Monday, January 6, 2014

"পিতরৌ" হী পরমং তপঃ ---


পিতা  জীবন্ত  ঈশ্বর, মাতা  জীবন্ত  ঈশ্বরী, তাঁদের  সেবা  পরিচর্যাই জীবনের  মুখ্য  কর্তব্য, মাতা  বা  পিতার  ধ্যান  জপেই  জীবনের পরম  শ্রেয়োলাভ  হতে  পারে। মাতা  পিতাকে  উপেক্ষা  করে  অন্য কোন  অদৃশ্য  দেবতার  কৃপালাভ  করার  জন্য  যতই  তীব্র  সাধন- ভজন  করা  হোক্‌  না  কেন, তা  ভস্মে  ঘৃতাহুতি  মাত্র।

এ জগতে  কেউ  একটু  বেশী  Father-centric , কেউ  বা  একটু বেশী Mother-centric  অর্থাৎ  কারও  মায়ের  প্রতি  যথোচিত  শ্রদ্ধাভক্তি থাকলেও  বাবার  উপর  টান  বেশী, কারও  বা  পিতার  উপর শ্রদ্ধাভক্তি  থাকলেও  মায়ের  উপর  টান  বেশী  থাকে। এটি স্বাভাবিক এবং  সচরাচর  বহুক্ষেত্রেই  দেখা  যায়। পিতার  চরণে প্রণাম  করলে তা  মাতার  চরণে  পৌঁছায়
, মাতার  চরণে ধূল্যবলুণ্ঠিত হলে  তাও পিতা  গ্রহণ  করেন, পিতা  তৃপ্ত  হন। কারণ, উভয়ে  একই তত্ত্বের  দুই ভিন্ন  ভিন্ন  প্রকাশ  মাত্র। উভয়ে একত্রে শিব-শিবানী --- অর্ধনারীশ্বর।

বেদের  বিধান --- সর্বপ্রথম  পিতৃপূজা। মাতা  বা  পিতৃতত্ত্ব  এমনই মধুরতম  শ্রেষ্ঠ  তত্ত্ব  যে, ক্রান্তদর্শী  বৈদিক  ঋষিরাও  ভক্তি  ও ভাবাবেশে  উচ্ছল  হয়ে, তাঁরা  বিভিন্ন  বেদ  মন্ত্রে  একই  কথা বারবার  বলছেন ----


ওঁ  অগ্নয়ে  কব্য  বাহনায়  স্বাহা।
সোমায়  পিতৃমতে  স্বাহা।।

হে  অগ্নে!  তুমি  কব্য  বহন  করে থাক, অতএব  আমাদের প্রাণপুরুষের  পিতৃগণের  উদ্দেশ্যে  এই  কব্য  তোমার  নিকট সমর্পণ করছি, এই  আহুতি  স্বাহুতি  হোক। হে  সোম, তুমি  পিতৃগণের অধিষ্ঠান, অতএব  তোমার  উদ্দেশ্যে  এই  কব্য  অগ্নিতে  হবন করছি, এই  আহুতি  স্বাহুতি  হোক।

দেবতার  উদ্দেশ্যে  যা  দেওয়া  হয়, তা  হব্য। পিতৃগণের  উদ্দেশ্যে হৃদ্য  ও  উপাদেয়  যা  কিছু  অগ্নিতে  দেওয়া হয়, তার  নাম  কব্য।

দেবতা  ও  পিতৃপুরুষ  অগ্নিমুখেই  গ্রহণ  করেন। মাটির  উপর  কুশ পেতে  পিণ্ডার্পন  প্রভৃতি  পরবর্তী  যুগের  ব্যাপার, পৌরহিত্য- তন্ত্রের অবদান।

ওঁ  আয়ন্তু  নঃ  পিতরঃ  সোম্যাসোহগ্নিষ্বাত্তা
পথিভির্দেবযানৈঃ।।

পিতৃগণ, দেবযানে  আগমন  করুন। অগ্নি  আপনাদের  দেহ  গ্রহণ করেছে  কিন্তু  আত্মা  অবিকৃতই  আছে, অগ্নিমুখে  আমাদের  এই অন্ন গ্রহণ  করুন।

ওঁ  যে  নঃ পিতুঃ পিতরো  যে  পিতামহা  য  আবিবিশুরুর্বন্তরিক্ষম্‌।
য  আক্ষিয়ন্তি  পৃথিবীমুতদ্যাং  তেভ্যঃ  পিতৃভ্যো  নমসা  বিধেম।।

আমাদের  পিতৃগণ  যারা  বৃহদাকাশে  "উরু  অন্তরীক্ষং"  প্রবেশ করেছেন, সহজ  কথায়  দিব্যলোকে  আছেন  অথবা  আকাশ  ও পৃথিবী  আচ্ছাদন (আক্ষিয়ন্তি)  করে  বিরাজিত, সকলের  মঙ্গল  ও তৃপ্তিবিধানের  জন্য  অগ্নিতে  প্রাণের  অর্ঘ্য  নিবেদন  করছি।

ওঁ  যে  নিখাতা  যে  পরীপ্তা  যে  দগ্ধা  যে  চোদ্ধিতাঃ।
সর্বাংস্তানগ্ন  আবহ  পিতৃন  হবিষে  অত্তবে।।

পিতৃগণের  দেহ  প্রোথিত  হোক  বা  যেরূপই  তার  পরিণাম  ঘটুক না কেন, হে  অগ্নে!  তাঁদের  ভোজনের  জন্য (অত্তবে)  অর্থাৎ তৃপ্তির অভিপ্রায়  এই  হবিঃ  হোমের  পদার্থ  বহন  করে  নিয়ে  যাও।

মন্ত্রদ্রষ্টা  বৈদিক  ঋষিগণ  উপলব্ধি  করেছিলেন  যে --- মাতা পিতা ও পিতৃগণের  আশীর্বাদ  মর্ত্যের  অমৃত। মাতা  পিতার  প্রত্যক্ষ সেবা পরিচর্যাকে  পূজা  ও  যঞ্জের   মর্যাদা  দেওয়া  হয়েছে। মাতা পিতা জীবিত  থাকলে  তাঁদের  সেবা  যত্নকে  উপেক্ষা  করে  কেবল অহরহ মাতা  পিতার  সিদ্ধ  বীজ  জপ, ধ্যান  বা  কব্যাহুতিতে কোন কাম্যফল  লাভ  হবে  না।  দুই-ই  করতে  হবে।  তবেই  অমূর্ত্ত পিতৃপুরুষ  তুষ্ট  হবেন।  অবশ্য  যাঁদের  মাতাপিতা  লোকান্তরিত হয়েছেন  তাঁদের  পক্ষে  মাতাপিতার  জপ  ধ্যান  এবং  তাঁদের উদ্দেশ্যে  অগ্নিমুখে  কব্য  দানই  মুক্তির  সরণী।

মহাপ্রভু  বলেছেন ---  কৃষ্ণনামে  চেতোদর্পণমার্জনম্‌  অর্থাৎ চিত্তরূপ দর্পণ  পরিমার্জিত  হয়। বৈদিক  ঋষিরা  সহজতর  পথের সন্ধান দিয়ে বলেছেন --- মাতা  পিতার  সশ্রদ্ধ  সেবা  পরিচর্যায় জীবের  চিত্ত  মল নিত্য  পরিমার্জিত  হয়,  চিত্ত  শুদ্ধি  ঘটে। এইভাবে চিত্তরূপ দর্পণ যার পরিমার্জিত  হয়েছে --- তারই  পিতৃযঞ্জে অধিকার।


To  be  continued......









No comments:

Post a Comment