Monday, May 13, 2013

*** মাতৃস্নেহের মাত্রা কেহ জানেনা ধীমান্‌ !


...... আমার  কথা  শেষ  হতে  না  হতেই  দড়াম  করে  এক  প্রচণ্ড শব্দে  অর্জুনেশ্বরের  মন্দিরের  দরজা  খুলে  গেল। আমরা  সকলেই  চমকে  উঠলাম। প্রথমে  ভেবেছিলাম  হয়ত  নর্মদার  দিক  হতে  উত্তরের  ঝাপ্‌টা  বাতাসের  ধাক্কায়  দরজাটা  খুলে  গেল। কিন্তু  পরে  দেখলাম  না! দমকা  বাতাসের  ঝাপটা  নয়, মন্দিরের  অভ্যন্তর  হতে  একটা  কালো  রং-এর  কলস  হাতে  নিয়ে  এক  শুভ্রবসনা  শুক্লকেশা  এক  বৃদ্ধমায়ী  বেরিয়ে  এসে  আমাদের  সামনে  বসলেন। কলসীভরা  দুধ  এবং  একটি  গ্লাস  রাখলেন  আমাদের  সামনে।

বললেন ---  হম  অগল  বগল  মেঁ  হি  নিবাস  করতা  হুঁ। ইধর ভগবান  কা পাশ  মে  বৈঠকর  জপ  করতা  থা। কোঈ  জানোয়ার  আ কর  তন্‌  না  করে, ইসীওয়াস্তে  হম্‌  কিবাড়  বন্ধ  কিয়া  থা। দণ্ডী  সন্ন্যাসীয়োঁকে  দুধ  পিলানেকে  লিয়ে  হমারা  বহুৎ  দিনোঁ  সে  সংকল্প  থা, আজ  ভগবান  অর্জুনেশ্বরকী  কৃপা সে  মুঝে  মোকা  মিলা। লেও  দুধ  পিজিয়ে। এই  বলে  তিনি  কলসীতে  তামার  গ্লাস  ডুবিয়ে  ডুবিয়ে  আমাদেরকে  দুধ  দিতে  থাকলেন  প্রত্যেকের  কমণ্ডলুতে। আমরা  দুধ  পান  করতে  লাগলাম।


সবার  শেষে  নাগাজীকে  তামার  গ্লাস  ভর্তি  দুধ  দিয়ে  বললেন --আপকা  পাশ  ত  তনিকভর  কুছ  নেহি, না  লোটা,  না  কমণ্ডলু। আপ্‌  ইসীমেঁ  দুধ  পিকর  ইয়ে  পাত্র  নর্মদা  মেঁ  ফেক  দেনা। হামারা  পাশ  দুসরা  পাত্র  হ্যায়।


মাতাজী  যখন  দুধের  পাত্রটি  নাগা  বাবাকে  এগিয়ে  দিলেন, তখনই  নাগাজীর  উপর  দৃষ্টি  পড়ল। দেখলাম, তিনি  থরথর  করে  কাঁপছেন। যাঁকে  এতদিনের  মধ্যে  একবারও  খেতে  দেখিনি, না  দুধ  না  ফল,  এমন  কি  জলও  নয়, আজ  দেখলাম, তিনি  সাগ্রহে  মায়ীর  হাত  থেকে  দুধের  গ্লাস  নিয়ে  এক  চুমুকেই  শেষ  করে  ফেললেন।


মায়ী  দুধের  কলস  হাতে  নিয়ে  ধীরে  ধীরে  চলে  গেলেন, নিকটস্থ  ভীমেশ্বর  মন্দিরের  দিকে। যেতে  যেতে  পিছন  ফিরে  বলে গেলেন ------ আজ  আপ  লোগোনেঁ  ইধার  ঠার  সকতে  হৈ। জন্তু  জানোয়ার  বগেরাঁ  কো  কোঈ  ডর  নেহি। নাগাজীর  কাঁপুনি  আর  থামে  না। তিনি  কাঁপতে  কাঁপতেই  শুয়ে  পড়লেন, মন্দিরের  দাওয়ায়।


ভীমেশ্বর, ধর্মরাজ  প্রতিষ্ঠিত  ধর্মেশ্বর  মন্দির, লুকেশ্বর  তীর্থ, জটেশ্বর  তীর্থ  পরপর  দেখতে  দেখতে  সাড়ে  ৪ টে  বাজে। ঠাণ্ডা  বাতাস  বইছে।  আমরা  দ্রুত  ফিরে  চললাম  নর্মদার  তট  ধরে  অর্জুনেশ্বর  মহাদেবের  মন্দিরে  উদ্দেশ্যে।  সেখানে  পৌঁছে  দেখি,  নাঙ্গা  মহাত্মা  উঠে  বসেছেন। তাঁর  সর্বাঙ্গে  অস্বাভাবিক  ভাবে উজ্জ্বল  দেখাচ্ছে। হরানন্দজী  তাঁকে  দেখেই  বললেন --- কী  ব্যাপার! আজ  যে  দেখছি, সর্বাঙ্গে  স্ফুরিছে  জ্যোতি, আঁখিপাতে  প্রশান্তির  ছায়া!


তিনি  সলজ্জভাবে  উত্তর  দিলেন --- 'আজ  খুব  ঘুমিয়ে পড়েছিলাম'।


----- ঘুম  না  সমাধি! দেখুন  মশাই  আমাদের  গুরুদেবের  সবিকল্প  আনন্দ  সমাধি  দর্শনের  বহুবার  সুযোগ  হয়েছে। কামরূপ  মঠের  সন্ন্যাসীকেও  জিনিষ  লুকাতে  পারবেন  না। যাক্‌গে, আপনার  মত  সাথী  পেয়ে  আমরা  খুশী।'


নাগাজী  হরানন্দজীকে  আর  কথা  বলার  সুযোগ  না  দিয়ে  তাড়াতাড়ি  উঠে  পড়লেন।  বললেন --- আমি  অদূরে  ধর্মেশ্বর  মন্দিরে  আজ  রাত  কাটাবো। আপনারা  সকলেই  এই  মন্দিরে  প্রবেশ  করুন। ভোরেই  আমি  আপনাদের  কাছে  পৌঁছে  যাবো। এই  বলে  তিনি চলে  গেলেন  ধর্মেশ্বর  মন্দিরের  দিকে। 


আমরা  টর্চ  টিপে  ঢুকে  পড়লাম  মন্দিরে। মন্দিরের  দরজা  বন্ধ  করে  আমরা  যে  যার  আসন শয্য  পেতে  নিলাম। মহাদেব  অর্জুনেশ্বরকে  প্রণাম  করে  আমরা  বসে  গেলাম  সান্ধ্যক্রিয়ায়। ঘণ্টা  দুই  ধরে  সকলেই  জপ  ধ্যান  করে  সকলেই  শুয়ে  পড়লাম, কম্বল  মুড়ি  দিয়ে।


আমার  একপাশে  হরানন্দজী  এবং  অন্যপাশে  রঞ্জন  শুয়েছেন। হরানন্দজী  আমাকে  ফিস্‌ফিস্‌  করে  জানালেন --- আশ্চর্য  বাইরে  যথেষ্ট  কনকনে  ঠাণ্ডা  বাতাস  ঝড়ের  মত  বইলেও  এই  মন্দিরের  মধ্যে  তেমন  ঠাণ্ডা  লাগছে  না। আমি  মতলব  করে  রেখেছিলাম, তিন দিন  আগে  আপনার  দেওয়া  এক  রেণু শঙ্খিনী  খেয়েছিলাম, আজও  ঐ  নাগা  বাবার  দেওয়া  এক মাত্রা  খাবো।কিন্তু  মন্দিরের  মধ্যে  তত  শীত  অনুভব  না  হওয়ায়  আর খেতে  ইচ্ছা  করছে না।


কী ব্যাপার  বলুন  তো, যিনি  আমাদেরকে  দুধ  খাইয়ে  গেলেন, তাঁর  কথামত  আমরা  আজ  মন্দিরে  থেকেছি  বলে  কি, ঐ  শুদ্ধসত্ত্ব  মায়ীর  বাক্য বলেই  শীত  আজ  কম  বলে  অনুভূত  হচ্ছে? আমি  ফিস্‌ফিস্‌  করেই  বললাম --- হতে  পারে! ঐ  মায়ী  যদি  তপস্বিনী  হন, তাহলে তাঁর  বাক্যবলে  সবই  সম্ভব। আমার  খুব  ঘুম  পাচ্ছে, পরে  কথা  হবে। এই  বলে  ঘুমিয়ে  পড়লাম।



To  be continued ............

No comments:

Post a Comment