Friday, November 27, 2015

শ্রীরুদ্রহৃদয়োপনিষৎ মন্ত্রের ব্যাখ্যা :---


1. অবনত মস্তকে ব্যাসদেবের চরণে প্রণাম পূর্বক শুকদেব জিঞ্জাসা করিলেন, দেব! কোন্‌ দেব সর্বদেবে বিরাজমান? কোন দেবের সেবা করলে সকল দেবতার প্রীতি জন্মে, দয়া করে আমাকে বলুন। 

2. শুকদেবের এই কথা শুনে পিতা ব্যাসদেব শুককে প্রত্যুত্তর দিতে আরম্ভ করলেন। বললেন, ভগবান রুদ্র সর্বদেবাত্মক এবং সকল দেবতাই শিবাত্মক। 

3. রুদ্রের দক্ষিণ পার্শ্বে  রবি, ব্রহ্মা ও গার্হপত্য, আহবনীয় এবং দক্ষিণাগ্নি নামক তিন রকমের অগ্নি অধিষ্ঠিত। রুদ্রের বাম পার্শ্বে দ্যোতনশীলা উমা, বিষ্ণু এবং সোম এই ত্রিমূর্তি সমাশ্রিত। যিনি উমা তিনি স্বয়ং বিষ্ণু। যিনি বিষ্ণু তিনিই চন্দ্রমা। 

4. যারা গোবিন্দকে নমস্কার করে, তারা শঙ্করকেই নমস্কার করে। যারা ভক্তি সহকারে হরিকে অর্চনা করে, তারা বৃষধ্বজ রুদ্রেরই অর্চনা করে। যারা বিরুপাক্ষ শিবের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, তারা জনার্দনকেই বিদ্বেষ করে। যারা রুদ্রকে জানে না, তারা কেশবকেও জানে না। 

5. রুদ্র হতে বীজ প্রবর্তিত হয়। জনার্দন সে বীজের যোনি স্বরূপ। যিনি রুদ্র, তিনিই ব্রহ্মা, যিনি ব্রহ্মা তিনিই অগ্নি। 

6. রুদ্র ব্রহ্মা বিষ্ণুময়। জগৎ অগ্নিষোমাত্মক। পুংলিঙ্গ সমস্তই শিব, স্ত্রীলিঙ্গ সকলই উমা। স্থাবর জঙ্গমাত্মক জগৎ সমস্তই শিবশক্ত্যাত্মক। ব্যক্তরূপ সমস্তই উমা, আর অব্যক্ত রূপ মাত্রই পরমেশ্বর রুদ্র। উমা এবং শঙ্করের যে যোগ, সেই যোগই বিষ্ণু নামে কথিত হয়। 

7. যে ব্যক্তি ভক্তি সহকারে রুদ্রকে নমস্কার করে সে আত্মা, অন্তরাত্মা এবং পরমাত্মাকে অবগত হয়ে পরমাত্মারই আশ্রয় গ্রহণ করে। 

8. ব্রহ্মা অন্তরাত্মা, মহেশ্বর পরমাত্মা এবং বিষ্ণুই সর্বভূতের সনাতন আত্মা। 

9. বিটপশালী ভূমিশাখ উর্ধ্বমূল সংসার-বৃক্ষের অগ্র, মধ্য ও মূল বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও রূদ্র। 

10. বিষ্ণু কার্য, ব্রহ্মা ক্রিয়া এবং মহেশ্বর কারণ। প্রয়োজনানুসারে রুদ্র এই ত্রিমূর্তি ধারণ করেছেন। রুদ্র ধর্মস্বরূপ, বিষ্ণু জগদাত্মক, পিতামহ ব্রহ্মা সর্বঞ্জানাত্মক। 

11. ত্রিমূর্তিস্বরূপ ভগবানকে যে 'শ্রীরুদ্র', 'রুদ্ররুদ্র' নামে অভিহিত করে সে ব্যক্তি বিচক্ষণ। যে ব্যক্তি 'রুদ্র' নাম কীর্তন করে, সে  সকল পাপ হতে মুক্ত হয়। 

12. রুদ্র নররূপী, উমা নারীরূপা, সেই রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র ব্রহ্মা স্বরূপ এবং উমা বাণীস্বরূপা, সেই ব্রহ্মা ও বাণীরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বিষ্ণু স্বরূপ ও উমা লক্ষ্মীরূপা, সেই বিষ্ণু ও লক্ষ্মীরূপা রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র সূর্যস্বরূপ, উমা ছায়ারূপা, সূর্য ও ছায়ারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র দিবাস্বরূপ, উমা রত্রিরূপা, সেই দিন ও রাত্রিরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র যঞ্জরূপী, উমা বেদিস্বরূপা; সেই যঞ্জ ও বেদিরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বহ্নিস্বরূপ, উমা স্বাহারূপা, সেই অগ্নি ও স্বাহারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বেদরূপী, উমা বিদ্যারূপা; সেই বেদ ও বিদ্যারূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র বৃক্ষস্বরূপ, উমা লতারূপিনী, সেই বৃক্ষ ও বল্লীরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র গন্ধস্বরূপ, উমা পুষ্পরূপা, গন্ধ ও পুষ্পরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র অর্থস্বরূপ, উমা অক্ষররূপা, সেই অর্থ ও অক্ষররূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 
রুদ্র লিঙ্গরূপী, উমা গৌরী পীঠরূপা, সেই লিঙ্গ ও পীঠরূপ রুদ্র ও উমাকে নমস্কার করি। 

13. সর্বদেবাত্মক রুদ্রের স্বতন্ত্র রূপকে পৃথক পৃথক মন্ত্রে নমস্কার করবে। যে যে স্থানে রুদ্র ও উমা অর্থাৎ শিবশক্তি --- লিঙ্গমূর্তিসহ গৌরীপীঠের অর্চনা করবে, সেই সেই স্থানে এই মন্ত্র প্রযুক্ত হবে। বিশেষতঃ ব্রহ্মহত্যায় লিপ্ত ব্যক্তিও যদি জলের মধ্যে অবস্থান করে এই মন্ত্র উচ্চারণ করে, সে সর্বপাপ হতে মুক্তি লাভ করবে। 

14. সকলের অধিষ্ঠানভূত দ্বন্দ্বতীত সনাতন নিত্যঞ্জান --- সুখস্বরূপ বাক্যমনের অগোচর পরব্রহ্ম সেই রুদ্রই। ব্রহ্মস্বরূপ রূদ্রকে জানলে এ সংসারের সমস্তই পরিঞ্জাত হয়। কারণ, সেই রুদ্রই বিশ্বাত্মক, রুদ্র ভিন্ন এ সংসারে অপর কিছুই নেই। 

15. এ সংসারে বেদিতব্য বিদ্যা দুটি --- পরাবিদ্যা ও অপরা বিদ্যা। যে বিদ্যা দ্বারা অক্ষয় স্বরূপ পরমাত্মা প্রকাশিত হন, সেই ব্রহ্মবিদ্যা বা আত্মবিদ্যাই পরাবিদ্যা। ঋগ্বেদ, যর্জুবেদ, সামবেদ, অর্থববেদ, শিক্ষাকল্প ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ এবং অনাত্ম বিষয়ক অপরাপর সমস্ত ঞ্জানই অপরা বিদ্যা। 

To be continued ......

No comments:

Post a Comment