Sunday, January 23, 2011

দীক্ষা:---


............ আণবী দীক্ষা দশরকম। যথা ------- স্মার্তী, মানসী, যৌগী, চাক্ষুষী, স্পর্শিনী, বাচিকী, মান্ত্রিকী, হৌত্রী, শাস্ত্রী ও আভিষেচিকী।

*স্মার্তী দীক্ষা--- সমর্থ গুরু বিদেশস্থ শিষ্যকে স্মরণ করে ক্রমশঃ তার আণবমল, কর্মমল ও মায়িক মলের আবরণকে বিশ্লিষ্ট অর্থাৎ চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলেন এবং লয়যোগাঙ্গবিধানে তাকে পরম শিবে যোজনা করেন। 

*মানসী দীক্ষা--- শিষ্যকে নিজের কাছে বসিয়ে অন্তঃদৃষ্টিতে তার মলত্রয়কে অবলোকন করে, সেই মলত্রয়কে নিশ্চিহ্নকরণ । 


*যৌগী দীক্ষা--- যোগোক্ত ক্রমে গুরু শিষ্য দেহে প্রবিষ্ট হয়ে তার আত্মাকে নিজের আত্মাতে যুক্ত করেন । তার নাম যৌগদীক্ষা । 


*চাক্ষুষী দীক্ষা--- শিবোহহং ভাবে সমাবিষ্ট হয়ে গুরু করুণাদৃষ্টিতে শিষ্যকে নির্ণিমেষ নেত্রে দেখতে থাকেন তাতেই শিষ্যের মধ্যে অকস্মাৎ শিবভাবের বোধন ঘটে যায় । 


*স্পর্শিনী দীক্ষা--- গুরু স্বয়ং পরমশিবভাবে ভাবিত হয়ে সমাধিস্থ হয়ে পড়েন । সেই সময় তাঁর হস্তই শিবহস্ত, তাঁর মুখই শিববক্ত্র । আনন্দ জ্যোতিতে উদ্ভাসিত গুরু শিষ্যের উপযোগী বীজমন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে তাঁর শিবহস্ত শিষ্যের মাথায় অর্পণ করেন । সঙ্গে সঙ্গে নাদ ও জ্যোতি প্রকট হয়ে যায় ।


*বাচিকী দীক্ষা--- গুরু তাঁর গুরুভাবে ভাবিত হয়ে নিজ দেহে স্বীয় গুরুশক্তির আবেশ ঘটান । নিজের বক্ত্রকে তখন গুরুবক্ত্ররূপে অনুভব করে শ্রদ্ধাপ্লুত অবস্থায় শিষ্যের নিকট দিব্যমন্ত্র প্রকট করে থাকেন।সেই সদ্যপ্রকটিত মন্ত্রের উপযোগী মুদ্রান্যাসাদি সাধন প্রণালীও শিখিয়ে দেন।


*মান্ত্রিকী দীক্ষা---এই দীক্ষায় গুরু মন্ত্রন্যাস যুক্ত অবস্থায় স্বয়ং মন্ত্রতনু হয়ে শিষ্যকে মন্ত্রদান করে থাকেন ।গুরু যে মন্ত্রতনু হলেন তা শিষ্য এই দেখে বুঝতে পারেন যে গুরুর ললাটে কিংবা বক্ষস্থলে শিষ্যের বীজ অত্যাশ্চর্য উপায় যেন ক্ষোদিত হয়ে জ্বলজ্বল- করছে ।

*হৌত্রী দীক্ষা--- গুরুকুণ্ডে বা স্থণ্ডিলে অগ্নিস্থাপন করে লয়যোগের ক্রমে শিষ্যকে দিয়ে প্রসিদ্ধ বেদমন্ত্রে ক্রমাগত আহুতি দেওয়াতে থাকেন । তাঁর সংকল্প থাকে শিষ্যের মলশুদ্ধি ও পাশ মুক্তি । বেদমন্ত্র হল---


ওঁ অগ্নিং দূতং বৃনীমহে হোতারং বিশ্ববেদসং
অস্য যঞ্জস্য সুক্রতুম ।।*

হোম করতে করতে শিষ্য প্রথমে খুব জ্বলন বা তাপ অনুভব করেন । এই যঞ্জাগ্নির তাপে শিষ্যের দেহাবস্থিত পাশ সমূহ দগ্ধীভূত হয় । তারপর শান্ত স্নিগ্ধ শীতলতার আবির্ভাব হয় । সেই স্নিগ্ধ অমৃতরসে শিষ্যের সকল সত্তা আপ্লাবিত হয়ে যায় ।

*শাস্ত্রী দীক্ষা--- গুরু তাঁর যোগ্য শুশ্রূষু ভক্তকে যে সাধনায় সিদ্ধ করতে চান কিংবা যে তত্ত্ব তিনি তার মধ্যে প্রকট করতে চান, সেই তত্ত্ব বিষয়ক বা সাধনা বিষয়ক গ্রন্থ শিষ্যের হাতে দিয়ে আশীর্বাদ করেন ।তাঁর আশীর্বাদের ফলে সেই তত্ত্ব বা সাধন রহস্য শিষ্যের অধিগত হয়ে যায় ।


উপনিষদে গল্প আছে, আরুণি, উদ্দালক ও উপমন্যু প্রভৃতির গুরু সেবায় তুষ্ট হয়ে তাঁদের স্ব স্ব গুরুবর্গ কোন সাধনা না করিয়েও কেবল আশীর্বাদ করতেন--- সর্ববিদ্যা তোমার অধিগত হোক, তুমি ব্রহ্মের স্বরূপ উপলব্ধি কর, আর গুরুর অমোঘ আশীর্বাদের গুণে তাঁরা অচিরাৎ ব্রহ্মবিদ্যায় পারংগম হয়ে উঠতেন ।এরই নাম শাস্ত্রী দীক্ষা।

*আভিষেচিকী দীক্ষা---এই দীক্ষার অপর নাম শিবকুম্ভভিষেক দীক্ষা। সাধারণতঃ একটি কুম্ভে শিব ও শিবানীকে পূজা করে শিষ্যকে মন্ত্রদান করা হয় ।সাধারণ তন্ত্র গ্রন্থে এই বিধান । কিন্তু শৈবাগমের ঋষিদের মতে, শিষ্যকে গন্ধপুষ্পাদি দ্বারা পূজা করে স্বয়ং গুরু তার দেহরূপ ঘটে আপন তপঃশক্তির বলে শিব ও শিবানীর আবেশ সঞ্চার করে দেন ।সেটাই যথার্থ আভিষেচিকী দীক্ষা । অন্তররাজ্যে প্রবেশ করার জন্য গুরু কর্তৃক শিষ্যের এই হল----অভিষেক ক্রিয়া ।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

No comments:

Post a Comment