Monday, May 13, 2013

*** মাতৃস্নেহের মাত্রা কেহ জানেনা ধীমান্‌ !


Cont ......(last)

চোখ  বন্ধ  হওয়ার  সঙ্গে  সঙ্গে  আমার  চোখে  এক  অপরূপ  দৃশ্য  ফুটে  উঠল। ফুটে  উঠল  এই  মন্দির। আমরা  হর  নর্মদে  বলতে  বলতে  অর্জুনেশ্বর  মন্দিরে  এসে  পৌঁচেছি, দড়াম  করে  মন্দিরের  দরজা  খুলে গেল। সেই  শুক্লবসনা  শুভ্রকেশী  বৃদ্ধা  গলায়  রুদ্রাক্ষ মালা, দুধের  কলসী  হাতে  নিয়ে  বেরিয়ে  এলেন। অপলক  দৃষ্টিতে  তাঁর  দিকে  তাকিয়ে  আছি।


ধীরে  ধীরে  তাঁর  দেহাভ্যন্তর  থেকে  প্রকটিত  হল  আর  এক  দিব্যাঙ্গনা, জ্যোতির্মণ্ডিতা  মায়ী। সেই  মায়ের  ডান  হাতে  ত্রিশূল বাম  হাতের  চেটোয়  এক  অপূর্ব  সুন্দর  জ্যোতির্লিঙ্গ, লিঙ্গ  হতে  জ্যোতির  কণা  ঠিকরে  পড়ছে। এখন  আর  সেই  দুগ্ধদানরতা  মাতৃমূর্তি  চোখে  ভাসছে  না। সামনে  ভাসছে  তাঁর  নতূন  পরিবর্তিত  দিব্যরূপ; যাঁর  দেহের  প্রতিটি  রোমকূপ  হতে  যেন  স্বর্গীয়  সুষমা  ঝরে  পড়ছে। তাঁকে  ঘিরে  তাঁর  সামনে  পিছনে  জটাজুট  বহু  মহাত্মা  নতজানু  হয়ে  কৃতাঞ্জলি  পুটে  গাইছেন ------



ওঁ  সুখদাং  সমুদাং  সুরনরবন্দিতাং  সর্বকামদাং  শর্মদাং।
বন্দে  নর্মদাং। বন্দে  নর্মদাং।
ওঁ  উজ্জ্বলাঙ্গীং  নতজনতারিণীম্‌  তূর্ণগামিনীং  জনবনচারিণীং।
তরঙ্গিণীং  তততটশোভিনীম্‌  শুভদাং  বরদাং কর্মদাম্‌।
বন্দে  নর্মদাম্‌।। বন্দে  নর্মদাম্‌।।

বিহ্বল  ও  বিভোর  হয়ে  এই  দৃশ্য  দেখতে  লাগলাম। মনে  আর  আনন্দ  ধরে  না। তারপর  ধীরে  ধীরে  সেই  দৃশ্য  অন্তর্হিত  হয়ে  গেল। আমি  জ়েগে  উঠলাম। ঘর  অন্ধকার, চোখ  খুলে  কিছু  দেখতে  পাচ্ছি  না, পাখীর  কলরব  শুনে  বুঝতে  পারছি  সকাল  হয়ে  গেছে। 

উঠে  বসলাম।  হাতের  কাছে  টর্চটা  টিপে  দেখলাম, একমাত্র  বাসবানন্দজী  এবং  তুরীয়  চৈতন্য  নামক  ব্রহ্মচারী  ছাড়া  আর  সকলেই  উঠে  বসেছেন। হরানন্দজী, প্রেমানন্দ  প্রভৃতি  দণ্ডী  সন্ন্যাসীরা  নীরবে  কাঁদছেন। আমি  উঠে  বসে  দেখি  হিরন্ময়ানন্দজী  অশ্রুসজল  কণ্ঠে  বলে  উঠলেন --- হম্‌  সচ্‌  হু, দুপহরমেঁ  যো  মায়ী  হম্‌  লোগোঁকো  দুধ  দিয়া  থা,  উনোনে  স্বয়মেব  নর্মদা।

হরানন্দজী  কাঁদতে  কাঁদতেই  বললেন ---  সে  বিষয়ে  আমার  কোনই  সন্দেহ  নাই। তবে  দুঃখ  এই  স্বপ্নে  মা  তাঁর  পরিচয়  দিয়ে  গেলেন, জাগ্রতাবস্থায়  মাকে  চিনতে  পারলাম  না। তখনই  আমার  হাতদুটো  নিস্‌  পিস্‌  করছিল  পা  দুটো  জড়িয়ে  ধরতে। কিন্তু  দণ্ডী  সন্ন্যাসীর  ফালতু  মর্যাদাবোধ  আমাকে  সে  কাজ  করতে  বিরত  করেছে।

প্রেমানন্দ  এবং  আরও  দুজন  সন্ন্যাসী  একসঙ্গে  বলে  উঠলেন ---  আমরা  স্পষ্টাস্পষ্টি  বলছি, স্বপ্নে  দেখলাম, সেই  বৃদ্ধমায়ীর  শরীর  ধীরে  ধীরে  রূপান্তরিত  হয়ে  মা  নর্মদার  যে  ধ্যানমূর্তির  বর্ণনা  মহর্ষি  মার্কণ্ডেয়  জগদ্‌গুরু  শঙ্করাচার্য  এবং  মহর্ষি  কপিল  প্রভৃতি  দিয়ে  গেছেন, সেইরকম  শ্বেতাম্বরা  শিবকন্যার  দিব্যরূপ  ফুটে  উঠেছিল।

হরানন্দজী  আবার  বললেন ---  নাঙ্গা  সাধু  ঠিকই  মায়ের  প্রকৃত  স্বরূপ  বুঝতে  পেরেছিল, তাই  তাঁর  দেহে  মনে  অস্বাভাবিক  স্ফুর্তি  প্রকাশ  ঘটেছিল। বেটা, বিন্দুমাত্র  আভাষ  দিলেন  না, একা  একা  সমাধির  আনন্দ  ভোগ  করলেন। অশ্রুরুদ্ধ  কণ্ঠে  রঞ্জন  গেয়ে উঠল 


" যে  তোমায়  ছাড়ে  ছাড়ুক,  আমি  তোমায়  ছাড়বো  না  মা!
            আমি  তোমায়  ছাড়বো  না।
মাগো!  আমি  তোমার  চরণ  করব  শরণ
               আর  কারও  ধার  ধারব  না।
কে  বলে  তোর  দরিদ্র  ঘর,  হৃদয়ে  তোর  রতনরাশি ----
আমি  জানি  গো  তার  মূল্য  জানি।
পরের  আদর  কাড়ব  না  মা, পরের  আদর  কাড়ব  না।
মানের  আশে  দেশবিদেশে,  যে  মরে  সে  মরুক  ঘুরে ---
তোমার  ছেঁড়া  কাঁথা  আছে  পাতা ---
ভুলতে  সে  যে  পারব  না,  ভুলতে  সে  যে  পারব  না।
ধনে  মানে  লোকের  টানে, ভুলিয়ে  নিতে  চায়  যে  আমায় ---
ওমা,  ভয়  সে  জাগে  শিয়র ---  বাগে ---
কারও  কাছেই  হারব  না  মা,  কারও  কাছেই  হারব  না।
যে  তোমায়  ছাড়ে  ছাড়ুক,  আমি  তোমায়  ছাড়বো  না  মা!
                  আমি  তোমায়  ছাড়বো  না। "






No comments:

Post a Comment