'প্রায় উনিশ শত বৎসর পূর্বে গঙ্গাসাগর সঙ্গমের নিকট ক্ষুদ্রকায় কাকদ্বীপে আদিগুরু মহাযোগী অতিবৃদ্ধ ব্রহ্মানন্দদেব বাস করতেন। তাঁর আশ্রমের নাম ছিল 'আনন্দমঠ'
সেই আনন্দমঠে এক বিশাল বটবৃক্ষমূলে এক বিশাল প্রস্তর খণ্ডের উপর তিনি বসে থাকতেন। তাঁর কোন কুটীরও ছিল না।গ্রীষ্মের দাবানল বা শীতের প্রকোপও তিনি গ্রাহ্য করতেন না।
সেই মহাযোগী দীর্ঘকাল নর্মদাতটের হিরণফালে এসে তপস্যা করেছিলেন। দীর্ঘকাল তপস্যা করার পর তিনি নিজ মাতৃভূমি ঐ কাকদ্বীপে ফিরে যান। সাগর- সঙ্গমে যাঁরা যান, তাঁরা যেমন কপিলমুনির আশ্রমে গিয়ে প্রণাম করতেন, তেমনি ঐ ব্রহ্মানন্দদেবের শিলাতলেও শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে আসতেন'।
একবার স্বয়ং শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদ প্রচার করতে করতে বাংলাদেশে পৌঁছে কাকদ্বীপে গিয়ে আদিগুরু ব্রহ্মানন্দদেবের নিকট বিচার প্রার্থনা করে বসেন। তিনি বলেন--- মহাত্মন! আমি দক্ষিণদেশ জয় করে রামেশ্বর ক্ষেত্রে শৃঙ্গেরী মঠ প্রতিষ্ঠা করেছি যুধিষ্ঠিরাব্দ ২৬৪৮ সালে।ঐ মঠের মহাবাক্য--"তত্ত্বমসি"।
পশ্চিম প্রদেশ জয় করে যুধিষ্ঠিরাব্দ ২৬৫০ সালে সারদা মঠ প্রতিষ্ঠা করেছি।ঐ মঠের মহাবাক্য--"অহং ব্রহ্মাস্মি"।
আর্যাবতের উত্তরপ্রদেশে অদ্বৈতমতের বিচারে জয়লাভ করে বদরিকার মুক্তিক্ষেত্রে যোশী মঠ বা জ্যোতির্মঠ প্রতিষ্ঠা করেছি ২৬৫২ সালে।ঐ মঠের মহাবাক্য--"অয়মাত্মা ব্রহ্ম"। এখন আপনাকে বিচারে পারভূত করে বঙ্গদেশে অদ্বৈতমতের চতুর্থ মঠ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আপনার সঙ্গে বিচার প্রার্থনা করি।
আচার্য শংকরের কথা শুনে মহাযোগী বলেন--- বৎস! তাহলে তুমি স্পষ্ট করে বল তোমার বিচার্য বিষয় বেদান্তের অদ্বৈতবাদ।
আচার্য --- হ্যাঁ, পূর্বেই স্পষ্ট করে বলেছি, আমার বিচার্য বিষয় অদ্বৈতবাদ।
মহাযোগী --- বৎস! তোমার যথার্থ অদ্বৈতঞ্জান জন্মাতে এখনও বহু বিলম্ব।
শংকর --- আপনি কি করে তা জানছেন, তা খুলে বলুন।
মহাযোগী --- বৎস! প্রকৃত অদ্বৈতবাদ বুঝলে, অদ্বৈত ব্রহ্মতত্ত্বে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে, তুমি তোমার এবং আমার মধ্যে কোন প্রভেদ দেখতে পেতে না, তুমি এবং আমি যে দুটি স্বতন্ত্র জীব এ বোধ এখনও তোমার যায় নি। তাই তুমি আমাকে বিচার যুদ্ধে আহ্বান করতে পারছ। তোমার দ্বৈতঞ্জান এখনও তিরোহিত হয়নি বলেই তুমি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে তোমা হতে স্বতন্ত্রঞ্জানে বিচারে আহ্বান করছ।যখন তোমার দ্বৈতভাব চলে যাবে তখন তোমাতে আমাতে সর্বভূতে কোন পার্থক্য দেখতে পাবে না। তখন দেখবে চারিদিকে এক খণ্ড ব্রহ্ম, জগৎময় অদ্বৈত ব্রহ্মলীলা। আমি বোধ গেলেই তুমি বোধ আসে, আমিত্ব ঘুচে গেলেই তুমি আসে। তুমি ছাড়া আমি নাই, আমি ছাড়া তুমি নাই---
তুঁ তুঁ করতা তুঁহি রহা মুঝ্মে তুহিনা হুঁ।
বলিহারি তেরে রূপ কি যিৎ দেখুঁ তিৎ তুঁ।
অর্থাৎ তুমি তুমি করতে করতে আমি তুমিময় হয়ে গেছি, তুমি ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না আমার মধ্যে। তুমি ছাড়া আর কোথাও কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আমার আমিত্ব লুপ্ত হওয়ায় আমি তোমার স্বরূপত্ব প্রাপ্ত হয়েছি। প্রভু, তোমার রূপের বলিহারি যাই, যে দিকেই দৃষ্টি পড়ে, দেখি সেখানেই তুমি --- তুমি ছাড়া জগতে আর কিছু নাই।
মহাযোগীর কথার মর্ম উপলব্ধি করে শঙ্করাচার্য অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মহাযোগীর পদধূলি নিয়ে বলে উঠেন ---বাংলাদেশে পৃথক কোন মঠ স্থাপনের কোন উপযোগীতা দেখছি না, আপনার আনন্দমঠের কীর্তি চারদিকে ঘোষিত হোক।
এই বলে শংকরাচার্য কাকদ্বীপ ত্যাগ করে পূর্বদিকে পুরীতে গিয়ে জগন্নাথ ধামে সমুদ্রতীরে তাঁর চতুর্থ মঠ গোবর্ব্ধন মঠ স্থাপন করেন।
অতিবৃদ্ধ মহাযোগীর আনন্দমঠই ছিল শৈবাগম তন্ত্রের পীঠস্থান।
https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191
এই বলে শংকরাচার্য কাকদ্বীপ ত্যাগ করে পূর্বদিকে পুরীতে গিয়ে জগন্নাথ ধামে সমুদ্রতীরে তাঁর চতুর্থ মঠ গোবর্ব্ধন মঠ স্থাপন করেন।
অতিবৃদ্ধ মহাযোগীর আনন্দমঠই ছিল শৈবাগম তন্ত্রের পীঠস্থান।
https://www.facebook.com/pages/tapobhuminarmada/454528151310191
No comments:
Post a Comment