Monday, February 24, 2014

"শিবভূমি কেদারতীর্থ" ------


Cont (last)..........


সন্ধ্যার প্রাকক্ষণে মন্দাকিনীর পবিত্র ধারায় আচমন করে কেদার দর্শনের জন্য মন্দিরাভিমুখে যাত্রা করলাম। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাসে হাড়ে কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে। কালো গ্রানাইট প্রস্তর নির্মিত সুশোভন মন্দিরের বাম দিকে হনুমানজী, দক্ষিণে পরশুরাম ও মধ্যস্থলে সম্মুখে বিঘ্ন-বিনাশন গনেশজী। ভিতর ভাগে নাতি-প্রশস্ত অঙ্গন, যা দেখতে অনেকটা নাট মন্দিরের মত। পদ্মখোদিত গর্ভগৃহের ছাদ নাটমন্দিরের বামভাগে লক্ষ্মীনারায়ণ, দক্ষিণে পার্বতী, মধ্যস্থলে নন্দীগণ ও বৃষমূর্তি। এইসব দর্শন করতে করতে তুষারনাথ কেদারেশ্বরের সুবৃহৎ জ্যোতির্লিঙ্গের সম্মুখে উপবিষ্ট হলাম।


পাণ্ডার "ওঁ ত্র্যম্বকং যজমহে" মন্ত্রপাঠের মধ্যে আমি (লেখক) দর্শন করতে লাগলাম সেই হিম-গিরিশীর্ষ-শোভী তুষার প্রচ্ছন্ন কেদার-তীর্থকে, যা সুর-নর-মুনি বন্দিত জটাজূটধারী ত্র্যম্বকের অবিচল ধ্যান মূর্তি! ধ্যান নিমীলিত নেত্রে মহাদেবে পূজার পর বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রণাম জানালাম আমার ঋষি-পিতাকে। যাঁর নির্দেশে আজ আমি এস্থানে উপস্থিত হয়েছি। এই তীর্থ যাত্রায় যেন আমার সকল সাধনা সফল ও সম্পূর্ণ।


পাণ্ডা ঠাকুরের সঙ্গে ধর্মশালায় ফিরে এলাম। আমি তাকে দক্ষিণা দিয়ে বিদায় করতে চাইলাম। কিন্তু পাণ্ডা ঠাকুর আমার ঘরে বসে পড়ে বলতে লাগলেন --- আপনাকে আমার ভালো লেগেছে। তাই যাবার আগে আপনাকে কেদারের এক গুপ্ত রহস্য বলে যাচ্ছি---


উত্তরাখণ্ডে বর্ণিত সুবিশাল কেদার-তীর্থের মাহাত্ম্য সকলেরই দৃষ্টিতে অতুলনীয় হলেও জানবেন বাইরের প্রকৃতিতে যেভাবে মন্দাকিনী, সরস্বতী, মধু-গঙ্গা, দুধ-গঙ্গা বয়ে এসেছে, ভৈরব মূর্তি পাহাড়ে যেভাবে যেস্থানে অবস্থান করছে তারই ক্ষুদ্র প্রতিরূপ হল এই মন্দিরস্থ প্রাণনাথ। বাইরে কেদারের যেমন বিশাল অচঞ্চল রূপ তেমনি ভিতরে তার ক্ষুদ্র সংস্করণ।


তারপর আমাকে বাইরে যাবার ইঙ্গিত করে বললেন --- আসুন, আপনাকে একটা মজার দৃশ্য দেখাই। ঘোর অমাবস্যার রাত্রিতে এই জমে যাওয়া ঠাণ্ডায় বাইরের দিকে ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন  সমগ্র কেদার-খণ্ড যেন কাক-জ্যোৎস্নায় উদ্ভাসিত। মনে হবে পাহাড়ের মাথায় যেন লক্ষ ওয়াটের আলো জ্বালা হয়েছে আর তাতেই যেন সারা অঞ্চল আলোকিত হয়ে আছে। এখন মন্দির বন্ধ। কিন্তু মন্দিরাভ্যন্তরস্থিত প্রাণনাথও এরকম উজ্জ্বল ও জ্যোতির্ময় যা দিনের বেলায় আলোর মধ্যে দেখা যায় না।


লিঙ্গ গাত্রে কান পাতলে শুনবেন শঙ্খ-নিনাদ যা বাইরের নদীগুলির রবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 'জয় কেদারনাথের জয়' বলতে বলতে তিনি আর এক মুহুর্তও থামলেন না। তাঁর চলে যাবার পর ঘরে এসে দেখি আমার প্রদত্ত দক্ষিণা পড়ে আছে আমার বিছানার পাশে। দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে আর পাণ্ডা ঠাকুরের হদিশ পেলাম না।


এই অলৌকিক দৃশ্য দর্শনের পর সারারাত্রি দু'চোখের পাতা এক করতে পারলাম না। সকালে উঠে হিম শীতল ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে মন্দিরে উপস্থিত হলাম। মন্দিরের দরজা সবে খুলেছে। এক বৃদ্ধ পূজারী পূজার আয়োজন করছেন। আমাকে দেখেই বললেন --- আ গিয়া। আমি তাঁর কথার কোন উত্তর না দিয়ে পাণ্ডা ঠাকুরের কথা অনুযায়ী কেদারনাথজীকে নিরীক্ষণ করতে লাগলাম। লিঙ্গগাত্রে কান পাততেই শুনতে পেলাম শত শত মৃদঙ্গের তালে তালে অপূর্ব মধুর বোল। বুঝলাম তাঁর কথা বর্ণে বর্ণে সত্যি!


ঐ পাণ্ডাঠাকুরের অনেক খোঁজ করলেও তাঁর দর্শন মেলে নি। অদ্ভুত অভিঞ্জতাকে সঙ্গে করে, কেদারনাথকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম নিবেদন করে কেদার খণ্ড ত্যাগ করে ফিরে চললাম বাড়ীর পথে।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191


No comments:

Post a Comment