Wednesday, May 23, 2012

উত্তরা সুষুম্নাই উত্তরাপথ; উত্তরায়ণের পথ; সাক্ষাৎ ব্রহ্মমার্গ:-

Cont...... (3)


স্বামী বিবেকানন্দ প্রণীত রাজযোগ, কলিকাতা হাইকোর্টের ভূতপূর্ব প্রধান বিচারপতি স্যার জন উড্‌রফ প্রণীত The Serpent Power প্রভৃতি পুস্তক ছাড়াও আর ও বহুবিধ তান্ত্রিক, হঠযোগী, স্বয়ংসিদ্ধযোগী হবুযোগীদের রচিত পুস্তক এমন সব ছবি প্রচারিত হয়েছে যে, যোগাভ্যাসী মাত্রেই ধারণা সার্দ্ধ ত্রিবলয়াকারা কুণ্ডলিনী লিঙ্গমূলে সর্পাকৃতি হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে। যোগের দ্বারা তা জাগবে এবং শির্‌ শির্‌ করে চক্র হতে চক্রান্তরে উঠে ব্রহ্মরন্ধ্রে গিয়ে ঢুকবে।সে সব ছবির কী বাহার! কুণ্ডলী-পাকানো একটি সাপ শিরদাঁড়ার ভিতরে ফোঁস ফোঁস করে উঠছে! আর পদ্মগুলি ফুটে উঠছে, কোনটিতে চারটি পাঁপড়ি, কোনটিতে ছয়টি, কোনটিতে দশটি, কোনটিতে দুটি!


ঐ ঐ শব্দের বৈদিক অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন! বেদে সসর্পরী বাক্‌, সর্প প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ আছে বটে, কিন্তু বেদঞ্জান বিরহিত অননুভবী তথাকথিত যোগীদের ধ্যান ধারণা সে পথ ধরে চলে নি।যোগচিন্তাপথে যে সব চক্র বা আধ্যাত্মিক কেন্দ্র উদ্ভাসিত হয়, সেগুলির অবস্থান বিশুদ্ধব্যোম মণ্ডলে।


আপনার ঘরের দেওয়ালে ভারতের একটি মানচিত্র দেখিয়ে যদি ছেলেকে বলেন, এই দেখ পশ্চিমবঙ্গ, এই হাওড়া পূর্বদিকে দেখ আসাম, ঐ দেখ উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, তা বললে যেমন আপনার ঘরের দেওয়ালে সত্যি সত্যি ঐ সব স্থান থাকে না, তেমনি অনুভবসিদ্ধ যোগীরা সাধরণভাবে আধ্যাত্মিক তত্ত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেছেন----


If this be the lowest plexus Muladhar, then this is the highest i.e. Sahasrar. সত্যি সত্যি দেহের মধ্যে ঐ সব চক্র বা সর্প নাই।


জীবের মধ্যে যে চৈতন্য ধারা নখাগ্র থেকে কেশাগ্র পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে তার কেন্দ্রস্থল, সেই ধারার accumulating centre আঞ্জাচক্র নামে অভিব্যক্ত।ধ্যানবিন্দু উপনিষদের মতে ঐটাই যদি জীবাত্মা, রুহ্‌ বা সুরতের স্থান হয় অ র্থাৎ আপনার 'আপনি' যদি ঐখানে থাকে তাহলে তার ঊর্ধ্বের পথে অভিসার ঐখান থেকেই হবে! মনে করুন, একটি সাততলা অট্টালিকার উচ্চতম তলায় আপনার বাবা আছেন, আপনি আছেন ছয় তলায়, বাবার সঙ্গে দেখা করার জন্য আপনি কি নীচতলায় নেমে এসে পুনরায় প্রত্যেক তলায় সিঁড়ি ভেঙে সাত তলায় যাবেন?


আঞ্জাচক্রে ধ্যান বলতে প্রায় প্রত্যেকেই ভ্রূদ্বয়ান্তর্বতী স্থানকে বোঝেন, তাই সকলেই চোখ বন্ধ করে ঐ স্থানে ধ্যান জপ করেন।কিন্তু ঐ স্থান আঞ্জাচক্র নয়, চিত্রে প্রদর্শিত বৃত্ত মধ্যস্থ ক্রশ চিহ্নে চিহ্নিত স্থানটিই আঞ্জাচক্র, যোগী বা যোগাভ্যাসীর প্রকৃত হৃদয়।


এই চিত্রে চিহ্নিত স্থানেই ধ্যান করে পিতৃসাধনা সুরু হয়, কিছুদিন অভ্যাস করলেই দিব্য জ্যোতির প্রকাশ ঘটে। এই জ্যোতি হঠযোগী ক্রিয়াযোগী তান্ত্রিক প্রভৃতি আবিষ্কৃত চোখ-কান টেপা, ন্যাস প্রাণায়াম কুম্ভকের কুহেলিকা নয়, মায়া কী প্রাঙ্গন মেঁ মজ়ে কা খেল্‌ নয়, কোন বাহ্যিক ক্রিয়া প্রক্রিয়ার প্রহেলিকা নয়, এই জ্যোতিই প্রকৃত চৈতন্য রাজ্যে প্রবেশের ছাড়পত্র।


বেদানুসারী যোগসন্ধ্যাধৃত বচনটি  হল---


অকল্পিতোদ্ভবং জ্যোতিঃ স্বয়ং জ্যোতিঃ প্রকাশিতম্‌
অকস্মাৎ দৃশ্যতে জ্যোতিস্তৎ জ্যোতিঃ পরমাত্মনি।

যে জ্যোতি বিনা কল্পনায় বিনা প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়, যে জ্যোতি স্বয়ং প্রকাশিত হয় এবং যে জ্যোতি হঠাৎ দেখা যায়, সেই জ্যোতি পরমাত্মার জ্যোতি। এই পরমাত্ম-জ্যোতিতেই পিতৃলোক উদ্ভাসিত।

বিঞ্জানাচার্যদের আচার্য ঋষি আইনষ্টাইন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকারিণী প্রকৃতি শক্তির লীলাবিলাস বর্ণনা করতে গিয়ে সঙ্কেতে বলেছেন, 

E=(MC)squre; E= শক্তি (Energy), M= পদার্থ (Mass), C= আলোর গতি (Velocity of light)।

তাঁর সাঙ্কেতিক ফরমূলার সরল অর্থ, আদ্যাশক্তি আলোগতি রূপে বিভিন্ন অনুপাতে প্রত্যেক পদার্থে সন্নিবিষ্ট আছেন।প্রত্যেক পদার্থই আদ্যাশক্তির বিভিন্ন রূপ।

গীতায় এই কথা বলতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন---


 "মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ"। 


অংশ বলতে সবাই বোঝেন ভাগ। কিন্তু পূর্ণের কোন ভাগ বা খণ্ড হয় না। অংশ অর্থে অংশু বা কিরণ, বৈদিক পরিভাষায় স্ফুরজ্যোতিঃ। সকল জীবই সেই একই ব্রহ্মশক্তির স্ফুরিত জ্যোতির ধারা মাত্র।

বেদের মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি দীর্ঘতমা আরও সুন্দরভাবে ঐ তত্ত্ব পরিস্ফুট করতে গিয়ে বলেছেন, ঐ আদ্যাশক্তি--- "সা চিত্তিভিনি হি চকার মর্ত্তং বিদ্যুদ্ভবন্তী প্রতি ব্রবিম্‌ ঔহৎ"। 

অর্থাৎ তাঁর চঞ্চল গতি সমূহের চরণপাতে অর্থাৎ স ংঘাতে সৃষ্ট প্রত্যেক মর্ত্যজাত পদার্থের মধ্যে বিদ্যুৎরূপা হয়ে নিজের স্বরূপ উদ্‌ঘাটিত করে দেন।


আইনস্টাইন যাঁকে বলেছেন আলোগতি, বৈদিক-বৈঞ্জানিক দীর্ঘতমা তাঁকেই বলেছেন---বিদ্যুৎগতি। সঙ্কেতে এই শক্তির সৃষ্টি-প্রক্রিয়া বর্ণনা করার সময় বৈদিক ঋষি তথা বৈঞ্জানিকরা বিভিন্ন স্তরের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য নানা বর্ণাত্মক অক্ষর ব্যবহার করতেন,সেইগুলিকে বর্তমানে বীজমন্ত্র বলা হয়। যার অন্তনির্হিত তাৎপর্য না বুঝেই লক্ষ লক্ষ ভক্ত নিরন্তর জপ করে চলেন।


যেমন একটি বীজ মন্ত্র, ধরুণ---হ্রীঁ। একে রূপকভাবে মায়াবীজ, ভুবনেশ্বরী বীজ ইত্যাদি বলা হয়। আসলে এর তাৎপর্য হল----আকাশ তত্ত্ব (হ) এর সঙ্গে প্রাণাগ্নিশক্তি (র) যুক্ত হয়ে সম্বিদ্‌ক্ষেত্র বিন্দুতে (ঁ) অর্থাৎ উর্ধ্বের পথে তার কেন্দ্রমুখীন্‌ যে অগ্রগতি বা অভিসার, ঐ বীজ তারই সূচক। চিত্রপদর্শিত প্রকৃত আঞ্জাচক্রে জপ ধ্যান করলে তবে মহাচেতন সমুত্থানের পথে অগ্রগতি সম্ভব হবে।


উপরে এই যে বিদ্যুৎরূপা শক্তি, বা চৈতন্যধারার কথা বলা হয়, ঐ শক্তি বৃত্তধর্মযুক্তা, বৃত্তধর্মসৃষ্টিকারিণী অর্থাৎ বৃত্তকারে ঐ তেজের ঢল নেমে আসে, বৃত্তকারেই কেন্দ্রীভূত হয়। একথা সবাই জানেন, একটি বিন্দু কেন্দ্রকে আশ্রয় করে প্রসারতা লাভ করলে একটি বৃত্ত হয়।


বৃত্তের সাধারণতঃ পরিধি পর্যন্ত সর্বাঙ্গের প্রত্যেকটি বিন্দু পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে আবার কেন্দ্রের সঙ্গেও যুক্ত থাকে।বৃত্তের সাধারণ ধর্ম বহির্মুখী (Centrifugal) হলেও এর প্রত্যেকটি অঙ্গ-বিন্দুযুগপৎ কেন্দ্রোন্মুখীও (Centripetal) হয়, যুগপৎ চর ও অচর।


শব্দ বা বাক্‌ অর্থাৎ স্পন্দন (Vibration) বৃত্তকারে চরাচর বিশ্বভুবনময় বিস্তারিত হওয়ার ফলেই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছু পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি-বিঞ্জানের রহস্যই এই। প্রত্যেক পদার্থ ঐ তেজ বিদ্যুৎ বা শক্তির তরঙ্গ ভিন্ন আর কিছু নয়।প্রত্যেক তরঙ্গের মধ্যে পূর্বোক্ত আদিশক্তি বিদ্যুৎরূপে অবস্থিত। সুতরাং একথা স্পষ্ট হল যে ঐ শক্তি বিদ্যুৎরূপা হয়ে বৃত্তধর্মী তরঙ্গ রূপে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃজন ও পরিচালনা করছেন। চিত্র প্রদর্শিত মস্তিষ্কগ্রন্থিতে বৃত্তচিহ্ন দ্বারা সেই তত্ত্বটিকে সূচিত করা হয়েছে।


To  be  Continued..........

No comments:

Post a Comment