Sunday, May 11, 2014

মহর্ষি গালব:------


Cont(2).........

দীর্ঘকাল পরে প্রাণাধিক প্রিয় শিষ্যকে প্রত্যাগত দেখেও স্নেহময় ঋষি কোন স্বস্তিবচন উচ্চারণ করলেন না। বরং তিনি বেদনাহত কণ্ঠে বললেন --- গালব তোমার পাতিত্য দোষ ঘটেছে। 
বিভূতির প্রকাশ দেখিয়ে তুমি সাধনার ব্যাভিচার ঘটিয়েছ। বৈদিক ভারতবর্ষের এটি চিরাচরিত বৃত্ত নয়। অত্যন্ত নিম্ন কোটীর যোগীরাই অস্মিতা ও অবস্পন্দনের দোষে আচ্ছন্ন বলেই তাদেরকে ঘিরে অলৌকিক শক্তির প্রকাশ ঘটে যায়। বিভূতি আত্মজ্যোতির অবস্পন্দন বা কুফল মাত্র। 

বৎস, ঞ্জানসিদ্ধিই ঋষিদের আরাধনার বস্তু। যে অমৃতবিদ্যা মানুষের জীবনকে প্রদীপ্ত করে, পরিতৃপ্ত করে এবং প্রসন্ন করে --- সেই বিদ্যাই ঞ্জানসিদ্ধির পথ। তা কোন অলৌকিক শক্তির যাদুক্রীড়া নয়, লোমচমৎকারী ইন্দ্রজাল প্রদর্শন করাও নয়। এই অমৃতবিদ্যা কখনও অনায়াস লভ্য নয়, তারজন্য চাই অবিশ্রান্ত যত্ন, চাই অবিরাম তপস্যা। শ্রম ও তপস্যায় সেই ব্রহ্মবাণী সৃষ্ট হয়। ভক্তি ও ঞ্জানে তাকে প্রাপ্ত হওয়া যায়। সেই সুগভীর সত্য ঋতে আশ্রিত, সত্য তার আবরণ, সত্য তার বিজয়শ্রী, কল্যাণে তা প্রাকৃত, যশে তা পরিবৃত। দিব্যশক্তিকে সংগোপনে অবলীলাক্রমে ধারণ করে আত্মসাৎ করার মধ্যেই কৃতকৃত্যা। যাও অযথা লোক সংগ্রহ বা বৃথা পরিব্রাজন ত্যাগ করে নির্জনে গভীর তপস্যায় নিমগ্ন হও। বেদঞ্জান আহরণ করার তপস্যাতেই জীবনে আসে অভ্যুদয়। আসে উদয়ণ।

নতমস্তকে গুরুর আদেশ শিরোধার্য করে গালব চলে গেলেন তপস্যার জন্য। এক নির্জন গিরিগুহায় ধ্যানাসনে বসলেন তিনি। দিন যায়, বর্ষ যায়, অবিচলিত নিষ্ঠায় ধ্যানমগ্ন রইলেন গালব। বৎসরের পর বৎসর উৎক্রান্ত হয়ে গেল। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষার উপদ্রব, তুষারের প্রবল বিড়ম্বনাও তিনি হাসি মুখে সইতে লাগলেন। 


অবশেষে সেই পরম বাঞ্ছিত দিনটি তাঁর জীবনে দেখা গেল। তিনি দেখলেন --- সমগ্র হিরন্ময় আকাশ, ভর্গজ্যোতির চকিত চমকে ভাস্বর হয়ে উঠলো, তাঁর অন্তরসত্তা ও বহির্সত্তা দ্যুলোক ভূলোক ব্যপ্ত করে প্রকট হয়ে উঠল বেদবাণী ---


"জ্যোতির পুত্র আমরা --- উদ্বোধন আমাদের, অভ্যুদয় আমাদের --- আমাদের জন্যই পরমাস্থিতি আনন্দচকিত ভূমি, বিদ্বেষ এবং দ্রোহ যেন পরাজয় লাভ করে। এই কথা বলেছেন অগ্নি --- যার দিব্যজ্যোতি জীবনকে ভাস্বর করে তোলে। এই কথা বলেছেন সোম --- যার আনন্দপ্রবাহ বিচিত্র এবং মুক্তছন্দ। আমরা পেয়েছি অমৃতলোকের স্বরূপজ্যোতিঃ --- পেয়েছি পরাসংবিদের পরমাদ্যুতি। যাঁর তেজের দিব্যরাগিনীতে দ্যুলোক অনুপ্রাণিত এবং উজ্জীবিত --- সেই আদিত্যের পরম জ্যোতিস্বরূপকে আমরা জেনেছি --- আমরা পেয়েছি আলোর অমৃতভাণ্ডার।

আহারে! এত আলো এত জ্যোতি এত অমৃতের মধুচ্ছন্দরূপ, সে যে প্রতি জীবের চিদ্‌গুহাতেই সংগুপ্ত আছে। জীব! ওঠ, ওঠ, জাগো জাগো, এই পরাকণ্ঠীর জন্য এই দিব্য প্রৈতির জন্যই যে তোমার মনুষ্যদেহে অবতরণ। জীবনটা তো তোমার যঞ্জ ছাড়া কিছু নয়। এই যঞ্জ বসুমান, জীবনের হবি দিয়ে এই যঞ্জকে পূর্ণ কর।

তোমার উর্ধরতি রসান্বিত হোক। যে জীবন উৎসৃজিত, যে জীবন ঊর্ধের অভিসারে আকুল, সেই জীবনেই জেগে উঠে সচ্চিদানন্দের চিদ্‌বিলাস। সংসার অভিযানে ক্লান্ত আমরা। আমাদের চাই এই পরমানন্দের পরিস্ফূরণ। দুঃখের অরণি মন্থন করে আমরা জ্বালাতে চাই ক্রতুময় বহ্নিশিখা। আমাদের জীবনের তপস্যায় জেগে উঠুক আনন্দ সমুদ্রের কল -কল্লোল। জীবনের পরমা হ্রী ও শ্রী এই পথে ওঁ বসুমান ভূয়ামং বসুময়ি ধৈহি।"

ব্যুত্থানের পর গালব দেখলেন ঋষি বিশ্বামিত্র তাঁর সম্মুখে দণ্ডায়মান রয়েছেন। গুরু আনন্দে আত্মহারা। বুকে জড়িয়ে ধরে বারবার আলিঙ্গন করে গালবকে পরিয়ে দিলেন অক্ষমালা। 


গদগদ কণ্ঠে তিনি বললেন --- গালব, আজ থেকে তুমি মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিকুলে স্থান পেলে। তোমার নিকট প্রকটিত বেদমন্ত্র জ্যোতির অক্ষরে লেখা থাকবে মানুষের পরম ঊর্ধায়ণের কথা। আলোর পিপাসা আর তার পরিতৃপ্তি এবং অমৃতের পথে তার উত্তরণের পরমা আশ্বাস বিধৃত হয়ে উঠল এই বাণীতে। দেখ পরমেষ্ঠী গুরুকুল ঋষিকুল বদ্ধ করে তোমাকে প্রণাম জানাচ্ছে। দক্ষিণা দাও বৎস, দক্ষিণা দাও।


মুগ্ধ, আবিষ্ট, পরম পরিতৃপ্ত, আপ্তকাম গালব নিবেদন করলেন --- আদেশয়! যত্তে মনসি বর্ততে। আপনি যা আদেশ করবেন তাই আমি পালন করব। ......



To be continued..........








No comments:

Post a Comment