকিত। এমন সময় যামুনাচার্য উঠে দাঁড়িয়ে বললেন --- আমি আচার্য কোলাহলকে তিনটি প্রশ্ন করতে চাই ---


1. আপনার মাতা বন্ধ্যা নন, খণ্ডন করুন।

2. পাণ্ড্যরাজ মহাধর্মশীল নন, খণ্ডন করুন।
3. মহারাণী সাবিত্রীর ন্যায় সাধ্বী --- এ মত খণ্ডন করুন।

আচার্য কোলাহল এই উদ্ভট প্রশ্নে বিভ্রান্ত। তিনি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন। রাজসভায় শুরু হয় গুঞ্জন। যামুনাচার্য বলতে শুরু করেন ---


মনু বলেছেন, এক পুত্র অপুত্রের মধ্যে গণ্য এজন্য দ্বিতীয় পুত্র উৎপাদন করা প্রয়োজন। মেধাতিথিও তাঁর ভাষ্যে বলেছেন --- অপুত্রঃ এক পুত্র ইতি শিষ্ঠ প্রবাদাৎ। অর্থাৎ আচার্য কোলাহলের মা একমাত্র পুত্রের জননী তাই তিনি বন্ধ্যা। যেমন কূট প্রশ্ন, তেমনি কৌশল পূর্ণ খণ্ডন।


যামুনাচার্যের দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলেন কলিতে ধর্ম একপাদ, অধর্ম ত্রিপাদ।


রাজা কর্তৃক রক্ষিত প্রজারা যে সকল ধর্ম কর্ম করে, রাজা তার ষষ্ঠাংশ প্রাপ্ত হন এবং রাজা যাদের রক্ষা করেন না তারা যে অধর্ম করে তার ষড়ভাগ রাজা প্রাপ্ত হন। কাজেই রাজা যতই সুশাসক হোন না কেন, প্রজাদের পাপের প্রাবল্য হেতু অধিক পাপ বহন করতে হয়, এই দৃষ্টিতে পাণ্ড্য রাজ মহাধর্মশীল নন।


অতঃপর যামুনাচার্য তাঁর তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলেন --- রাজা যখন অগ্নিও বটেন, সূর্যও বটেন, চন্দ্র, কুবের, ইন্দ্রও বটেন, তাহলে মহারাণী কেবল যে রাজারই পাণিগৃহীতা তা বলি কেমন করে?


বালক যামুনাচার্যের পাণ্ডিত্য ও শাণিত বুদ্ধির ঔজ্জ্বল্যে সবাই চমৎকৃত। সকলেই হৃদয়ঙ্গম করলেন শাস্ত্র ব্যাখ্যা, কূটবুদ্ধি ও চাতুর্যে তিনি অপরাজেয়। চারিদিক ধ্বনিত হতে থাকে বালক পণ্ডিত যামুনের জয়ধ্বনি।



বৌদ্ধ ও শঙ্কর যুগের পর শ্রেষ্ঠ ভক্তিবাদী আচার্য রূপে যামুনাচার্যের আবির্ভাব ঘটে।

পাণ্ড্যরাজ বালক যামুনকে দান করলেন রাজ্যের অর্ধাংশ। এই রাজ্য লাভ করে এর শাসনকার্যেও যামুন অসাধারণ যোগ্যতার পরিচয় প্রদান করেন। রাজকার্যে ব্যাপৃত নবীন পণ্ডিত উপনীত হন যৌবনে, ভুলে যান তাঁর তপোনিষ্ঠ, সাত্ত্বিকী আচারের কথা। ইতিমধ্যে পিতা ঈশ্বরমুনি গত হয়েছেন। ক্রমে পিতামহ নাথমুনিরও মহাপ্রয়াণ আসন্ন কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে নাথমুনি তাঁর প্রিয় শিষ্য রামমিশ্র বা মানাক্কাল নম্বিকে আদেশ দেন--- যে করেই হোক ঈশ্বর প্রেরিত মহাসাধক রাজা যামুনকে রাজ্যপাঠের গণ্ডী থেকে বের করে তাকে চিনিয়ে দিতে হবে তার স্বরূপ। তার সুপ্ত শক্তিকে জাগ্রত করতে, একমাত্র তুমিই পারবে। তাকে নিয়ে আসতে হবে শ্রীরঙ্গনাথের চরণতলে।


নম্বি গুরুর আদেশ শিরোধার্য করে এসে উপস্থিত হয় যামুনের রাজধানীতে। রাজা যামুন সাদরে আপ্যায়ন করেন শ্রীরঙ্গমের সাধককে। কিন্তু নম্বির সঙ্গে কথা বলার সময় নেই রাজার। এভাবে কিছুকাল কাটলে, নম্বি জানতে পারেন রাজার সৈন্যদল পুনর্গঠনের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। নম্বি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তিনি নিভৃতে রাজাকে জানান --- তাঁর পিতামহ আচার্য নাথমুনি সন্ন্যাস গ্রহণের পর দৈবী কৃপায় বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হন। তিনি মৃত্যুর পূর্বে সেই বিশাল সম্পত্তির দায়িত্বভার আপনাকে দিয়ে যেতে চান। তাই তিনি আপনার হাতে সম্পত্তি অর্পণের জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন আপনাকে সঙ্গে করে শ্রীরঙ্গমে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু শর্ত একটাই, আপনাকে গোপনে ও ছদ্মবেশে আমার সঙ্গে একা যেতে হবে। 



একদিন গভীর রাত্রে রাজা নম্বির সঙ্গে গোপনে ত্যাগ করলেন রাজপ্রাসাদ, পদব্রজে যাত্রা করলেন পূণ্যভূমি শ্রীরঙ্গমের দিকে। সপ্তম দিনে উভয়েই পৌঁছে গেলেন শ্রীরঙ্গমে। কাবেরীতে স্নান তর্পণ সেরে নম্বি যামুনকে উপস্থিত করলেন শ্রীরঙ্গনাথজীর বিগ্রহ সম্মুখে। বললেন --- ইনি হলেন আপনার দাদু নাথমুনির গুপ্ত ভাণ্ডার। আমি আপনার কাছে এবং গুরুর কাছে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা আজ রক্ষিত হল।

কিন্তু বিগ্রহ দর্শনের সঙ্গে সঙ্গে এক অনাস্বাদিত পূর্বে আনন্দের শিহরণ বয়ে গেল রাজা যামুনের শিরা ধমনীতে, তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে। স্বতঃস্ফূর্ত আবেগে নতজানু হয়ে রঙ্গনাথজীর জ্যোতির্ময় মূর্তি দর্শন করতে করতে তিনি হলেন মূর্ছিত। যখন তাঁর মূর্ছা ভাঙল তখন তিনি অন্য মানুষ। প্রভু রঙ্গনাথের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি স্তব করতে লাগলেন ---



নিমজ্জিতোহনন্ত ভবার্ণবান্তঃ চিরায় মে কুলমিবাসি লব্ধঃ
ত্বয়াপি লব্ধং ভগবন্নিদানীং অনুত্তমং পাত্রামিদং দয়ায়াঃ।।

অনন্ত সংসার সাগরে বহুকাল ধরে ডুবতে ডুবতে অবশেষে কুলস্বরূপ তোমাকে পেয়েছি। তুমিও এক্ষণে অত্যুৎকৃষ্ট দয়ার পাত্র পেয়েছ?



অপরাধ সহস্রভাজনং পতিতং ভীমভবার্ণবোদরে
অগতিং শরণাগতং হরে, কৃপয়া কেবলমাত্মসাৎ কুরু।


আমি সহস্র অপরাধের অনুষ্ঠাতা, ভীষণ ভবসমুদ্রে পতিত। নিরুপায় হয়ে আমি তোমারই চরণাশ্রিত হতে চাই।

সমস্ত রাজ ঐশ্বর্য ত্যাগ করে তিনি নিলেন সন্ন্যাস। তাঁর যাত্রা শুরু হল প্রেম, ভক্তি ও ইষ্টপ্রাপ্তির পথে। শ্রীরঙ্গনাথের সেবা পূজায় মন, প্রাণ সমর্পণ করলেন সাধক যামুন। যামুন ভক্তিপথে আগমনের অতি অল্পকালের মধ্যে শ্রীসম্প্রদায়ের আচার্য পদে অধিষ্ঠিত হয়ে শ্রীসম্প্রদায়ে নতুন জীবনের সঞ্চার করেন। কয়েক বছরের মধ্যে এই ভক্তিস্নিগ্ধ মহাপুরুষের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল সারা দাক্ষিণাত্যে। পিতামহ নাথমুনি বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের যে দার্শনিকতার প্রবর্তন করেন, সাধক যামুনাচার্য তার ভিত্তিকে করলেন সুদৃঢ়।


যামুনাচার্যের গ্রন্থ সমূহের মধ্যে প্রধান হল --- সিদ্ধিত্রয়ম। গৌড়বাদের মাণ্ডুক্যকারিকা স্বাধ্যায় করলে যেমন আচার্য শঙ্করের অভিপ্রায় বুঝতে অসুবিধা হয় না তেমনি যামুনাচার্যের এই গ্রন্থ স্বাধ্যায় করলে আচার্য রামানুজের গ্রন্থাবলীর মর্মকথা সহজে উপলব্ধি করা যায়। এছাড়া অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল স্তোত্ররত্নম, আগম প্রমাণ্যম ও গীতার্থ সংগ্রহ।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191







Wednesday, January 21, 2015

দেবাদিদেব অষ্টমূর্তিময় ---


ঋষিরা ধ্যান দৃষ্টিতে মহাদেবের অষ্টমূর্তিকে দেখেছেন ---



"ওঁ ভবঃ শর্বো রুদ্রঃ পশুপতিরথোগ্রঃ সহমহান্‌
তথা ভীমেশানাবিতি যদভিধানাষ্টক মিদম্‌।
অমুষ্মিন্‌ প্রত্যেকং প্রবিচরতি দেবশ্রুতিরপি
প্রিয়ায়াস্মৈ ধাম্নে প্রণিহিতনমমস্যোহস্মি ভবতে।

হে মহেশ্বর! তুমি জটাজূটধারী, সমস্ত প্রাণীর অধীশ্বর, তৃতীয় নয়ন দিয়ে মদনকে ভষ্ম করেছ। হে নীলকণ্ঠ! তুমি দেবগণের পরম দেবতা, প্রভুগণের পরম প্রভু, নিয়ন্তাদের পরম নিয়ন্তা, ব্রহ্মাদি সৃষ্টি কর্তাদের মধ্যে প্রধান, ত্রিলোচন, সর্বব্যাপক, দেবগণেরও গতি তুমি। তুমি বিদ্যা অবিদ্যার অতীত, নিত্য স্তবনীয়, পরম পূজ্য, স্বয়ং জ্যোতি। দেবদানব মনুষ্য সমন্বিত সমগ্র জগতের দ্বারা নমস্কৃত হে অজেয় পুরুষ! তুমি একাধারে বিষ্ণুরূপী শিব এবং শিবরূপী বিষ্ণু। দক্ষযঞ্জ বিনাশকারী হে বীরভদ্র! তুমি ললাটনেত্র অর্থাৎ মহাযোগীদের ধ্যানলভ্য তৃতীয় নেত্রস্বরূপ, জগতের সৃষ্টি ও সংহারকর্তা, শূলপাণি, পিনাকধনুর্ধারী মঙ্গলময় বিধাতা।


যখন অঞ্জান নিবৃত্ত হয়, দিবা বা রাত্রি থাকে না, কার্য বা কারণ থাকে না, একমাত্র স্বয়ং জ্যোতিস্বরূপ জগদীশ্বর মহাদেব নির্বিকারভাবে বিরাজমান থাকেন। তিনি নিত্য, সূর্যের বরেণ্য, তাঁর থেকেই অনাদিসিদ্ধ আত্মবিদ্যা নির্গত হয়েছে। তিনি প্রমথদের অধিপতি, জগতের মঙ্গল বিধানকারী, সৃষ্টিকর্তাদেরও সৃষ্টিকর্তা, প্রকৃতি পুরুষের অতীত, শ্রেষ্ঠদের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ, পরমসূক্ষ্ম তুরীয় ব্রহ্মস্বরূপ এ জগৎ তাঁরই সৃষ্টি। তিনি সূর্য, তিনি চন্দ্র, তিনি পবন, তিনি অগ্নি, তিনি জল, তিনি আকাশ, তিনি পৃথিবী এবং তিনি আত্মা --- এই জগতে এমন কোন তত্ত্ব নেই, যা তিনি নন। মহাদেবের স্বরূপ ব্যাখ্যায় বেদ সম্পূর্ণরূপে সচেষ্ট। 


তিনি  পরমাত্মা বা ব্রহ্মেরই নামান্তর। তিনি "শান্তং শিবং অদ্বৈতং"। শিবই বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং --- তিনি বিশ্বদেব, বিশ্বরূপ, বিশ্বাতিগ, বিশ্বান্তর্যামী। শিবপুরাণে মহাদেবের উক্তি ---



"অহম্‌ শিবঃ শিবশ্চাহং ত্বঞ্চাপি শিব এব চ।
সর্বং শিবময়ং ব্রহ্মণ্ শিবাৎ পরং ন কিঞ্চন ।।"

অর্থাৎ আমি শিব, তুমিও শিব, সমস্তই  শিবময়। শিব ভিন্ন অপর কিছুই নেই। দেবাদিদেব অষ্টমূর্তিময়। তিনিই অষ্টমূর্তি সূত্রে মণিগণের ন্যায় নিখিল জগৎ ব্যাপ্ত করে রয়েছেন। মহাদেবের অষ্টমূর্তির নাম --- শর্ব, ভব, রুদ্র, উগ্র, ভীম, পশুপতি, মহাদেব ও ঈশান।



"অষ্টমূর্তাত্মনা বিশ্বং অধিষ্ঠায় স্থিতং শিবং
ভজস্ব সর্বভাবেন রুদ্রং পরম কারণং।।"

এই অষ্টমূর্তির দ্বারা বিশ্বে অধিষ্ঠিত পরম কারণ  ভগবানকে সর্বতোভাবে ভজনা করা হয়। 

পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে মহাদেবের অষ্টমূর্তির স্বতন্ত্র তীর্থ আছে।


1. সূর্যমূর্তি --- সূর্য প্রত্যক্ষ দেবতা। উদয়াস্ত আকাশ পথে যাঁর দ্যুতির প্রকাশ দেখি, তিনি স্বরূপতঃ শিব ছাড়া আর কেউ নন।



"আদিত্যঞ্চ শিবং বিদ্যাৎ শিবমাদিত্য রূপিনং।
উভয়োরন্তরং নাস্তি আদিত্যস্য শিবস্য চ।।

অর্থাৎ শিবে এবং সূর্যে কোন ভেদ নেই। সূর্যমন্দির মাত্রেই শিবমন্দির আর শিবমন্দির মাত্রেই সূর্যমন্দির।

2. চন্দ্র --- চন্দ্রও শিবের এক মূর্তি। গুজরাটের সোমনাথ এবং বাংলার  চন্দ্রনাথ --- মহাদেবের সোমমূর্তির তীর্থ। 

3. নেপালের পঞ্চমুখ পশুপতিনাথ --- মহাদেবের যজমান মূর্তির তীর্থ।

বাকী পাঁচটি তীর্থ মাদ্রাজ অঞ্চলে অবস্থিত। এগুলি অতি প্রাচীন ও পবিত্র তীর্থ। এই মন্দিরগুলির কারুকার্যময় বিশাল বিশাল স্তম্ভ মণ্ডপ, বিমল সলিল পূর্ণ সরোবর প্রভৃতি দ্রাবিড় স্থাপত্যের নিদর্শন। দাক্ষিণাত্যে ৬৩ জন শিবভক্ত আবির্ভূত হয়েছিলেন। যাঁদেরকে আদিয়ার বলা হয়। তাঁদের রচিত তামিল প্রবন্ধম্‌ দ্রাবিড়দের নামে প্রসিদ্ধ। শিব ভক্তগণের লীলাক্ষেত্র এইসব তীর্থ।


4. শিবকাঞ্চিতে একাম্বরেশ্বর --- ক্ষিতিমূর্তির তীর্থ।


5. মাদ্রাজের ত্রিচিনপল্লী জেলায় শ্রীরঙ্গম তীর্থের সন্নিকটে জম্বুকেশ্বর --- অপ্‌ মূর্তির তীর্থ। এখানে লিঙ্গমূলে একটি জলের উৎস আছে। মন্দিরে সর্বদাই জলধারা প্রবাহিত হচ্ছে।  


6. দক্ষিণে আর্কট জেলায় তিরুভান্নামালাই বা অরুণাচল তীর্থে --- মহাদেবের তেজোমূর্তির তীর্থ।


7. উত্তর আর্কট জেলায় কালাহস্তীশ্বর মহাদেব --- বায়ুমূর্তির তীর্থ।


8. চিদাম্বরম্‌ --- আকাশ মূর্তির তীর্থ। সেখানকার মূল মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। আকাশেই পূজা হয়। পৃথক একটি গৌণ মন্দিরে তাণ্ডব নৃত্যকারী চিদাম্বরেশ্বরের মনোরম নটরাজ মূর্তি বিরাজমান আছেন।



অসিতগিরিসমং স্যাৎ কজ্জ্বলং সিন্ধুপাত্রং সুর তরুরব শাখা লেখনী পত্রমুর্খী।
লিখতি যদি গৃহীত্বা সারদা সর্বকালং তদপি তব গুণানামীশ পারং ন যাতি।।

অর্থাৎ নীল পর্বত যদি কালি হয়, সাগর যদি মসীপাত্র হয়, পারিজাত বৃক্ষের শাখা যদি কলম হয়, পৃথিবী যদি লিখবার পাত্র হয় আর এই সমস্ত বস্তু নিয়ে সরস্বতী যদি চিরকাল ধরে লিখতে থাকেন, তথাপি হে ঈশ্বর তোমার গুণসমূহের ইয়ত্তা পাওয়া যাবে না।"

https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191



Tuesday, January 6, 2015


ওগো  আমার  শিবসুন্দর! হিয়ায়  এসে  নিজে
গড়ো  আমার  জপমালা  তোমার  নাম-বীজে।
অশ্রু-সূতে  গাঁথো  আমার  প্রেমের  জপদাম
ঘুরুক  আঙুল  গুণে  গুণে  রেবা  শিব  রাম।।
মনের  সাথে  এই  রসনা  রসুক  নাম- রসে
মন্ত্র  তোমার  হৃদযন্ত্রে  চলুক  প্রেমবশে।
নাচুক  আমার পাগল  হিয়া  নাচুক  আমার  মন,
নাচুক  আমার  ভাবালহরি  আনন্দ-মগন।
জিহ্বা  আমার  উঠুক  নেচে  নামের  রসে  ভোর,
নাচুক  আমার  করাঙ্গুলে  জপমালার  ডোর।
নাচুক  আমার  চোখের  তারা  ঊর্ধ্বে  নাচুক  হাত,
নাচুক  আমার  চরণ  দুটির  প্রতি  পদপাত।
ঠোঁটে  আমার  নাচুক  হাসি  নিতে  তোমার  নাম,
আনন্দেরি  অশ্রু  চোখে  ঝরুক  অবিরাম।।

Thursday, January 1, 2015