Monday, February 15, 2016

"কামরূপ মঠ" ---


কামরূপ মঠ হল কাশীর প্রাচীনতম মঠগুলির মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে যেখানে বারাণসী শহর অতি প্রাচীনকালে তার উপর দিয়ে গোদাবরী নদী বয়ে যেত। এই নদী দাক্ষিণাত্যের বিখ্যাত গোদাবরী নয়। কাশীস্থ এই গোদাবরী নদীর উভয়দিকে বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি ছিল, গোক্ষুরোত্থিত ধূলিতে গোদাবরীর উভয়তীর সমাচ্ছন্ন থাকতো বলে পরবর্তীকালে কাশীর বিখ্যাত কেন্দ্রস্থলটির নাম হয়েছে গোধূলিয়া। 


গোদাবরী, বরুণা এবং অসি নদীর সঙ্গমস্থলেই ছিল ব্রহ্মা কর্ত্তৃক অনুষ্ঠিত  দশটি অশ্বমেধ যঞ্জের কেন্দ্রস্থল। কালক্রমে নদীগুলি একটু একটু করে স্থান পরিবর্তন করে গঙ্গার সঙ্গে মিশে গেছে। 


ব্রহ্মার প্রধান যঞ্জকুণ্ডের উপরেই এই কামরূপ মঠ গড়ে ওঠে। মঠের তাম্রশাসনে দেখা যায়, কামরূপের রাজা চন্দ্রকান্ত সিংহ মবল ১২৩০ শকাব্দে তাঁর গুরু মহাযোগী মহাদেবানন্দ তীর্থের তপস্যা-ক্ষেত্র হিসাবে এই মঠ স্থাপন করেন। এই মঠের আচার্যগণের ত্যাগ ও তপস্যার নানা কাহিনী প্রবাদ বাক্যের মত প্রচলিত। স্মরণাতীতকাল থেকে ভারতের সাধু সমাজে এই মঠ এক অসাধারণ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। 


অদ্বৈতবেদান্ত রাজ্যের যিনি দ্বিতীয় শঙ্করাচার্য, অমূল্য মহাগ্রন্থ অদ্বৈতসিদ্ধিঃ প্রণেতা আচার্য শ্রীমধুসূদন সরস্বতীও এই মঠের তলদেশস্থ ধ্যান গুহায় কিছুদিন বাস করেছিলেন। পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য, বিশ্ববিশ্রুত অঙ্কবিদ্‌ এবং বৈদান্তিক শ্রীমৎ স্বামী ভারতী কৃষ্ণতীর্থ মহারাজের গুরুদেব শ্রীমৎ স্বামী মধুসূদন তীর্থজীও ছিলেন এই মঠেরই অনুগত সন্ন্যাসী। তিনি প্রায়ই বলতেন --- 'সন্ন্যাসীর পক্ষে অহমিকা থাকা অপরাধ। কিন্তু যখনই মনে করি যে আমি কামরূপ মঠের সন্ন্যাসী, তখন আমার মনে অহঙ্কার জাগে!'



September 2, 2013  ("সাধু হো তো য়্যাসা")

No comments:

Post a Comment