Tuesday, March 23, 2010


একই পরমেশ্বরের ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর রূপে তিনটি বিগ্রহ মূর্তি আমরা দেখতে পাই। বিগ্রহমূর্তি গুলির আকার প্রকার সাজসজ্জা অস্ত্র ও বাহনে ভেদ থাকলেও স্বরূপতঃ তাঁরা এক ও অভিন্ন। তেমনই সরস্বতী, গঙ্গা এবং নর্মদা এই তিনটি দেবনদীর মধ্যে স্বরূপতঃ কোন ভেদ নেই। যেমন দেবতা তিনজন --- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর --- নদীও তেমন তিনটি। তাঁদের বহিরঙ্গ রূপ, উৎপত্তিস্থল আলাদা আলাদা হলেও তাঁরা একই পরমেশ্বরের অনুগ্রহশক্তির দ্রবীভূত ধারা। 

ঋষিরা বলেছেন---সরস্বতী নদীর জলে তিনদিন স্নান করলে, যমুনার জলে এক সপ্তাহ ধরে স্নান করলে এবং গঙ্গাজলে সদ্য স্নান মাত্রই মানুষ পবিত্র হয়। কিন্তু নর্মদা জলে স্নান করার পূর্বে কেবল দর্শন মাত্রেই মানুষ তৎক্ষণাৎ পাপ তাপ হতে মুক্ত হয়। 

গঙ্গার পুণ্যামহিমা হরিদ্বারস্থ কণখলে বেশী কারণ সেখানে দক্ষ প্রজাপতি যজ্ঞ করেছিলেন।

সরস্বতী নদীতটের বিভিন্ন স্থানে বেদজ্ঞ ঋষিরা বেদপাঠ এবং বৈদিক যজ্ঞের অনুষ্ঠান করলেও কুরক্ষেত্রে যেহেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বিশ্বরূপ দর্শন করিয়েছিলেন এবং জর্জরিত অর্জুনকে ব্রহ্মাস্ত্রের আঘাত অর্থাৎ অনিবার্য মৃত্যু থেকে রক্ষা করবার জন্য সুদর্শনচক্র ধারণ করে স্বীয় ভগবৎ-সত্ত্বা প্রকট করেছিলেন। সেইজন্য কুরুক্ষেত্রেই সরস্বতী নদীর মহিমা বেশী। 

কিন্তু নর্মদার জল গ্রাম বা বনাঞ্চল যেখানে দিয়েই প্রবাহিত হোক না কেন সর্বত্রই নর্মদার জলের সমান মহিমা। সর্বত্রই তিনি সমানভাবে পতিতোদ্ধারিণী।


নর্মদা নামের তাৎপর্য হল-----

সমুদ্রাঃ সরিতঃ সর্বাঃ কল্পে কল্পে ক্ষয়ং গতাঃ।
সপ্ত কল্প ক্ষয়ে ক্ষীণে ন মৃতা তেন নর্মদা।।

প্রলয়কালে পৃথিবীর সমস্ত নদী এবং সমুদ্র প্রলয়পয়োধি জলে সর্ববিধ্বংশী মহাসমুদ্রে লয় হয়ে যায়। তাদের স্ব স্ব সত্তার বিলুপ্তি ঘটে।সপ্তকল্পান্তজীবী মহামুনি মার্কণ্ডেয় দেখেছেন কল্পান্তের মহাপ্রলয়েও নর্মদার সমগ্র সত্তার বিলুপ্তি ঘটে নি। সমস্ত কল্পেই তিনি স্বমহিমায় নিজের রূপ, রঙ ও আকার নিয়ে বিরাজিত থাকেন। 'ন মৃতা তেন নর্মদা' কোন অবস্থায় তিনি ক্ষীণ হন না, তাঁর মৃত্যু ঘটে না। তাই তাঁর নাম নর্মদা।


https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191

1 comment:

  1. তপোভুমি নর্মদা গ্রন্থ হল শঙ্করকন্যা রেবার মহিমা বর্ণনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভারতবর্ষের মর্মবাণী। এই গ্রন্থের ছত্রে-ছত্রে প্রাচীন ভারতের আন্তরিক মহিমা (যা মাঁ নর্মদা যুগ-যুগ ধরে সজত্নে নিজ বক্ষে ধারণ করে রেখেছেন) যেন আত্ম-প্রকাশ করেছে।মাঁ নর্মদার প্রত্যক্ষ্য আশীর্বাদ যেন পূজনীয় গ্রন্থকারের অদ্বিতিয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং অপূর্ব লেখণশৈলীর রূপ পরিগ্রহ করে পাঠকের ঊপর ঝরে পড়েছে।
    এই অপূর্ব গ্রন্থের আর একটা দিক আছে।পূজনীয় গ্রন্থকার গ্রন্থের প্রথমেই জানিয়েছেন যে তিনি পিতৃ-আদেশ শিরধার্য্য করে শাস্ত্রীয় নিয়মে মাতা নর্মদার পরিক্রমা করেছেন এবং তার মহিমা জ্ঞ্যাপক এই গ্রন্থ রচনা করেছেন।পূজনীয় গ্রন্থকার রচিত ‘পিতরৌ’ হল ‘পিতা-মাতা ই শিব-শিবানী’ এই তথ্যের জীবন্ত thesis, আর ‘তপোভুমি নর্মদা’ হল এই thesis এর জ্বলন্ত illustration. কায়মনবাক্যে পিতৃ-আদেশ শিরধার্য্য করে কোন ব্যেক্তি যদি কর্ম করে, তবে তার ফল তপোভুমি নর্মদার মতই সুন্দর এবং গভীর মহিমাব্যঞ্জক হবে।

    ReplyDelete