Monday, September 1, 2014


Cont (Last) ............


তারপর মন্দিরে ঢুকে পাশাপাশি অবস্থিত ভূতনাথ নামে অভিহিত তিনটি শিবলিঙ্গকে আমি আমার মত করে পূজা করতে আরম্ভ করলাম। শিব তিনটিতে জল ঢেলে মার্জনা করছি, এমন সময় দেখলাম ১২ টি বার রকমের পাখী নানারকম শব্দ যথা --- কেউ কিচিরমিচির, কেউ টুংটুং, কেউ টিয়ার মত বুলি, কেউ ট্যাঁ-অ্যাঁ-অ্যাঁ করতে করতে মন্দিরের চারপাশে ঘুরপাক খেতে লাগল। আমি সেই পক্ষীকুলের কলতানের মধ্যে পূজা করতে লাগলাম ভূতনাথের। পূজা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময় মুখ তুলে দেখি, 'ঠুক্‌ ঠুক্‌' লাঠির শব্দ করতে করতে মহাত্মা ফিরে এসেছেন। একটি শাল পাতায় মোড়া এক ডেলা ছানা ও তিনটি কলা ভূতনাথের সম্মুখে রেখে ভোগ নিবেদনের ইঙ্গিত করলেন। আর একটি শাল পাতায় মোড়া পৃথক এক ডেলা ছানা নিয়ে তা ভেঙ্গে ভেঙ্গে পাখীদের মধ্যে বিলোতে লাগলেন।


পাখীরা তাঁর হাতের উপর কাঁধের উপর বসে ঠুকরে ঠুকরে খুঁটে খুঁটে খেতে লাগল। আমার ভোগ নিবেদনও শেষ হল, পাখীরাও তাঁর হাতে ছানা খেয়ে উড়ে গেল বনে। একটা জিনিষ লক্ষ্য করলাম, তিনি ভোগ নিয়ে আসার পূর্বে মন্দিরের মধ্যে ঢুকেও কয়েকটা পাখী যত্রতত্র নেচে বেড়াচ্ছিল, কিন্তু তিনি এসে পৌঁছানো মাত্রই সকলে তাঁকেই ঘিরে ছিল। তাঁর হাতের ছানা শেষ হয়ে গেলেও শিবলিঙ্গের সামনে ছানা শাল পাতাতে থাকলেও কোন পাখী স্বাভাবিক প্রবৃত্তি বশে সেদিকে দৃকপাতও করল না।


পূজা ও প্রণাম করে দরজার বাইরে এসে তাঁর পায়ে ফুল চাপিয়ে সাষ্টাঙ্গে ভক্তি নিবেদন করলাম। তখন থেকে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঁকি মারছে, ভারোচে ইনি দেখা দিয়েছিলেন কিনা জিঞ্জাসা করি, কিন্তু খুবই অশোভন হবে বলে জিঞ্জাসা করতে সাহস করলাম না। ভাবলাম, একই গান উভয়ের মুখে শুনেছি বলে যে উভয়েই একই ব্যক্তি হবেন, এমন কোন কথা নেই। একই গানের ভাষা দুজন কেন দুশ জনেরও জানা থাকতে পারে!


---- লেও শৈলেন্দ্রনারায়ণজী! ভুতনাথজীকে কা পরসাদী পা লিজিয়ে।


আমার চিন্তাসূত্র ছিন্ন হল। তিনি কিছু গ্রহণ করবেন কিনা বলতে যাবো, এমন সময় তিনি নিজেই বলে উঠলেন --- লেওজী, ইধর বৈঠকে পা লিজিয়ে, করীব এক বাজ গিয়া হোঙ্গে। আপ তো জানতে হো, হম্‌ কুছ্‌ লেতে নেহি।


সশব্দে একটা উদ্‌গার তুলে বললেন --- কয় রোজ পহেলে ভারভূতি মেঁ ভারভূতেশ্বর জী মুঝে জবর দস্তিসে বহোৎ কেলা ঔর নড়াইল খিলায়ে থা। আভি শ' সাল ইসীমেঁ বীত জায়েঙ্গে।


আমার সংশয় মোচন হল, আমি ভূতনাথের প্রসাদ খেয়ে নিলাম।"




ভূতনাথের মন্দির ---

স্মরণাতীতকাল পূর্বে ঐ ভূতনাথের স্থানে একজন শৈব মহাযোগীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব স্বয়ম্ভূলিঙ্গ রূপে প্রকট হন। শিবলিঙ্গ আবির্ভাবের কালে আকাশ মণ্ডল ভেদ করে তাঁর কাছে একটি একাক্ষরী দিব্যমন্ত্র প্রকট হয়। আনন্দে অভিভূত হয়ে সেই মহাযোগী প্রচণ্ড উল্লাসে নৃত্য করতে করতে প্রাণপণে চিৎকার করে ঐ বীজ দুবার উচ্চারণ করেন এবং অপার বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেন যে, পূর্বোক্ত শিবলিঙ্গের পাশে আরো দুটি স্বয়ম্ভু লিঙ্গ সঙ্গে সঙ্গে প্রকট হয়েছে। জাপ্য মূলবীজকে প্রকাশ্যে উচ্চারণ করায় সেখানে তৎক্ষণাৎ নন্দী, ভৃঙ্গী, বীরভদ্র, ঘণ্টাকর্ণ বহুতর রুদ্রপিশাচের আবির্ভাব ঘটে।


নিয়মবিরুদ্ধ কাজের জন্য চিরতরে তাঁর জিহ্বা স্তব্ধ হয়। তিনি অতঃপর যতকাল জীবিত ছিলেন ততদিন সংকেতে বা লিখে লিখে সমাগত ভক্তদের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করতেন। তাঁর তপস্যার প্রভাবে ভূতনাথ মহাদেবের আবির্ভাব ঘটেছিল বলে, তাঁকে লোকে ভূতনাথ বাবা বলে ডাকতেন।


এই মহাযোগীর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, তাঁর সামনে কেউ এসে পৌঁছালেই সেই ভক্তের মনে এবং জিহ্বায় আপনা হতেই মহাদেবের একাক্ষরী মহাবীজ স্ফুরিত হত।


কালক্রমে তাঁকে কেন্দ্র করেই একটি বিরাট আখড়া গড়ে ওঠে। আখড়ার নাম হয় ভূতনাথ আখড়া। রুখড়, সুখড় এবং অগন নামক আখড়া এই ভূতনাথ আখড়ারই অন্তর্গত। তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যরা কারিগরী কৌশলে ভূতনাথ মন্দিরের চারদিকে সারি সারি গাছ লাগিয়ে "লক্ষ্মৌ এর ভুলভুলাইয়া" নির্মাণ করেছিলেন। সেইসব গাছপালা ক্রমে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। "লক্ষ্মৌ এর ভুল ভুলাইয়াতে" প্রবেশ করে সাধারণ যাত্রী যেমন বিভ্রান্ত হয়, সঠিক পথ সহজে খুঁজে পায় না, তেমনি ভূতনাথের জঙ্গলে প্রবেশ করে পথ খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য।


রুদ্রপিশাচ বা ভূত প্রেতাদির গল্প সম্পূর্ণ কুসংস্কার প্রসূত। যেখানে ভূত আছে সেখানে ভূতনাথও আছেন।



https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

No comments:

Post a Comment