Monday, April 4, 2011

গুরুভক্তিঃ----


3. শঙ্করাচার্যের শিষ্য পদ্মপাদাচার্য ছিলেন গুরুভক্তি ও গুরুগত প্রাণতার এক মূর্ত প্রতীক। তাঁর গুরুভক্তির স্বীকৃতি স্বরূপ আচার্য শংকর তাঁর প্রধান চারটি মঠের অন্যতম পুরুষোত্তম ক্ষেত্রস্থিত গোবর্ধন পীঠের আচার্য পদে অভিষিক্ত করেছিলেন। তিনি কিরকম গুরুগতপ্রাণ ছিলেন, তাঁর গল্প  হল---

পদ্মপাদাচার্যের অন্য নাম সনন্দন। আচার্যের সব শিষ্যরা অসাধারণ গুরুভক্ত ছিলেন এবং সকলেই প্রাণপণে তাঁর সেবা করতেন। তবুও আচার্য কেবল সনন্দনের গুরুগতপ্রাণতার পুনঃপুনঃ প্রশংসা করতেন। 


এজন্য অন্যান্য শিষ্যদের মনে সনন্দনের প্রতি একটা অসূয়ার ভাব ছিল। তাই সর্বসমক্ষে সনন্দনের একক বৈশিষ্ট প্রকট করার জন্য একদিন সনন্দন যখন অলকানন্দার অপর পারে গিয়েছিলেন, তখন সকলের সামনেই আচার্য অন্য পার থেকে ডাক দিলেন---'সনন্দন! সনন্দন ! শীঘ্র এস।' 


গুরুদেবের ত্রস্ত আহ্বানে সনন্দন অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি ভাবলেন দুর্গম হিমালয়ের বিপদ সঙ্কুল অরণ্যের মধ্যে হয়ত কোন বিপদ উপস্থিত হয়েছে । সেতুর উপর দিয়ে ধীরে ধীরে পা ফেলে গেলে দেরী হয়ে যাবে, এই চিন্তা করে তিনি কোন দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে সোজা অলকানন্দায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।


বরফাচ্ছন্ন খরস্রোতা নদী। স্রোতের বেগ এমনই প্রচণ্ড এবং উদ্দাম যে, তাতে মত্ত মাতাঙ্গ ও পড়ে গেলে ভেসে যাবে মুহূর্তের মধ্যে।এই দৃশ্য দেখে আচার্যের অন্যান্য শিষ্যরা সনন্দনের মৃত্যু সুনিশ্চিত জেনে হাহাকার করে উঠলেন। 


কিন্তু গুরুগতপ্রাণ শিষ্যের দেহকে সর্বদাই গুরু রক্ষা করেন ।


গুরুশক্তিতে বলীয়াণ সনন্দনের প্রতি পদক্ষেপেই এক একটি করে পদ্ম প্রস্ফুটিত হয়ে উঠতে লাগল।সেই সকল পদ্মের উপরেই এক একটি পা রেখে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে ছুটতে গুরুর চরণে এসে বন্দনা করলেন।


এই অলৌকিক ঘটনা দেখে তাঁর গুরুভ্রাতাদের আর বাক্যস্ফুর্তি হয় না।সনন্দনকে আলিঙ্গন করে অপরাপর শিষ্যদের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'আজ হতে সনন্দনের নাম হল পদ্মপাদ। তোমরা মনে রাখবে----ন গুরোরধিকং তত্ত্বং গুরু সেবার মত আর কোন শ্রেষ্ঠ তপস্যা নেই।' অদ্বৈতবাদের প্রধান আচার্য, মায়াবাদের প্রবক্তা, ঞ্জান-বিচারের নব ভগীরথ সেদিনই ঘোষণা করেছিলেন---



শরীরং সুরূপং সদা রোগ মুক্তং
যশশ্চারু চিত্রং ধনং মেরুতুল্যং
গুরোঘন্র--পদ্মে মনশ্চেয় লগ্নং
ততঃ কিং ততঃ কিং ততঃ কিং ততঃ কিং।।


অর্থাত, কারও শরীর কন্দর্পকান্তিই হোক, কিংবা সে নীরোগ শরীরের অধিকারীই হোক, সে যত বড় যশস্বী হোক, কিংবা তার মেরুপর্বত তুল্য ধনরত্নের পাহাড়ই থাক, গুরুপাদপদ্মে যদি চিত্ত লগ্ন না থাকে, তবে তার কি লাভ হল? অর্থাৎ গুরুভক্তি বিনা সবই নিরর্থক।


পঞ্চপাদিকা, বিঞ্জানদীপিকা, প্রপঞ্চসার এবং পঞ্চাক্ষরী ভাষ্য প্রভৃতি গ্রন্থ লিখে পদ্মপাদ গুরুর মতবাদের পুষ্টিসাধন করেছিলেন।




No comments:

Post a Comment