Friday, November 27, 2015

"শ্রীরুদ্রহৃদয়োপনিষৎ মন্ত্রের ব্যাখ্যা : ---


Cont ...... (Last)

16. নিত্য, ব্যাপক, সর্বগত, সূক্ষ্মতম ও ব্যয় রহিত সর্বভূতের উৎপত্তি স্থান-স্বরূপ  অদৃশ্য, অগ্রাহ্য, গোত্রহীন, রূপ বিহীন, চক্ষু-কর্ণ-হস্ত-পদপরিহীন আত্মাকে ধীরগণ আত্মাতেই অবলোকন করে থাকেন।

17. যিনি সর্বঞ্জ ও বিশেষতঃ সর্ববিৎ, যাঁহার তপ ঞ্জানময় সেই পরম পুরুষ হতে অন্নাদি ভোগ্যরূপে জগৎ আবির্ভূত হয়।

18. রজ্জুতে যেমন সর্পভ্রম হয়, সেই রকম পরম পুরুষে সর্পভানের মত জগদ্‌ভান হয়। রজ্জু সর্প বস্তুতঃ মিথ্যা হলেও যেমন সত্য বলে প্রতিভাত হয়, তেমনই জগৎ মিথ্যা হলেও সত্যরূপে আভাসিত হয়। জগতের অধিষ্ঠান স্বরূপ সেই পরমাত্মা সত্য, তাঁকে জানলেই ভবপাশ হতে মুক্ত হওয়া যায়।

19. তত্ত্বঞ্জানের দ্বারাই সংসার ভ্রমের বিনাশ হয়, কর্মের দ্বারা নয়। ঞ্জানার্থী, ব্রহ্মনিষ্ঠ শ্রোত্রিয় অর্থাৎ শ্রুতিশাস্ত্রবিদ্‌ গুরুর নিকট গমন করেন গুরু সেই ঞ্জানার্থী শিষ্যকে ব্রহ্মাত্মবোধিনী পরাবিদ্যা দান করেন।

20. লোকে যদি সেই গুহা নিহিত পরব্রহ্মকে জানতে পারে, তবে অবিদ্যারূপ মহাগ্রন্থি ছেদ করে সনাতন শিব পরমাত্মাকে প্রাপ্ত হয়। এই আত্মা প্রাপ্তি বা আত্মাঞ্জান লাভই অমৃত বা মুক্তি। মমুক্ষুগণের এইটাই একমাত্র বোদ্ধব্য।

21. প্রণব ধনুঃ-স্বরূপ, জীবাত্ম শর বা বানস্বরূপ, ব্রহ্ম লক্ষ্যস্বরূপ। শর যেমন ধনুর সাহায্যে লক্ষ্যে ডুবে তন্ময় হয়ে যায়, জীবও সেই রকম অপ্রমত্তভাবে শিবোপাসনার সাহায্যে শিব লক্ষ্যে শরবৎ তল্লীন হয়। লক্ষ্য শিব সর্বগত, বেদ্ধা সাধকও সর্বগত, এই লক্ষ্য শিব সান্নিধ্য লাভের উপায়, তাতে কোন সংশয় নেই।

22. যেখানে চন্দ্র, সূর্যের প্রকাশ নেই, বায়ুর প্রবাহ নেই, দেবগণের দীপ্তি নেই, সেই পরম দীপ্তিময় সর্বভাব স্বরূপ বিরজঃ বিশুদ্ধ শিবতত্ত্ব স্বয়ং-ই প্রকাশ পেয়ে থাকেন।

23. দেহ বৃক্ষে দুটি পক্ষী বাস করে। একটি জীব, অন্যটি ঈশ। জীব কর্মফল ভোগ করে আর যিনি ঐশী সত্তা তিনি ভোগ করেন না, কেবল সাক্ষিরূপে বিরাজ করেন। ভোগ নিবৃত্ত হলেও জীবই ঈশ্বর শিব বা সাক্ষীরূপে প্রকাশ পান। জীব ও ঈশ্বরের যে ভেদ, সেটা যথার্থ নয়, মায়ার দ্বারা তা কল্পিত। যেমন ঘটাকাশ এবং মহাকাশ বস্তুতঃ ভিন্ন নয়, উপাধি বশে ভিন্নরূপে কল্পিত; সেইরূপ জীব ও শিব অভিন্ন, কিন্তু মায়োপাধি দ্বারা ভিন্নরূপে কল্পিত হন।

24. প্রকৃতপক্ষে শিব সাক্ষাৎ চিৎস্বরূপ, জীবও স্বয়ং স্বরূপতঃ সতত চিন্মাত্র। চিৎ চিদাকার হতে ভিন্ন এরূপ বলা যায় না কারণ চিৎ-এ ভেদ থাকলে চিৎ-এর বা চৈতন্য স্বরূপেরই হানি স্বীকার করতে হয়। অতএব চিৎ স্বরূপ শিব চিদাকার জীব হতে স্বরূপতঃ ভিন্ন নয়।
  
চিৎ-এ ভেদ না খাকুক, জড়ে জড়ে ত ভেদ আছে, এ কথাও বলা যায় না কারণ ভেদ জড়েই থাকবে, চিৎ-এ নয়। কারণ চিৎ জড় নয়,বস্তু।জড় অবস্তু। জড়ে জড়ে ভেদ থাকে থাকুক, কিন্তু চিৎ-এ চিৎ-এ ভেদ নেই। সব চিৎ-ই এক। সুতরাং এক চিৎ-ই প্রকাশ পায়। তর্ক ও প্রমাণ দ্বারা এইরূপে চিৎ-এর একত্ব ব্যবস্থাপন পূর্বক চিৎ-এর একত্ব সম্যক রূপে অনুভব করতে পারলে শোক মোহ আদি অপগত হয়।

25. চিৎ-এর একত্ব অনুভব করতে পারলে সাধক জগতের অধিষ্ঠান-স্বরূপ সত্যঞ্জানময় পরমানন্দ স্বরূপ অদ্বৈত শিবসুন্দরকে তবেই লাভ করতে পারেন।

26. অহমস্মি অর্থাৎ আমি সেই আত্মা এইরকম নিশ্চয় করে, মননশীল সাধক শোক হতে মুক্ত হন। নির্দোষ সাধকরা স্বদেহেই জ্যোতিঃস্বরূপ বিশ্বসাক্ষী পরমাত্মাকে দর্শন করে। মায়ামুগ্ধ অঞ্জ জনগণ দেখতে পায় না।

27. এইরূপে যে পরমযোগী আত্ম দর্শন বা আত্মঞ্জান লাভ করেন, সেই পূর্ণ স্বরূপের আত্মা গতাগতি বা লোকান্তর গমন অর্থাৎ জন্মগ্রহণ নিতে বিড়ম্বিত হতে বাধ্য হন না।

আকাশ যেমন স্বয়ংই সম্পূর্ণ, ঞ্জানীও তেমনি স্বয়ং সম্পূর্ণ। আকাশ যেমন গমন করেন না। ঞ্জানীও সেইরকম সর্বময়ত্ব লাভ করে কোথাও গমন করেন না। কারণ তিনি সর্বব্যাপক ব্রহ্ম হয়ে যান। যে মননশীল সাধক পরমব্রহ্মকে অবগত হন, তিনি স্বয়ংই সচ্চিদানন্দ ব্রহ্মে আত্মস্থ হন।।" 


www.twitter.com/tapobhumi30

www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

www.anandatapobhuminarmada.blogspot.com


No comments:

Post a Comment